জাগরণ
কবিকে আজ উন্মাদ বলে ভরিস পাগলাগারদে?
উন্মাদ তো তোরা
যারা তালে তালে ঘাড় নাড়িস চিন্তাহীনভাবে।
প্রশ্নহীনভাবে যুগ যুগান্তর ধরে
হাঁটছিস তোরা পথ
বস্তাপচা নিয়মের বোঝা বয়ে।
নির্লজ্জ কুন্ঠাহীনভাবে
একভাবে বয়ে নিয়ে চলেছিস সেই মৃত পরম্পরাকে।
কবি যখন জীজ্ঞাসিল,
“কিসের তরে এ হাড়খাটুনি ? “
কলুর বলদের কাছে নেই উত্তর
ঠোঁটে তোদের পড়েছে তখন বজ্রআঁটুনি।
মনে পড়ে তোদের,
কত কবি মারা গেছে চুপিসাড়ে
শুধু উন্মাদ নাম নিয়ে,
হয়নি ছাপা কত কবিতা তাঁর
এই অকেজো সমাজ নিয়ে।
মানুষ আজ ভুলে গেছে ভাবতে
ভয়ে,ভয়ে, শুধু ভয়ে
কারন,স্রোতের উল্টো ভাবলেই
সমাজ টুঁটি এসে চেপে ধরে।
হীরক রাজার মন্ত্রীরা যেখানে “ঠিক ঠিক” করেই ক্ষান্ত
ভাবো কবি,বলো কবি আবার
মানুষ আজ বিভ্রান্ত।
ভাবো আবার কবিবর, শোনাও তোমার উন্মাদনার বানী
ওই উন্মাদের প্রলাপে ভেঙে যাক সমাজের জং ধরা চিন্তাখানি।
স্রোতের প্রতিকূলে ভেসে তুমি
চড়ে লও আজ উন্মাদনার রথে
তোমার বিজয়রথ ছুটে চলুক
যুগ থেকে যুগান্তরের পথে।
তোমার পার্থ আজ বিভ্রান্ত
এসো,তুলে নাও তোমার রথে
শোনাও কোনো নতুন গীতা
মৃতরা সব প্রাণ পাক আজ তোমার পরশে।
পথ দেখাও আজ হে কবিরাজ
বিনতি করজোড়ে
সমাজ আজ ভুলে গেছে তোমায়
তাই প্রকাশ হোক তোমার আবার
উন্মাদের রূপ ধরে।
এক কবির আবেদন
আমি চাই একটা বাজ এসে পড়ুক,
এই মৃতপ্রায় পৃথিবীর মাথার ওপরে।
তারপর নেমে আসুক এক পশলা বৃষ্টি,
এই শুষ্ক অনুর্বর মরুর বুকে।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে
বহু কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে
এই পৃথিবীটা গড়িয়ে চলেছে ক্রমাগত।
গড়িয়ে চলেছে বুদ্ধিহীনভাবে,
গড়িয়ে চলেছে চিন্তাহীনভাবে,
ওহ্,দেখছেন আপনাদের বলাই হয়নি,
আজ বহু শতাব্দী পার হয়ে গেলো,
পৃথিবীটা কোমায় চলে গেছে।
তাই, আমি চাই একটা বাজ এসে পড়ুক
এই কোমাচ্ছন্ন পৃথিবীর মাথার ওপরে
যার সুতীব্র আওয়াজে
চমকে জেগে উঠুক এই পৃথিবী,
জেগে উঠুক এই পৃথিবীর
বহু কলঙ্কিত মানবসভ্যতা।
জেগে উঠুক জাতির ঘুমন্ত বিবেক।
তারপর, ঝরে পড়ুক এক পশলা বৃষ্টি
এই মৃত জড় সভ্যতার ওপরে
সঞ্জীবনীর মতো,
গরলসমুদ্রের ওপরে অমৃতধারার মতো।
যে অমৃতধারায় সিক্ত হয়ে
এই কলঙ্কিত সভ্যতা হবে পবিত্র।
যে অমৃত পান করে
রাহু কেতুরা পাবে মোক্ষ,
মানবজাতি হবে মুক্ত।
এক ঝটকায় ধুয়ে দেবে
এই পৈশাচিক সভ্যতার
সমস্ত কলঙ্কের ছাপ।
পৃথিবীর সব রত্নাকর তখন
আবার এসে বসবেন এক আসনে,
বসবেন ধ্যানে,
একযোগে উচ্চারিত হবে বারবার
জগতের সেই কল্যানমন্ত্র –
“অসতো মা সদ্ গময়”
“তমসো মা জ্যোতির্গময়”।
তাই,আমি চাই একটা বাজ এসে পড়ুক
অজ্ঞানতার আঁধারে ডুবে থাকা
এই সভ্যতার মাথাতে,
“অজ্ঞান তিমিরন্ধস্য –
জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া”র ন্যায়
যার দিব্য আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়ুক
রঙিন পোষাকে মোড়া
অন্ধকারময় সভ্যতার মরুভূমিতে।
সর্বশ্রেষ্ঠ জীব
আমি খুঁজে পেয়েছি অদ্ভুত কিছু জীব!
যাদের হাত-পা-নাক-মুখ আছে ঠিকই,
কিন্তু চোখটা যেন থেকেও নেই।
আর রয়েছে নিরেট ফাঁপা একটি মুন্ডু;
অবশ্য এই মু্ন্ডুটার,
নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই,
শুধু হাওয়া আর সময় বুঝে
এদিক ওদিক বিজ্ঞের মতো
মাথা নাড়ায়।
জানেন, এই জীবটার আগে
একটা করে মেরুদণ্ড থাকত;
কিন্তু,বহুদিন হলো
গড্,ঈশ্বর আর আল্লার লাথি খেতে খেতে
সেই মেরুদণ্ডটি গেছে গুঁড়িয়ে।
এই জীবগুলো বেঁচে থাকার জন্য
নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে মরে।
শুনুন,কানে কানে একটা গোপন কথা বলি,
এদের কামড়াকামড়ি দেখে
পশুরা শুদ্ধ লজ্জা পেয়ে বুঝতে পারেনা
যে বেচারারা কোন গর্তে ঢুকবে।
এদের আবেগগুলোও যান্ত্রিক বড়ো,
চকিতে এসেই চকিতে পলায়ন করে।
গায়ে মুখে রঙ মেখে,সুগন্ধী সাবান মেখে
তাড়ায় এরা নিজেদের দুর্গন্ধ,
শুধু প্রমাণ করবে বলে আপন শ্রেষ্ঠত্ব।
কিন্তু হায়,এদের কে বোঝায়!
দুর্গন্ধ দেহে নয়
জমে আছে মননে,আর সত্তায়।
কি মশাই, চেনা চেনা ঠেকছে এদের?
হ্যাঁ,চিনবেন তো বটেই,
এরা যে “মানুষ ” নামে খ্যাত!
এরা নাকি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব!
![অভিষিক্তা বন্দ্যোপাধ্যায়](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2020/06/IMG-20200613-WA0004-150x150.jpg)
জন্ম ৪ই জুন ১৯৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার সোনামুখীতে।ইংরেজি সাহিত্যে তৃতীয়বর্ষের ছাত্রী।লেখালেখিতে নবীন।বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যিকদের বই পড়তে ভালোবাসেন,গান শোনেন,সিনেমা দেখেন।
স্বাধীন চিন্তাধারার প্রকাশে অনেক দিন পর কিছু ভালো পড়লাম | Wish you carry on with this ??