পদসঞ্চার (পর্ব-১১)
২ এপ্রিল । বৃহস্পতিবার । সকাল ১০ টা
কাল রাত দেড়টার সময় লেখা শুরু করেছিলাম। চারটে নাগাদ শেষ হয়েছে। তারপরে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়াছিলাম। ঘুমিয়ে পড়ে একটা স্বপ্ন দেখি। সেই অদ্ভুত স্বপ্নটা আপনাদের শোনাব।
বিশ্বের বিজ্ঞানীরা সমবেত হয়েছেন ইতালির ভেনিস শহরের একটি মঞ্চে। সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় : ‘বিজ্ঞান শুধু মানুষের মঙ্গলের জন্য’। আলোচ্য বিষয়টা শুনে একজন রাশিয়ান সাংবাদিক ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘ স্কুলের বাচ্চারা যে বিষয়ে রচনা লেখে, তা নিয়ে তাবড় বিজ্ঞানীরা আলোচনায় বসেছেন, ব্যাপারটা পরিহাস-রসিকতা নয় কি!’
কিন্তু ফ্রান্সের একজন প্রৌঢ় বিজ্ঞানী সাংবাদিককে ধমক দিয়ে বললেন, ‘স্কুলের বাচ্চারা যে বিষয়ে রচনা লেখে তা আমাদের মতো জ্ঞানপাপীরা বারবার এড়িয়ে গিয়েছি। বিজ্ঞান মানুষের জন্য—এটা তাই কথার কথা হয়েই থেকেছে এ যুগে, তাকে পুরোপুরি কাজে পরিণত করতে পারিনি আমরা। যুগ যত এগিয়েছে, ততই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীরা রাষ্ট্রনেতাদের হাতের পুতুল হয়ে যাচ্ছে।’
সঙ্গে সঙ্গে একজন বাঙালি বিজ্ঞানী বলে উঠলেন, ‘ এইজন্য আমাদের কবি রবীন্দ্রনাথ বড় দুঃখে বিজ্ঞানীদের উপাধিধরা ভৃত্য বলেছিলেন।’
বিশাল মঞ্চে বসে আছেন নানা দেশের বিজ্ঞানীরা। কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রির মার্টিন কার্লপ্লাস, ভাইরোলজির ডেভিড বাল্টিমোর, ইমিউনোলজির আ্যন্টনি ফাউচি, অনকোলজির হ্যারল্ড ভারসম, কোয়ান্টাম থিওরির আ্যলেন আ্যসপেক্ট, হিউম্যান জেনেটিক্সের ক্রেগ ভেল্টার, ইলেক্ট্রো কেমিস্ট্রির আ্যালেন বার্ড, ফিজিক্সের পেটার হিগস, কম্পিউটার সায়েন্সের টিমোথি বার্নাস লি, মলিকিউলার বায়োলজির জেমস ওয়াটসন, ইমিউনোলজির লোক মনটাজিনার, মলিকিউলার মেডিসিনের ক্রেগ মেল্লো, সিস্টেমস বায়োলজির লেরয় হুড, ইভলিউশনারি বায়োলজির জন টাইলার বোনার, মলিকিউলার বায়োলজির ডেনিস ব্যারি, ফিজিক্সের গর্ডন মূর, ডি এন এ কেমিস্ট ক্যারি মুলিস, জেনেটিকসের পিয়েরি চ্যামবন, ইভলিউশনারি প্যালিওবায়োলজির সিমন কনওয়ে, কার্বন সায়েন্সের মিলড্রেড ড্রেসলহানস, নিউরোসায়েন্সের জেরাল্ড এম. এডেলম্যান. মলিকিউলার জেনেটিকসের রোনাল্ড ইভানস, নিউরোডিজেনারেশনের স্ট্যানলি প্রুসিনার…. এমনি আরও কতজন।
আমাদের ভারত ও বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও এসেছেন সম্মেলনে। আছেন রফিকুল ইসলাম, অনুরাধা আচার্য, রবি চোপরা, কুমসুম নাহার, উদ্ভব ভারতী, অনিন্দ্য দত্ত, সমীর সাহা, এম আফজল হোসেন, চিন্তামণি নাগেসা, আসাদুল্লা খান প্রভৃতি। বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কিছু সাহিত্যিক, সমাজকর্মী, ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদদেরও এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রবীণ আধিকারিক ছিলেন সভার সঞ্চালক। বিকেল ঠিক তিনটেতে সভা শুরু করে তিনি বললেন, ‘ বন্ধুগণ! করোনা নামক এক ঘাতক ভাইরাসের বিশ্ব অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই সভা আহ্বান করেছি। পয়লা এপ্রিল পর্যন্ত পৃথিবীর ২০৮ টি দেশের ৮২৩৬৩৬ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৪০৫৯৮ জন মানুষের। যেসব দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি তাদের কয়েকটার উল্লেখ করছি : আমেরিকা ১৬৩১৯৯, ইতালি ১০৫৭৯২, স্পেন ৯৪৪১৭, চিন ৮২৬৩১, জার্মানি ৬৭৩৬৬, ফ্রান্স ৫১৪৭৭ । মৃত্যুর হারের দিক থেকে হিসেবটা এরকম : ইতালি ১১.৭%, বাংলাদেশ, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া ৭ – ১০%, স্পেন ৮.৭%, নেদারল্যান্ড ৮.২%, ইংল্যান্ড ৭.১%, চিন ৪%, জার্মানি ও আমেরিকা ১,১% – ১,৭% । এই ভয়ংকর অবস্থার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, পথের সন্ধান দিতে হবে । করোনা প্রসঙ্গে এসে পড়ছে জীবাণু যুদ্ধের কথা । বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে নানা গুজব।’
তাঁর কথা শেষ হতে-না-হতেই উঠে দাঁড়ালেন আমেরিকার এক বিজ্ঞানী। তিনি চিনা বৈজ্ঞানিকদের দিকে আঙুল তুলে বলতে লাগলেন, ‘ এঁরা যে এঁদের গবেষণাগারে ভাইরাস বানাচ্ছিলেন তার প্রমাণ আছে । গত বছর এঁদের এক এজেন্ট কানাডার ল্যাব থেকে সেই ভাইরাস চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন ল সেই ল্যাবের এক আধিকারিক সেই তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় তাঁকে মেরে ফেলা হয়।’
আমেরিকান বৈজ্ঞানিকের বক্তব্য সমর্থন করেন ফ্রান্স ও স্পেনের বৈজ্ঞানিকরা। লাফিয়ে উঠে চিনা বৈজ্ঞানিক আমেরিকান বৈজ্ঞানিকের বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রেসিডেন্ট আর তাঁর সাগরেদরা গোড়া থেকে একে চিনা ভাইরাস অথবা উহান ভাইরাস বলে চালিয়ে দিতে চাইছিলেন।’
-‘ কথাটা তো মিথ্যে নয়।’ টিপ্পনি কাটেন আমেরিকান বৈজ্ঞানিক।
-‘ ডাহা মিথ্যে।’ চিনা বৈজ্ঞানিক বলতে থাকেন, ‘ আমরা যে জীবাণু অস্ত্র তৈরি করি, তার কি কোন প্রমাণ এ পর্যন্ত কেউ দিতে পেরেছে ?’
-‘ আপনারা তলে তলে কি করেন, তা কাক-পক্ষী টের পায় না। আপনাদের, মানে কমিউনিস্ট দেশগুলির সেন্সরশিপ এমন কড়া যে কোন খবর বাইরে যেতে পারে না।’
রাশিয়ান বৈজ্ঞানিক প্রতিবাদ করে বললেন, ‘ আপনাদের অন্ধ কমিউনিস্ট বিদ্বেষ ত্যাগ করুন। জাপানে আ্যটম বোমা কে ফেলেছিল?’
জার্মান বৈজ্ঞানিক বলেন, ‘ কোনমুখে রাশিয়ার বৈজ্ঞানিক এ কথা বলেন?’
-‘ কেন, কেন?’
-‘ ১৯৭২ সালে জৈব অস্ত্র বানাবেন না বলে আপনারা চুক্তিতে সই করেছিলেন, তাই না! কিন্তু ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আপনারা তলে তলে বহু জৈব অস্ত্র বানিয়েছিলেন। পরে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। জানা গেল আপনাদের বায়োপিরেটের কথা। জানালেন আপনাদের জৈব অস্ত্রের কারখানার বিজ্ঞানীরা। মনে পড়ছে ড. ভ্লাদিমির পাশেচিঙ্ক, টেম্পল ফরচুন আর ড. কানাজাটজান আলিবেকভের কথা?’
-‘ ওঁরা তো দেশত্যাগী।’
-‘তার মানে রেনিগেড, তাই না!’
আমেরিকান বৈজ্ঞানিকের কথায় অনেকে ব্যঙ্গের হাসি হাসতে লাগলেন।
চিনা বৈজ্ঞানিক উত্তেজিতভাবে বলতে লাগলেন, ‘ আমাদের দেশের বাণিজ্যিক সাফল্য ঘুম কেড়ে নিয়েছে আমেরিকার। আমরা বিশ্বের এক নম্বর শক্তি হতে চলেছি, আমেরিকার এটাই গাত্রদাহের কারণ। ইরানের উপরেও তাদের রাগ। তাই চিন ও ইরানের উপর এই ভাইরাস আমেরিকাই ছড়িয়েছে। আমরা সামলে নিতে পেরেছি, কিন্তু করোনা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে এখন তার স্রষ্টা আমেরিকাকে গ্রাস করতে চলেছে।’
এই সময়ে পেছন থেকে কি একজন চেঁচিয়ে উঠল : আমরা ভুলে গেছি ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুরকে, যিনি গুটি পোকার মড়ক থেকে, জলাতঙ্ক থেকে বাঁচিয়েছিলেন মানুষকে; আমরা ভুলে গেছি বৃটিশ বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনারকে যিনি স্মল পক্স থেকে বাঁচিয়েছিলেন মানুষকে; আমরা ভুলে গেছি আমেরিকার ভাইরোলজিস্ট জোনাস সাল্ককে, যিনি পোলিও-র হাত থেকে বাঁচি্য়েছিলেন শিশুদের ; আমরা ভুলে গেছি বৃটিশ ডাক্তার স্যার রোনাল্ড রসকে যিনি মানুষকে বাঁচিয়েছিলেন ম্যালেরিয়া থেকে, আমরা ভুলে গেছে স্কটল্যান্ডের জীববিজ্ঞানী স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিংকে যিনি পেনিসিলিন আবিষ্কার করে আমাদের বাঁচিয়েছিলেন ফ্লু, নিউমোনিয়া, সিফিলিস, ডিপথিরিয়া থেকে…
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘দেখুন, করোনা মনুষ্যসৃষ্ট কিনা তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায় নি ; কোন বিশেষ দেশের ল্যাবে সেটা তৈরি হয়েছে কিনা, সেটাও তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা সে তদন্ত শুরু করব।’তাঁর কথা শুনে জার্মানির বৈজ্ঞানিক ব্যঙ্গের হাসি হেসে বললেন, ‘ সে তদন্ত শুরু হলেও বোধ হয় শেষ হবে না।’
জার্মান বৈজ্ঞানিক এ কথা কেন বললেন তা বাংলা দেশের এক বৈজ্ঞানিক জানতে চাওয়ায় জার্মান বৈজ্ঞানিক বললেন, ‘ কোন কোন দেশ যে জীবাণু অস্ত্র তৈরি করছে সে কথা এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানতে পারলেও তাঁরা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।’ নেদারল্যান্ডের বিজ্ঞানী বললেন, ‘ ১৯৭২-এর চুক্তিতে সই করলেও রাশিয়া যে ১৯৯০ পর্যন্ত জৈব অস্ত্র তৈরি করে গেছে তা কি আপনারা জানতেন না?’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট বললেন, ‘রাশিয়া এখন সেসব পরীক্ষা বন্ধ করেছে।’
-‘ কিন্তু মারাত্মক জৈব অস্ত্রের যে ভান্ডার তাদের আছে, সেগুলো কি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে?’
এ সময়ে সভার সঞ্চালক উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, ‘বন্ধুগণ! এটা পারস্পরিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির সময় নয়। মনে রাখবেন এ আমার এ তোমার পাপ। আসুন আমরা আজকের মূল আলোচনায় প্রবেশ করি।’
উঠে দাঁড়ালেন ইংল্যান্ডের এক বিজ্ঞানী। পক্ক্বকেশ, প্রৌঢ এই বিজ্ঞানীর কাজের সঙ্গে সকলে পরিচিত। জিনতত্ত্ব নিয়ে অতন্দ্র গবেষণা করে চলেছেন তিনি। নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন বলে সবাই ভেবেছিলেন। মাঝপথে ইনি গবেষণা থেকে হাত গুটিয়ে নিলেন। কারণ কেউ জানে না। কেউ কেউ অনুমান করেন এর কারণ রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে সংঘাত। মানুষটি বড্ড একরোখা। আপোষ করতে জানেন না। মানব-ব্যতীত কোন কাজ যে তাঁকে দিয়ে করানো যাবে না সে কথা সকলে জানেন। ভারত, বাংলাদেশ, জাপান, স্পেনের বহু বৈজ্ঞানিক তাঁর অনুরাগী । তাঁরা তাঁকে সম্মানের আসনে বসানোর বহু চেষ্টা করেছেন।
সেই বৈজ্ঞানিক তাঁর আসন থেকে উঠে দাঁড়াতে কয়েকজন তরুণ বৈজ্ঞানিক ছুটে গেলেন তাঁর দিকে। তাঁকে ধরে ধীরে ধীরে নিয়ে গেলেন মঞ্চের দিকে। বৈজ্ঞানিক মঞ্চে উঠে দাঁড়াতে স্তব্ধ হয়ে গেল সমূহ মুখরতা। তিনি কাঁপছিলেন। হয়তো শারীরিক অসুস্থতার জন্য, হয়তো বা দুরন্ত কোন আবেগে।
তিনি বলতে লাগলেন, ‘বন্ধুগণ! বিজ্ঞানীর কোন দেশ নেই, রাষ্ট্র নেই, ধর্ম নেই। প্রাচ্যের এক মহৎ কবির ভাষাতে বলা যায় সব ঠাঁই তার ঘর আছে, দেশে দেশে আছে পরমাত্মীয়। বিজ্ঞানী শুধু মানুষের জন্য। সব দেশের. সব জাতির, সব বর্ণের, সব ধর্মের মানুষের মঙ্গলই তার কাম্য। তার আবিষ্কার কোন এক দেশের সম্পদ নয়, মানব জাতির সম্পদ। আপনাদের হৃদয়ে কি এই বোধ লালিত হয়? বলুন আপনারা, বুকে হাত দিয়ে বলুন। নাকি কোন সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী ভাবনা আপনাদের মনের মধ্যে গেঁথে আছে? আপনারা কি পদ ও পদকের লো্ভে, স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবার ভীতিতে রাষ্ট্রনেতাদের নির্দেশে চলেন? আপনারা কি জানেন না, এই সব রাষ্ট্রনেতারা পরজীবী, প্যারাসাইট? বিজ্ঞানী, লেখক, কবি, শিল্পীদের সাধনা ও কৃতিত্বকে আত্মসাৎ করে এদের বাড়-বাড়ন্ত। এরাই অসাম্যের স্রষ্টা, এরাই সবল-দুর্বলের বিভাজন রেখা টেনে দেয়। স্বার্থলুব্ধ এরাই পররাজ্য আক্রমণ করে। বিজ্ঞানীকে নির্দেশ দেয় অস্ত্র নির্মাণের। এরা গালভরা নাম দেয় যুদ্ধের। কখনও বলে ধর্মযুদ্ধ, কখনও বলে ন্যায় যুদ্ধ। যে নামে ডাকা হোক, যুদ্ধটা যুদ্ধই। যুদ্ধ মানে হত্যা, যুদ্ধ মানে রক্তপাত। যুদ্ধের বলি হয় সাধারণ মানুষ। বলুন বন্ধুগণ, আপনারা কি এই সংকীর্ণচেতা, মানববিরোধী, স্বার্থলুব্ধ রাষ্ট্রনেতাদের নির্দেশে চলবেন? মেনে নেবেন তাদের নির্দেশ?’
এবার একটু থামলেন তিনি।
সমস্ত সভাঘরে তাঁর আবেগকম্পিত কণ্ঠস্বর গমগম করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্পর্শ করছে সমবেত মানুষের হৃদয়। তাঁরা রুদ্ধবাক। কারও কারও মনে জাগছে অনুশোচনা। কারও কারও চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল।প্রৌঢ় বিজ্ঞানী আবার বলতে শুরু করলেন, ‘ আপনারা বিজ্ঞানী। আপনারা স্রষ্টা। আপনারা ভগবান। সেই ভগবান কেন তুচ্ছ ক্ষমতামদমত্ত শাসকের পদলেহন করবেন?’ আর বলতে পারলেন না তিনি। আবেগাপ্লুত হয়ে চেতনা হারালেন। তাঁর মুখে-চোখে জল দিয়ে সুস্থ করা হল। দেখা গেল তাঁর সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে। তিনি আকুল হয়ে তাকিয়ে আছেন সমবেত বিজ্ঞানীদের দিকে। সঞ্চালক বললেন, ‘ আপনারা এই শ্রদ্ধেয় বিজ্ঞানীর বক্তব্য কি সমর্থন করছেন?’
সবাই হাত তুলে সমর্থন জানালেন প্রৌঢ় বিজ্ঞানীর বক্তব্য।
তখন সঞ্চালকের পরিচালনায় তৈরি হল নতুন একটি সংগঠন। যার নাম : বিশ্বের বিজ্ঞানী সমাজ। নতুন সেই সংগঠনের সদস্যরা শপথ নিলেন : তাঁরা জৈব অস্ত্র বা মানবের পক্ষে অমঙ্গলকর কোন কিছুর গবেষণা থেকে বিরত থাকবেন; যুক্ত থাকবেন না কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে; মানবেন না কোন রাজনৈতিক নেতার নির্দেশ।
এক বাঙালি কবি হাসতে হাসতে বললেন, ‘ করোনাকে গালাগাল দিয়েছি। এখন দেখছি তার একটা ভালো দিকও আছে। সে মিলিয়ে দিতে পেরেছে বিজ্ঞানীদের। তাঁদের মনে এই বোধ জাগ্রত করে দিতে পেরেছে যে বৈজ্ঞানিক গবেষণা হবে শুধু মানুষের মঙ্গলের জন্যই।’
[ক্রমশ]
আগের সবগুলো পর্ব ও লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন।
![দিলীপ মজুমদার](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2022/12/10806374_1509715065966249_665369-150x150.jpg)
গবেষক