Categories
অনুবাদ কবিতা: অনুভব তুলসী’র অসমিয়া কবিতা । বাসুদেব দাস
আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

১৯৬০ সনে অসমের নগাঁও জেলায় কবি অনুভব তুলসীর জন্ম হয়। ‘নাজমা’(১৯৮৫), ‘দোরোণ ফুল’(১৯৯৬), ‘দেও চেলেং’(২০১০),‘সম্পর্ক ‘(২০১৩) ইত্যাদি উনিশটি কাব্যগ্রন্থ এবং ‘আন্নাআখমাটোভার কবিতা’(২০০১) নামে অনূদিত কাব্য সঙ্কলনের কবি ‘মুনীনবরকটকী’ পুরস্কারে সম্মানিত।ভারত সরকারের ফেলোশ্বিপ (২০০০-২০০২)নিয়ে দেশ বিদেশের অনেক সাহিত্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। শ্রী অনুভব তুলসী অধ্যাপনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মৃত্যুর কয়েকদিন পরে মানুষ নক্ষত্র
মৃত্যুর কয়েক দিন পরে মানুষ নক্ষত্র হয়
আমি জানি না যদিও সেদিন শয্যাগত
বাবা দুই হাতে টানা হেঁচড়া করে নিজের চুল
ছিঁড়ে ফেলতে নিজের চোখে দেখেছিলাম।
রক্তমাখা কাপড় খুলে বাবা উলঙ্গ হলেন
চামড়ার নিচে চন্দনের ছন্দময় শরীরটার দিকে
আমি যে বিস্মিত হয়ে তাকিয়েছিলাম।
মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমি বললাম
‘তোমার দেবত্বের অর্ধেক আমাকে দাও,বাবা।’
মমতা নামের পার্থিব প্রিয় নদীর কলতান
সেদিন বাবার কানে পড়ল না, কেননা’
আঙ্গুলের অভিনব মুদ্রায় মগ্ন হয়ে
বাবা তখন ছিঁড়ছিল দেবোৎপল।
তখনই বাবার নাম লেখা আশি বছরের একটি নৌকা
বৈঠার সঙ্গে নিয়তি বালিতে পুঁতে ফেলল।
মায়েরা ইতিমধ্যে কান্নাকাটি শুরু করল–
আস্ফালনে অমাবস্যার আকাশ ভেঙ্গে পড়বে যেন।
মৃত্যুর কয়েক দিন পরে মানুষ নক্ষত্র হয়
আমি জানি না যদিও সেদিন সদ্যমৃত
বাবার দুই চোখের জ্বলন্ত চিতাকাঠ উজ্জল
সেই হাসিটাতেই আমরা হলাম উদ্ভাসিত
অভাবের গান
এতদিন অভাবকেই বুঝিয়েছি
নতুন এক জোড়া মোজার
অভাবের কথা
আমার ছেঁড়া মোজা জোড়া
যে কথা বোঝে না
কোনোমতেই
এতদিন অভাব নিজেই ঘুরে বেরিয়েছে
অভাবের তালিকা নিয়ে
হাটে বাজারে
যেখানে
অভাব বিক্রেতাই
ক্রেতার অভাবের
অভাবের গান অনেক হল
আর হয়তো নাই বা গাইলাম
ছেঁড়া মোজা ছেঁড়া না বলে
যদি ধরে নিই
তখনও
থেকে যায় অভাব
অভাবের
প্রেমিক স্কুটার
বৃষ্টির অন্ধ প্রেমিক
পা রাখার মতো জায়গা নেই
এটা প্রেমিকেরই পৃথিবী।
সেদিন রাতের কদমকলি বৃষ্টিতে ভিজে
শ্যেনের যাক এই প্রেমিকের
ইঞ্জিন উদ্বেলিত চাকা মাতাল
ব্রেক বিভোর
গভীর ভাবে ছানি পড়া হেড ল্যাম্প
ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলমিল।
উন্মাদ প্রায় প্রেমিক এবং ট্রাকের
মুখোমুখি সংঘর্ষ–
প্রেমিক ছিটকে পড়ে।
পড়া থেকে উঠতে পারে কি পারে না
নগরের খবরের কাগজ সেই বিষয়ে নীরব
পৃষ্ঠাগুলি যেহেতু নিজের সর্বস্ব
খরচ করে বৃষ্টির নামে
ছিল
ছিল এই ঠাই
কলরোল উল্লাস
হাসি ঠাট্টার
হৈ চৈ মাঠ
সেই সমস্ত কিছু না ধুয়ে নিল
এখন সেখানে কিছুই নেই
একসময় যা ছিল উড়ন্ত
আজ সে
অলেখ অযুত
রঙ্গিন ঘুড়ির
ধ্বংসস্তূপ
বাঘ
বাঘটা মরে রইল
মরা বাঘটা
দিনের আকাশের
চাঁদটার মতো হল
মরা বাঘটার জন্য
হরিণেরও করুণা জন্মাল,
মুখ থেকে ছড়াল
মরা বাঘের গন্ধ
ঈর্ষাকাতর সেই সমস্ত মুখ
মুখর হল
উঠে-পড়ে লাগল
সবগুলি হাত
বিনষ্ট করায়

অনুবাদক