| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
শিশু-কিশোর কলধ্বনি

বৈদূর্যমণি রহস্য

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

 

তিব্বতের এক ছোট্ট রাজ্যের ছাপোষা এক রাজার নাম দ্রাশি। এই রাজামশাই তাঁর নিজের অতি প্রিয় মহার্ঘ বৈদূর্যমণিটি হারিয়েছেন। তাঁর বংশের ঐতিহ্য মণ্ডিত সেই দুর্লভ রত্নটির কদর যুগ যুগ ধরে। সবাই জানত এর কথা। সূর্যের আলোক রশ্মি পড়লে সে মণির উজ্জ্বল দ্যুতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ত। রাজামশাই প্রতিদিন সকালে সিংহাসনে বসেই মণিটি হাতে নিয়ে ঠিক সূর্যের আলোয় ধরতেন তাকে। এই ভুবনের দশ দিকে কিভাবে আলো ঠিকরে পড়ে দেখে বড়োই উপভোগ করতেন তিনি। তাঁর ভৃত্যরা রোজ এই দৃশ্য দেখত আর মনে মনে ভাবত বাবা! কি আদিখ্যেতা রাজার এই মণি টিকে নিয়ে। সৎ ভৃত্যেরা ভাবত এমনি হতেই হয়। রাজা-রাজড়ার ঘরে এমন ধন থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অসৎ ভৃত্যেরা একদিন ভাবল রাজার এই মণিটি যেমন করেই হোক চুরি করে আনতে হবে। তারা সেই মুহূর্তেই মানে রাজামাশাই যখন মণিটিকে হাতে নিয়ে প্রতিদিন পরখ করেন সেই সময়েই চুরি করবে স্থির করল তারা।

একদিন সকালে সূর্যের আলোয় মণিটির দিকে তাকিয়ে রাজা দ্রাশি যেন বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন। বৈদূর্যমণিটির সর্বাঙ্গ থেকে রামধনু রঙ ঠিকরে পড়ছে চতুর্দিকে। রাজা সেই আলোর ঝলকানিতে দিশেহারা হয়ে পড়লেন। ভাবলেন আজ তিনি একটু দূরে রাখবেন মণিটিকে। আর সামান্য দূর থেকে পরখ করবেন তার জ্যোতি। রামধনুর সাতটি রঙ গুনছিলেন নিবিষ্ট চিত্তে। ঠিক সেইসময় বৈদূর্যমণিটির জ্যোতি আর দেখতে পেলেন না। স্তব্ধ হয়ে গেল চারিদিক। তাঁর অসাধু ভৃত্য টি সেই ফাঁকে বৈদূর্যমণিটিকে হাতিয়ে ফেলেছে। রাজা বুঝলেন না। চোখে সব অন্ধকার কেন দেখছেন তিনি? ভাবতে ভাবতে তিনি তলব করলেন পেয়াদাদের। কোথায় গেল আমার সেই মহামূল্যবান বৈদূর্যমণিটি? কেন আর দেখতে পাচ্ছেন না তাকে? তার বদলে যেখানে মণিটি ছিল সেখানে একখণ্ড বরফের চাঙড় পড়ে থাকতে দেখলেন তিনি। রাজার বিশ্বাসী  ভৃত্যেরা বলতে লাগল, রাজাই হও আর যাই হও বোকাদের কোনও স্থান নেই এই পৃথিবীতে। অমাবস্যার ঘোর আঁধারে নয়ত ইয়াকের কোলের সামনে থেকে তার নিজের বাছুর চুরি হয়ে যায়!

রাজা ভাবলেন, সত্যিই তো। তিনি কত বড় অসতর্ক এক বোকা লোক, যার চোখের সামনে দিয়ে অমন চুরি হয়ে গেল। খুব দুঃখ পেলেন তিনি মনে মনে। 

এদিকে পাশাপাশি দুটি পড়শি রাজ্য ছিল। একটি বেশ বড় আরেকটি অপেক্ষাকৃত ছোট। বড় রাজ্যের রাজার নাম ছিল গেজংগংগডু। আর ছোট রাজ্যের রাজার নাম দ্রাশি। বড় রাজ্যের রাজা ভাবলেন ছোট রাজ্যটিকে নিজের আয়ত্ত্বে আনবেন। তবে তার আগে আমাকে দেখতে হবে সে রাজ্যের রাজা কেমন ধূর্ত নাকি জ্ঞানী অথবা বোকা নাকি অতি বুদ্ধিমান। গেজংগংগডু র এবার হাতে কলমে দ্রাশি কে পরীক্ষা নেবার পালা।

রাজা দ্রাশি কে তিনি নিজের দরবারে ডেকে পাঠালেন। একটি মেয়ে ঘোড়া এবং একটি বাচ্ছা ঘোড়াকে সঙ্গে নিলেন।  ঘোড়াদুটির এক রং আর মোটামুটি সমান আকৃতির। সেই ছোট রাজ্যের রাজাকে এবার তাঁর প্রশ্ন করার পালা। কোন্‌টি কোন্‌ ঘোড়া তাকে জিগেস করবেন ঠিক করলেন। দ্রাশিকে জিগেস করায় তিনি ঘোড়াদুটিকে দেখে বলতে পারলেন না কোন্‌টি মেয়ে ঘোড়া, কোন্‌টি ছোটো। বাড়ি ফিরে গিয়ে দ্রাশি তাঁর স্ত্রী কে বললেন সব। তাঁর স্ত্রী বললেন, মেনে নাও। সহজ হয়ে যাও। পারোনি তো কি হয়েছে? তার মানে কি তুমি আর রাজা নও?  আমি তোমাকে বলে দেব এবার কিভাবে বুঝবে তুমি। এই বলে তাঁর স্ত্রী একটি গামলায় কিছুটা ঘাস রাখলেন। এবার মেয়ে ঘোড়াটি বাচ্ছা ঘোড়াটির দিকে সেই গামলাটি ঠেলে দিল। যেন বলল, নাও বাছা,এবার খেয়ে নাও। সেই ফাঁকে রাজা দ্রাশিও বুঝে নিলেন কোনটি মা ঘোড়া আর কোনটি তার বাচ্ছা। 

পরদিন রাজা গেজংগংগডু রাজা দ্রাশি কে একটি লাঠি দিয়ে পাঠালেন। লাঠির দুদিক একই রকম। কোনও পার্থক্য নেই ওপর ও নীচের। এবার তাঁর প্রশ্ন হল দ্রাশি কে। বলতো কোনটি লাঠির ওপর দিক আর কোনটি নীচের দিক? দ্রাশি অনেকক্ষণ ধরে লাঠিটি দেখলেন কিন্তু বুঝতে পারলেন না। ঘরে নিয়ে দ্রাশি তাঁর স্ত্রীকে আবারো জিগ্যেস করলেন।  

তাঁর স্ত্রী বললেন এ তো সোজা। লাঠিকে জলে ভাসাও দেখি। যেদিকটা ওপরে উঠে থাকবে সেটি ওপর দিক। আর অন্যটা নীচের দিক। সে যাত্রায় আবারো রক্ষা পেলেন দ্রাশি।

এবার রাজা গেজংগংগডু দুটি সাপ দেখালেন দ্রশি কে। এবার দ্রাশিকে বলতে হবে কোন্‌টি পুরুষ, কোন্‌টি স্ত্রী সাপ।  আবারো পারলেন না তিনি। আবার দ্রাশির স্ত্রী বললেন, একটি সিল্কের কাপড়ের টুকরো নাও। আর এবার সেটি ঐ সাপেদের সম্মুখে রাখ। মেয়ে সাপটি নরম কাপড় দেখে তার ওপর শুয়ে পড়বে আর পুরুষ সাপটি তা দেখে পালিয়ে যাবে। দ্রাশি বললেন, বেশ! পারব আমি।  

পরপর তিনবার তিনটি বুদ্ধির পরীক্ষায় অবলীলাক্রমে পাশ করে যাবার পর দ্রাশি কে খুব বুদ্ধিমান মনে হল রাজা গেজংগংগডুর। তবে দ্রাশি আর তাঁর স্ত্রী দুজনেই বুঝতে পারল যে তারা অতি চালাকির দ্বারা জয় লাভ করেছে সেই বুদ্ধির পরীক্ষায়।

কিন্তু রাজা গেজংগংগডু তাদের তাৎক্ষণিক উত্তরে যারপরনাই অভিভূত হয়েছেন ততক্ষণে। তিনি বললেন, এ রাজ্যের রাজার সঙ্গে তিনি লড়বেন না আর। বিনা যুদ্ধেই ফয়সালা হল এবার। দ্রাশি কে রাজা গেজংগংগডু তাঁর রাজ্যের মন্ত্রী করলেন। তবে দ্রাশি মনে মনে হাসলেন। নিজের বুদ্ধিমত্তার দৌড় তাঁর জানা ছিল। তিনি বললেন, রাজা মশাই, আমার স্ত্রীর জন্যই আমার সব। রাজা গেজংগংগডু সেই শুনে খুশি হয়ে নিজের রাজ্যেই রাজা  দ্রাশি ও তাঁর রাণীর জন্যে একটি ছোট্ট প্রাসাদ বানিয়ে দিলেন।

গেজংগংগডুর বানিয়ে দেওয়া প্রাসাদে মহাসুখে দিন কাটতে লাগল দ্রাশী আর তার রাণীর। তাঁরা ভুলেই গেলেন সেই মহামূল্য বৈদূর্য 

মণি হারানোর শোক। 

একদিন প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে রাজা দ্রাশীর মনে হল বড় রাজা গেজংগংগডুর সঙ্গে দেখা করে আসবেন। অনেকদিন দুই রাজার দেখা সাক্ষাত নেই। রাজমহলে হাজির হয়েই দ্রাশী দেখতে পেলেন বিশাল উন্মুক্ত রাজবাগিচার মধ্যিখানে বসে রাজামশাই গেজংগংগডু কি যেন পরখ করছেন অতি সন্তর্পণে। তাঁর সামনে যেতে না যেতেই সবকিছু পরিষ্কার হল দ্রাশীর। তার সেই হারিয়ে যাওয়া বৈদুর্যমণিটি রাজার হাতে। ঠিক যেমন দ্রাশী দেখতে পেত তেমনি তার মধ্যে অপলক দৃষ্টিতে চোখ রেখে রাজামশাই দেখছেন ভোরের প্রথম সূর্যরশ্মির ছটা। এই রাজমহল আরো সুন্দর স্থান। দ্রাশীর প্রাসাদের চেয়ে আরো অনেক বড়। সেই মণিতে চোখ রাখলে দেখা যেত কতকিছু। ছোট্ট পাখীদের গায়ের রং থেকে শুরু করে তাদের ঠোঁটের বাহার। দূরে বাগানের ঝর্ণা থেকে ছলাৎ ছলাৎ করে জল আছড়ে পড়া থেকে রকমারি কাঁটা গাছের ফুলেদের পাপড়ি মেলার দৃশ্য পর্যন্ত। রাজা গেজংগংগডু বুঝি মন দিয়ে প্রকৃতির সব রূপ, রস তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে চলেছেন। 

এই অবধি সব ঠিক ছিল। কিন্তু এবার দ্রাশীর হঠাত মনে হল তার ঐ বৈদুর্যমণিটি রাজার হাতে এল কি করে? একবার ভাবল রাজাকে গিয়ে জিগেস করে। পরক্ষণেই মনে হল না। এর ফলে রাজার সঙ্গে তার সম্পর্কে চিড় খেতে পারে। আবার ভাবল দ্রাশীর অনুচরদের পটিয়ে পাটিয়ে কি রাজা তবে সেই দুষ্প্রাপ্য মণিটি হাতিয়ে নিয়েছেন? আবারো নিজের ভাবনায় ছেদ পড়ল দ্রাশীর। মনে হল বাড়ি ফিরে তার রাণীকেই জিগেস করুক সে। কি করা উচিত তার সেই মূহুর্তে? তার রাণী‌ই তাকে সবসময় বুদ্ধি এবং ভরসা যুগিয়ে আসছে । 

মনের মধ্যে একরাশ হতাশা নিয়ে দ্রাশী নিজের প্রাসাদে ফিরে এলেন। এসেই রাণীকে পুরো ঘটনাটা জানালেন । রানী সব শুনে বলল, এই কথা? ঐ বৈদুর্যমণি গেছে ভালো হয়েছে। আমরা কিন্তু আগের থেকে অনেক সুখে আছি। দ্রাশী বলল, তবুও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জিনিস ঐ পাথর। আমার নিজের অসতর্কতায় হাতছাড়া হয়ে গেল। আমি চিরকাল বোকা রাজাই রয়ে গেলাম। রাণী বলল ঐ মণি আমাদের বাড়ি থেকে গিয়ে ভালোই হয়েছে। ভগবান যা করেন ভালোর জন্যে। তারপরেই আমরা রাজার বানানো এত বড় প্রাসাদে বাস করছি। আগের রাজ্য থেকে এ রাজ্যে অনেক বেশী আরাম, সুযোগ সুবিধে আর শান্তি। তুমি একদম ঐ পাথরের কথা ভেবে মন খারাপ করবে না।

দ্রাশী বলল, তা অবিশ্যি ঠিক। তবে রাজামশাই কিন্তু খুব ধূর্ত। ঐ মহামূল্যবান পাথরটির লোভেই আমাকে ওনার পড়শী রাজ্যের মালিক বানিয়ে দিলেন। বাকীটুকু লোক দেখানো। রাণী বলল একটা জরুরী কথা ছিল। মহারাজ গেজংগংগডুর কিন্তু অবস্থা বেশ পড়তির দিকে। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, অমাত্য, অনুচর, ভৃত্য কিন্তু অপসারিত হয়েছে কয়েকদিনের মধ্যেই। সে খবর রাখ কি? 

ও বাবা তাই নাকি? দ্রাশী বললেন ।

রাণী বলল, আমার খোদ পরিচারিকা এই সংবাদ দিয়েছে আমায়। সেখানে রাণীর শরীর স্বাস্থ্য বিশেষ ভাল যাচ্ছে না। তার ওপর অতিরিক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী তুষারপাতের কারণে এবছর বার্লি, ভুট্টা  এবং সাবুর ফলন কমেছে। তাই রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে হাঁফিয়ে উঠছে তাঁর প্রশাসন। এবার বুঝতেই পারছ ঐ বৈদুর্য মণির কারণেই এমন অঘটন ঘটছে তাঁর রাজ্যে। 

দ্রাশীর কপালে চিন্তার ভাঁজ। এখন উপায়? ভাবতে ভাবতে দিন কাবার হল। উপায় বেরুলো না কোনো। 

সারারাত ভাবলেন দ্রাশী। পরদিন আবার সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লেন তিনি। মহারাজ গেজংগংগডু যথারীতি সেদিনও ভোরবেলায় সেই বৈদূর্য মণিটি হাতে নিয়ে পুবের সোনা গলা রোদ্দুরের দিকে তাক করে বসেছিলেন রাজবাগিচার মধ্যিখানে।

দ্রাশী সোজা তার সামনে গিয়ে হাজির হলেন। সৌজন্য বিনিময় করে একথা সেকথার পর তিনি মহারাজের পাশে বসে গল্প শোনাতে আরম্ভ করলেন।     

তিব্বতী হিমালয়ের এক উপত্যকার মধ্যে একটা ছোট্ট জলাশয় ছিল। আশপাশের জন্তু জানোয়ার সেখানে গিয়ে জল খেত। জলাশয়ের পাশে একটা সরু রাস্তা ছিল। সেই রাস্তার ওপর এক শিকারী এক কায়দা করেছিল। তীর ধনুক আর বর্শা উঁচিয়ে দড়িতে ফাঁদ পেতে রেখেছিল সে।একদিন এক ভাল্লুক ধরা পড়ে গেল শিকারীর ফাঁদে। আর সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাণ বেরুলো। একটি খেঁকশিয়ালের সেখানে এসে সেই মৃত ভাল্লুকটিকে দেখে খুব লোভ হল। সে ভাবল বেশ করে জমিয়ে খাওয়া যাবে ভাল্লুকের মাংস। শেয়াল আর কি করে জানবে যে শিকারী কায়দা করে ফাঁদ পেতে রেখেছে। একটা দড়ির মধ্যে বাঁধা পড়ে আছে মৃত ভাল্লুকটি। শেয়াল ভাবল, দড়িটাকে ছিঁড়ে ফেললেই হবে। পরক্ষণেই সে ভাবল, যদি আবার সে নিজে শিকারীর ফাঁদে পড়ে যায়!যা ভাবা তাই কাজ। দড়ির কাছে যেতেই খেঁকশিয়াল ফাঁদে পড়ে গিয়ে যথারীতি মারা গেল ভাল্লুকের মত। সেই সরু রাস্তায় পড়ে রইল ভাল্লুক আর খেঁকশিয়ালের মৃতদেহ দুটি। একটি হাতি জল খেয়ে রাস্তা পেরিয়ে দিব্যি এল সেখানে। এসেই সে মহানন্দে শুয়ে পড়ল রাস্তার ওপরেই। তারপর একটা খরগোশ সেখানে  এসে লাফিয়ে লাফিয়ে হাতির চারিপাশ ঘুরে সব দেখতে থাকল।আর মনের খুশিতে খেলতে লাগল। সেই দৌরাত্ম্যিতে হাতির ঘুম গেল ভেঙ্গে। সে চোখ খুলে সব দেখতে থাকল। আর মনে মনে ভাবল একরত্তি এই খরগোশ যদি এমন লম্ফঝম্প করতে পারে, আমিও পারব। লাফাতে গিয়েই হল হাতির বিপত্তি। শিকারীর পেতে রাখা দড়ির ফাঁদে হাতির সামনের পা দুটি আটকে সঙ্গে সঙ্গে সেও মারা গেল। এবার রাস্তায় পড়ে রইল ভাল্লুক, খেঁকশিয়াল আর হাতি… এই তিনটি পশুর শব।

এমন সময় সাতটি ডাকাত সেখানে এসে উপস্থিত। মহানন্দে তারা বলল, এখন আর এখান থেকে নড়ছি না আমরা। এত মাংস রয়েছে যখন দিনকয়েক জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হবে আমাদের।কিন্তু আমাদের কাছে একফোঁটা খাবার জলও নেই।

কে জল আনতে যাবে? সাতজনের প্রত্যেকেই ভাবল অন্যজন যাক। আমি কেন যাই? সবশেষে ঠিক হল তিনজন যাবে জল আনতে আর বাকী চারজন মাংস কেটেকুটে ঠিকঠাক করে রাখবে। তিনজন জল আনতে চলে গেল সেই জলাশয়ে। বাকী চারজন মাংসের মধ্যে বিষ মিশিয়ে রেখে দিল সেই তিনজন এসে খাবে বলে। আর নিজেদের জন্যে বাকী ভাল মাংস, হাড়গুলো আর হাতীর দাঁত দুটো রেখে দিল সেই চালাক চার ডাকাত। অনেকক্ষণ পর  তিন ডাকাত জল নিয়ে ফিরে এল। ফিরে এসে তিন ডাকাত ভাবল, এই চারজন বদমায়েশ লোক। আমরা এত কষ্ট করে অতদূর থেকে জল বয়ে নিয়ে এলাম আর এরা এখন বসে বসে আয়েষ করে সেই জল খাবে। অতএব এদের মেরে ফেলা প্রয়োজন। ওদের কাছেও বিষ ছিল। ওরা তাই মিশিয়ে দিল সেই চারজনের জন্য রাখা মাংসে। একসঙ্গে মাংস আর জল নিয়ে খেতে বসে শেষে সকলেই মরল। অতএব অতি লোভে পাপ হয় আর পাপের ফলে মৃত্যু হয়। রাজা সাগ্রহে মন দিয়ে গল্প শুনছিলেন। হঠাত কি মনে হল তাঁর। হাতের মুঠোয় রাখা বৈদুর্যমণিটিকে ছুঁড়ে সামনের বিশাল জলাশয়ে ফেলে দিলেন।  

হাঁ হাঁ করে হাসতে হাসতে হাততালি দিলেন দ্রাশী। সেই দেখে মহারাজ গেজংগংগডু বললেন বাহ! সুন্দর গল্প শুনলাম আপনার মুখে। দ্রাশী বললেন, মহারাজ, ভালো করেছেন। ঐ পাথর আপনার পক্ষে শুভ নয়। এবার দেখবেন আপনার রাজ্যে সুখবর আসবে।

দুইরাজা দুজনকে আলিঙ্গন করলেন। 

 

(এ এল শেলটন এর টিবেটান ফোকলোর অবলম্বনে)

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত