আমাজনে আগুন অভিযোগের আঙুল এনজিওদের দিকে
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ার বোলসোনারো বলেছেন, যেসব বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে আমাজনে আগুন দিচ্ছে। তবে এ কথার সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি তিনি।
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে) জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আমাজনে রেকর্ডসংখ্যক দাবানল হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ৮৩ শতাংশ বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে জায়ার বোলসোনারো বলেছেন, ‘সবকিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে, এনজিওগুলোই আমাজন বনে আগুন লাগাচ্ছে।’ এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রমাণ চাওয়া হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
বিবিসি অনলাইন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা তাঁর এ অভিযোগকে ‘ধূম্রজাল’ বলে অভিহিত করেছেন। বিশ্বের বৃহত্তম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনাঞ্চলের সুরক্ষা দিতে তাঁর সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই প্রেসিডেন্ট এ মন্তব্য করেছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা।
ব্রাজিলের কংগ্রেস সদস্য ও নিম্নকক্ষের পরিবেশবিষয়ক ককাসের নেতা নিলতো তাত্তো বলেন, এনজিওগুলোর প্রতি বোলসোনারোর এ অভিযোগ ব্রাজিলের ৩০ বছরের পরিবেশ সুরক্ষা নীতিতে তাঁর প্রশাসনের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা।
জলবায়ুবিজ্ঞানী কার্লোস নোব্রে বলেছেন, গবাদিপশুর চারণভূমি হিসেবে জমি ব্যবহার করতে চাওয়া কৃষকেরা জায়গা পরিষ্কার করতে শুকনো মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করেন। এ সময় বন দাহ্য হয়ে থাকে এবং খুব সহজেই তাতে আগুন লাগে। সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক নোব্রে বলেন, আমাজনে কর্মরত এনজিওগুলো কৃষিকাজে আগুন ব্যবহার করে না। তারা বরং গ্রামীণ লোকজনকে আগুন এড়াতে উৎসাহিত করে।
গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর কৃষিকাজ ও খনিজশিল্পের জন্য বনাঞ্চল বর্ধনের প্রতিশ্রুতি দেন বোলসোনারো। তাঁর এ উদ্যোগের ফলে বন উজাড় হয়ে যেতে পারে—আন্তর্জাতিক মহলের এমন উদ্বেগ তিনি উপেক্ষা করে গেছেন। এরপর থেকে দাবানলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তখন থেকে এ পর্যন্ত আমাজনে অন্তত ৭২ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এ মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, তাঁর প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে। এ অভিযোগের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় স্পেস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
পরিবেশবাদী এনজিওগুলোকে বারবার আক্রমণ করেছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ত্যাগের হুমকি দেওয়া বলসোনারো। তাঁর দাবি, দেশের পূর্ণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিকাশের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে এনজিওগুলো।
তবে আমাজনের দুর্দশার জন্য জায়ার বোলসোনারোকে দুষেছেন রক্ষণশীলরা। তিনি কাঠুরে ও কৃষকদের জমি সাফ করতে উৎসাহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ কারণে বনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে।
গ্রিনপিসের মার্সিয়ো আস্ট্রিনি বনাঞ্চল উজাড় ও দাবানলকে প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর পরিবেশবিরোধী নীতির ফলাফল বলে মন্তব্য করেছেন।
![ইরাবতী ডেস্ক](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2021/12/irabotee-cover-e1640636602578-150x150.jpg)