মেহগনি গাছের সেই মুনিয়া পাখিটা
মাঠের শেষে যে মেহগনি গাছটা আছে, তার মগ ডালে মুনিয়া পাখির বাসা। যেখানে আজ মা মুনিয়ার কোল আলো করে একটা ছোট্ট মুনিয়া জন্ম নিয়েছে। মা মুনিয়া আর বাবা মুনিয়ার তাই আজ খুব আনন্দ। মুনিয়াদের সুখী ও ছোট্ট পরিবারে এখন তিনজন সদস্য। মা, বাবা আর ছোট্ট মুনিয়া। মা মুনিয়া নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ে কাজ করে। সারা দেশে পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার কাজ। আর বাবা মুনিয়া একজন সাংবাদিক। ছোট্ট-ছিমছাম ও পরিস্কার জায়গা তাদের পছন্দ। তাই তারা এই সুন্দর মেহগনি গাছটিতে বাসা করে এখানেই বসবাস করছে।
বাবা মুনিয়া বলল- ওর নাম কি রাখবে গো?
মা মুনিয়া উত্তর দিলো- চাঁদনী। ও যে আমার সোনার চাঁদ।
বাবা মুনিয়া বললো, ঠিক আছে আজ থেকে ছোট্ট মুনিয়ার নাম তবে চাঁদনী।
এরপর মহা ধুমধামে উৎসব করে ছোট্ট মুনিয়ার নাম রাখা হলো চাঁদনী। দিন যায় বছর যায় চাঁদনী বড় হতে থাকে। এখন তার বয়স ছয় বছর। সে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তার স্কুলের নাম পাখি শিক্ষা উচ্চ বিদ্যালয়।
আজ স্কুল ছুটি। চাঁদনীর বাড়ির পাশের ধান খেতগুলোয় ধান কাটা শেষ। তবুও পাকা ধানের গন্ধ এখনো নাকে লাগছে। চাঁদনী আর তার প্রিয় বন্ধু কোকিল খালি মাঠে খেলছে, খেলার মাঝে কোকিল বলল, আজ তো নবান্ন। সবাই পিঠা বানিয়েছে। তোর মা কি পিঠা বানিয়েছে? চাঁদনী বললো আমাদের বাসায় মা তো কোন পিঠা বানায়নি।
চাঁদনীর মনটা কথা বলতে বলতে খারাপ হয়ে গেলো দেখে কোকিল একটু হেসে বললো তোর মা তো অফিসে ব্যস্ত থাকে তাই হয়ত বানানোর সময় পায়নি, তাতে কি? চল, আমাদের বাসায় যাই, পুলি পিঠা, গোলাপ পিঠা, পায়েস আরো কত কি বানিয়েছে মা। সেগুলো খাবি চল।
চাঁদনীর এখন খুব আনন্দ সে কোকিলের বাড়িতে এসেছে পিঠা খেতে। অনেক রকম পিঠা দিয়ে গেল কোকিল মা। বেসিনে হাত ধুয়ে এসে চাঁদনী যেই না পিঠা মুখে দিতে যাবে, দেখে, পিঠার গায়ে ময়লা লেগে আছে, কিন্তু সে দেখলো তার বন্ধু কোকিল হাত না ধুয়ে ময়লা হাতেই সেই ময়লা পিঠাগুলো খেয়ে যাচ্ছে। চাঁদনী কিছু বললো না। সে আগেও দেখেছে, তার অন্য বন্ধুরাও হাত না ধুয়ে খাবার খায়। চাঁদনী পিঠা না খেয়েই বাড়ি ফিরে এল।
রাতে মা মুনিয়া অফিস থেকে ফিরলে চাঁদনী তাকে বলল, জানো মা, আমার বন্ধুরা সবাই হাত না ধুয়ে ময়লা হাতে খাবার খায়। এইকথা শুনে তার মা, বাবা আর চাঁদনী মিলে ঠিক করলো তারা সবাইকে সচেতন করবে।
চাঁদনী কিছুতেই ভেবে পায়না তার বন্ধুদের কিভাবে সচেতন করবে তার মা, বাবা? রাতে চাঁদনীর ঘুম আসে না। ভাবতে ভাবতে চাঁদনী কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে সে জানে না।
একদিন যায় দুইদিন যায় মা মুনিয়া আর বাবা মুনিয়া কিছু বলে না। চাঁদনী তার মাকে বলে মা, কিভাবে সচেতন করবে বলো শুনি। তার মা কিছু বলে না। চাঁদনী বাবাকে বলে বাবা ও কিছু বলেনা।
সাতদিন পরে এক সকালে চাঁদনীর মা অনেক পাখি নিয়ে একটা মিছিল করলো। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে বললো খাবার আগে হাত ধুয়ে খেলে আমাদের রোগ কম হবে, আমরা সুস্থ থাকবো। মায়ের সাথে মিছিলে গেলো চাঁদনী তারপর সবার বাড়ি বাড়িও গেলো। কয়েকদিন পরে, বাবা মুনিয়া চাঁদনীকে নিয়ে গেলো একটা টিভির টক শোতে। চাঁদনী প্রথমে ভয় পেলেও পাখিদের সুস্থতার কথা ভেবে সে বললো খাবার আগে অবশ্যই হাত ধুতে হয়। এছাড়াও বাইরে থেকে এসে হাত, পা ও মুখ ধুয়ে নিলে অসুখ কম হবে। ময়লা লাগা খাবার খেতে নেই।
ধীরে ধীরে পাখি সমাজ সচেতন হল। পাখি সমাজে এর আগে কেউ চাঁদনীর মত করে ভাবেনি। পরের বছর চাঁদনীকে পাখিদের প্রধানমন্ত্রী পাখি সেরা পুরস্কার দিলেন।
সবার চাঁদনীকে নিয়ে খুব গর্ব । মা ও বাবা মুনিয়া ও তার জন্য গর্বিত। কে ভেবেছিলো এই কিছুদিন আগে জন্ম নেওয়া ছোট্ট মুনিয়া পাখিটা দেশের এত্ত বড় উপকার করবে? তার জন্যই এখন বাস করে এক সচেতন সুখি পাখি সমাজ, আর সুখী মুনিয়া পরিবার।
কবি,গল্পকার