| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য

চোরাকাঁটা (পর্ব-১৬)

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

কিন্তু রিয়াজকে পুলিশস্টেশনে আনতে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হলো আনিসুল হকের।

ছেলে একেবারে বাইম মাছভালোমত সাপ্টে ধরার সুযোগই দেয় না। তার নাম্বারে কল দিয়ে পুলিশস্টেশনে আসার কথা বলতেই লাইনটা কট করে কেটে দিলো। পরের ফোনটা এলো ভিন্ন নাম্বার থেকে। গমগমে ভারী কন্ঠে কেউ একজন বললো,

‘আমি রিয়াজের বাবা বলছি। আমার ছেলেকে পুলিশস্টেশনে যেতে বলছেন কেন? সে কী করেছে?’

আনিসুল হকের ইচ্ছে হলো বলেন, ‘কী করেছে সেটা দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে আসলে বুঝতে পারবেন। বললে তো বুঝতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না!’ 

ইচ্ছে হলেও বেমালুম চেপে গেলেন সেটাতার পরিবর্তে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলে বললেন,

‘নাহ্‌ কিচ্ছু করেনি তো! এমনি একটু রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিল। একটা ছোট কেসে ওর একটু হেল্পের প্রয়োজন। অন্য কিছু নয়।’

ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটি এই মোলায়েম অযুহাতে মোটেও সন্তুষ্ট হলো না। বরং আগের চেয়েও থমথমে গলাতে বললো,

‘রিয়াজ কি কারো হেল্পিং হ্যাণ্ড যে তাকে এভাবে যখন তখন ডাকা যাবে? আমার ছেলে ওর কাজে ব্যস্ত আছে। এখন কারো হেল্প করতে যেতে পারবে না।’

আনিসুল হকের মেজাজের পারদ আর যথাস্থানে থাকতে পারলো না। কিছুটা উঁচুতে চড়ে গেল। তিনিও ভারী মেঘ গম্ভীর কণ্ঠে এবারে বললেন,

‘রিয়াজকে এক্ষুণি পুলিশস্টেশনে আসতে বলুন। নইলে শুধু শুধু ওকে আমার এ্যারেস্ট করে নিয়ে আসতে হবে। অযথা ঝামেলা করবেন না।’

‘এ্যারেস্ট করবেন মানে? এই যে অফিসার, কী বলছেন আপনি? মাথা ঠিক আছে তো আপনার? আপনি আমার ছেলেকে এমনি এমনি এ্যারেস্ট করে নিয়ে যাবেন আর আমি হাত পা গুটিয়ে এখানে বসে থাকবো? আপনি কার সাথে কথা বলছেন জানেন? আপনার মতো দু’চারটা পুলিশ অফিসারকে আমি এক বেলাতেই কিনতে পারি, জানেন আপনি?’

আনিসুল হকের মেজাজ চিড়বিড়িয়ে বাড়তে লাগলো। বহুকষ্টে নিজেকে সামলে চলেছেন তিনি। খুব বেশি সফল হতে পারছেন না। তবু মাথা ঠান্ডা রাখতেই হবে। এই জাতীয় লোকগুলোর হাতে আসলেই ব্যাপক ক্ষমতা। বাইরে থেকে অনেক সময় এদের ক্ষমতার সীমারেখাটা ঠাহর করা যায় না। বড় বড় মন্ত্রী মিনিস্টাররাও এদেরকে হাতে রাখে। সহজে চটকায় না। আনিসুল হক অবশেষে বহুকষ্টে নিজেকে সামলালেন। গলার স্বরে যথাসম্ভব মধু মিশিয়ে বললেন,

‘আপনি প্লিজ একটু হেল্প করুন। আমি জাস্ট কিছু কথাবার্তা বলেই ওকে পাঠিয়ে দিব। আসলে ওর এক বন্ধুর একটা খুব বড় বিপদ হয়েছে। রিয়াজের একটু মধ্যস্থতা পেলে হয়ত এ যাত্রায় ওর ঐ বন্ধুটিকে বাঁচানো যাবে। আপনি প্লিজ একটু বুঝিয়ে বলুন, ও যাতে একবার আসে।’

এতটা কাকুতিমিনতি না করলেও চলতো। যত বড় হোমড়াচোমড়ারই ছেলে হোক, পুলিশ চাইলে তার নিজস্ব প্রভাব খাটাতেই পারে। কিন্তু অযথা ঝামেলা করতে মন চাইছে না আনিসুল হকের। যত কম কথা খরচ করে কাজ হাসিল করা যায়, ততই ভালো। আর বিনাকারণে ধরপাকড় তার একেবারেই পছন্দ নয়। 

তবে যাই হোক, এই নরম স্বরে বরফ গললোরিয়াজের বাবা তার গলার থমথমে আওয়াজটাকে একটু হাল্কা করে বললো,

‘হুম দেখা যাক তবে ওয়ারেন্ট ছাড়া যখন তখন এভাবে বিরক্ত করবেন না। রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আরো লোকজন আছে। আমার ছেলের একটা সম্মান আছে। এভাবে তাকে…।’

আনিসুল হক কানের কাছ থেকে মোবাইলটাকে কিছুটা দূরত্বে সরিয়ে রাখলেন। ঝাড়া দুইমিনিট এভাবে বক্তৃতা দিয়ে চললো রিয়াজের বাবা। ওপাশ থেকে মোবাইল রেখে দিয়েছে টের পেতেই কাছে এনে সেটাকে চেক করলেন আনিসুল হক। তারপর বেশ উঁচু গলায় বললেন,

‘শালা! ধরে এনে যদি বাপ-বেটা দুজনকেই একসাথে ডলা দিতে পারতাম।’

রিয়াজ এলো পরের দিন সন্ধ্যায়। সাজপোষাক চালচলন দেখে একে কিছুতেই অনিক কিংবা শান্তর বন্ধু বলে মনে হয় না। গলায় একটা চেন ঝুলছে, এক কানে সোনার ছোট বালি। পরনের চকমকে শার্ট আর বসার স্টাইল দেখে মনে হয় না, কাজকর্ম কিছু করে। বাপের হোটেলে বসেই হয়ত দিন কাটছে এখন। আনিসুল হকের সামনে বসে উদাসীনভাবে চাবির রিং ঘোরাতে লাগলো। চেহারায় ভয় ডর কোনোকিছুরই নামগন্ধ নেই। শান্ত ঠিকই বলেছে, এই ছেলের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব! আনিসুল হক ভূমিকার প্রয়োজন দেখলেন না। সোজা প্রশ্নে চলে গেলেন। জনাবের এখানে কতক্ষণ থাকতে মর্জি হবে কে জানে! কাজেই অহেতুক সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।

‘আপনি কি অনিক, শান্ত এদের বন্ধু?’

রিয়াজের ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল। ভাবখানা এই, ‘এটা জেনে আপনার কাজ কী?’ মুখে বললো,

‘হ্যাঁ, কেন কী হয়েছে? কিছু করেছে নাকি ওরা?’

‘না, ওরা কিছু করেনি। এমনি আপনাদের বন্ধুদের ব্যাপারে একটু আলাপ করতেই আপনাকে ডেকে আনা হয়েছে।’

রিয়াজ এবারে সামনে ঝুঁকে এলো। বেপরোয়াভাবে আনিসুল হকের দিকে তাকিয়ে বেমক্কা প্রশ্ন ছুঁড়লো,

‘কেন, আমাদের বন্ধুদের ব্যাপারে আপনার এত কৌতুহল কী কারণে? পাত্রের খোঁজ করছেন নাকি? হিহ হিহ হিহ…’

আনিসুল হক মেজাজ সামলাচ্ছেন বহু কসরতে। কতক্ষণ পারবেন বলা যাচ্ছে না।

‘না পাত্রের খোঁজে পুলিশস্টেশনে ডাকার প্রয়োজন পড়তো না। শুনুন রিয়াজ সাহেব, দয়া করে পুলিশকে সহযোগিতা করেন। নইলে আমাদের কিছু অন্য উপায়ও জানা থাকে। কিন্তু সেসব আমরা সব জায়গায় ফলাতে চাই না, বুঝেছেন? দয়া করে সব প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিন। স্মার্টনেস দেখানোর জায়গা পুলিশস্টেশন নয়।’

রিয়াজের উদ্ধত দৃষ্টি নরম হলো না। তবে সে কিছু বলে প্রতিবাদও করলো না। আনিসুল হক জিজ্ঞেস করলেন,

‘আপনাদের এইচ এস সি পরীক্ষার আগে একবার ট্রেনের মধ্যে আপনার আর অনিকের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা বেঁধেছিল। কী নিয়ে ঝামেলা বেঁধেছিল?’

রিয়াজের চেহারায় এবারে বিস্ময়ের ভাব ফুটে উঠেছে। সে যেন এই প্রশ্ন আশাই করেনি! বললো,

‘সেটা অনিককে জিজ্ঞেস করলেই বেশি ভালো করতেন। আমাকে যখন করলেন, তখন বলছি…এই ব্যাপারে কিছু কখনো কাউকে বলবো না…এমনটা অনিককে কথা দিয়েছিলাম।’

আনিসুল হকের ঠোঁট একপাশে বেঁকে গেল। কিছুটা বিদ্রুপ মাখানো গলায় বললেন,

‘কথা রক্ষা করার ব্যাপারে আপনি দেখা যাচ্ছে বেশ সৎ। কখনো কাউকে দেওয়া কথার বরখেলাফ করেন না? আপনার ওভারল ইমেজ তো ভিন্ন কিছুই বলছে! এখানে অন্যকিছু জড়িয়ে নেই তো? কথার ক্ষার কথা বলে সেই অন্যকিছুর ইজ্জত বাঁচাচ্ছেন কী না কে জানে!’

রিয়াজের চোয়াল শক্ত হলো। থমথমে মুখে বললো,

‘দেখুন অফিসার, আমি কিন্তু আপনার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই!’

‘বাধ্য খালি তুই না, তোর বাপেও হবে! ঠিকমত সব বলবি নাকি এখনই থার্ড ডিগ্রী খেতে কেমন লাগে সেটা একটু চেখে দেখবি?’ আনিসুল হক আর পারলেন না। ধৈর্যের সর্বশেষ সীমা ভেঙে দিয়ে হিসহিসিয়ে উঠলেন একেবারে। খোলস ভেঙে যেন বেরিয়ে এসেছে বহুদিনের অভুক্ত বাঘ। সেদিকে তাকিয়ে রিয়াজের চোখের তারা ঝলসে উঠতে উঠতেও নিভে গেল। জোঁকের মুখে নুন পড়লে যেমন নেতিয়ে আসে, তেমনি মিইয়ে যাওয়া গলায় সে বললো,

‘অনিকের বাবার স্বভাব চরিত্র ভালো না। ওদের সেই বড় বাড়িতে আগে অনেক কাজের মেয়ে ছিল। তারা সব একে একে পালিয়েছে। দু’একজন আত্মহত্যাও করেছে। আমি একবার ওদের একজন কাজের মেয়ে আর অনিকের বাবাকে একটা একচালা ঘর থেকে বের হয়ে আসতে দেখেছি। সেই একচালা ঘরটা ছিল ওদের বাড়ির এক কোনায়, নিরিবিলিতে। এমনিতে অনিক একদিন বলেছিল ঘরটা নাকি পরিত্যক্ত আর ঘরটা যেখানে ছিল তার আশেপাশের জায়গাটাও ছিল জংলা। ওদিকটাতে কেউ যায় টায় না। তাই অনিকের বাবাকে ঐ জায়গা থেকে মেয়েটির সাথে বের হয়ে আসতে দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেই কথাই সেদিন ট্রেনে একা পেয়ে অনিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তখন অনিক আমার হাতে পায়ে ধরে বলেছিল, কথাটা যাতে কাউকে না বলি।’

‘কেউ যায় না যখন, তখন তুমি সেই জংলা জায়গায় গিয়েছিলে কেন? তোমার অন্য বন্ধুরা কেউ কি ছিল তোমার সাথে?’ একটু আগের ধমকটা দিয়ে খুব আরাম বোধ করছেন আনিসুল হক। এই ছেলেকে আপনি আপনি করার কোনোই মানে হয় না।

‘আমি গিয়েছিলাম একটা কাজে। বন্ধুরা কেউ সাথে যায়নি। আমি একাই গিয়েছিলাম।’

‘আচ্ছা, তা সেই মহার্ঘ্য কাজটা কী ছিল?’

‘ইয়ে…মানে…আমি ঐ একটু আধটু ড্রাগ নিতাম সেই সময়?’

‘আচ্ছা! একটু আধটু ড্রাগ নিতে! ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময়ে? ক্যাডেট কলেজের কড়া নিয়ম কানুনের মধ্যে এটা ধরাই পড়লো না! নাকি সেখানেও প্রভাবশালী বাবার কারণে রেহাই পেয়ে গিয়েছিলে? ওহ্‌ আচ্ছা…অনিককে ভয় দেখিয়ে নিষেধ করে দিয়েছিলে যাতে কাউকে কিছু না বলে। বাহ! ব্রিলিয়ান্ট! তা এই একটু আধটু ড্রাগের নেশা ছুটে গেল কেমন করে? কেউ কি ঠেঙিয়ে ছুটিয়েছে নাকি এমনি এমনি ছুটে গেল?’

রিয়াজ উত্তর না দিয়ে ক্রুর চোখে তাকিয়ে রইলো। 

আনিসুল হক নিজেও কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেনচোখের সামনে ফজলুল আহমেদের চেহারাটা বার বার ভেসে উঠছিলজোর করেই সেটাকে সরিয়ে দিলেন। যা শুনছেন তা বিশ্বাস করতে মন না চাইলেও পুরোপুরি অস্বীকারও করতে পারছেন না। অনিকদের আদি বাড়িতে গিয়ে তিনিও এমন কিছুই শুনে এসেছিলেন। যদিও গাঁয়ের মানুষজনের কথাবার্তায় অনেক ফাঁকফোকর ছিল। বহু রেখেঢেকে কথা বলছিল তারা। কিন্তু তাতে আসল ঘটনা চাপা থাকেনি।

তবু রিয়াজের সামনে একটু অবিশ্বাসের ভাব নিয়েই বললেন,

‘কিন্তু অনিকের বাবা তো অনেক সম্মানীয় মানুষ, শিক্ষিত। তিনি কেন এমন কাজ করবেন? আর তাছাড়া স্থানীয় পুলিশ কেন এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি?’

‘ঘটনা ফাঁস হতে দিলে তো ব্যবস্থা নিবে! অনিকের বাবা পয়সা খাইয়ে সবার মুখ বন্ধ করে রেখেছিল। কাজের মেয়েদের কেউ যাতে মুখ খুলতে না পারে, সেজন্য তাদের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানো হতো আর পুলিশকে হাত করা কি এত কঠিন কিছু নাকি?’

শেষের বাক্যটাতে একটু অনাবশ্যক জোর দিলো রিয়াজ। কিন্তু আনিসুল হকের এখন সেদিকে মন নেই। তিনি তখন প্রগাঢ় চিন্তায় ডুবে গিয়েছেন। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে চলেছেন তিনি। রিয়াজের ড্রাগ আসক্তির বিষয়টা ফজলুল আহমেদ ভাই কি ধরতে পারেননি? পারলে অনিকের বন্ধুদের প্রসঙ্গ আসাতে এটা তিনি উল্লেখ করতে পারতেন। আর তাছাড়া ছেলের বন্ধুর এই অবাঞ্ছিত নেশা তার নিশ্চয়ই ভালো লাগার কথা নয়।নাকি তিনি তখন নিজের সম্মানহানিতেই দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন? ঘটনা সত্য হলে সেটাই অবশ্য হওয়ার কথা।

রিয়াজ কিছুক্ষণ চুপ করে আনিসুল হকের এই মৌনতার ভাব দেখলো। তারপর বললো,

‘আপনার জিজ্ঞাসাবাদ কি শেষ হয়েছে? এবারে কি আমি উঠতে পারি?’

‘উম…ম! হ্যাঁ…না… আরেকটু দাঁড়াও। আচ্ছা, অনিকের বাবার সাথে কি অনিকের কোনো গণ্ডগোল হয়েছে কখনো? অনিক তার বাবার বাসায় থাকে না কেন? অনিকের বাবা কি কখনো অনিকের বাসায় বেড়াতে এসেছে?’

রিয়াজ এবারে চরম বিরক্ত। মুখচোখে ফেটে বেরুতে লাগলো সেই বিরক্তিখানিক আগের সেই ধমক তার মাথা থেকে হারিয়ে যায়নি তখনোতাই উষ্মা প্রকাশে একটু সংযম দেখালো। চাপাগলায় বললো,

‘এতকিছু কি আমার জানার কথা নাকি? এসব ওদের বাপ-ছেলের ম্যাটার, ওদেরকেই জিজ্ঞেস করুন। বাট আমি শিওর, অনিক হয়ত ওর বাপকে তেমন পছন্দ করে না। যে বাপের এমন সুকীর্তি আছে, তাকে কোন ছেলে পছন্দ করে? তবে বাসায় যাওয়া আসা আছে নাকি… আমি ওসব জানি টানি না।’

‘হুম…লাস্ট কোশ্চেন। সুমনার বোন রুমানাকে দেখেছো?’

‘হুম দেখেছি। কেন ওর কী হয়েছে?’

‘নাহ কিছু হয়নি। এমনি জিজ্ঞেস করলাম। মেয়েটাকে কেমন লাগে তোমার?’

‘কেমন লাগবে আবার? কথাবার্তা বলতে টলতে পারে না। প্রতিবন্ধী। খাওয়ায় টাওয়ায় দিতে হয়। বেশি কিছু লাগার আছে নাকি ঐ মেয়েকে দেখে?’

রিয়াজের ভ্রু-ভঙ্গিটা দেখে আনিসুল হকেরই ইচ্ছে হলো, উঠে একটা মোক্ষম চড় কষিয়ে দেন। হাতটা তাতে খুব আরাম পেত। কিন্তু তা করা যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ ধরে এই ধেড়ে বদটাকে স্রেফ হজম করে গেলেন। শক্ত মুখে হাত নেড়ে বললেন,

‘আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এবারে আসতে পারো আবার কখনো প্রয়োজন পড়লে নিজের পায়ে হেঁটেই চলে এসোবাপের মোবাইলের টাকা শুধু শুধু খরচ করার দরকার নাই।’

রিয়াজ বেরিয়ে গেল। সেদিকে তাকিয়ে আনিসুল হক সশব্দেই বলে উঠলেন,

‘কী ভ্যারাইটিজ অফ ফ্রেন্ডস রে বাবা!’

মেজাজটা হয়ত পুরো সময়ে খারাপই থাকতো আনিসুল হকের। কিন্তু ঠিক সেই সময়েই একটা ফোন পেয়ে মনটা আবার প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। ফোনটা করেছে তার সেই ইনফর্মার। ফজলুল আহমেদের উত্তরার বাসার কাছে যাকে ভিখিরি বানিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন। সে বেশ উচ্ছ্বল গলাতে বললো,

‘স্যার, আর হয়ত বেশিদূর পানি গড়াবে না। আসল ঘটনা বের করা গেছে। আমার এখানে আর থাকার প্রয়োজন আছে বলে মনে হচ্ছে না।’

‘আচ্ছা! ভেরি গুড! পেয়েছো ইনফরমেশন? জেনুইন তো?’

‘স্যার এই ব্যাপারে একেবারে চিন্তা করবেন না। একদম হান্ড্রেড পারসেণ্ট পাক্কা ইনফরমেশন!’

‘তা এতদিন লাগলো কেন? একেবারে কাছাকাছিই তো ছিলে! আরেকটু আগে বের করতে পারলে না?’

‘কীভাবে পারবো স্যার? কেউ কোনো রকম হেল্প করতে চাইলে তো! একেবারে যেন মুখে কুলুপ এঁটে কাজ করছে সবাই। যারা বিশ্বস্ত, তাদেরকেই তো সাথে করে নিয়ে এসেছে। এজন্যই সুবিধা করতে পারছিলাম না।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছেবাকি কথা সাক্ষাতেই হবে। তুমি চলে এসো।’

‘আসছি স্যার! শুধু একটা অনুরোধ। ফজলুল আহমেদ সাহেবকে এই ক’দিন একটু চোখে চোখে রাখতে হবে। আমি যে এতকিছু জেনে গিয়েছি, এটা উনার জেনে যেতে কিন্তু সময় লাগবে না। আর তাতে পরিস্থিতি কোনদিকে যায় বলা মুশকিল।’

‘হুউম…আচ্ছা রাখবো চোখে চোখে। কিন্তু তাহলে আরেকটু সাবধান হওয়া উচিত ছিল তোমার।’

‘আমি সবরকম চেষ্টা করেছি স্যার। তবু কেন জানি নিশ্চিত হতে পারছি না।’

‘আচ্ছা, তুমি আসো এখন। এত দুশ্চিন্তার কিছু নেই!

আনিসুল হক লাইনটা কেটে দিলেন।

 

 

ক্রমশ

 

 

আগের পর্ব ও লেখকের অন্যসব লেখা পড়তে ক্লিক করুন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত