মরার আগে মরব না। করোনা নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়া অনেক জরুরি।
প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই ভয় এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। কিন্তু পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে এই ভয় বা আতঙ্ক দুটো থেকেই রেহাই পাওয়া সম্ভব। মঙ্গলবার পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮ লক্ষ ৯১ হাজার ২১৩। এর মধ্যে ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩০ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮৩০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৩ লক্ষ ৯৯ হাজার ৭১৮ জনের।বর্তমানে আক্রান্ত অবস্থায় রয়েছেন ৩০ লক্ষ ৯০ হাজার ১৮৯ জন। এর মধ্যে মাইলড কন্ডিশনে রয়েছেন ৯৮ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৮০১ জন। মাত্র ৫৩ হাজার ৩৮৮ জন অর্থাৎ ২ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি সংকট জনক পরিস্থিতি রয়েছেন।
এই সামগ্রিক পরিসংখ্যান বলছে, করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার সুস্থ হওয়ার হারের থেকে অনেক কম। শুধু তাই নয়, ৯৮ শতাংশ আক্রান্ত মানুষ আর পাঁচটা ভাইরাস মোকাবিলার মতোই করোনাকে মোকাবিলা করতে সক্ষম। মাত্র ২ শতাংশ আক্রান্তের ক্ষেত্রে পরিস্থিতিতে সংকটজনক। তাই অযথা আতঙ্কিত হবার কোনও কারণ নেই। যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে চললেই নিরাপদ থাকা সম্ভব।
এর আগেও পৃথিবীর বুকে মানবসভ্যতা বেশ কয়েকটা মহামারির সম্মুখীন হয়েছে। গত কয়েক শতাব্দীতে প্রায় প্রতি এক শতাব্দী অন্তর একটা করে মহামারির নির্দশন আছে। যেমন, কলেরা, গুটি বসন্ত, প্লেগ, স্প্যানিশ ফ্লু। কিন্তু সভ্যতার ক্রম বিকাশের ধারায় এই সমস্ত মহামারির হাত থেকে রেহাই মিলেছে। যদিও এই সমস্ত ভাইরাস বা রোগকে নিয়ে আমাদের এখনও চলতে হয়। শুধু তাই নয়, আরও অসংখ্য মারণ ভাইরাস বা জীবানুর অস্তিত্ব আছে এই পৃথিবীতে। যাদের প্রভাবে মৃত্যুর হার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হারের চেয়ে অনেক বেশি।
এটা প্রচার করা হচ্ছে করোনা ভাইরাস এসআরএস এবং সোয়াইন ফ্লু-র চেয়েও ভয়ঙ্কর! কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে এসএআরএস-এর মৃত্যুর হার ছিল ১০% এবং সোয়াইন ফ্লু ২৮%। আর সেখানে করোনাতে মৃত্যুর হার ২ শতাংশ। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বয়সের দিকে তাকালে আতঙ্ক আরও অনেকটাই কাটবে বলে মনে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে মানুষের মৃত্যুর হার মাত্র ০.৪ শতাংশ।
এর পাশাপাশি আর একটি তথ্য দেখলে স্পষ্ট হবে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের ভয় থাকলেও মৃত্যু ভয় অনেক কম। উদাহরণ হিসেবে একদিনের তথ্য দেখলে এটা অনেকটাই স্পষ্ট হবে। গত ১ মে করোনা সংক্রমণে বিশ্বের ৬৪০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই একই দিনে: ২৬,২৮৩ জন ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন, ২৪৬৪১ জন মানুষ হৃদরোগে মারা গেছেন, ডায়াবেটিসে মৃত্যু হয়েছে ৪,৩০০ জনের, ওই দিনেই আত্মহত্যা করে মৃত্যু হয়েছে করোনা মৃত্যুর চেয়ে ২৮ গুণ বেশি। এছাড়া মশার কামড়ে গোটা বিশ্বে প্রতিদিন ২,৭৪০ জন মানুষের প্রাণ যায় এবং সাপের কামড়ে প্রতিদিন ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়। বছরে ২ জনকে হত্যা করে হাঙ্গর। এই তথ্যের পরেও কি করোনাকে বিপজ্জনক বলে মনে করা যেতে পারে? নাকি একে আমাদের সামনে অন্য কোনও অভিসন্ধিতে বিপজ্জনক করে তোলা হচ্ছে?
সে যাই হোক, যদি সচেতন থাকা যায় তাহলে করোনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ভয় মানুষের শক্তি ক্ষয় করে, তাই ভয়ের পরিবর্তে র জয়ের আশা অনেক বেশি শক্তিশালী। মোট কথা হলো সর্দি জ্বর কাশি ফ্লু এগুলো ছিল থাকবে। করোনা হলেও হতে পারে। কিন্তু মানুষকে আতংকে মারার কোনো কারণ নাই। আপনি হিসেব করলেই দেখবেন লাখো আক্রান্তের ভেতর কতজন বেঁচে আছেন। কারণ তারা সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা ও বিশ্রামে গেছেন। তাই মূল কাজ হলো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। এটা ভারতের জন্য জরুরি। কারণ, এত জনবহুল দেশে ধরে ধরে বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সনাক্ত করা অসম্ভব। তা ছাড়া ঠিক কোনো নিয়ম বা শৃঙ্খলাও নাই যার আওতায় বের করা সম্ভব। ফলে মানুষকেই সৎ ভাবে বলতে হবে তার ভালো লাগা ও খারাপ লাগা।
একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, আত্মবিশ্বাস আর সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি মানুষকে নির্ভার করে। তাই তার আয়ু বা প্রতিরোধ করার শক্তিও বেড়ে যায়। করোনা আতংকে অহেতুক মরার কোনো কারণ নাই।
২০২০ সালের সর্বশেষ ৩ মাসে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা
৩, ৭৭, ৯৭৪: করোনার ভাইরাস
৩,৬৯,৬০২: সাধারণ সর্দি
৩,৪০,৫৮৪: ম্যালেরিয়া
৩,৫৩,৬৯৬: আত্মহত্যা
৩,৯৩,৪৭৯: সড়ক দুর্ঘটনা
২,৪০,৯৫০: এইচআইভি
৫,৫৮,৪৭১: অ্যালকোহল
৮,১৬,৪৯৮: ধূমপান
১১,৬৭,৭১৪: ক্যান্সার