সাক্ষাৎকার: কবি অমিত চক্রবর্তী
শৌনক দত্ত: নমস্কার দাদা কেমন আছো?
অমিত চক্রবর্তী: ভালো আছি ভাই। সেমেস্টার শেষ হলো আর শীতের ছুটি পড়লো এই, তাই “ইরাবতী”র পক্ষ থেকে করা তোমার প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি এখন।
শৌনক দত্ত:তোমার লেখালেখির শুরুর গল্পটা শুনতে চাই।
অমিত চক্রবর্তী: যতদূর আমার মনে পড়ে আমার কবিতা লেখা শুরু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধের সময়। সেই সময় আমি ক্লাস সিক্সে পড়ি। স্কুলের ম্যাগাজিনের জন্য একটা কবিতা লিখেছিলাম যার প্রথম লাইনটা এখনও মনে আছে – “জ্বলছে আগুন উড়ছে ধোঁয়া, কে পর আপন যাচ্ছে চেনা”। সেইখান থেকেই শুরু, তারপর স্কুলের ম্যাগাজিন, স্টেশন ম্যাগাজিন এইসব চালানো, পনেরো বছর বয়সে ছাপানো লিটল ম্যাগাজিন শুরু করা তার নাম ছিল “অরণি”। চেনাশোনা লোকজনকে পুশ সেল করে, ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্রসদনে হাতে হাতে কিছু বিক্রী করেও প্রিন্টিং প্রেসে প্রচুর ধার ছিল। একদিন সেই প্রেসের লোক বাড়িতে এসে হাজির। মা সঙ্গেসঙ্গে পয়সা মিটিয়ে দিলো বটে কিন্তু অরণি আর দ্বিতীয় সংখ্যার মুখ দেখেনি।
শৌনক দত্ত:প্রায় সব কবিরই একটা শিক্ষানবিশি কাল থাকে, তোমার শিক্ষানবিশি সম্পর্কে কিছু বলবে কি?
অমিত চক্রবর্তী: আমার কবিতার শিক্ষানবিশি শুরু হয় তখন মনে হয় ক্লাস এইটে পড়ি, ১২ বছর বয়স। স্কুলের ম্যাগাজিন, স্টেশন ম্যাগাজিনে কবিতা লিখি দেখে বাবা একদিন বলল এই রবিবার তোকে নিয়ে যাব আমার এক বন্ধুর বাড়ি, তোরা কবিতা নিয়ে কথাবার্তা বলিস। বাবার এই বন্ধুর নাম অমিয় ভট্টাচার্য, তিনি থাকতেন আমাদের পাশের গ্রামে। এককালে নিয়মিত কবিতা লিখতেন বুদ্ধদেব বসুর কবিতা ম্যাগাজিনে। অমিয় কাকা আমাকে প্রথমেই বললেন যে সবচেয়ে আগে তোমাকে বাঙলা ভাষার চলনটা রপ্ত করতে হবে। তারপর আসবে ছন্দ। উনি আরো বললেন যে কবিতা লেখা শেখার জন্যে সবথেকে প্রথমে যে বই পড়তে হবে তা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের “ছন্দ”। সেই বই আমি ১২ বছর বয়েস থেকেই আঁকড়ে ধরে আছি। আমার “সৃজনী লেখার ক্লাসঃ কবিতা লেখা”র দ্বিতীয় চ্যাপটার শুরুই হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের বাঙলা ভাষার চলন এবং ছন্দ সংক্রান্ত চিঠিপত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে।
আমার শিক্ষানবিশির ২য় পর্যায় শুরু হয় কলেজে ঢোকার পর – কলেজের বন্ধু পথিকৃতের সূত্রে ওর বাবা সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ। সুপ্রিয় মেশোমশায় নিজে লিখতেন ভালো এবং তার সঙ্গে বাঙলা কবিতার সব পরিচিত কবিদের সঙ্গেই তাঁর ভালো যোগাযোগ ছিল। বাঙলা কবিতা কোনদিকে যাচ্ছে এবং সমাজে কবির স্থান কী হবে এই নিয়ে ওঁর সঙ্গে বহু আলোচনা হয়েছে এবং আমার নিজের মতামত গড়ে তুলতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে এই সব আলোচনাগুলি।
তার সঙ্গে উল্লেখ করব দুটো র্যান্ডম ঘটনার – ১) প্রচন্ড গরমের দিনে আমরা কলেজ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নিতাম কাছাকাছি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি সেন্টারে (AUC), প্রধানত এসি লাগানো লাইব্রেরিতে সময় কাটাতে পারব বলে। ওই লাইব্রেরিতেই আমার হাতে আসে Allen Ginsberg, Sylvia Plath, Wallace Stevens, এবং Robert Lowell এর কবিতার বই – খানিকটা র্যান্ডম ভাবেই, আমি তখন এদের কারুরই নাম জানতাম না। কিন্তু পড়তে গিয়ে আমি বুঝতে পারি এ কবিতা বাঙলা কবিতার থেকে পুরোপুরি আলাদা ধাঁচে লেখা আর তখন থেকেই আমার আমেরিকান কবিতা সম্বন্ধে জানার ইচ্ছেটা বেড়ে উঠতে থাকে। ২) ১৯৭৮ সালে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি named lecture দিতে আসেন – পরে সেই লেকচারের ওপর ভিত্তি করেই ওঁর বই “কবিতার ক্লাস” – যেখানে পথিকৃৎ আর আমি হাজির হই। তখন “কলকাতার যীশু” আর “কলঘরে চিলের কান্না” আমার পুরো মুখস্থ ছিল তাই ওঁর এই talk-টাকে মনে হয়েছিল জীবনের একটা বিশেষ প্রাপ্তি। ওইখানেই ওঁর মুখে প্রথম শুনি – ““কবিতা তো আর কিছুই নয়, শব্দকে ব্যবহার করবার এক ধরণের গুণপনা, ভাষার মধ্যে যা কিনা অন্যবিধ একটি দ্যোতনা এনে দেয়।”কবিতা সম্বন্ধে আমার ধারনা পাল্টে যায় এরপর।
শৌনক দত্ত:কবি চরিত্রটি সমাজের চোখে ‘রহস্যময়’ বলে বিবেচিত । এই রহস্যময়তাই কী কবির ধর্ম ?
অমিত চক্রবর্তী: তোমার এই প্রশ্ন শুনে আমার প্রথমেই মনে পড়লো উৎপলকুমার বসুর কথা – “যে-সামান্য কবিখ্যাতিটুকু আমার আছে তার অন্যতম কারণ হয়ত এই যে আমার বইগুলি দুষ্প্রাপ্য”। সুতরাং একটা “রহস্যময়তা”র ব্যাপার হয়তো আছে পাঠকমনে, সেটা হতেই পারে অনেক কবির বিষয় আশয় সম্বন্ধে উদাসীনতা থেকে – রবীন্দ্রনাথের পুরস্কার কবিতা মনে পড়ে –
সেদিন বরষা ঝরঝর ঝরে,
কহিল কবির স্ত্রী–
“রাশি রাশি মিল করিয়াছ জড়ো,
রচিতেছ বসি পুঁথি বড়ো বড়ো,
মাথার উপরে বাড়ি পড়ো-পড়ো
তার খোঁজ রাখ কি!
অথবা কিছু কিছু কবির বিশৃঙ্খল জীবন যাপন থেকে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে রসায়নবিদরা যাকে বলেন “Reaction Coordinate”, সেই রকম জীবনের প্রতিটি ধারার ওপরে আমাদের দক্ষতা মেপে যদি গড় করি, দেখব আমরা সকলেই অত্যন্ত অ্যাভারেজ। তাই কারুর যদি একটা বিশেষ দিকে স্কিল থাকে, তার জীবনের অন্য ধারায় দক্ষতা কম থাকাটাই স্বাভাবিক। এটাকেই হয়তো ভাবা হয় “রহস্যময়তা”।
তবে শুনতে খারাপ হলেও আর একটা কথা বলা দরকার। আমাদের আজকের আন্তঃসংযুক্ত জীবনযাত্রায় সত্যিকারের রহস্যময়তার সু্যোগ খুবই কম, তাই যখন আমি এই “রহস্যময়” কথাটা শুনি তখন প্রথমেই আমার মনে হয় hype বা marketing gimmickএর কথা। রহস্যময়তা কবির ধর্ম নয়, বড় বড় চিন্তাভাবনা নিয়ে দার্শনিক হওয়াও কবির ধর্ম নয়, কবির ধর্ম তার চিন্তা ভাবনাগুলি, যতই সাধারণ হোক, সূক্ষ্মভাবে, চমৎকার ভাষায়, অপরূপ সুন্দর ভাবে প্রকাশ করা। এমিলি ডিকিনসন লিখছেন –
This was a Poet – It is That
Distills amazing sense
From ordinary Meanings –
And Attar so immense
শৌনক দত্ত: কবিতা লেখা তোমার কাছে কি সচেতন প্রয়াস? অনেকে যে বলেন, কবিতা আমি লিখি না, কেউ আমাকে দিয়ে লেখায়—এ ব্যাপারে কী বলবে? বা তোমার কাছে কবিতা কীভাবে ধরা দেয়?
অমিত চক্রবর্তী: আমার কাছে কবিতা লেখা আসে দুটো পর্বে। প্রথম পর্ব হচ্ছে কবিতাটার আইডিয়াটা বা ভিশ্যন (vision) – সেটা প্রায়শই আসে অজ্ঞাতসারে, তাতে কোনো পরিকল্পনা থাকে না, সে দেখা দেয় ঘুমের মধ্যে, মুভি দেখতে দেখতে, গান শুনতে শুনতে, ছবির প্রদর্শনীতে, বই পড়তে পড়তে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর “প্রথম আলো” বইতে রবীন্দ্রনাথের “দাঁড়াও আমার আঁখির আগে” গানটির লিরিক প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্রথম পঙক্তিটি আসে আকাশ থেকে সহসা অশনিপাতের মতন। কোনও পূর্বপ্রস্তুতি থাকে না, মনের গহন কোণেও যেন এই চিন্তার অস্তিত্ব ছিল না। পর পর ঠিক এই চারটি শব্দ আগে কেউ সাজায়নি, যদিও কোনও শব্দই নতুন নয়। “
দ্বিতীয় পর্বে আসে কবিতার কারুশিল্প – সেটা অনেক বেশি সচেতন প্রয়াস। সেখানে শব্দচয়ন নিয়ে, বাক্যগঠন নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা চলে। তারপর কবিতাকে ফেলে রাখতে হয়। রান্নায় যেমন “খোলা থেকে নোলায়” চলে না, কবিতাতেও তাই। নির্মাণবিদ্যা জানা না থাকলে জীবনের অভিজ্ঞতা, জীবনদর্শন অনুভূতির প্রকাশ, বা অন্য যে কোনো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবের প্রকাশ হয়ে দাঁড়াতে পারে জোলো অথবা মিনমিনে। আমি সাধারণত কবিতাকে ফিরে দেখি লেখার এক সপ্তাহ পর একবার, আর মাস তিনেক পরে আর একবার। তারপর কবিতা রেডি হয় প্রকাশের জন্যে বা তাকে একেবারে ছুঁড়ে ফেলা হয় ডাস্টবিনে। যে মুহূর্তে আমি send button টা টিপছি, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে এই কবিতাটি নিয়ে পাঠককে এর চেয়ে বেশি কিছু আমার আর দেওয়ার নেই।
শৌনক দত্ত:কবিতা লেখার জন্য পারিপার্শ্বিকতাকে কতখানি স্বীকার এবং কতখানি অস্বীকার করতে হয়েছে তোমাকে?
অমিত চক্রবর্তী: দ্যাখো একদিকে আমি বহুদিন প্রবাসী আর অন্যদিকে আমি বড় হয়েছি মফস্বলের এক নিম্ন মধ্যবর্তী পরিবারে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে প্রাণখোলা ভাবে মিশে। জীবনের অভিজ্ঞতার এই বহুত্ব আমার সম্পদ। এটাই আমাকে কবিতায় স্বতন্ত্র হতে শিখিয়েছে। তার সঙ্গে আমার বিভিন্ন বিষয়ের পড়াশুনো – বাংলা এবং ইংরেজি কবিতা বা সাহিত্য তো বটেই, এছাড়া বিজ্ঞান, দর্শন, সঙ্গীত, অর্থনীতি সবেতেই আমার উৎসাহ এবং উৎসাহ মানেই আমাকে ব্যাপারটা বুঝতে হবে গোড়া থেকে – সেটা হয়তো আমার পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে ট্রেনিংইয়ের মানসিকতা – আমার কবিতাকে একটা ভিন্ন এবং প্রামাণিক দৃষ্টিকোণ দেয় যেটা আর কারুর পক্ষেই নকল করা সম্ভব নয়।
শৌনক দত্ত: তোমার কবিতা সমাজ-বাস্তবতানির্ভর। কবিতায় এক ধরনের বিবৃতি বা বক্তব্য প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা আছে। তুমি কি মনে কর কবিতার মাধ্যমে সমাজ বদল বা এ রকম কিছু সম্ভব?
অমিত চক্রবর্তী: তোমার এ প্রশ্নের উত্তর দিই আমার কবিতা ‘রিলকে এসেছিলেন স্বপ্নে কাল’ থেকে কয়েক লাইন উদ্ধৃত করে –
কিন্তু আমি যে অপূর্ণতা খুঁজছি রাইনার,
আমি যে অভাব ত্রুটি খুঁত জমাচ্ছি গ্রাফিতিতে, প্রাচীরলিপির
ক্রমান্বয়ে, পূর্বাচার্য রিলকে আমি যে ভিড় চাই, অসঙ্গতির
ক্ষত, না রিলকে, আমি খুঁড়ছি মানুষের
ছয় সিগমা বিস্তার, তার বেপরোয়া ভাঙন। তেরছা আলোতে
তাদের সাদাকালো সিলুয়েট, সবজান্তা উইচ হান্ট, অভিশাপ,
আমি খুঁজছি নেচারের ঝাপসা নূপুর, অবিচারের স্বরলিপি।
আমি লিখতে চাই মানুষে-মানুষে, মানুষে সমাজে, বা মানুষে -প্রকৃতিতে জটিল সম্পর্ক নিয়ে। সমাজতো আর কিছুই নয়, বহু মানুষের তৈরী একটি প্রতিষ্ঠান। এই “বহু” জিনিসটা কিন্তু নতুন রূপ দেয় প্রকৃতিতে – পদার্থবিদ মাত্রই জানেন বহু কণা একসঙ্গে কেমন নতুন বিস্ময় তৈরী করতে পারে। সমাজের ক্ষেত্রেও তাই। “দেবী” ছবি প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় একবার বলেছিলেন –
“I make the kind of films that I want to make. I make the kind of films that I enjoy making, films that engages my mind, my attention, my creativity…”
আমার নিজের কবিতা সম্বন্ধেও আমার একই কথা।
কবিতার মাধ্যমে কি সমাজবদল সম্ভব? না, আমি তা মনে করি না। কবিতা যা পারে তা হচ্ছে একজন একজন করে মানুষের মনে দাগ ফেলতে, তার মনে প্রশ্ন জাগাতে, তাকে উদ্বুদ্ধ করতে, আলোকিত করতে। সমাজবদল সে ক্রমিকই হোক বা আচমকাই হোক, “বহু” মানুষের ব্যাপার, কবিতার এক্তিয়ারে পড়ে না।
শৌনক দত্ত: জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই কি কবিতা নিয়ে আসে? কবিতার জন্য কতখানি প্রতীক্ষা, কবিতাকে মনের মধ্যে তৈরি হয়ে উঠবার জন্য কতখানি সময় প্রয়োজন বলে তুমি মনে কর?
অমিত চক্রবর্তী: কবিতায় কী সম্ভব? এ অন্বেষণ আমার সারা জীবনের। আমি মনে করি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই কবিতা আনতে পারে, ঠিক সেই মুহূর্তে মনে কবিতা হিসেবে রেজিস্টার না করলেও, অভিজ্ঞতাটা রেকর্ড হয়ে থাকে, অনেক সময় পরে মনে ভেসে ওঠে, তার মধ্যে আবার কিছু কিছু লেখার জার্নালে যায় কবিতার খসড়া হিসেবে। আর তারও একটা ক্ষুদ্র অংশ পরিপূর্ণ কবিতার রূপ নেয়। এ যেন একটা পিরামিড। বেসটা চওড়া কিন্তু শীর্ষটা সরু। বেসটা যত চওড়া হবে পরিপূর্ণ কবিতার সম্ভাবনা তত বাড়বে। আর বেসটা বাড়ে একদিকে একটা কৌতূহলী, সংবেদনশীল মন থেকে আর অন্য দিকে দীর্ঘদিন ধরে সেই কৌতূহলী মনকে কবিতা চেনার ট্রেনিং পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে।
শৌনক দত্ত: তোমার কবিতায় লক্ষ্য করেছি ইমেজারির (দৃশ্যকল্প) একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। অনেক কবিতায় দেখেছি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাকে ভেঙে অদ্ভুত বিমূর্ততায় নিয়ে গেছো, যে বিমূর্ততা দিশাহারা হয় না, বরং ইঙ্গিতবাহী। ইমেজারি বিষয়ে তোমার ভাবনাটা বিস্তারিত জানতে চাই।
অমিত চক্রবর্তী: বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে কবিতায় যে চিত্রকল্পবাদী (Imagist) আন্দোলন আসে, এজরা পাউন্ড ছিলেন তার একজন পুরোধা। পাউন্ড বলছেন – “Do not be descriptive, remember that the painter can describe a landscape much better than you can”. অর্থাৎ কবিতায় থাকতে হবে বর্ণনার চেয়ে বেশি কিছু। পাউন্ডের “In a Station of the Metro” কবিতাটাই ধরি – পাউন্ড লিখছেন ১৯১১ সালে প্যারিসের কনকর্ড স্টেশন থেকে বেরোবার সময় তিনি দেখছেন একটা সুন্দর মুখ, তারপর আরো একটা, একটার পর একটা, এরপর একটি বাচ্ছার মুখ, আর সবশেষে এক সুন্দরী মহিলার মুখ। এক বছর ধরে কাটছাঁট করে তাঁর প্রথমে লেখা ৩০ লাইনের বর্ণনামূলক কবিতা শেষে দাঁড়ায় এই দু’ লাইনের কবিতায়
The apparition of these faces in the crowd:
Petals on a wet, black bough.
যেটা কিনা অনেক বিশ্লেষকের মতে ইংরেজি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কবিতা।
কবিতায় দৃশ্যকল্প আঁকতে আমি পাঠকের অন্তরে যে আলো তাকে কিভাবে প্রভাবিত করতে পারি সেই কথা ভাবতে থাকি। আমার কাছে তুলি রঙ নেই, আছে একক শব্দ এবং শব্দরাজির প্যাটার্ণ এবং প্রতিধ্বনি। সেই দিয়ে আমাকে পাঠককে প্রলুব্ধ করতে হবে, মোহজালে জড়িয়ে ধরতে হবে প্রথমে, আর সব শেষে রেখে যেতে হবে এক অদ্ভুত অতৃপ্তি, কবিতাটা আবার পড়ার টান।
একটা উদাহরণ দিই আমার কবিতা “দোলা” থেকে– জানি না কতটা সফল হয়েছি –
আমি তখন ইনসিকিওর
আর সে বলেছিল দোলা দাও আমায়
অথচ দোলা একটা ভারসাম্যের ব্যাপার
ঠিক টিঁকবে কতক্ষণ বোঝা মুশকিল
…
এ অঞ্চলে তাই দ্রুত হাঁটা ভাল
ভাল ওই সাঁকো এড়িয়ে
জলের পাশ বরাবর ঘোরা
দোলা মানে কোনো তরঙ্গ নয় এখানে, একটা
আচমকা খুশি, বা হঠাতের বাঁশি সুর
কোন কোন দিন সামঞ্জস্য থাকে এতে
অজস্র ঢেউ ঘিরে সচেতন
আবার কোন কোন দিন অন্য রকম নেশা
নিজস্ব দুলুনি এবং প্রতিকূল।
শৌনক দত্ত: তোমার কবিতায় প্রায়শই একটা অস্তিত্ব-বোধের এক্সটেনশন লক্ষ করেছি। এ বিষয়ে যদি বিস্তারিত কিছু বলো।
অমিত চক্রবর্তী: জানো বোধহয় মিল্টন মাত্র ৪৪ বছর বয়সে অন্ধ হয়ে যান। অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ১৬৫৫ সালে মিল্টন লেখেন তাঁর Sonnet 19: When I consider how my light is spent. আমারও তেমনি প্রতি মুহূর্তেই মনে হয় সময় কমে আসছে, এত আইডিয়া মাথায়, এত লেখা বাকি, কিন্তু সময়ের সাথে রোজই ফেন্সিং যেন – When I consider how my time is spent । তুমি যাকে “অস্তিত্ব-বোধের এক্সটেনশন” বলেছ, হয়ত সেটা তীব্র হয়েছে এই বোধ থেকেই। আর সেই “অসহ্য বোধ” ছাড়া সৃষ্টি সম্ভব নয় – “জীবনের এই স্বাদ– সুপক্ব যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের” আর তার সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত লেখা-হয়ে-যাওয়া কবিতা অসহ্য বোধ হলে তবেই নতুনের জন্ম হয়। উমবার্তো একো বলছেন – By the age of 70, he who doesn’t read will have lived only one life. He who reads will have lived 5000 years. Reading is immortality backwards. আর নতুন সৃষ্টি করার ক্ষমতা দেয় immortality forwards, কিন্তু সেই সৃষ্টি নতুন হতে হবে। এ ব্যাপারে আমি পুরোপুরি আমেরিকান অ্যাকাডেমিক কালচারের শিষ্য– You are as good as your last paper/poem এবং What have you done for me lately? তার জন্যেই বোধহয় আমার ভেতরে এত ছটফটানি, কী করে আরো নতুন ভাষা তৈরী করব, আরো নতুন চলন, বাক্যগঠন – আমার নিজের কবিতার লাইন তুলে বললে – “এক জীবন উপচে পড়ে অন্য জীবনের খাঁজে, অশ্রুত, অনচ্ছ – কী করে মুক্তি পাব এই নিরন্তর ছটফটানি থেকে, এই বিরামহীন কী যেন চাই, কী যেন চাই, এই হারানো-প্রাপ্তি ঐতিহ্যের ঢেঁকিকল থেকে”।
শৌনক দত্ত:তোমার বিবেচনায় আধুনিকতার মূল উপাদানগুলো কী? বাংলা কাব্যের আধুনিকতা কতখানি ধার করা বা আরোপিত, আর কতখানি মন আর পরিস্থিতির ব্যাপার?
অমিত চক্রবর্তী: এই প্রসঙ্গে প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে আধুনিক আর সমসাময়িক এক নয়। যদি এক হতো তাহলে সব যুগই “আধুনিক” হতো তাদের কালে। আমার কাছে আধুনিক মানসিকতার শুরু ইউরোপিয়ান রেনেসাঁস থেকে যার প্রভাব বাঙলায় সমাজবিজ্ঞানে রামমোহন এবং বিদ্যাসাগরে, এবং কাব্যে মধুসূদন এবং রবীন্দ্রনাথে। তার সঙ্গে যোগ হবে আধুনিক বিজ্ঞান। সমাজে প্রত্যেক মানুষের গুরুত্ব থাকবে একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে, কোনো গ্রুপের সদস্য হিসেবে নয়। ধর্ম আর বিজ্ঞানের ডোমেইন আলাদা এটা মেনে নিতে হবে। নারী পুরুষের সমান অধিকার থাকবে – নারী পুরুষ ইউনিটে, নারী পুরুষের সহায়ক নয়, equal partner – এটা মেনে নিলে খুব সহজেই বোঝা যাবে যে ধর্ষিত হওয়া কখনই, কোনো অবস্থাতেই, কোনো কারণেই নারীর অপরাধ হতে পারে না। এর সঙ্গে আধুনিক মানসে আসবে পরিবেশ সম্বন্ধে সচেতনতা – তা না হলে পুরো মানব সভ্যতাই হয়তো বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কবিতার কথায় আসি। কবিতায় “modernism” একটা বিশেষ কাব্যিক আন্দোলনের নাম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, মর্ডানিস্ট কবিরা খন্ডাংশকে নতুন সাজে কবিতায় উপস্থাপন করলেন আত্মসচেতনতার উপকরণ হিসেবে। কবিতায় খন্ডাংশ ব্যবহার যেন হয়ে দাঁড়ালো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেরকার ইউরোপের সামাজিক, মনস্তাত্বিক, এবং আধ্যাত্মিক বিভাজনের দর্পণ। টি এস এলিয়টের “The Waste Land” তুলে ধরে এক ভেঙেপড়া শহরের যাপনচিত্র – কবিতাটি নিজেই বহু অংশে খন্ডাংশে সাজানো, টুকরো হয়ে যাওয়া স্তবক এবং লাইন যেন সাংস্কৃতিক জঞ্জালের ঢিবি, যার মধ্যে দিয়ে পথ খুঁজে বেড়াচ্ছে আধুনিক কালের মানুষ। এলিয়ট ছাড়াও এজরা পাউন্ড, এবং তার পরে আরো অনেক আমেরিকান কবি এই টেকনিক কবিতায় ব্যবহার করেছেন।
আমরা যদি সমাজ বিজ্ঞানে রামমোহন এবং বিদ্যাসাগরের কাজকে ধার করা বা আরোপিত না বলি, যদি ভারতীয় আধুনিক বিজ্ঞানের ল্যাবে নিউটন বা আইনস্টাইনের প্রভাবকে আরোপিত না বলি, তাহলে কবিতার ক্ষেত্রে এ প্রশ্ন উঠবে কেন? কবিতার কাজ যদি হয়, যেভাবে কোলরিজ বলেছেন – poetry—the best words in their best order, তাহলে সেই টেকনিক আমি শিখব যেখান থেকে পারি। এই প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করব বিখ্যাত নারীবাদী কবি এড্রিয়ান রিচের মন্তব্য –
“I know that my style was formed first by male poets, what I chiefly learned from them was craft. But poems are like dreams: in them you put what you don’t know you know.”
শৌনক দত্ত:ইউরোপীয় প্রভাব এবং সূত্র ছাড়া আর কোনো উপায়ে কি বাংলা কাব্যে/সাহিত্যে আধুনিকতার বিকাশ হতে পারত? তুমি কী মনে কর?
অমিত চক্রবর্তী: কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জল্পনা করা আমার একদমই প্রিয় বিনোদন নয়, আর জানো বোধহয় আমেরিকান বেসবল প্লেয়ার Yogi Berra কী বলেছিলেন – “It’s tough to make predictions, especially about the future.” যদিও তুমি আমাকে অতীত নিয়ে জল্পনা করতে বলছ, কিন্তু মনে রেখো অতীতের এই একটি বাস্তবায়নই আমাদের জানা আছে, আরো অনেক সম্ভাবনা নিশ্চয়ই ছিল যেগুলি বাস্তবে ঘটেনি। তবে একটা কাহিনী খুবই আলোকিত করেছে আমাকে – জাহাঙ্গীরের দরবারে যখন টমাস রো প্রথম দূরবীণ নিয়ে আসেন, তখন সবাই তাতে চমৎকৃত হয়, আরো অনেক দূরবীণ আনতে বলে পরের বারে, কিন্ত কেউ একবারও জিজ্ঞেস করেনি যে জিনিসটা কাজ করে কিভাবে?
যেহেতু আমি অতীত পাল্টাতে পারি না, ভবিষ্যতের কবিতার ফর্ম তৈরীর কথা বলি। আমার এক প্রিয় কবি Jericho Brown-এর কথা বলি। জেরিকো ব্রাউন পুলিৎজার পেয়েছেন ২০২০ সালে তাঁর The Tradition বইটির জন্যে। ইনি সনেট লিখেছেন, গজলও এবং তার সঙ্গে তৈরী করেছেন এক নতুন, নিজস্ব ফর্ম যার নাম দিয়েছেন ডুপ্লেক্স (Duplex). সংক্ষেপে বললে গজল তৈরী হয় ৫ বা তারও বেশি দু-লাইনের শ্লোক (couplet বা যুগ্মক) দিয়ে। প্রথম যুগ্মক অন্ত্যমিলটা দেখায় আর তারপর আসে একটা “ধুয়া” (refrain) – যেটার পুনরাবৃত্তি করা হয় কবিতা জুড়ে। একদম শেষের যুগ্মক-টায় কবির পরিচিতি বা নিজস্বতার স্বাক্ষর রাখা হয় প্রথম বা তৃতীয় পুরুষে কিছু কথা বলে।
জেরিকো ব্রাউন যে নতুন ফর্ম তৈরী করেছেন ডুপ্লেক্স নাম দিয়ে তার মধ্যে গজলের এবং আমেরিকার ব্লুজ সঙ্গীতের মাধুর্য বজায় রাখা হয়েছে, পাশাপাশি সনেটের ১৪ লাইনের ফর্মও বজায় রাখা হয়েছে কবিতার গঠন হিসেবে।
বাংলায় গজল লেখার পথিকৃৎ অতুলপ্রসাদ সেন ও নজরুল ইসলাম। এর পাশাপাশি রয়েছে আমাদের ট্রাডিশ্যনাল ফর্মের বিশাল ভান্ডার – চর্যাগীতি থেকে ব্রজবুলি গীতি হয়ে মঙ্গলকাব্য এবং পল্লীগীতিকার অঢেল সম্পদ। বাংলা কবিতা কি এইসব ফর্মের আধুনিকীকরণ নিয়ে ভাবছে?
শৌনক দত্ত:বোদলেয়ার একবার বলেছিল, কবিতা যা, তা আবৃত্তিযোগ্য না। বা, যা আবৃত্তি করা যায় না, তাই কবিতা। তোমার ভাবনা কি?
অমিত চক্রবর্তী: আমার কাছে কবিতার সম্ভাবনা এবং বিস্তার অনন্ত। তাই এই ধরনের কমেন্ট আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এইটুকু বলতে পারি যে, যে কবিতা আবৃত্তি করা সহজ, তাতে সহজ ছন্দ থাকে বা কবিতাটা বর্ণনা মূলক হয়। এই প্রসঙ্গে বলি যে, আমেরিকান কবিতামহলে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে কবিতার “accessibility” নিয়ে, অর্থাৎ পাঠকের কাছে কবিতাকে সুগম করা নিয়ে। এই আলোচনা তীব্র হয়েছে এডা লিমোন (Ada Limón) ২০২২ সালে আমেরিকার জাতীয় কবি (poet laureate) নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। কবিতার “accessibility” নিয়ে নানাজনের নানা মত কিন্তু দুটো ভাবনা প্রাধান্য পাচ্ছে – ১) যারা সাহিত্যের সঙ্গে একেবারেই যুক্ত নয় তাদের কাছে কবিতাকে নিয়ে যাওয়া – এ ক্ষেত্রে আবার দুটো ধারা – ১ক) slam poetry – এটি হলো high-energy কবিতা পাঠের performance যাতে কি না Taylor Mali বিশেষ নাম করেছেন (আমার এখানে অমিতাভ চৌধুরীর কথা মনে পড়লো, উনি তবলাসঙ্গতে কবিতা পড়তেন), আর ১খ) সোশ্যল মিডিয়ায় ছোট – ৬-১০ লাইনের- instapoetry র ব্যবহার যাতে বিশেষ নাম করেছেন Rupi Kaur এবং Tyler Knott Gregson। অন্যদিকে ২) যারা গল্প উপন্যাস পড়তে ভালোবাসেন কিন্তু আধুনিক কবিতা শুনলেই “দুর্বোধ্য” ভেবে সরে যান পাতা না উল্টিয়ে, তাদের কাছে কবিতাকে সুগম করা। এক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন গল্পবলা কবিতার পুনর্জাগরণ ঘটছে। প্রচ্ছন্ন কথাটা গুরুত্বপূর্ণ এখানে, ভাষার স্বচ্ছতা এবং সুসঙ্গত প্রকাশ বড় ব্যাপার কিন্তু কবিতার দ্যোতনাকে বিসর্জন না দিয়ে। এতে নেতৃত্ব রয়েছে, Ada Limón, Diane Seuss, এবং Jill Osier-এর। এডা লিমোনের কথা আগেই লিখেছি, আমেরিকার জাতীয় কবি (যে পোস্টে আগে ছিলেন নোবেল লরিয়েট লুঈজ গ্লিক), ডায়ান সুস পুলিৎজার পেয়েছেন ২০২২ সালে, জিল ওঝর তাঁর প্রথম কবিতা বইয়ের জন্যে ইয়েল ইউনিভার্সিটির বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ Younger Poet পুরস্কার পেয়েছেন।
শৌনক দত্ত: তোমার প্রিয় কবি কে? তাকে কিভাবে পাঠ কর?
অমিত চক্রবর্তী: শুধু একজন মাত্র প্রিয় কবির নাম বলতে বললে মুশকিলে পড়ব। তবু চেষ্টা করি – এক্ষেত্রে আমি বলব এই কবি হবেন এমন একজন তাঁর কবিতায় বিষয় ভিত্তিক বিস্তার থাকবে এবং তিনি জীবনের সাধারণ অভিজ্ঞতাকে কবিতায় রূপ দিতে দক্ষ হবেন। এমনই একজন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত – তাঁর লেখায় এই ব্যাপ্তির স্বাদ আমরা বিশেষ করে পাই তাঁর কাব্যসংগ্রহের ৩য় খন্ডে। যেমন ধর এই কবিতাটি
অগ্নিমূল্যবোধে
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
সোনারপুরের পসারিনীর কচুর লতি বিক্রি হয়নি আজ।
আমরা ক’জন কেনাকাটার ফর্দ নিয়েই এসেছিলাম হাটে,
কিন্তু কিছুই কেনা হয়নি। মন্ডপের এক-এক সোপান ছুঁয়ে
দেখতে থাকি পসরা তার দাঁড়িপাল্লার একদিকে পুঞ্জিত,
কী-এক অগ্নিমূল্যবোধে! পসারিনীর উত্থিত ডান হাত
আর আমাদের মধ্যে এখন বাণিজ্যহীন দিগন্ত নেমেছে।
অলোকরঞ্জনের পড়াশুনার গভীরতা তাঁর লেখা পড়লেই বোঝা যায়। অথচ তাঁর কবিতা ভারাক্রান্ত হয়নি বিদ্যায়, কবিতাই হয়ে উঠেছে। নিচের এই কবিতাটিতে দেখবে অলোকরঞ্জনের আর্টের ইতিহাস নিয়ে গভীর জ্ঞান এবং বিশ্লেষণ করার দক্ষতা। তার সঙ্গে তরুণ কবিদের সব প্রতিকূলতার মধ্যেও কাজে লাগবে এরকম একটি সূক্ষ্ম দর্শনশক্তি।
এঁকে যাও, আন্তনিও
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
‘এঁকে যাও, আন্তনিও, সময় কোরো না অপব্যয়,
disegnia Antonio, disegnia e no per der tempo’
বলতে বলতে মিকেলেঞ্জেলো
– সকল শিল্পীর শিল্পী – একরাশ আলেখ্য আঁকলেন।
আন্তনিও মাঝারি মেধার ছেলে, তার হাতে অঢেল সময়
ভেবেছিল, পাঁচজন প্রযোজক ছিল তার, তাছাড়া আ-নগ্ন
দিব্যাঙ্গনা-দেখতে কিছু দামিনী কামিনী, তাই তার
আঁকবার সময় কই?
মিকেলেঞ্জেলোর
বাঁচার সময় খুব কম ছিল, তবু তিনি লাল
খড়ি দিয়ে বেশ-কিছু স্কেচ আঁকলেন।
আমরা আজ
প্রদর্শনীর মধ্যে দুর্মূল্য সেসব ছবি দেখে
ভাবলাম ঈশ্বর প্রাপ্য জলের মতন ফ্যালনা দামে।
কবি ও কথাসাহিত্যিক। জন্ম ৭ আগস্ট, উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে। স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির সূত্রপাত। সম্পাদনা করেছেন বেশ কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকা এবং ওয়েবজিন। বর্তমানে ইরাবতী ডেইলি ওয়েবজিনের সাথে যুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : জল ভাঙে জলের ভেতর [২০১১], ঠোঁটে দাও জ্যোৎস্নার বিষ [২০১২], ডুব সাঁতার [২০১৭], নিরুদ্দেশ গাছে সন্ন্যাসীর মুখ [২০১৭]। গল্পগ্রন্থ : কারুময় খামে অচেনা প্রেম [২০১২]। উপন্যাস: ইতি খন্ডিত জীবন [২০২২]। প্রবন্ধ সংকলন: মাটির গন্ধ [২০২২]। সম্পাদনা গ্রন্থ: দুই বাংলার সাম্প্রতিক গল্প [২০২২] ।
শখ বইপড়া, লেখালেখি, ছবিতোলা, গান শোনা ও ভ্রমণ। বেশ কিছু গানও লিখেছেন তিনি।