সৌমনা দাশগুপ্তের কবিতা
আয়তলোচনা
ছোট হও ছোট হও, আরও গুটিয়ে আনো ছায়া
মায়ের শরীর যেন, যেন গর্ভজলে পাক খাচ্ছে
মুণ্ডহীন ধূমকেতু। বিষের স্তবক পার করে
বস্তুবিভ্রমে তুমিও। এখনও অবশিষ্ট হায়া
ছুঁতে চাইছে প্রাণ… পাথর টপকে চলে যাচ্ছে
এই যে সরল স্তম্ভ, তার ইঙ্গিত তারই ইশারা
আমিও রেখেছি গেঁথে মনোবীজতলে এ তেপায়া
টেবিল, পার্শ্বচরিত্র, এই ঘরে প্রেতেরা নাচছে
নীল থেকে লাল হল অথবা ভ্রান্ত রঙের খেতে
দেবীতমা সে কি কোনো পরি হুরি অজানা পেখম
আমিও পেলেছি কোনো মৌপোকা, খেয়ালি পূজার্চনা
ধ্যান থেকে ধুলো থেকে উঠে আসে আয়তলোচনা
ফণা থেকে বিষ থেকে ধিকিধিকি রতি কলসিতে
আমার মৃদঙ্গ চুঁয়ে বোল তোলে মোম পড়ে… পড়ে মোম
স্নেহজললেখা
মৃত তারাটির যত গনগনে ক্ষত আজো দ্যাখো
বেঁচে আছে বহু দূরে ছায়াপথে তার গৃহখানি
আমি সেই ঘা ও মোক্ষ খুলে পড়ে নিই তাকে
তারার ডায়েরি থেকে হলদেটে হাড়ের বাখানি
রোগা ও ধূমল রেখা, উলটে-পালটে দেখি তার
শরীরের বালুদাগ, উটের স্বভাবী তার করতল
দানা দানা জমে আছে কত কত স্ফটিকফসল
অবাক দামিনী যেন চোখ থেকে স্নেহজললেখা
সেখানে ডুবিয়ে মুখ খুঁজি নুন, খুঁজি অনিঃশেষ
আর এক কালপ্যাঁচা বসে বসে মাপছে আমাকে
ছায়া পড়ে কুয়োর ভেতরে
যা যা কিছু পড়েছিল গন্ধকে সোরায়
এই ধরো তোমার মুখের মতো কিছু
সোনালি বলেরা ওড়ে
কথা নেই বহুদিন বহু বহু দিন
আমার অপারগতা, ছোট ভুল
নীচু জলা থেকে উড়ে আসে ভাপ
ওইপাড়ে শ্মশানে ঘুমাচ্ছে চিতা
আমারও তো আলপিনে গাঁথা এই পা
রাত শুধু রিফু-পারাবার
যেভাবে বিদ্যুৎ নাচে একটি তামার তারে
আমিও তেমন স্পার্কে স্পার্কে ভরে আছি
একবার ছুঁয়ে দ্যাখো, কেঁপে যাবে সবটা শরীর
ও সমুদ্র ও অতুল অপেক্ষা হে
আমাকে টুকরো করো, খণ্ডে খণ্ডে ভেসে যাক
জীবন-সমগ্র থেকে ঝরাপাতা, জানু যোনি
অলিন্দ নিলয় হাড় মজ্জা খুঁড়ে খুঁড়ে দ্যাখো
এই জোনাকিপ্রপাত
ছায়া পড়ে ছায়া পড়ে কুয়োর ভেতরে শুধু ছায়া পড়ে
গোপন সেতার
আসলে তো বোলতা সে লালারসে লেগে আছে হুল
যদি খুলে দেখি তাকে যদি কপালের জন্মদাগে
রুমাল বুলিয়ে দিই, রুমাল সে নয়, সে-আমার
ঘামেভেজা করতল, শ্রমিক আঙুল মোটা মোটা
নরম ব্রীড়ায় ভরে দ্যাখো দ্যখো কেমন নামিয়ে
নিচ্ছে চোখ, স্বচ্ছতোয়া… একলা মাঠের এক কোণে
একলা গাছটি যেন বাজেপোড়া চিবুকের ভার
অভিমানী বসে আছে শ্রাবণ সাজিয়ে তার ঠোঁটে
তোমার শিমুলজুড়ে রক্তফেনা বাজে, আমিও কি
তোমাকে ময়ূর করে ভাবি বর্ষায়, চরম পেখম
ঘিরে সাজিয়ে দিয়েছি কোনো কালকেউটের চোখ
সারি সারি রাশি রাশি ফণা ও ছোবল নেমে এলে
বলো বলো ও পথিক তুমিও কি অন্ধকুঞ্জ খুলে
বাজাবে আমাকে বলো, তুলে নেবে গোপন সেতার
![সৌমনা দাশগুপ্ত](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2020/05/88307168_1476618439169100_2144423569700945920_o-150x150.jpg)
কবি ও গদ্যকার।
প্রকাশিত কবিতাবই-
১। বেদপয়স্বিনী(২০০৬), কৃত্তিবাস প্রকাশন।
২। খেলাহাট(২০০৮), সপ্তর্ষি প্রকাশন।
৩। দ্রাক্ষাফলের গান(২০০৮), যাপনচিত্র প্রকাশন।
৪। ঢেউ এবং সংকেত(২০১৮), সৃষ্টিসুখ প্রকাশন।
৫। জিপার টানা থাকবে(২০১৯), সৃষ্টিসুখ প্রকাশন।
৬। অন্ধ আমার আলোপোকা(২০১৯), ধানসিড়ি প্রকাশন।
৭। সাপ ও সিঁড়ির সংলাপ(২০২১), ক্রৌঞ্চদ্বীপ প্রকাশন।
৮। রৌদ্রগণিকার পথ(২০২২), আদম প্রকাশন।
৯। নির্বাচিত কবিতা(২০২৩), আলোপৃথিবী প্রকাশন।
প্রকাশিতব্য কবিতাবই: (বিজন গুম্ফার দিকে, সৃষ্টিসুখ প্রকাশন)
প্রকাশিত উপন্যাস: মাশান রহস্য(২০২০), সৃষ্টিসুখ প্রকাশন।
২০০৮সালে ‘কৃত্তিবাস’ পুরস্কার পেয়েছেন প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বেদ পয়স্বিনী’-র জন্য।