*
পেয়ারার মতো শুশ্রূষাওলা গালের মেয়েকে প্রেম নিবেদন করতে গেছিলাম কাল বিকেলে। বুকপকেট থেকে যেই আমি নীলচে গোলাপ বের করতে গেছি, ধড়ফড় করে আকাশে উড়ে গেলো এক ঝাঁক বালিহাঁসের তীর। ব্যস, এবারও আমার আর প্রেমিক হয়ে ওঠা হল না।
*
দুজন শূন্য দশকের কবি রণক্ষেত্রে নেমেছে। একজন রণজিৎ দাশ ছুঁড়ে মারে। অন্যজন অমিতাভ মৈত্র। আমি এতক্ষণ নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় মজা লুটছিলাম। বাকবিতণ্ডা থেকে শনশন ঝনঝন আওয়াজ বেরোতে শুরু করল যখন, আমি দেখলাম আমি পাঁচ মাসের শিশুর অগোচর হামা ধার করে এগিয়ে যাচ্ছি রণভূমির দিকে। একহাতে রণজিৎ দাশ আর অন্যহাতে অমিতাভ মৈত্র তুলে দে দৌড়, দে দৌড়..
*
ভেজা রাস্তার ধরে জীবনানন্দের হাট বসে থাকে। ছেঁড়া চপ্পল, বুড়ির গাছপাথর। কারো কোঁচড়ে চাট্টি জাম, কারো গরমের ভাপ ওঠা কাঁঠাল। গালে অসংখ্য ভাঁজ হওয়া গ্রীষ্মকাল। মেয়ে পালানোর, ছেলের মদ খাওয়ার,বরের অকর্মণ্য বিড়ি ফোঁকা জৈষ্ঠ্যের ঠা ঠা তাপে তামাটে করে তুলেছে ওদের কণ্ঠার হাড়। ডিপ্রেশনের ওষুধ শেষ হয়ে গেলে আমি ভেজা রাস্তা ধরে হাঁটতে বেরোই। না। জাম কাঁঠাল কিনি না আমি। ফোকটের সঞ্জীবনী নিয়ে আসি।
*
আমার কাছে আসা হলে পাগলের মতো উদ্বাস্তুর মতো হাহাকার করে তোমার আত্মা। সেটা ভয় না প্রতিবাদ আমি বোঝার চেষ্টাও করিনি। তোমার আত্মায় আমি বকের ঠোঁট ডুবিয়ে আমিষ খেতে থাকি। হাহাকার ভুলে গিয়ে সধবার সভয়ে মাছ খাওয়ার মতো তারিয়ে তারিয়ে তুমি অনুভব করো আমার এই খাওয়াটুকু।
*
ডাগর পুঁইশাকের কোমর নিয়ে তুমি বাসন ধুতে বসো। আমি ঘাট আড়াল করে এপাড়া ওপাড়ার রোদের হাত থেকে বাঁচাই নাজুক লতাকে। মাথার ওপরে গনগনে পুং সূর্য এক জালিয়াত দুশমন হয়ে ধরা দেয় !
*
চড়াইপাখির ঠোঁটের মতো তুমি ফলের দোকান থেকে সবুজ আপেলের পুষ্টি তুলে আনো। সবুজ আপেল আমার বরাবর না-পসন্দ। অথচ তোমার হাতে আপেল দেখার পরেই হাজার বছরের যোগনিদ্রা ভেঙে আদম অবতার ঢুকে পড়ে আমার মধ্যে। তোমার খলখলানি না না হাসি ঈভের ঠোঁট হয়ে চিলের মতো ওড়ে আমার আশেপাশে। সবুজ আপেল অবাক চোখে দেখে আমরা ওকে না খেয়ে ওর মধ্যে সুখের বেসাতি করছি দিব্যি।
*
আমরা দুজনেই চৈতন্যপ্রেমে বিভোর। খোলের সুরায় মাতাল। অথচ আমরা কেউ চৈতন্যচরিতামৃত পড়িনি। পুরীও যাইনি। বছর বছর আমাদের ঘরে খাওয়ার থালা বেড়েছে এই মাত্র।

জন্ম বীরভূমে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলজিতে স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশে একটি কলেজের অধ্যাপিকা। শখ কবিতা-গল্প-উপন্যাস পড়া এবং টুকটাক লেখা। লেখালিখির সূচনা স্কুলজীবনের সাহিত্যসভা থেকে। একমাত্র বই ‘তারাফুলের শবযাত্রা’ (২০২০)।
আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগল ৷ ইরাবতী চমৎকার একটি পত্রিকা ৷ অনেক ভাললাগা আর শুভেচ্ছা আপনাকে ৷