| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

কবিতা: মৃত্যু কোটায় শহিদের চিঠি । শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য 

আনুমানিক পঠনকাল: < 1 মিনিট
মা,
আশাকরি ভালো আছো
আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না
আমি খুব ভালো আছি।
তুমি শুনে খুশি হবে 
আমি চাকরি পেয়ে গেছি।
 
কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিলাম,
কিন্তু এই আন্দোলনই আমাকে চাকরি দিলো।
অগ্রীম বেতন হিসেবে সারা শরীরে এসে বিঁধলো 
হাজার হাজার বুলেট।
আমার সহকর্মী হলো আরও পাঁচজন। 
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি সেই পুলিশের প্রতি,
যে আমার অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার হিসেবে একটি টিয়ারশেল ছুঁড়ে মেরেছিলো আমার সামনে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি সেই পুলিশের প্রতি,
যে অগ্রীম বেতন হিসেবে তাঁর প্রিয় বন্দুক থেকে
অজস্র রাবার বুলেট ছুঁড়ে দিয়েছিলো আমার শরীরে। 
 
আর আমি সেই চাকরিপিপাসু যুবক যে বীরদর্পে দু-হাত তুলে দাঁড়িয়েছি সেই বন্দুকের সামনে।
আমি সেই চাকরিপিপাসু যুবক, যে তার অভিধান থেকে মুছে ফেলেছিল  “পিছু হটা” নামক শব্দটি। 
আমি সেই চাকরিপিপাসু যুবক যে আগের রাতে ফেসবুকে স্মরণ করেছিল উনসত্তরের গণ- অভ্যুত্থানে শহিদ শামসুজ্জোহা স্যারকে। 
 
তোমার নয় সন্তানের মধ্যে আমি ছিলাম সেই চাকরি পিপাসু সন্তান, যে শিক্ষা নামক আলোকরূপী অন্ধকারে প্রবেশ করিয়েছিলো নিজেকে।
আমি তোমার সেই সন্তান, যে কন্টকরূপী স্বর্ণে মোড়া ফলাফলের মিষ্টত্ব অনুভব করেছিল একাধিকবার।
 
আজ হয়তো অনেকেই জিজ্ঞেস করবে, সাইদ কেন সরে গেলো না পুলিশের সামনে থেকে?
কেন সাইদ মৃত্যুর জন্য বুক পেতে দিলো?
তুমি তার উত্তরে সবাইকে বলবে “চাকরিটা আমার ছেলের অত্যন্ত প্রয়োজন ছিলো। তাই সে নিজের প্রাপ্য কোটা আদায়ের জন্য বুক পেতে দিয়েছিলো। আমার চাকরি পিপাসু সন্তান মৃত্যুর জন্য বুক পেতে দেয়নি।  বুক পেতে দিয়েছিলো তার প্রাপ্য চাকরি আদায়ের জন্য। “
তুমি সবাইকে বলবে “আমার সাইদ মৃত্যু কোটায় চাকরি পেয়েছে “।
 
কালের নিয়ম অনুযায়ী একে একে তোমরা সবাই পাড়ি জমাবে আমার কর্মস্থলে 
সেইদিন আমি আবার তোমার হাতের রান্না খাবো, 
সেইদিন আমরা আবার জমিয়ে আড্ডা দেবো।
 
বাবাকে আমার সালাম দিও। তোমরা সবাই ভালো থেকো। দেখা হবে কোনো একদিন। 
 
ইতি 
তোমার সন্তান 
আবু সাইদ। 
 
 
 
error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত