| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
ধারাবাহিক

ধারাবাহিক: রাণীয়ার রান্নাঘর (পর্ব-৫) । ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

অথ রসুন রুটি সমাচার

দিদি, সেদিন তুই গার্লিক ব্রেডের কথা বলছিলি না? আমি আজ নিজে বানাতে শিখলাম ঘরে। একদম পারফেক্ট খেতে হয়েছিল। পডকাস্ট চ্যানেলেও বকবক করলাম এই নিয়ে। শুনিস পারলে। রাণীয়া হোয়াটস্যাপে টেক্সট করে মিঠি কে।
দিদির সঙ্গে তার যত ঝগড়া, ততই ভাব। দিদি যতই রাগ করুক নতুন রান্না শিখেই দিদিকে ছবি না পাঠিয়ে, মেসেজ না করে তার শান্তি নেই।

বিয়ের আগে থেকেই দেশে গার্লিক ব্রেডের চল খুব দেখছিল রাণীয়া। সেবার বাবা মায়ের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের চা বাগানে গিয়েও দেখে স্যুপের সঙ্গে চিজ মশালা গার্লিক টোস্ট খেতে দিচ্ছে। লোভনীয় পাউরুটী। ফ্রেঞ্চ ব্যাগোয়েটের আকারে। তবে আমেরিকায় এসে রাণীয়ার আবারও নতুন করে এই গার্লিক ব্রেডের প্রেমে পড়া।  তারপরেই এই অচ্ছেদ্য পিরীতি। আমেরিকায় বন্ধুরা শিখিয়েছে তাকে। সুপার মার্কেটের কেনা গার্লিক ব্রেড স্লাইস করে তার মধ্যে বাড়িতে বানানো একটা স্প্রেড ছুরি দিয়ে লাগিয়ে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে আভেনে টোস্ট করতে। সেই রসুন রুটি আমার দেশের অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ল বিশ্বায়নের কৃপায়। ভাবতে বসে রাণীয়া । যেটা যখন মাথায় চাপে তার।

অতঃপর নিজের পডকাস্টিং এর জন্য প্রস্তুতি, বিস্তর আর অ্যান্ড ডি চলল তার । এখন আবার সেই ফাঁকে খাবারের উপকরণের গুণাগুণ নিয়েও বলে সে। এসব না কি রিচ বাড়ায়। কুশল বলেছে তাকে।
আজকাল নিজেও ভয়েস রেকর্ডিং করে ফেলে সে। একলাটি ঘরে বসে কুশলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে থকে যাওয়া রাণীয়া সব শিখে ফেলে।
প্রথম এই রসুনরুটির উদ্ভাবন হয় ইটালি তে। পাউরুটির ফালিতে চিজ এবং নানারকম সবজী দেওয়া পাউরুটির স্লাইস কে Italian bruschetta বলা হয় । রোমে এটাই bruschetta alla romana বা “Brusciare” যার অর্থ সব এহল তেল মাখানো, নুন ও রসুন কুচি দেওয়া টোস্ট করা পাউরুটি। এই জনপ্রিয়তার মূলে কী শুধুই রসুন ?
হ্যাঁ রসুনই তো নাটের গুরু । রসুনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌবন ধরে রাখে। মানুষ নাকি বুড়ো হয় না। বলিরেখা পড়েনা নিয়মিত রসুন খেলে। তার সঙ্গে রয়েছে সুগন্ধি জলপাই তেলের মাখামাখি। নানান সব মশলার অচ্ছেদ্য রসায়ন। এসব সেদিন যোগ করে দিয়েছিলেন অনসূয়া। মা না থাকলে যে কী হবে রাণীয়ার!

দক্ষিণ ইটালিতে অপর্যাপ্ত রসুন হয়। ভূমধ্যসাগর জলপাইয়ের দেশ। অলিভ অয়েলের প্রাচুর্যও বুঝি গার্লিক ব্রেডের অসাধারণ সুগন্ধের মূলে। প্রাচীন রোমে এভাবেই তৈরী হত। সঙ্গে ছড়ানো শুরু হল ইতালীয় হার্ব । যার মধ্যে ওরেগ্যানোর নাম করতেই হয়। মেডিটেরেনিয়ান ক্যুইসিনের মুখ্য মশলা হল এই ওরেগ্যানো। প্রথম যার খোঁজ পায় গ্রীসের মানুষ। গ্রীকদের বিশ্বাস, তাদের দেবতা দেবী অ্যাফ্রোডিটি এই পাতার স্রষ্টা। এই অনন্য সুগন্ধি হার্ব টিকে সেদেশে “joy of the mountain” বলা হয়। … তাহলেই বুঝুন গার্লিক ব্রেডের এত জনপ্রিয়তা কেন।  

নিজের চ্যানেলের জন্য বকবকানি চলতেই থাকে ভাবেই । ডুবে থাকে রাণীয়া এই কাজে।

ইতালীয় অভিবাসীরা আমেরিকায় মাইগ্রেট করে আসার ফলে তাদের নিজস্ব এই রসুন রুটিও আমেরিকার অভ্যন্তরে স্থান করে নিয়েছিল পিতজা, স্ফ্যাগেটি, পাস্তা এসবের সঙ্গে। তবে আমেরিকায় অলিভ অয়েলের পরিবর্তে মাখন ব্যবহার হত।মাখন আর অলিভ অয়েল দুই দিলে এতে টেস্ট বাড়ে বই কমে না। তবে ফ্রেঞ্চ ব্যাগোয়েটের আকারেই শেপ দেওয়া হয় এই রসুন রুটির। এমনকি আমাদের দেশেও ফ্রেঞ্চ ব্যাগোয়েটের শেপেই বানায় এখন।
এবার রসুন রুটির ভিতর ও বাহিরে, অন্তরে অন্তরে চিজ এবং মশলার ব্যাবহারে কালে কালে তা হয়ে উঠেছে আরও সুস্বাদু। একটি মশলাদার spread বানানো হয়। মাখন গলিয়ে তার মধ্যে গোলমরিচের গুঁড়ো, চিলি ফ্লেক্স, ওরেগ্যানো আর রসুন গুঁড়ো দিয়ে। এই  মশলাদার মিশ্রণ হল স্পাইসি গার্লিক বাটার । অলিভ অয়েল ব্রাশ করে ব্রেড স্লাইসে এই মিশ্রণ মাখিয়ে অনুপম স্বাদ হয় টোস্টেড রসুন রুটির। এই ছিল রাণীয়ার সেদিনের পডকাস্টের ভাষণ।পোষ্ট করা মাত্রই পটাপট তুমুল শেয়ারিং আর লাইকে জেরবার হয়ে মধ্যরাত অবধি ঘুমোয়নি সে উত্তেজনায়। ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে সে সোশ্যালমিডিয়ায়।  


আরো পড়ুন: রাণীয়ার রান্নাঘর (পর্ব-৪) । ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়


পডকাস্টিং এর জনপ্রিয়তায় ডালাসের বাঙালিদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপে রাণীয়া এখন সেলিব্রিটি হয়েছে। আমেরিকায় পা দেবার একবছরের মধ্যেই তার এখন এই পদোন্নতি। এখানে যেসব বাঙালি বউয়েরা চাকরি করেনা তারা সবাই রান্না শিখতে চায় রাণীয়ার কাছে। তবে রাণীয়া লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়না কিছুতেই। বলে শুনতে থাকো আমার চ্যানেল। স্টে টিউন্ড। সব শিখে যাবে। আমি রান্নার ক্লাস করিনা তো। তোমরা আমার সঙ্গে থাকলেই সব শিখে যাবে।

একদিন দুপুরে রাণীয়ার আমেরিকার পাড়ার দেশী বৌয়েরা সব জড়ো হয়েছে ওর বাড়িতেই। এই মহিলারা সবাই বার্গার বিগলিত প্রাণ। গার্লিক ব্রেডের পরেই এই বার্গারের রিকোয়েস্ট এসেছে তাদের কাছ থেকে। নিজেদের মধ্যে ফোনাফুনি করে সবাই সব ইনগ্রেডিয়েন্টস নিয়ে হাজির। এরা কেউ চাকরি করেনা। সেদেশে মনের সুখে তাদের দিনাতিপাত। কেউ লেটুস, কেউ টোম্যাটো, কেউ পেঁয়াজ, কেউ চিজ স্লাইস আর কেউ বেক করে এনেছে ফ্রেশ বার্গার ব্রেড এর বান। কোনও বানের মাথায় সাদা তিল ছড়ানো, কোনোটায় নানারকম সিডস। চিয়া, ফ্ল্যাক্স, পামকিন, কালো তিল… এসব দানা নাকি খুব হেলদি। রাণীয়া সেদিন নিজের বাড়িতেই বার্গারের মধ্যে দেওয়ার জন্য মাংসের কিমার গোলাকার প্যাটি বানিয়ে রেখেছিল আগেভাগে । এখানে রেডি টু ইট প্যাটি কিনতেও পাওয়া যায়। তবে বাড়িতে বানালে সেটা আরও টেস্টি হয়। তাছাড়া বন্ধুমহলে সেটা সারপ্রাইজও বটে। এর জন্য অবিশ্যি মা’কে বার কয়েক ফোন করতে হয়েছে তাকে। মাও খুশি হন নিজের মাটন কিমা কাটলেটের রেসিপি জানিয়ে।

দুপুরবেলায় এখানকার হোমমেকারদেরও প্রাণ যায়। তাই এসবের মধ্যে নিজেদের ভালোলাগাগুলো খুঁজে নেয় তারা। বার্গার সাজানোর পালা শুরু হয়ে যায়। মেয়োনিজ, কেচাপ সব বের করে আনে রাণীয়া। টেলিভিশনে বাংলা মুভি শুরু হবে একটু পরেই। সবাই বেশ উত্তেজিত। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ ভেজে এনেছে একজন। আর তর সয়না যেন। শুভ্রা কিছুদিন একটা স্যনাডুইচ শপে কাজ করেছিল। আইডিয়া দেয় সে। লীনা তার বাচ্চা কে ঘুম পাড়িয়ে দেয় রাণীয়ার বেডরুমেই । মাংসের কিমার প্যাটি গুলো নন্সটিক স্কিলেটে হালকা তেল ব্রাশ করে গরম করে নিতে নিতে রাণীয়া গান ধরে। শুধু রান্না করলেই হবে না। স্বাস্থ্যের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। ডিপ ফ্রায়েড প্যাটি খুব সেফ। তবে তার জন্য ম্যারিনেটেড মিন্সড মিট সামান্য সেদ্ধ করে নেয় সে। কিচেনের তাকবাক সব তার আয়ত্ত্বে। সেটা অবিশ্যি মা আর দিদার কৃপায়। যাইহোক রাণীয়া আপাতত হল এই বেঙ্গলি কমিউনিটির মক্ষীরানি। সেলেব রাঁধুনি।

আচমকাই হ্যামবার্গারের জন্ম কোথায় এই নিয়ে উত্তাল হল রাণীয়ার এক চিলতে কফি টেবিল।সেখানে টেবিল চাপড়ে তর্কের তুফান তুলেছে লীনা আর শুভ্রা। দু একটা ফুলকি এসে ঠিকরে পড়ছে রাণীয়ার রান্নাঘরেও। ঠিক যেন কলকাতার হার্টল্যান্ডে কফিহাউজের আড্ডা। মজা পায় সে। ভাবে সে। এ যেন আমাদের রসগোল্লার আদি নিবাস নিয়ে বিতর্ক। উড়িষ্যা না কী বাংলা। অথবা প্রাচীন কবি জয়দেবের জন্মটা আসলে ঠিক কোথায়? উড়িষ্যা না কী বীরভূমের কেন্দুলী। এসব তর্ক চিরাচরিত। থামার নয়। তেঁতুল তলার বৃষ্টির মত। একবার বৃষ্টি হয়ে গেলে সারাদিন টুপটাপ জল পড়তেই থাকে গাছের তলায়। টেবিল চাপড়ে তার্কিকরা যে যার দিকে ঝোল টানতেই থাকে। আবহমান কাল ধরে তাই চলে আসছে সারা বিশ্বে। শুধু ছিটেফোঁটা ইন্ধন যুগিয়ে দিলেই হল।

রাণীয়া এক ট্রে কিমার প্যাটি সাজাতে সাজাতে বলে, আরে বাবা, জার্মানির হ্যামবুর্গ শহরের সঙ্গে জড়িয়ে যে খাবারের নাম তার উৎপত্তিস্থল ইউরোপ না হয়ে যায়? বুঝলি না তোরা? জার্মান গরুর মাংসের সুললিত কিমায় পেঁয়াজ, রসুন, আদা পড়ে গরু নিজেই ভুলে গেল হাম্বা রব। এই সেই গোলাকার মশলাদার প্যাটি।যা হল বার্গারের মধ্যমণি। এবার যত গুড় ঢালিবেক। ততই হইবে দামী। একখণ্ড চিজ স্লাইস, এক স্লাইস ক্যাপসিকাম, একখণ্ড বড় পেঁয়াজের চাকা, টোম্যাটো স্লাইস, সতেজ লেটুস পাতা, মেয়োনিজ, হানি মাস্টার্ড, টোম্যাটো কেচাপ সবের যাদু স্পর্শে দুই খণ্ড টাটকা বান রুটির মধ্যে সেই মাংসের প্যাটি ততক্ষণে বুঝে গেছে নিজের দাম। তাই বিশ্বায়নের দৌলতে জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠা বার্গার যখন আমেরিকা দাপিয়ে বেড়ায় তখন তারা দাবী করে বৈকি, এই বলে, “এ আমাদের আবিষ্কার”। জাত বেনিয়া তারা। সবার কথা মাথায় রেখে কাস্টমাইজ করেছে বলেই না আমেরিকায় আনাচেকানাচে বার্গারের এত কাটতি। অবাঙালীরাও আমেরিকায় গিয়ে পেয়ে যায় ভেজ বার্গার। নিষিদ্ধ মাংসের প্যাটি যার চলবে না সেও পেয়ে যাবে মুরগীর প্যাটি। এমনকি ডিমের প্যাটিও পাবে সেখানে।

লীনা বলে ওঠে, ঠিক বলেছিস। আমাদের বউবাজারের বৌ বা বাগবাজারের বাঘের মতোই হ্যামবার্গারের প্যাটিটা সোনার পাথরবাটির মতন। আসলে তা হ্যামের হয়না। হয় বিফের।
রাণীয়া বলে হ্যাম হলে আমার চলবেই না। এক হল বরাহ অবতার বরিষ্ঠায় আর দুই হল লিয়েন্ডার পেজের মাথায় সেই পোকা উঠে যাওয়ার ঘটনা।
লীনা বলে, হ্যামবুর্গের বিফ স্টেকের খুব কদর। তাই বুঝি বার্গারের নামের সঙ্গেও জুড়ে গেছিল এই অভিনব ফাস্টফুডের নামে জায়গার নাম। আমাদের মোল্লাচকের দই কিম্বা বর্ধমানের সীতাভোগ অথবা নাটোরের কাঁচাগোল্লার মত হ্যামবুর্গের বার্গারের সেটাই আদি মহিমা।
রাণীয়া বলে, তাহলে সেই ক্লাস টেনের যুগের জ্ঞান নিয়েই বলি, সব বার্গারই হল আদতে হ্যামবার্গার কিন্তু সব হ্যামবার্গার পাতি বার্গার নয়। তা সে যতই আমেরিকান রা গল্প ফেঁদে গর্ব করে বলুক না কেন ।

হাতের ফোনে গুগল করে একরত্তি জ্ঞান দিয়ে ফেলে শুভ্রা। এই দেখ, আমেরিকার কানেক্টিকাটের নিউ হাভেনের প্রায় একশো তিরিশ বছরের পুরনো Louis’ Lunch ফুড জয়েন্ট হল এই বার্গার স্যান্ডুইচের আঁতুড়ঘর। মনে পড়ে তোদের? সেই ছোটবেলায় শেখা ছড়াটা? “তোর গোরু আর মোর গোরু তে লড়াই লেগেছে” ওদের ঝগড়া আমেরিকার গরু না ইউরোপের গরু? কোন গরুর মাংসের কিমার প্যাটি তবে থাকে বার্গারের মধ্যে।    

লীনা শুভ্রার দেখাদেখি আরও তথ্য খুঁড়ে আনে। নেট সার্চ করে বলে এই দেখ তোরা। আরও পেছনে চলে যা। যখন রাজাধিরাজ চেঙ্গিস খান তাঁর মঙ্গোল ঘোড়সওয়ারদের নিয়ে বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াতেন তখন একটুও সময় অপচয় না করে নিজেদের লক্ষে অবিচল থাকতেন। কোথাও একটু জিরেন নিতে ঘোড়ার পিঠে বসেই সেরে নিতেন তাঁরা আহার। ল্যাম্ব অথবা মাটনের মাংসের টুকরো ঘোড়ার স্যাডেলের নীচেই রাখা থাকত। থেঁতলে যাওয়া সেই মাংসের খণ্ডটি যেন প্রাকৃতিক ভাবেই দীর্ঘক্ষণের চাপে ও তাপে থুড়ে নেওয়া মাংসের প্যাটিতে পরিণত হত।এবার ঘোড়া থেকে না নেমেই ব্যাগে রাখা পাউরুটির মধ্যে সেই মাংস খণ্ড নিয়ে একহাতেই কামড় দিয়েই কেল্লাফতে। সুখঢেঁকুর তুলেই আবার যুদ্ধের প্রস্তুতি।

রাণীয়া বলে স্ক্রোল করে আরও পড়ে চল আরটিকল টা। আমি আগেই পড়েছি আর বুক মার্ক করে রেখেছি আমার পডকাস্টের জন্য।

শুভ্রা পড়ে বলে, এমনকি চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খানের মস্কো অভিযানের যুদ্ধযাত্রায় সঙ্গে মাংসের কিমার কথা রয়েছে তো। রাশিয়ান শেফরা সেই দেখে উত্তেজিত হয়ে শিখে নিয়েছিল কিমার প্যাটি বানানো?  মঙ্গোলদের কাছ থেকে শেখা এই প্যাটির নাম দিয়েছিল ওরা steak tartare।
রাণীয়া বলে চলে,আর পঞ্চদশ শতাব্দীতে এই রাশিয়ান “steak tartare”ই আবার জার্মানদের কাছে জনপ্রিয় হল “tartare steak” নামে। অষ্টাদশ শতাব্দী তে জার্মান নাবিকদের কাছে সেটাই আবার ওল্ড ওয়াইন ইন নিউ বটলের মত ফেমাস হয়ে গেল “Hamburg Steak” হয়ে । নিউইয়র্ক বন্দরে জার্মান নাবিকদের আকর্ষণ করতে সেই মাংসের প্যাটিই আবার বিকোতে লাগল “steak cooked in the Hamburg style” বলে। লীনা বলল, দেশ-কাল-পাত্র ভেদে বার্গারের মধ্যমণি বিস্কুটের গুঁড়ো মাখানো শক্তপোক্ত মাংসের কিমার প্যাটির এই হল ইতিহাস। কেউই ঠিক ক্রেডিট নিতে পারেনা তাই। সেই তর্ক আজও চলছে।   তবে রেস্তোরাঁর সাজাগোজার বৈচিত্র্যে টাটকা বান রুটির বেকিংয়ের সময়েই ওপরে কখনও সাদা তিল, কখনও কালো কখনও আবার মহার্ঘ্য সব বীজ সাঁটিয়ে মাল্টিগ্রেইন বলে ক্রেতাদের আকর্ষণ করা হয়। এই হল ইম্প্রোভাইজেশন। যাতে আমেরিকার জুড়ি নেই। ঠিক পিৎজা  টপিংয়ের মত।

শুভ্রা এবার উঠে যায়। আবার ফিরে আসে কিছুপরেই। গান করে গেয়ে বলে,

এনেছি মোরা, এনেছি আজি রাশি রাশি সেই বান।
বার্গার বানিয়ে মুলে দেব রেস্তোরাঁদের দুটি কান।

রাণীয়া লক্ষ্য করে তাদের সেই সুললিত বার্গার বানের মাথায় ফুটফুট করছে কালো কালো তিল, ধবধবে সাদা তিল আরও কত রকমের বীজ। বার্গার এদেশের খুব সস্তার খাবার। সস্তার দোকানে বার্গারের মধ্যেকার মাংসের প্যাটি গুলো বানানো হয় সস্তার মাংসের কিমা দিয়ে। তাই দামটা বেশ কম। সেই বার্গারের দোকানেই রাণীয়া দেখেছে এদেশের ভিখিরীসম খুব সিনিয়র সিটিজেনদের। কী যে হবে তার বাবা মায়ের দশা! কাজের ফাঁকে এদেশে বসে নিজের দেশের বুড়োবুড়িদের কথা মনে পড়লে চোখে জল আসে। বাবা মায়ের বুড়ো হওয়ার আগে যেমন করেই হোক দেশে ফিরতে হবে তাদের। 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত