প্রাচীন ঢাকার স্থাপনা: ইতিহাসের আলোকে । চান্দ্রেয়ী পাল মম
ঢাকা এক প্রাচীন শহর। এ শহরের রয়েছে প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাস। এর অলিতে গলিতে বিরাজ করে কত নাম না জানা গল্প, গাঁথা। বর্তমানের যুগের আমরা তার কতটুকুই বা জানি। এ শহরের ইতিহাস মোড়া আছে বেশ কিছু স্থাপনায় । মসজিদ, মন্দির, কেল্লা, প্রাসাদ কি নেই। যেই স্থানগুলোকে বর্তমানে আমরা দর্শনীয় স্থান হিসেবে জানি সেসব স্থানের পেছনে তাকালে দেখা যায় শত বছরের ইতিহাস।
লালবাগ কেল্লা
লালবাগ কেল্লা ঢাকার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ। এটির নির্মাণকাজ শুরু করেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র মুহাম্মদ আজম শাহ ১৬৭৮ সালে। পরবর্তীতে তার উত্তরসুরি মুঘল সুবাদার শাস্তেতা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু তার কন্যা পরী বিবির মৃত্যুও পর তিনি ১৬৮৪ খ্রিষ্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। প্রথমে এই কেল্লার নাম ছিল কেল্লা আওরঙ্গবাদ। ১৮৪৪ সালে দুর্গের এলাকাটি “আওরঙ্গবাদ” নাম বদলে “লালবাগ” নাম পায় এবং দুর্গটির নাম দেয়া হয়ে লালবাগ কেল্লা।
১৯১০ সালে লালবাগ কেল্লা সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা এবং নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ কেল্লা যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই স্থাপনার মূল নকশার মধ্যে পরীবিবির সমাধি বেশ উল্লেখযোগ্য। সমাধিটি মার্বেল পাথরের তৈরি সুন্দর কারুকাজপূর্ণ। কেল্লায় তিনটি ফটক রয়েছে। মূল ফটকটি দিয়ে প্রবেশ করলে একটি প্রশস্ত বাগান চোখে পড়ে। এছাড়া বর্তমানে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ এর বাসভবন ও দরবার হল লালবাগ কেল্লা জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। লালবাগ কেল্লা মোগল আমল এর একটি চমৎকার নিদর্শন।
আহসান মঞ্জিল
আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি স্থাপত্য নিদর্শন। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হলেও পূর্বে এটি ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে এর নামকরণ করেন। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে।
এই প্রাসাদের ছাদের উপর সুন্দর একটি গম্বুজ আছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ। মূল ভবনের বাইওে রয়েছে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বার। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে দু’টি মনোরম তোরণ। আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তওে আছে বৈঠকখানা, পাঠাগার, নাচঘর, দরবারগৃহ, ভোজন কক্ষ ও অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। প্রাসাদেও ঠিক সামনে রয়েছে প্রশস্ত বাগান। এবং দ্বিতীয় তলা থেকে একটি সুন্দর সিঁড়ি নেমে এসেছে সবুজ বাগানে।
বর্তমানে আহসান মঞ্জিলের মূল প্রাসাদটি গ্যালারি আকারে রূপান্তর করা হয়েছে। ২৩ টি গ্যালারিতে মোট নিদর্শন রয়েছে ৪০৭৭টি। ১৯০৪ সালে তোলা ফ্রিৎজকাপের আলোকচিত্র অনুযায়ী বিভিন্ন কক্ষ ও গ্যালারিগুলো সাজানো হয়েছে। ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হলো আহসান মঞ্জিল। নবাব পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত এই প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রোজ গার্ডেন প্যালেস
রোজ গার্ডেন প্যালেস ঢাকার টিকাটুলি এলাকার কে এম দাস লেনে অবস্থিত একটি বিংশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক প্রাচীন ভবন। ১৯৩১ সালে তৎকালীন নব্য জমিদার ঋষিকেশ দাস ২২ বিঘা জমির উপর একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন। বাড়ির বাগান প্রচুর গোলাপ গাছ থাকার কারণে এর নাম হয় রোজ গার্ডেন। ছয়টি লতাপাতার কারুকাজ করা থামের উপর এই প্রাসাদটি স্থাপিত। বাগানটি সুদৃশ্য ফোয়ারা, পাথরের মূর্তি ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত ছিল। মূল ভবনে পাঁচটি কামরা, একটি নাচঘর আছে। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করেই রয়েছে একটি বিস্তীর্ণ খোলা প্রাঙ্গণ যার মঞ্চের ওপর দন্ডায়মান নারী মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। পূর্বাংশের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে একটি আয়তাকার পুকুর। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের নিকট এটি ঢাকার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। রোজ গার্ডেন ১৯৭০ থেকে নাটক ও টেলিফিল্ম শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।
তারা মসজিদ
তারা মসজিদ পুরান ঢাকার আরমানিটোলয় আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত। খ্রিষ্টীয় আঠারো শতকে ঢাকার জমিদার মির্জা গোলাম পীর এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। দিল্লি, আগ্রা ও লাহোরে নির্মিত মোঘল স্থাপত্য শৈলী অনুসরণে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। আদি নকশায় মসজিদটির গম্বুজ ছিল তিনটি। এর ভিতরে মাঝের গম্বুজটি অনেক বড় ছিল। সাদা মার্বেল পাথরের গম্বুজের উপর নীলরঙা তারার নকশা যুক্ত ছিল। সেই থেকে এই মসজিদটি তারা মসজিদ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার তৎকালীন স্থানীয় ব্যবসায়ী, আলী জান বেপারী মসজিদটির সংস্কার করেন। এই সময় মসজিদটির আকার বৃদ্ধি করা হয়। মসজিদের মেঝে মোজাইক করা হয়। চিনিটিকরি কৌশলের এই মোজাইকে ব্যবহার করা হয় জাপানী রঙিন চীনা মাটির টুকরা এবং রঙিন কাঁচের টুকরা। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদটির পুনরায় সংস্কার করা হয়। এই সময় পুরনো একটি মেহরাব ভেঙে দুটো গম্বুজ আর তিনটি নতুন মেহরাব বানানো হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে এর গম্বুজ সংখ্যা পাঁচটিতে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া মসজিদের দেয়াল ফুল, চাঁদ, তারা, আরবি ক্যালিওগ্রাফিক লিপি ইত্যাদি দিয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
কার্জন হল
কার্জন হল ঢাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ভবন, যা পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃত। ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের নামানুসারে এ ভবনটি টাউন হল হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে এটি ঢাকা কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। পরে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এ ভবন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে এবং বর্তমানেও তা চলছে। ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচিত এ ভবনটিতে সংযোজিত হয়েছে ইউরোপ ও মুগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ। প্রশস্ত বাগানে নির্মিত কালচে লাল ইটের এ দ্বিতল ভবনে রয়েছে একটি বিশাল কেন্দ্রীয় হল। সে সাথে পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশে রয়েছে সংযোজিত কাঠামো যা অসংখ্য কক্ষ সমৃদ্ধ এবং চারপাশ দিয়ে বারান্দা ঘেরা। ভাষা আন্দোলন এর ইতিহাসে কার্জন হল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ১৯৪৮ সালে এখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এই সংক্রান্ত জিন্নাহর ঘোষণার প্রতি প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
ঢাকেশ্বরী মন্দির
ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্দির। ঢাকার ঢাকেশ্বরী রোডের উত্তর পার্শ্বে মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দির অঙ্গনে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি সিংহদ্বার। সিংহদ্বারটি নহবতখানা তোরণ নামে অভিহিত। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রাচীন তত্ত্ব বেশ রহস্যাবৃত বিশ শতকের গোড়ার দিকে ব্র্যাডলী বার্ট লিখেছেন যে, মন্দিরটি দুশো বছরেরও অধিক পুরানো এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন হিন্দু এজেন্ট এটি নির্মাণ করেছিলেন। আবার জনশ্রুতি অনুযায়ী মন্দিরটির নির্মাতা বল্লাল সেন নামে একজন রাজা। মন্দিরটি আগাগোড়াই চুন-বালির গাঁথুনিতে নির্মিত, যা বাংলার মুসলিম আমলেরই স্থাপত্য রীতির বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে মন্দিরের রীতি এবং গঠনকাঠামো এর নির্মাতা হিসেবে অন্য একজনকে ইঙ্গিত করে। এখানে আরাকানি বৌদ্ধ মন্দিরের মতো পুকুর, অশ্বত্থবৃক্ষ, বাগান, মঠ, পান্থশালা, সন্ন্যাসীর আশ্রম, মন্ডপ, বারান্দা, গর্ভগৃহ ইত্যাদি রয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দশভুজা দেবীর বিশিষ্ট কোনো নাম নেই। কোথাও তিনি রাজেশ্বরী, কোথাও তিনি দুর্গা, আবার কোথাও তিনি মহামায়া বা চন্ডী। শহরের পৃষ্ঠপোষক ঈশ্বরী হিসেবে এ দশভুজা দেবীর নাম হয়েছে ঢাকেশ্বরী (ঢাকা+ঈশ্বরী)।
দেবী ঢাকেশ্বরী বিগ্রহটি ৮০০ বছরেরও প্রাচীন। মন্দিরের মূল বিগ্রহটি এই মন্দিরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালের সময় এই মূর্তিটি বিশেষ বিমানে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে প্রতি বছর এ মন্দিওে দশভ’জা দুর্গা দেবীর পূজা করা হয়।
বিউটি বোর্ডিং
বিউটি বোর্ডিং পুরান ঢাকার বাংলা বাজারে ১নং শ্রীশদাস লেনে অবস্থিত একটি দোতলা পুরাতন বাড়ি যার সাথে বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস জড়িত এবং এই ভবনটিকে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির গুণী মানুষদের আড্ডার একটি কেন্দ্র বা ইতিহাসের ভিত্তিভূমি বলে মনে করা হয়। পুরান ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। বিউটি বোর্ডিং বাড়িটি ছিল নিঃসন্তান জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পূর্বে সেখানে ছিল সোনার বাংলা পত্রিকার অফিস। দেশভাগের সময় পত্রিকা অফিসটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হয় এবং ১৯৪৯ সালে দুই ভাই প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ও নলিনী মোহন সাহা এই বাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন বিউটি বোর্ডিং। বাড়িটি ১১ কাঠা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি প্রসস্ত বাগান সমৃদ্ধ এল আকৃতির একটি হলুদ রঙের বিরাট বাড়ি।
বিউটি বোর্ডিং এর জন্মলগ্ন থেকেই এখানে আড্ডা দিতেন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাংবাদিক, চিত্রপরিচালক, নৃত্যশিল্পী, গায়ক, অভিনেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।এখানে যারা আড্ডার আসরে আসতেন এদের মধ্যে কবি শামসুর রাহমান, রণেশ দাশগুপ্ত, ফজলে লোহানী, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, ব্রজেন দাস, হামিদুর রহমান, বিপ্লব দাশ, আবুল হাসান, মহাদেব সাহা, আহমেদ ছফা, হায়াৎ মাহমুদ, সত্য সাহা, এনায়েত উল্লাগ খান, আল মাহমুদ, আল মুজাহিদী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, ড. মুনতাসীর মামুন, ফতেহ লোহানী, জহির রায়হান, খান আতা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস প্রমুখ।
এখান থেকেই মোড় ঘুরে গিয়েছিল একটি দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির। আড্ডাবাজ একদল মানুষের হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছিল অন্য এক জাতিসত্ত্বা।
রূপলাল হাউজ
রূপলাল হাউজ পুরান ঢাকার শ্যামবাজার এলাকার ঊনবিংশ শতকে নির্মিত একটি ভবন। ভবনটি নির্মাণ করেন হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। এটি বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর পারে ফরাসগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত। রূপলাল ঢাকার বিখ্যাত আর্মেনীয় জমিদার আরাতুনের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে পুননির্মাণ করেছিলেন। মার্টিন এন্ড কোং কোম্পানির একজন স্থপতি এর নকশা প্রণয়ন করেছিলেন। দ্বিতল এই ভবনের স্থাপত্য শৈলী অভিনব। এটি দুইটি অসম অংশে বিভক্ত যার প্রতিটিতে কিছুটা ভিন্ন স্থাপত্য শৈলী দেখা যায়। এর ভিত্তিভূমি ইংরেজি ঊ অক্ষরের মত।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগকালে রূপলালের উত্তরাধিকাররা ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিম বঙ্গে চলে যান। সাম্প্রতিক কালে রূপলাল হাউজ মসলা ও সবজি ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে এটিকে অবৈধ দখলমুক্ত করে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।
বলধা গার্ডেন
বলধা গার্ডেন ঢাকার ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত একটি উদ্ভিদ উদ্যান। এই উদ্যানে প্রচুর দূর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। তৎকালীন ঢাকা জেলা, বর্তমান গাজীপুর জেলার বলধার জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে বলধা গার্ডেনের সূচনা করেন। তিনি দুটি উদ্যান তৈরি করেন। প্রথম উদ্যানটির নাম রাখেন “সাইকী”। পরবর্তীতে তৈরি করা হয় দ্বিতীয় উদ্যান “সিবলী”। নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর কোনো এক সময় এ দুটি উদ্যানকে সম্মিলিতভাবে বলধা গার্ডেন নামে আখ্যায়িত করা হতে থাকে। ৩.৩৮ একর জায়গার উপর এই উদ্যান নির্মাণ করা হয়েছে। নরেন্দ্রনারায়ণ এখানে একটি পারিবারিক জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
জমিদার নারায়ণ রায় চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানারকম ফুলগাছ ও অনান্য উদ্ভিদ এনে রোপন করেছেন নিজের তৈরী এ গার্ডেনটিতে। বলধা গার্ডেন প্রকৃতপক্ষে ফুল ও উদ্ভিদের একটি মিউজিয়াম। বলধা গার্ডেনে যেমন দেশ বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ রয়েছে ঠিক তেমনি দেশ বিদেশের খ্যাতিমান লোকেরা বলধা গার্ডেন দেখতে আসতেন। এখনো বলধা গার্ডেন নিয়ে ঢাকাবাসীর আগ্রহের কমতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলধা গার্ডেন পরিদর্শন করেছিলেন। তখন তিনি এ গার্ডেনের বহু বিদেশী ফুলের বাংলা নামকরণ করেছিলেন। বলধা উদ্যান বর্তমানে জাতীয় বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি অংশ হিসেবে বন বিভাগের ব্যবস্থাধীন আছে। এ বাগানের মোট ৮০০ প্রজাতির প্রায় ১৮,০০০ উদ্ভিদ আছে। শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য এ বাগান উম্মুক্ত।
ঢাকায় এরকম আরো অনেক প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। সেসব স্থান- স্থাপনা ঢাকাকে সমৃদ্ধ করেছে। ঢাকাকে পরিণত করেছে তিলোত্তমায়।
তথ্যসূত্র-
২. বাংলাপিডিয়া
![চান্দ্রেয়ী পাল মম](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2020/06/97992746_3038592969535811_3887645516908986368_n-150x150.jpg)