#
আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো ঋজু। ভেসে উঠলো সে আয়নার ভেতরে। বাইরের ঋজু আর ভেতরের ঋজু–দুজনের কথা হল। এভাবেই কথা হয় ওদের।
— আজ তো দোল। রং খেলা। কতকাল রং খেল না জানো? বললে আয়নার ভেতরের ঋজু।
–হুম দশ বছর।
–সেই যে শ্রেয়ার সাথে শেষবার…
–হুম।
–দোলের আগের দিন শ্রেয়া এসেছিল। তোমাকে যে পাগলের মত ভালোবাসতো! তুমি ওকে হলুদ আর সবুজ আবির মাখিয়ে ছিলে? আরো কীসব করেছিলে…
হাসি ফুটে উঠলো বাইরের ঋজুর ঠোঁটে। কী আর করেছিলাম! জড়িয়ে ধরেছিলাম। ঠোঁটে ঠোঁট। ও আমাকে ভূত করে দিয়েছিল আবিরে।
–আর কিছু করোনি?
–করেছিলাম। ঐ একটু মাথা ফাটা রঙ আবিরের ভিতর লুকিয়ে রেখেছিলাম।
–হুম। সেইটেই তো বলছি। তারপর…
–তারপর? তার পর…তার বছর তিনেক পর শ্রেয়া চলে গেল।
একথা বলতেই চোখে জল এল বাইরের ঋজুর।
ভেতরের ঋজু স্বাভাবিক। শক্ত। বললে,সকলকেই তো একদিন চলে যেতে হয়। কেউ আগে যায়,কেউ বা পিছে। ও চলে গেছে বলে আর রং খেলবে না এটা কোনো কাজের কথা নয়। জীবন রঙিন ,কারও জন্য কিছু থেমে থাকে না।
বাইরের ঋজু যেন তাকিয়ে থাকে উদাস। ভোর হল। বাইরে সকাল নেমেছে। পাখি ডাকছে।
ভেতরের ঋজু আবার বললে, এভাবে আর কতদিন চলবে? টেবিলে এসব কী…
হা হা করে হেসে উঠলো বাইরের ঋজু ।বললে ,জীবন–যা বাঁচিয়ে রেখেছে আমায়।
এই যে দেখছ কাচের অ্যাসট্রে ,এটা কার দেওয়া জানো?
–জানি। শ্রেয়ার দেওয়া তোমাকে শেষ উপহার।
আবার হেসে উঠল বাইরের ঋজু। ঘর কেঁপে উঠল সেই হাসির গমকে। হয়ত আয়নাটাও। তারপর হাতের চিরুনিটা ছুঁড়ে মারল ভিতরের ঋজুর দিকে। সে তবু ঠায় দাঁড়িয়ে থাকল নির্লজ্জের মত আয়নার ভিতরে।

কবি , গল্পকার ও প্রাবন্ধিক । জন্ম-কর্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়াতে । পড়াশুনো হাবড়া হাই স্কুলে। শ্রীচৈতন্য মহা বিদ্যালয়ে কলেজ জীবন । বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর । পেশায় গৃহশিক্ষক , নেশায় লেখক । কিছু কবিতা , ছোটগল্প , অণুগল্প ও প্রবন্ধের বই প্রকাশিত । এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ২৫টি । সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কাব্যোপন্যাস ” পাখি-যাপনের জার্নাল ” । ২০১৯ এ প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ” বিষাদ-সুন্দরী ও লালপদ্ম ” গল্পগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ” অনিলা দেবী সাহিত্য সম্মান ” । এছাড়াও পেয়েছেন বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ পুরস্কার , সুতরাং সাহিত্য সম্মান , টেগোর ভিলেজ সাহিত্য পুরস্কার সহ আরো কিছু পুরস্কার ও সম্মান । ১৯৯৬ সাল থেকে সম্পাদনা করে আসছেন ‘ অবগুণ্ঠন সাহিত্যপত্র’টির । প্রকাশিত হয়েছে নির্বাচিত কবিতা ” নির্বাচিত ১০০” । মূলত লিটিল ম্যাগাজিনের লেখক বলতেই গর্ববোধ করেন । তবে বেশ কিছু বানিজ্যিক কাগজেও লিখেছেন । অণুগল্পের বই ” ছক্কুমামা , কর্নেল কাপুর ও অন্যান্য গল্প ” যথেষ্ট জনপ্রিয় ।