দেবারতি মিত্র কবি, গদ্যকার। প্রথম কবিতার বই, ‘অন্ধস্কুলে ঘণ্টা বাজে’। অন্যান্য বই: ‘যুবকের স্নান’, ‘ভূতেরা ও খুকি’, ‘খোঁপা ভরে আছে তারার ধুলোয়’ প্রভৃতি। কবিকৃতির জন্য পেয়েছেন কৃত্তিবাস পুরস্কার (১৯৬৯), আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৫) এবং রবীন্দ্র পুরস্কার (২০১৪)। ২০০২ সালে তিনি জাতীয় কবি নির্বাচিত হন। আজ ১২ এপ্রিল কবি দেবারতি মিত্রের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
যা নিয়ে কৌতুক
আমার সর্বস্ব ছুঁড়ে ফেলে দিই খোলা মাঠে
ওদের টিনের চালে, পশুর হৃদয়ে।
সেখানে জন্মায় রোদ, জ্যোৎস্না, অশ্রুর কল্পনা,
তারা সান্দ্র গান করে, ভয় দেখায়,
অপূর্বতা আনে।
মায়ের স্মৃতির রুক্ষ নিদারুণ শোক,
মৌচাকের ভরা মধু তাঁর স্নেহ কাঁপে।
আমাকে ডেকো না, বলে কাঠঠোকরা পাখি।
প্রজাপতি উড়ে যায় ফুল ফেলে দূর থেকে দূরে।
আমার থাকে না কিছু,
তিলে তিলে সব চলে যায়।
শুধু সন্ধ্যা-অরুণের অস্তরাঙা সজীব বেদনা
বয়ে আসে লোকালয়ে, দেশকালে,
ব্যর্থ কবিতায়,
যা নিয়ে কৌতুকভরে খেলা করো তুমি।
আমারই কবি
লাল গোলাপ, নীল গোলাপ, সাদা গোলাপ কোত্থাও নেই।
ভ্যান গগের ছবির মত চিহ্নিত চেয়ার,
গদি তোষকহীন খাটের ধার চিত্রবিচিত্রিত।
বরফনীল প্যান্ট, ছাই রঙা শার্ট পরা পুরুষটি
অফিস থেকে ফিরে একটু শ্রান্ত।
এক কাপ চা খেতে খেতে আমাকে বলল —
‘তুমি আমার কবি, শুধু আমারই কবি,
আর কাউকে কখনো কাউকে লিখবে না।
কথা দাও তুমি ধ্যানে স্বপ্নে আমারই কবি
থাকবে সারাজীবন।’
তারপর আর ভাব হয়নি কারুর সঙ্গে।
দেয়ালা
এক কবি বলেছিলেন পৃথিবীটা পান্থনিবাস।
সত্যি সত্যি কটা দিনই বা মানুষ বেঁচে থাকে,
খুব বেশি হলে বড়জোর সত্তর আশি—
তার মধ্যেই যত ভাব-ভালোবাসা,
ঝগড়াঝাঁটি, খুনরাহাজানি, পাপপুণ্য।
জীবন আর মৃত্যুকে নিয়ে গালভারি কিছু ভাবতে
আমার ভয় হয়, কারণ কোনোটাই আমি চিনি না।
আমার সাত মাসের শিশু বুকের দুধ খায়—
ঘন্টার পর ঘন্টা তার মুখের দিকে চেয়ে বসে থাকি।
ছোট্ট ছোট্ট বেলুনের মতো নীল ফুল
পান্থনিবাসের বাগানের গাছে।
আমার বাচ্ছাটা তাদের দেখে হাসে,
দেয়ালা করে।
শক্ত শক্ত ব্যাপার আমি বুঝি না, সেও বোঝে না।
