নিকিতা ও মৃত্যু
…………………………..
প্রতিবছর ২৩ অক্টোবর আসে
আর রাত্রিবেলা তার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়
তার হাতে থাকে একটা পিস্তল
তার রক্তের ভিতর থাকে মৌতাত
সে আমার বুকে পিস্তল তাক করে
তারপরে আমার চোখের ভিতর হারিয়ে যায়
তারপরে আমাকে গুলি না করেই ফিরে যায়
তার নাম আছে নিকিতা
নিকিতা কে
নিকিতা আদ্য শক্তি
নিকিতা টকটকে লাল সন্ধ্যার অমরতা
নিকিতা ফুলের ভিতর রঙের উৎসার
নিকিতা হিমালয় ঘেঁষে আগুনের ঈশ্বর
নিকিতা অশ্রুর ভিতর জ্বলে উঠছে জানলা
নিকিতা সমুদ্রের দিকে দীর্ঘ পা টেনে শুয়ে
নিকিতা মুঠোতে লুকিয়ে রেখেছে অরণ্য
নিকিতার আঙুলে মৃত্যু
নিকিতা আমার বুকে পিস্তল তাক করে
নিকিতা আমার চোখের ভিতর হারিয়ে যায়
নিকিতা আমাকে গুলি না করেই ফিরে যায়
হাতি বিষয়ক
………………………….
হাতির সমুদ্রে যেতে পারিনি, ছিলো কালাপানি আর জংলি সাপের ভয়
হাতিকে চিনেছি পর্বতের মাথায়, সেই রামগিরিতে
হাতিকে চিনেছি সার্কাসের মশারিতে ঘুরে ঘুরে একাকার
হাতির পিঠে চড়ে ঘুরেছি শৈশবের তরমুজের ক্ষেত
হাতির গলায় আটকে গেলো সবুজ তরমুজ
হাতির গলায় ঠেলে দিলে কলাগাছ তরমুজ গড়িয়ে পড়েছে পেটে
হাতির দাঁতের একটা কলকি কালো হয়ে আছে বিষে
হাতিকে চিনেছি সলোমনের গানে, প্রিয়তমার গ্রীবা গজদন্ত মিনারে
হাতির চলনে একদা গজগামিনীর চলে যাওয়া মনে পড়ে
কবিতা ও কুমির
……………………………………….
আমার রক্তের ভিতর একটা কুমির ঘুরে বেড়ায়
মধ্যরাত্রিতে বুক চিরে বের হয় কুমির
বুকের উপর শুয়ে চুম্বন করে আমার ওষ্ঠাধরে
একটা বাগানের গন্ধ আচ্ছন্ন করে রাখে আমাকে
বাগানে তিন রকমের উদ্ভিদ উদ্গত হয়
আমি উদ্ভিদের পরিচয় জানি একটি গানের ভিতর
ধোঁয়ার ভিতর একটি কবিতা কুড়িয়ে পেয়েছি
কুড়িয়ে পাওয়া কবিতা পড়তে ইচ্ছা করে না
জানালার ভাঁজে ভাঁজ করে রেখে দিই
দূরত্বের অতীত
…………………………….
তোমার কপালের ঠিক মধ্যখানে সূর্যাস্ত থেমে গেছে
ফলত চরাচর হয়ে আছে রক্তিম আলোর শহর
শহরে ঘর নাই
ঘরগুলি দরজা, জানলা আর ঘুলঘুলি রহিত এক একটা সিন্দুক হয়ে গেছে
আমি পথে ডেকেছিলাম বলে তুমি ঘর থেকে বাহিরে এসেছিলে
এইবার এই বিস্তীর্ণ আলোয় আমরা একপাশে ডেকে নেবো সমুদ্রাবলি
আর পাশে পাহাড়গুলি
সমুদ্রে বৃক্ষ দিয়ে বুনে দেবো দিঘল গাছবন
পাহাড়ের পাড়ে, পাহাড়ের চূড়ায় সাজিয়ে দেবো বর্ণিল মাছের মিছিল
মাঝখানের পথগুলি এ-মাথা ও-মাথা
চার হাতে ধরে টেনে করে দেবো দূরত্বেরও অতীত
আর পরে পরস্পর হেঁটে যাবো চির ইচ্ছার বিপরীত

কবি,কথাসাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী
কোন এক শীতের সকালে রানী মুন্নি বাঈয়ের সাথে আমি নির্ঝর নৈ:শব্দ্যের কবিতা পড়তে বসেছিলাম। রানী বলতেন কবিতা আসলে খুলে বলবার কিছু নয়, তবে সেটা খুলে দেখবার মতো কিছুটা। শব্দ খুলে খুলে পড়তে হয় বা বাক্য খুলে খুলে পড়তে হয়। রাজা ধীনাদিনাথ তার কাব্যগ্রন্থে বলে ছিলেন, আমি আসলে কবিতা লিখি না, কবিতা আমাকে লেখে এবং আমাকে পান করে সুরার মতো।
নির্ঝর নৈ:শব্দের এইসকল কবিতা পড়ার পর আমার মনে হয় আমি কবিতা পান করি…