অসমাপ্ত চিত্রনাট্য
শ্যামলীর প্রথম ছোটগল্প সংকলনটিতে আছে ন’টি গল্প। তাঁর গল্পের শৈলী হল গল্পের কথনে এবং চলনে। প্রথম গল্প সেতুতে তৃণা এবং তার মাত্র দেড় বছরের পুরনো স্বামী অর্কর সংসারে তাদের ঘর থেকে দেখতে পাওয়া একফালি ওভারব্রিজের সঙ্গে তৃণার মনের টানাপোড়েন একাত্ম হয়।সর্বংসহা সেতুটি ঠিক তৃণার মতোই। অথচ অর্ক তাকে বুঝতে নারাজ। এভাবে শুরু থেকে শেষ অবধি মেয়েদের যন্ত্রণা, সংসারে মুখ ফুটে যারা কিছু চাইতে পারেনা, অবলাই থেকে যায় আজন্মকাল তাদের গল্প নতুন নয় তবুও লেখকের কলমে আরো যেন দৃপ্ত ভঙ্গীমায় ধরা দিল। শাম-এ-গজল এ তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর এক রোগিণী তার হাসপাতালের ডাক্তার, নার্সদের মধ্যে কথোপকথনের মধ্যে তখনও ভালো থাকার চেষ্টা করে। গজলের কথায়, সুরে। সময় গড়াতে গড়াতে শেষ সীমায় আসে যখন সে জানতে পারে তার একটপিক প্রেগন্যান্সির কথা। এই অবস্থাতেও সে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হয়ে দোষারোপ করেনা তার স্বামীকে যে গজল শুনতে তখনো মত্ত। আবারো সেই মেয়েদের অব্যক্ত বেদনা ফুটে ওঠে।
ডেডলাইন গল্পটি লেখকরা যারা প্রতিনিয়ত লেখার চাপে, মিডিয়ার সঙ্গে এবং লিটল ম্যাগাজিনের তাগাদায় লিখে চলেন তারা রিলেট করতে পারবেন খুব ভালো। একদিকে পড়তে পড়তে মজাও লাগে আবার মন ভারীও হয়ে ওঠে যখন ছোট প্রকাশনার কাগজ উঠে যায়, সাংবাদিক, লেখকের প্রাপ্যটুকুনি থেকে তারা বঞ্চিত হয়। এমন সব গল্পগুলির মধ্যে পিতৃদেব ভব মন ছুঁয়ে যায়। আটপৌরে কেরাণী বাবা সংসারে আপাত উদাসীন। উশ্রী মেলাতে পারেনা তার বাবার সঙ্গে নিজের বিয়ে করা স্বামী কে। সেই নিরীহ বাবার ভাগ্যে অপবাদ জোটা এবং তাই থেকে বাবার চিরকালের মত দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া উশ্রীকে ভাবায়। সার্থক ছোটগল্প এটি। শেষ হয়েও ভাবাবে পাঠককে। উশ্রীর বাবা কতটা খাঁটি মানুষ ছিলেন উশ্রীও ভাবতে বসে তাই। এভাবেই গল্পের ভেলা ভাসিয়ে চলেন শ্যামলী। এভাবে মেয়েদের মনের কথা স্থান কাল পাত্রভেদে প্রতিটি গল্পেই অসমাপ্ত থেকে যায়। তারা বলতে, চাইতে অপারগ। সেদিক থেকে বিচার করলে অসমাপ্ত চিত্রনাট্য নামটিও খুব যুক্তিসম্মত হয়েছে। বইটির গুণগত উৎকর্ষতাও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। গাঙচিল প্রকাশনার ঝকঝকে প্রিন্ট এবং নির্ভুল বানান অতীব সুখকর।
অসমাপ্ত চিত্রনাট্য / শ্যামলী আচার্য
গাঙচিল
মূল্য ২০০ টাকা
![ইরাবতী ডেস্ক](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2021/12/irabotee-cover-e1640636602578-150x150.jpg)