আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিট ![ফারা দিবা](data:image/svg+xml;base64,PHN2ZyB4bWxucz0iaHR0cDovL3d3dy53My5vcmcvMjAwMC9zdmciIHdpZHRoPSIxMDAiIGhlaWdodD0iMTAwIiB2aWV3Qm94PSIwIDAgMTAwIDEwMCI+PHJlY3Qgd2lkdGg9IjEwMCUiIGhlaWdodD0iMTAwJSIgc3R5bGU9ImZpbGw6I2NmZDRkYjtmaWxsLW9wYWNpdHk6IDAuMTsiLz48L3N2Zz4=)
তোমাকে শোনাবো বলে
কেন জানি, আজ বড় ইচ্ছে করছে তোমাকে সবকিছু খুলে বলি
বহুদিন ধরে জং পড়া তালাটাকে ভেঙে সিন্দুকটাকে খুলে দেই;
দেখাই আমার অমলিন সত্য।
পরিচয় করাই আমার চিত্তে জমে থাকা সব আঁধার,
ব্যাকুলতা আর সব ব্যর্থতার সাথে।
তুমি কি জানো? আমি আমার অভিলাষগুলি খুব যত্ন করে রেখেছিলাম
তোমাকে দেখাবো বলে।
আকাঙ্ক্ষা চিহ্নগুলো তিমিরে সমাধি দিয়েছিলাম হাতড়ে হাতড়ে
তোমাতে পৌঁছানোর তাগিদে।
তোমাকে অবলোকন করাতে চাই আমার সমস্ত বিসর্জন-
আমার একান্ত অমানিশায়।
দেখাতে চাই ঠিক কতটা শিশির জমে আছে এই
নেত্রপল্লবে।
হ্যাঁ জানি, তোমার হয়তো সময় নেই, হয়তো হাতে আছে
অঢেল কাজ বাকী।
তবুও তোমাকে শোনাতে চাই, আটকে রাখতে চাই
আমার ঝঞ্ঝাটে।
ঠিক ততটুকুই বিরক্ত করতে চাই যতটুকুর পর
তুমি বলবে “আসি।”
আমিও ঘুরে গিয়ে বলবো, “যাবে? যাও।”
কিন্তু জানাবো তুমি যাবে না ঠিকই ফিরে এসে বলবে,
“আচ্ছা বলো কি বলবে?”
তখন তাকিয়ে দেখবো
তোমার ফুলে যাওয়া গাল, তোমার লাল হওয়া নাক আর
নিজেকে সামলানোর চেষ্টায় ওই মুষ্টিবদ্ধ হাত।
দেখে একগাল হেসে বলবো, “শুনবে? থাক আরেক দিন বলবো।”
অর্বাচীন এই আমি
তোমাকে দেখার পর আজ আমার এমন কেনো মনে হলো?
লাগলে বুঝি তুমি ভালো নেই। কেনো?
বলতে পারো?
চক্রধারী নয়নটা আজ চক্ষুলজ্জায় আবৃত, সমতল কপালে
কেমন অনস্বীকার্য বলিরেখা,
রোজ রোজ অপেক্ষা করিয়ে উপেক্ষারত ওই হাসি
আজ নিরব; যেনো দুমড়ে, মুচড়ে, গুমরে মরছে পল পল।
কিন্তু কেনো?
আমাদের বিদায়ী সন্ধি তো মোটেও এরকম ছিলো না।
তুমি বলেছিলে আর ফিরে আসা সম্ভব না,
তোমার বাণীর বাণ বেদবাক্যের মতো বিঁধিয়ে নিয়েছিলাম এই বক্ষে।
শেষলগ্নে তুমি যখন হয়ে উঠলে অনির্ভর, অনীহ, অনুচিত
মূক এই আমি তাকিয়ে থাকলাম নীরবে অনিমেষ দৃষ্টিতে।
শুধু জানতে চাইলাম নতুনের আবর্তনে সুখে আছো কিনা।
তোমার অকৃত্রিম হাসিতে সেদিন তো ঠিকই বুঝেছিলাম
তবে আজ কেনো এমন চাহনী?
জানো একদিন ও কাঁদিনি আমি, কাঁদবোই বা কেনো
আমি তো জানতাম আমাকে ছাড়া সুখেই আছো
তবে এখনো ঘাসফুল দেখে মত্ত হই,
বিভোর হয়ে আলতা পায়ে দৌড়ে ছুটে যাই তপোবনে,
সর্বদা জানি আর মানি তুমি নেই, আসবেও না
তাও আমার ছোট্ট বাইনোকুলার নিয়ে চোখ রাখি পথে।
আমি তো জানি
আমাকে লস কেস বনে নিয়ে তুমি তো ঠিকই গিয়েছিলে
জিতের ডঙ্কা পেটাতে,
শেষমেশ বুঝলে তো কোনটা অবশ আর কোনটা অর্বাচীন?
ক্রীতদাসী
অনেক সময় পার করে, তুমি এলে
অবশ্য না আসলেও পারতে।
একা আমি ছিলাম বেশ।
আজ যখন এলেই, আমার প্রশ্ন একটি-
এতদিন কোথায় ছিলে?
রাতের পর রাত যখন নির্ঘুম কাটিয়েছি একলা,
ক্যান্টিনের পাঁচ টাকার চায়ে চুমুক দিয়েছি বিস্বাদে,
ফুটপাতে পড়ে থাকা শিমুল মাড়িয়েছি নির্দ্বিধায়।
টিক টিক শব্দ করা দেওয়াল ঘড়িটার গতি কি অদ্ভুত!
তা বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখেছি।
কখনো অজান্তে চোখের পাতায় তন্দ্রার ছাপ আসলেও,
কোনো এক আকস্মিক চিন্তায় সে দৌড়ে পালিয়েছে
বহুদূরে।
এভাবে বেঁচে মরে যেচে কেটে যাচ্ছিলো দিনগুলি।
কাটছিলো আমার সব ভালো, সব খারাপ।
কচ্ছপের বাচ্চাটা যেমন উত্তাল সমুদ্র ছেড়ে
অভিযোজিত হয় এক ছোট্ট একুরিয়ামে, আমিও
আমিও বেশ মানিয়ে নিয়েছিলাম আমার এ শীতনিদ্রা।
রংহীন সাদাকালো রংধনুর মতো পড়েছিল
এই দেহরূপী খাঁচা।
যখন সব অযাচিত বিষয়গুলি মানিয়ে নিয়ে
ছিলাম সাম্যবস্থায়,
তুমি এলে।
এলে আর দিয়ে গেলে সাত সাতটি রং।
আশারূপী বাক্যে এই খাঁচায় করতে চাইলে
প্রাণের সঞ্চার।
কিন্তু তোমাকে কি করে বোঝাই, শুধু রং
থাকলেই পৃথিবী রঙিন করা যায় না, লাগে তুলি ও।
একুরিয়ামে বন্দি ওই প্রাণীটিকে যতই সমুদ্রদর্শন করাও না কেন
সে দিক হারাবেই।
চার দেয়ালে চুপ করে থাকা শূন্যতাই যার জীবনধারা
তার চোখে বাতাসের গতি ধরা পড়ে না।
জাগতিক বেজাগতিক ব্যর্থতাকে আলিঙ্গনরত
মহামায়া আমি।
শ্রান্ত বেলায় কান পেতে হাহাকার শোনা
নিশ্চুপ শ্রোতা আমি।
আকাঙ্ক্ষা মুর্তিগুলোকে জলসমাধি দেওয়া এক
অপারগ অকৃতধী আমি।
আর তুমি কিনা, আমাকে কল্পনা করেছো বনমালীরূপে!
আমাকে দিয়েছোট ধনবান ধৈর্যবান এক সম্রাজ্ঞীর স্থান!
পারোও বটে।
তোমাকে নিষেধ করবো না,বলবো না চলে যেতে।
তবে আমার জন্য নিজেকে হারিয়ো না,
নিছক এক আশায় আগামীকে পায়ে মাড়িয়ো না।
আমি আদেশ করবো না,
কারন ক্রীতদাসেরা কখনো আদেশের ক্ষমতা রাখে না।
বেলাশেষে আমি যে এক পরবাসী,
এক মুক্ত সময়ের ক্রীতদাসী।।
অভিপ্রায়
আমি ভালো নেই, সত্যি বলছি ভালো নেই
কয়েকদিন হলো, কয়েক রাত হলো,
বেহিসাবি কতগুলো মুহুর্ত গেলো, জানালা দিয়ে
রোদ পড়ে আবার মিলিয়েও গেলো,
সেই রোদে দেখলাম দুটি বিহঙ্গ দম্পতি
কিচিরমিচির শব্দে ভাগ করছে তাদের বায়ুবনের সংসার,
উৎসুক বাঙালি জনতার মতো বিনা অধিকার,
বিনা প্রয়োজনে তাদের প্রাতিজনিক আলাপে আড়ি ও পাতলাম।
কিন্তু কই বাকিদের মতো উল্লসিত তো হলাম না,
পেলাম না তো কোনো পৈশাচিক আনন্দ।
নিজেকে সারাদিন অচেনা ব্যতিক্রমে সাজানোর
অহেতুক সংগ্রাম চালালাম,
বাবার আদেশ, মায়ের নির্দেশ, অগ্রজের আবদার
সব কিছুতেই নি বাক্যি।
কতক্ষণ পর মন বললো ডোজটা একটু কম হয়ে গেছে।
জন্মগত সখ পূরণের নিমিত্তে অনুপমের ভাব এনে
“আমাকে আমার মতো থাকতে দাও” শুনালাম ও বটে।
তারপর এদিক ওদিক দাপাদাপি, ইচ্ছাকৃত বাসনের ঝংকারে,
গ্র্যাভিটির আদর্শ ব্যবহার, দরজার অবাধ্য শব্দে
পারতপক্ষে স্পষ্ট করতে লাগলাম আমার বাদ।
কিন্তু তবুও না শান্তিটা পেলাম না।
কেউ একজন আমাকে বলতো,” বুঝলে অনু,
তুমি কখনো রূঢ় হতে পারবে না।
অকারণে ধৃষ্টতা দেখাতে পারবে না।
মানুষের ক্রোমোসোমের মতো মনেও প্রকটতা
প্রচ্ছন্নতা থাকে,
তুমি যদি সেই প্রচ্ছন্নতা প্রকাশ করো আর যাই হোক
শান্তি পাবে না।”
বাক্যগুলি এখন কেমন জানি নিকষিত, নিখাদ প্রতিপন্ন।
কালান্তে আমার বিষন্ন,বিপন্ন মন চিৎকার দেয়
আমি একটু স্বস্তি চাই
আমি একটু শ্বাস নিতে চাই।।
শিকড়
আচমকা দমকা হাওয়ার উৎপাত
উদ্বাস্তুর মতো কালো মেঘমালা ছুটছে
লক্ষ্যহীন এরা জানে না এরা ঠিক কতটা বেপরোয়া,
তাদের এই অবাধ্য ছুটোছুটি ক্রসফায়ারের মতো
ঠিক কেমন ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে আজ।
মরশুমের চিরচায়ত চাহিদার মর্যাদা আদায়ের জন্যে
তাদের এই ধাবন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে ছুটোছুটি, শন শন শব্দের মাতামাতি আর
কর্মবিরতিতে চুপিসারে পিছু নেবে
এক অজানা অচেনা যুগলের।
ধাপ্পা দেওয়ার মত ইচ্ছাকৃত ধাওয়ায় অনুরূপে দেখবে
তারা ঠিকই আশ্রয় নিয়েছে এক পরিত্যক্ত চিলেকোঠায়,
গাছের নিচে, অথবা রাস্তার পাশের এক টং দোকানে।
চলতে চলতে দেখা মিলবে এক বর্ষীয়ান বটবৃক্ষের,
ভারী অভদ্র আর অসভ্য সে।
বহু চেষ্টা তদবিরের পরেও তাকে নড়ানো যায় না
একচুল,
বছরের পর বছর ধরে শিকড়গুলো গিয়েছে বহুদূরে
তাই তার আর ভয় কিসের!
কিন্তু আজ সকল কল্পনা-পরিকল্পনাই যে অচল,
লড়াকু মর্ত্যলোক এক আজানা আতঙ্কে আবদ্ধ।
ভীমনাদ জানে না তার ভয়াবহতা দর্শনে আজ নেই
রাস্তার সেই অভুক্ত বালক, নেই কোনো বাস্তুহারা,
কবির সেই ব্যকুল দৃষ্টি ,নেই কোনো জোড়।
তবে মহামারীকে বাম চোখ দেখিয়ে এখনও
সেই অপারগ দাড়িয়ে।
তার তো হারাবার কিছু নেই, অশনির দর্পকে দেখবে সে,
কারন তার গোঁড়ের আধিপত্য যে বলিষ্ঠ ।
প্রার্থনা
হে প্রভু,
আমাকে একা করে দাও,
সুপ্ত,আলোকিত, অযাচিত সব বাসনা কে করো ঠুনকো।
উমেদগুলোকে করো ভঙ্গুর
সপ্নগুলো হোক চুরমার, নিরঙ্কুর।
নতুন-প্রাচীন কিংবা জোয়ান- প্রবীণ
সবাই হোক পর,
কেড়ে নাও তুমি সব শান্তির প্রতীক, সাদা রং আর
উড়বে না তো ওই পায়রার জোড়।
বিকল হোক সব সন্ধি-চুক্তি, থেমে যাক ওই কালির কলম,
মিছরির ছুরি হয়ে বেঁচে আছে যারা
হয়ে যাক সব অমর।
আমাকে অবাধ্য করো, করো নিষ্ঠুর,
করো নিষ্করুণ আর পাষাণী।
বধির হয়েছো নাকি?
এত এত ডাকি দয়া নিয়ে নাও,মায়া নিয়ে নাও,
আর আছে যা সব নাও সব।
দিনের পর দিন প্রহরের পর প্রহর
তবে কেন বুকে জমে শূল?
যদি কেড়েই না নেবে তাহলে কেন দিলে না মায়া?
তপ্ত রোদে অশ্বত্থের মতো মনগুরুর এক ছায়া?
সকলে আসবে দেখবে আর দেবে অট্টহাসি
শেখাবে না কেউ!
বলবে দাও ভাসান, গা ভেজাও স্রোতে
সকলে বলে ভাসো,কিন্তু ডুবতে বলে না।
তুমি আমাকে ডুবতে শেখাও,
ডুব শেষে
ভাসা যে অনিবার্য।
![ফারা দিবা](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2020/08/diba-150x150.jpg)