‘বেপরোয়া বাস চালক’ কথাটার মাঝেই আড়াল হয়ে আছে অনেকগুলো বদমায়েশের পরিচয়। তাদের হাত এতই লম্বা যে, নিরাপদ সড়কের দেশ কাঁপানো আন্দোলনের পরও শুধু মোটর সাইকেলের হেলমেট পড়াতেই সীমিত থেকে গেলো সড়ক সংস্কার।
বাসচালক বেপরোয়া, কারণ তাকে বেপরোয়া হতে বাধ্য করেছে বাসের দৈনিক ইজারা পদ্ধতি। সকল সভ্য দেশে চালকদের থাকে দৈনিক মজুরি, বাংলাদেশে হলো ট্রিপভিত্তিক মজুরি। ফলে যতগুলো ট্রিপ, তত আয়। এইভাবে গাড়িগুলোকে পরস্পরের সাথে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় বাধ্য করা হয়। চালকরাই এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। ৮ ঘন্টার বেশি কারোই একটা ভারী বাস চালাবার সামর্থ্য থাকার কথা না, কিন্তু এই পদ্ধতিতে একজন বাস চালক সকাল ৬টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত কাজ করতে বাধ্য হন।
বাস চালকরা এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারেন না, কারণ প্রায় সবগুলো বাসরুটের মালিক কোন না কোন প্রভাবশালী মাফিয়া। কখনো কখনো এদের এমনকি কোন পুঁজিও নাই, তারা কেবল ক্ষমতা খাটান। এই মাফিয়ারা তাদের মুনাফা সর্বোচ্চ করার এই অদ্ভুদ ফিকির আবিষ্কার করেছেন। চোরে চোরে যোগসাজশের ফলেই যে কোন দুর্ঘটনা ঘটলেই অমুক বাস বন্ধ করে দেয়ার ফাঁকিঝুকি আশ্বাস দিয়েই কর্তা ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাবার, ক্ষুদ্ধ জনতাকে শান্ত করার, প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করেন।
ফলে আন্দোলনটা করতে হয় ঢাকার রাস্তায় যাদের সবচেয়ে বেশি চলতে হয়, সেই শিক্ষার্থীদেরই। কিছুদিন পরপর তাদের কোন না কোন বন্ধু নিহত হন, আর তাদের নামতে হয় প্রতিবাদে। যে কর্তারা বাসের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন না, যে কর্তারা রাস্তায় হাঁটেনও না, তারা কীভাবে এই রাস্তার মানুষের যাতনা বুঝবে?
একজন বাসচালক প্রতিদিন মালিকের জন্য টাকা তোলেন, টাকা তোলেন টার্মিনালের দখলদারের জন্য চাঁদা, পুলিশের জন্য তোলা– তারপর নিজের জন্য আয় করেন। বেপরোয়া সকল চালকের বিচার অবশ্যই চাই, কিন্তু চালককে যারা যারা বেপরোয়া হতে বাধ্য করছে, তাদেরকে রুখতে না পারলে কোন ফলাফলই মিলবে না।
![ফিরোজ আহমেদ](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2019/09/received_2436784443313173-150x150.jpeg)
রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন
সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন