পদসঞ্চার (পর্ব-১২)
৪ এপ্রিল । শনিবার
এখনও পর্যন্ত আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে না। ফ্ল্যাটে বা আবাসন কমপ্লেক্সে থাকলে হত। আমাদের পাশে থাকে অনুপ আর তনু। ধর্মতলায় একটা ব্যাঙ্কে চাকরি করে অনুপ। এখন সাইকেলে চলে যায়। আসার পথে টুকটাক জিনিসপত্র এনে দেয় আমাদের জন্য। মাঝে মাঝে চলে আসে নব বা রানু। প্রাচীরার উপর রেখে দিয়ে যায় কিছু ফল বা মাছ। আরতিও তার বাগানের ফল-পাকড় দেয় ওদের। দূরত্ব বজায় রেখে কথা হয়। সম্পর্কটা বজায় থাকে। কিন্তু থাকবে কি !
করোনা কি আমাদের সামাজিক আর পারিবারিক সম্পর্ককে নষ্ট করে দেবে না! সৃষ্টি করবে না একটা সন্দেহের বাতাবরণ!
করোনার আতঙ্ক তাড়িত করে বেড়াচ্ছে সকলকে। সেই আতঙ্ক নষ্ট করছে আমাদের সম্পর্ক। অস্বাভাবিক নয় এই আতঙ্ক। সারা পৃথিবী তছনছ করে দিচ্ছে একটা অদৃশ্য অনুজীব। উন্নত দেশগুলিও ঠেকাতে পারছে না তাকে। তার বিরুদ্ধে কামান-বন্দুক নিয়ে তেড়ে যেতে পারছে না রে রে করে। করোনা নিজেকে কিভাবে বদলাচ্ছে বা বদলাবে, তার আক্রমণ ক্ষমতা ও মারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে কি না, চিরতরে অবলুপ্ত হবে কি না সে, কখন কিভাবে শুরু হবে তার দ্বিতীয় তরঙ্গ, যারা আরোগ্য লাভ করবে তারা আবার আক্রান্ত হবে কিনা, প্রতিষেধক কবে আবিষ্কার করবেন বিজ্ঞানীরা—এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের কাছে নেই। সামনে আছে শুধু করোনা আর অন্ত্যহীন, প্রতিকারহীন পরাভব।
তাই আতঙ্ক।
এ আতঙ্কের দুটি উপাদান। প্রথমত, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পেলে আইসোলেশনে যেতে হবে। স্বাচ্ছ্ন্দ্যহীন সে ব্যবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা না-পাওয়ার ভীতি; সামাজিক বয়কট ও অসম্মানের ভীতি। এ ভীতি অমূলক নয়। কারণ আমরা দেখছি করোনা আক্রন্ত হয়েছে, অথবা আক্রান্ত হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে- এমন মানুষ সমাজের অন্যান্য মানুষের কাছে রাতারাতি অস্পৃশ্য হয়ে গেছে।
কার্ল মার্কস শ্রেণিবিভক্ত সমাজের যে ছবি এঁকেছিলেন, কিংবা ভারতে যে বর্ণ ও জাতিভেদের ছবি প্রচলিত ছিল, করোনা তাকে মুছে দিয়ে নতুন ছবি এঁকেছে। পৃথিবীর মানুষ এখন দুই শ্রেণিতে বিভক্ত: করোনা আক্রান্ত এবং করোনামুক্ত। যারা আক্রান্ত তাদের অনাক্রান্ত মানুষদের জন্য কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে, না হলে জোর করে নিয়ে যাওয়া হবে। ‘Virus of untouchability’ প্রবন্ধে আজাজ আশরফ লিখছেন, ‘ The world today is divided into those who have tasted positive for COVID 19 or are suspected to be carrying the coronavirus and those who have not been infected by it . There is a social consensus that for the well-being of the second category of people , inarguably comprising almost all of the global population barring an infinitesim of percentage, it is imperative to socially distance the infected . They must voluntarily accept the quarantine, else they must be
Forcibly plucked out from their social milieu and segregated.’ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত হবার ফলে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বেড়ে যাবে। ধনী ও উচ্চবিত্তরা নিজেদের আরও গুটিয়ে নেবে। আমারিকার শহুরে মানুষদের মতো দ্বীপাচারী হবে যাবে। সদানন্দ মেনন বলেছেন তাঁর ‘ Reverse Swing; The new global untouchability virus’ প্রবন্ধে: ‘ For those who belong to upper-middle class and above, this inaugurates a new era of extreme individuation and self- withdrawal into a cave or plastic suit for months, taking recourse to home-delivery survival mechanism like Amazon and Zomato and of the service provider. We are swiftly tumbling into the fate of average American who is born in a megapolis, studies in a multiversity , works for a conglomerate and feels lonely. ‘
করোনা সম্পর্কে দ্বিতীয় ভয়টা মৃত্যুভয়। কিন্তু এ ভয়টা একটু অতিরঞ্জিত নয় কি! করোনায় আক্রান্ত হলেই মৃত্যু, ব্যাপারটা তেমন নয়। যে কোন দিনে করোনা আপডেটের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে ব্যাপারটা ধরা পড়বে। দেখা যাবে মৃত্যুর চেয়ে আরোগ্যলাভের সংখ্যা দুই বা তিনগুণ। আবার যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশের পূর্ববর্তী কোন জটিল অসুখ-বিসুখ ছিল। ইউরোপ-আমেরিকায় যারা মারা যাচ্ছে, তাদের একটা বড় অংশ আবার প্রৌঢ় মানুষ ৬০-৭০ + ।
তাছাড়া সংক্রমণে মৃত্যু খুব অভিনব মৃত্যু নয়। প্রতি বছর ফ্লুতে মৃত্যু হয় সারা বিশ্বে প্রায় ২ লক্ষ ৯০ হাজার থেকে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের। এইচ আই ভিতে মৃত্যু বরণ করেছে ৭ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ। রোটা ভাইরাস প্রাণ হরণ করেছে ২ লক্ষ ১৫ হাজার শিশুর। ডেঙ্গুতে প্রতিবছর মারা যায় ২২ হাজার মানুষ।
তবু করোনার আতঙ্ক অস্বাভাবিক নয়। তার একটা প্রধান কারণ স্বল্প সময়ের মধ্যে এর বিশ্বব্যাপী প্রসার। কিন্তু আতঙ্ক কি প্রধান হয়ে মনুষ্যত্বের সাধারণ নিয়ম-নীতিকে বিনষ্ট করে দেবে? করোনায় আক্রান্ত হওয়া যে কোন অপরাধ নয়, সে সঙ্গত যুক্তিতে কি আস্থা রাখা যাবে না? করোনা আক্রান্তকে অস্পৃশ্য বলে আমরা দূরে সরে থাকব?
একের পর এক এরকম অমানবিক ঘটনা আমরা ঘটতে দেখছি।
বারাসতের এক বৃদ্ধ মানুষ আর জি কর হাসপাতালে তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে গিয়েছিলেন। গুজব রটে গেল বৃদ্ধের স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ফিরে বৃদ্ধ তাঁর ভাড়াবাড়িতে ঢুকতে গেলে এগিয়ে এলেন বাড়িওয়ালা। সঙ্গে কিছু প্রতিবেশী। করোনা রোগীর স্বামীকে ঘরে ঢুকতে দেবেন না তাঁরা। বৃদ্ধের বক্তব্যও মিথ্যে অজুহাত বলে শুনবেন না।
মহারানি ইন্দিরা দেবী রোডের নিবেদিতা মিত্র একদিন রাতের বেলায় বাথরুমে গিয়ে আজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। প্রতিবেশীরা তাঁর স্বামী ও সন্তানের চিৎকার শুনেছিলেন। এগিয়ে যান নি কেউ। কি জানি, যদি করোনা আক্রান্ত হন! অথচ সেদিন দুপুরেই নিবেদিতার সঙ্গে কথা হয়েছে কোন কোন প্রতিবেশীর। আট-দশ ঘন্টার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়ার মধ্যে যে যুক্তি নেই সে কথা আতঙ্কগ্রস্ত মানুষকে কে বোঝাবে! শেষপর্যন্ত তিনটি সাহসী নারী এগিয়ে এসে নিবেদিতাকে স্থানীয় বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতাল জানিয়ে দেন হার্ট আ্যটাকে মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও পরের দিন কেউ শেষকৃত্যে এগিয়ে এলেন না।
রাজেন্দ্র মল্লিক স্ট্রিটের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ কয়েক দিন ধরে জ্বর-কাশিতে ভুগছিলেন। বাড়ির লোক ভাবলেন একবার হাসপাতালে দেখিয়ে নেওয়া ভালো। সেই মতো তাঁরা আ্যম্বুলেন্স ডাকেন। কিছুটা এগুবার পর বৃদ্ধের কাশি দেখে সন্দেহ হয় চালকের। মাঝপথে আ্যম্বুলেন্স ফেলে সে পালিয়ে যায়। যেন হঠাৎ ভূত দেখেছে। শেয পর্যন্ত পুলিশের গাড়িতে বৃদ্ধকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কারও সামান্য সর্দি-জ্বর হলেই যদি ধরে নেওয়া তিনি করোনা আক্রান্ত, তাহলে সে প্রবণতা মারাত্মক।
উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটার এক যুবক বলি হল এই সন্দেহ ও অস্পৃশ্যতার। যুবকটি কলকাতায় ছোটখাট ব্যবসা করতেন। লকডাউনের জেরে কাজকর্ম না থাকা্য় দিন কয়েক আগে বাড়ি এসেছেন। শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না বলে গাইঘাটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। ডাক্তারবাবু বলেছেন শরীরটা দুর্বল। ব্যস, গ্রামে রটে গেল যুবকটি করোনায় আক্রান্ত। একঘরে হয়ে গেলেন তাঁরা। গ্রামের কল থেকে জল নিতে দেওয়া হল না। তাঁকে বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হল না। এরকম মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে পারলেন না সেই যুবক। গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করলেন।
মরেও শান্তি পেলেন না আন্দুলের বাসারত মোল্লা। হজ করে দুবাই থেকে ফিরেছিলেন তিনি। তাঁর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট হয়। সত্যবালা আই ডি হাসপাতালে ভর্তি করে হয় তাঁকে। পরীক্ষার জন্য তাঁর লালারসের নমুনা পাঠানো হয়। কিন্তু রিপোর্ট আসার আগে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু তাঁকে কবর দিতে নিয়ে গেলে স্থানীয় অধিবাসীরা ফেটে পড়েন ক্ষোভে। রিপোর্টে কি আছে তা না জেনেই তাঁরা সিদ্ধান্ত করে নেন যে বাসারত করোনায় আক্রান্ত। পুলিশ আসে। পুলিশের সঙ্গেো চলে খন্ডযুদ্ধ।
মানিকতলার এক বস্তিতে হুলুস্থুলু কান্ড। সত্তর বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধকে ঘিরে জনতার চিৎকার। বৃদ্ধের নাম নারায়ণ চৌরাসিয়া। লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গিয়েছিলেন আর জি কর মেডিকেল হাসপাতালে। দুহাতে স্যালাইনের চ্যানেল করা, মাথায় সার্জিকাল ক্যাপ. মুখে মাস্ক। তাঁকে দেখেই চিৎকার উঠল ‘ করোনা রোগী, করোনা রোগী’। বৃদ্ধ কিছু বলতে চান। কে শোনে তাঁর কথা! একজন বুদ্ধিমান মানুষ বিধান দিলেন, ‘নির্ঘাত কোন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছে। খোলা রাখলে যাকে-তাকে ছুঁয়ে দেবে, তাই বেঁধে রাখা ভালো।’ তখন আতঙ্কগ্রস্ত, উৎসাহী মানুষ বাঁধার সঙ্গে উত্তম-মধ্যম দিতেও ছাড়ল না। ভাগ্য ভালো মৃত্যু হয় নি নারায়ণবাবুর। মৃত্যু হলে ‘করোনায় মৃত্যু’ বলে রটে যেত।
হাওয়ার চেয়ে জোরে ছোটে গুজব। ছুটতে ছুটতে তালকে তিল করে। ফলে কাণ্ডজ্ঞান ও নৈতিকতা হারিয়ে ফেলে মানুষ। অথবা, মৃত্যুভয়ে উন্মাদ হবে যায়। এ কথা ভাবে না যে, তারও করোনার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তখন তাকেও এভাবে একঘরে করে দিতে পারে অন্য মানুষ।
আমাদের পাড়ায় গ্যাস সিলিন্ডার দেয় যে ছেলেটি তার নাম মিঠু। সে আসে সোনারপুর থেকে। চাকরি বাঁচাবার জন্য বহু কষ্ট করে আসতে হয়। আমার স্ত্রী দুপুর তার খাবার ব্যবস্থা করেছে। তাই দেখে
এক প্রতিবেশী সমালোচনা করলেন। কারণ মিঠুরা যেখানে-সেখানে ঘোরে, অপরিচ্ছন্ন, করোনার লক্ষণহীন বাহকও হোয়া সম্ভব ল আমি বললাম, ‘এই নোংরা ছেলেটি না এলে যে আপনার পেটে ভিজে ন্যকড়া চাপাতে হবে।’ আর যে কথা বলতে পারলাম না, তাহল, ‘মশাই, আপনিও তো লক্ষণহীন বাহক হতে পারেন’।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক, নার্স প্রভৃতি করোনাযোদ্ধাদের জন্য তালি ও থালা বাজাতে বলেছিলেন। আমরা জনতা কার্ফু শেষ হবার পরেই বিপুল উদ্যমে থালা বাজিয়েছি, তালি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের মধ্যেকার বাড়িওয়ালারা সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের বাড়ি থেকে চলে যেতে বলছেন অবিলম্বে।
টানা ১৫ দিন সরকারি হাসপাতালের শিশু বিভাগে ডিউটি দেওয়ার পরে ছুটি পেয়ে স্বামীর কর্মস্থলে গিয়েছিলেন এক নার্স। স্বামী এক ব্লক অফিসের কর্মী। স্ত্রী যে হাসপাতালে কাজ করতেন, সেখানে করোনা সংক্রমণে একজনের মৃত্যু হয়েছে এই খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা তাঁদের আবাসন ঘিরে ফেলেন। স্বামী ও স্ত্রীকে বাধ্য করা হয় আবাসন ছাড়তে । ঘটনাটি বর্ধমানের আউশগ্রামের।
চিনার পার্ক সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মীরাও হেনস্থা হচ্ছেন নানাভাবে। সেখানে কাজ করতেন এক দম্পতি। তাঁরা একদিন কাজ থেকে তাঁদের আবাসনে ফিরতে গিয়ে দেখেন গেটে তালাবন্ধ। তাঁদের আবাসনে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কারণ তাঁরা যে হাসপাতালে কাজ করেন সেখানে করোনা রোগীর চিকিৎসা চলছে। শুধু ডাক্তার-নার্স নয়, কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র করতেও আসছে বাধা। নিউ টাউনের কাছে এক কেন্দ্র করা হবে শুনে স্থানীয় অধিবাসীরা ব্যারিকেড তৈরি করে পুলিশের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ করেছেন।
আতঙ্কে ছিন্নমস্তা হয়ে গেছে মানুষ। যাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে, তাদের ছাড়া চিকিৎসা হবে কি করে? চিকিৎসা না হলে সংকট কাটবে কি করে?
মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্তকে কেন অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে? কোণঠাসা করা হচ্ছে আক্রান্তের পরিবারকে? যার জেরে পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত হচ্ছেন অন্যরা। এ ক্ষেত্রে তাই সংক্রমণের থেকেও যেন সামাজিক হয়রানির আশঙ্কাই বেশি। আমরা যে মানবিকতা, শিক্ষা ও সভ্যতার কথা বলি—সেসব অনেকেই হঠাৎ ভুলে গেলাম। আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর, নখ-দাঁত বার করা উন্মত্ত চেহেরাই যেন আমাদের পরিচয় হয়ে দাঁড়াল! তাহলে কি বিপর্যয় আমাদের আড়াল সরিয়ে আসল চেহেরা প্রকাশ করে দেয়? করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা আমাদের এই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। অন্যের অবস্থানে নিজেকে রেখে তার অনুভূতি বোঝার সংবেদনশীলতা হারিয়েছি আমরা।’
আমরা মুখে মাস্ক বেঁধেছি, হাতে গ্লাভস পরেছি, নিজেদের ঘৃহবন্দি করে রাখছি, কারোর সঙ্গে দরকারে কথা বলতে হলে এক মিটার দূরত্ব রাখছি, কেউ ঘরের কড়া নাড়লে বিরক্ত হচ্ছি, চারদিকের সবাইকে দেখছি সন্দেহের চোখে। সংক্রমণ রুখতে যতটা না করছি, তার চেয়ে অনেক বেশি করছি নিজের প্রাণ বাঁচাতে।
চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। কিন্তু এ যুগে চাচা কি বিচ্ছিন্ন থেকে আপন প্রাণ বাঁচাতে পারবে? রবীনসন ক্রুশোর মতো দ্বীপাচারী হয়ে এ যুগে বাঁচা যায় না। এভাবে কেউই আমরা বাঁচতে পারব না। না ব্যক্তি, না পরিবার, না সমাজ, না রাষ্ট্র। যে আতঙ্ক, যে সন্দেহ আমাদের কুরেকুরে খাচ্ছে তা কি একদিন চলে যাবে! করোনা যাবার পর! মনে হয় না। রবীন্দ্রনাথের ‘মধ্যবর্তিনী’ গল্পে হরসুন্দরী আর নিবারণের মধ্যে যেমন মৃতা শৈলবালার অদৃশ্য উপস্থিতি থেকে যেত, তেমনি আমাদের সম্পর্কের মধ্যেও তেমনি একটা অদৃশ্য সন্দেহ ও আতঙ্কের মৃতদেহ থেকে যাবে অনেকদিন।
[ক্রমশ]
আগের সবগুলো পর্ব ও লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন।
![দিলীপ মজুমদার](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2022/12/10806374_1509715065966249_665369-150x150.jpg)
গবেষক