আজ ২৭ সেপ্টেম্বর কবি,সম্পাদক ইমেল নাঈমের জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
নদী
অনেক দিন দেখা হয় না আমাদের
নদী শিখিয়েছিলো পথ বেঁকে গেলে
অন্যকোনো প্রান্তরে চর জমে।
চরের বুকে কেউ ফলায় সোনালী ধান
শুনেছি ওখানে বারোমাস ফাগুন চিত্র
আমি শুধু নদী দর্শন করি পার্বণে।
দুঃখবোধ
দুঃখবোধ চূড়ান্ত হলে ভাষারা মায়াবতী হয়।
সৃষ্টির খাতায় কিছুই নেই। যেন শূন্যতার পাঠে
হারিয়ে যাচ্ছে দূরবর্তী কোনো গানের অন্তরা
ব্যর্থতার লিপিতে লিখছি সমগ্র দিন
সুদূরের সংকেত ক্রমাগত ম্রিয়মাণ… অস্পষ্ট
অষ্টাদশীর কোলে মাথা রেখে
খেলে যাচ্ছে এক বিষণ্ণ বিকাল
নির্বাক কিছু মুহূর্তকে লিখছি রেডলিফ পেনে
সময় পিছিয়ে দিয়েছি — শহরকে দিলাম ছুটি
মাস্তুলে উঠে রাখি চোখ, কম্পাসে কাঁটা ঘুরে
যায় জটিল কোনো অংকে, ছুটে চলে জাহাজ
আরো কোনো দুর্বোধ্য গন্তব্যে।
ভাষারা মায়াবতী হলে দুঃখরা হয় ধ্রুপদী,
অপেক্ষার নামতা শেষে মিলিয়ে যাচ্ছে দৃশ্য
ভোরের আহ্বান মুছে যাচ্ছে
গুলিয়ে ফেলছি এক এক করে
ধ্রুপদী ব্যঞ্জনা…
ব্যর্থতার লিপি…
কম্পাসের দিকনির্দেশনা…
মাস্তুলের উপর দাঁড়ানো নাবিক…
কার কাছে গেলে দুঃখরা হয় মায়াবতী?
বাস স্টপেজ
আন্তঃনগর বাস! ফ্রন্ট গ্লাসে লাল হরফে
ঝুলছে বিরতিহীন। আমার হাত ছুঁয়ে থাকে
কোনো হাত! একসময় বাস থামে।
কুড়ি মিনিটের যাত্রাবিরতি। আমরা
একসাথে নামি। মধ্যাহ্নভোজন শেষে আবার…
পড়ন্ত বিকাল পেলে গন্তব্যে বাস থামে
তখন আমার হাতে কোনো স্পর্শ থাকে না।
এখন রোজ দাঁড়িয়ে থাকি বাস স্টপেজে।
ভ্রমণ
ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে উঠে দাঁড়াই
যদিও সূর্য ডুবে যায় এই সময়ে
সূর্যাস্ত দেখি না অনেক দিন
পার্কের বেঞ্চটা এখনো আছে
তার কোনো একাকীত্ব নেই।
আমার কোনো ক্লান্তি নেই
শুধু সূর্যাস্ত দেখি না অসময়ে।
দিনান্তের সুর
চুপিসারে থেমে যাক প্রলয় কিংবা প্রতারণা
অপেক্ষায় থেকে যায় অজস্র ভ্রান্ত ধারণা
অলীক মুখ নেচে ওঠে, অবেলায় বইছে
লূ-হাওয়া, নিঃস্ব’র দেশে নেই নিজস্ব কোনো ভাষা।
হারিয়ে ফেলার আগেও রেশটুকু থাকুক
বুকপকেটে অম্লান স্মৃতির রঙিন ক্যানভাস
মুহূর্তগুলো গেয়ে উঠুক, দূরত্ব মাপছি
তোমার আমার মাঝের, সম্পূর্ণ মাপা হলে
থেমে যাবে সংগীত, অর্কেস্ট্রায় নীরবতা শুধু…
রক্ষিত জীবনের এক পশলা বৃষ্টি,
ভিজিয়ে দিচ্ছে আগামীর সকল পঙ্কিলতা
নিজের সাথে আলাপনগুলো ব্যর্থ হয় দিনের শেষে
মুখস্থ দিন ফেরি করে ফিরে যাই গোপন ডেরায়
ভুলের প্রাচীর টেনে নামছে অচিন অন্ধকার।
আমাদের দেখা হয় না— হতাশার মন্ত্রপাঠেই
মলিন পৃথিবীকে দেখে নিচ্ছি একপশলা
ভিজিয়ে দিচ্ছে গহীন শূন্যতা আপন মনে
জীবন কথা বলে অজস্র নৈঃশব্দ্য নিয়ে একাকী।
ভ্যালেন্টাইন ডে
সরু পথ ধরে হেঁটে গেছে
হাত ধরেনি একদম
দুজনের দূরত্ব এক হাত
এভাবেই তারা পথ চলে
ঠিক এতোটা তফাত নিয়ে
কেউ কারো চোখ দেখেনি
এদের মাঝে বন্ধন আছে
চিহ্নিত হবার ভয়ে প্রকাশিত নয়
গোলাপ দেয় নি তবুও
দুজন একই পথের যাত্রী
ষাটোর্ধ জীবনের পঞ্জিকায়
প্রতিদিনই চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি।
বিচ্ছেদ
একই ছাদ, পাশাপাশি দু’টি কক্ষ
একটি পুরুষ, অন্যটি নারী
একে অপরের গা লেপটে থাকে
অথচ কেউ কারো মুখ দেখেনা
পাশাপাশি সঙ্গ দিয়ে যায়
সকাল থেকে সাঁঝবাতি সময়
প্রণয়ের সব সুখের হিশেবে
আটপৌরে সুখী সংসার।
রাত বাড়লে পূর্ণিমা জানে
দু’জনের মাঝে দাঁড়িয়ে
কয়েকশ মহাকাল।
