তাঁর কাছের মানুষজনের মুখে বারবার উঠে এসেছে তাঁর হার না মানা এক ইস্পাত কঠিন মনের কথা। নাহলে যে ছেলেটা ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হয়েছিলেন এক সময়, সেই তাঁকে নিয়েই আকাশছোঁয়া লগ্নি করতে পারে বলিউড? স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো আবেগ চাপা লোকও প্রাণখোলা হাসি মুখে জড়িয়ে ধরতে পারেন কাউকে? পারে বা পারেন, কারণ মানুষটার নাম ছিল সুশান্ত সিং রাজপুত।
২০০৮ সালে বালাজি টেলিফ্লিমসের ধারাবাহিক ‘কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল’ দিয়েই যাত্রা শুরু তাঁর। এরপরই এল একতা কাপুরের সেই ‘পবিত্র রিস্তা’! সুযোগের এক সদ্ব্যবহার বোধহয় একেই বলে। প্রথম লিড রোল পেয়েই ভারতীয়দের ড্রয়িং রুমের নির্ভরযোগ্য মুখ হয়ে উঠলেন সুশান্ত। কিন্তু ধারাবাহিকে কি আর ভরে রাজপুত-মন? সুযোগ এল ২০১৩ সালে। অভিষেক কাপুরের ‘কাই পো চে’-র সেই ইশান নামের দামাল ছেলেটা সেই যে ছুটতে শুরু করল, তারপর থেকে দৌড়-দৌড় আর দৌড়, সাফল্যের সরণীতে তখন সুশান্তের জয়ধ্বজা। ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’ সেরেই সুশান্ত ব্যস্ত হলেন ‘পিকে’কে সামলাতে। আমির-ছটাতেও ঢাকা না পড়ে স্বমহিমায় জ্বলে উঠলেন ‘সরফরাজ’। রাজপুত হলেও তাঁর মুখে বাঙালি ভাব খুঁজে পেয়েছিলেন পরিচালক দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সীর’ জন্য সুশান্তই ছিলেন দিবাকরের একমাত্র পছন্দ। ভার্সেটালিটি বোধহয় একেই বলে…
ব্যোমকেশের সঙ্গে মহেন্দ্র সিং ধোনির কি সম্পর্ক? একটাই সম্পর্ক। দুজনের চরিত্রে একমাত্র অভিনয় করেছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। ‘এম.এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ই হয়ে রইল তাঁর মাইলফলক। চরিত্রের সঙ্গে সহবাস করতে-করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন সুশান্ত, অনেকেই ধন্দে বলেছিলেন, ‘হেলিকপ্টার শটটা কার ভালো? ধোনির না সুশান্তের?’
অভিনয় জীবনে তখন আসছে একের পর এক সাফল্য। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবন? মহিলাদের হার্টথ্রব হয়েও সেই অর্থে গুছিয়ে কোনও প্রেম আসছিল না সুশান্তের জীবনে। দীর্ঘদিনের প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর কৃতি শ্যানন, রিয়া চক্রবর্তী…কত নাম, কিন্তু বুনোট বাঁধছিল না কিছুতেই। রবিবারের সকালের দুঃসংবাদের পর তাঁর অনেক ঘনিষ্ঠরাও তাই বলছেন, ‘তবে কি ব্যক্তিগত জীবনের টালমাটাল পরিস্থিতিটাই সামলে উঠতে পারলেন না সুশান্ত?’
আশঙ্কা অমূলক নয়। ৬ মাস ধরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন, শেষ তিনমাস নিজেকে একেবারে গৃহবন্দী করে ফেলেছিলেন তিনি। শেষ ছবি ‘ছিছোড়ে।’ গোটা ছবিটা আত্মহত্যার বিরুদ্ধে, প্রবল প্রতিকূলতাকে জয় করে কীভাবে জীবনকে উদযাপন করা যায়, তারই মন্ত্রগুপ্তি সিনেমাজুড়ে। শেষ ছবিতে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে লড়লেন, আর নিজেই কিনা সেই পথেই হাঁটলেন? ‘কথা রাখলেন না সুশান্ত’…
অঙ্ক অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডেল জিতেছিল সেই কিশোর ছেলেটা। অথচ মধ্য যৌবনেই জীবনের অঙ্কের সমাধানটাই যেন অধরা রয়ে গেল তাঁর কাছে।