| 13 মার্চ 2025
Categories
উৎসব সংখ্যা ১৪৩১

উৎসব সংখ্যা: ফারহানা রহমান’র কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

স্মৃতির আড়ালে

কে জানতো আবার

এভাবে দেখা হয়ে যাবে?

 

বুঝতে না পারার অক্ষমতা থেকে

ফিরে যাওয়া স্মৃতির আড়ালে

যা কিছু হারিয়ে যায়

ঘুরে দাঁড়ানোর দিকে;

 

ফেলে আসা উপেক্ষার চোখ

ছেড়ে যাওয়া ভুল প্রেম

দেহজ মায়ায় লেগে থাকা জলজ বিষাদ

নিয়ন আঁধারে ঢেকে যাওয়া বিকেল!

 

সবকিছু মৃতপ্রায় আর

অজস্র ফেনিল শতাব্দীর মতো;

 

জীবনের পশমি তোরঙ্গে

হারিয়ে গিয়েছে।

 

বুকের গভীরে কান পেতে

শুনতে পাই, কেউ একজন

একঘেয়ে বিদায়ী সঙ্গীত বাজাচ্ছে

ভুলে যাওয়া অভিমানে…

 

 

 

 

দস্তখত 

গাছের বাকলে লেখা নাম মুছে গেলে

মিথ্যে করে লেখা চিঠিটির জন্য

কেন হয় এত শোক!

চোখের উপর

আরেকটি মৃতদিন খসে গেলে

জেনে গেছি, সীমারেখা ভেঙে ফেলেছে

শেখানো ভণিতা।

তবু মাটির সিথানে হেঁটে যেতেই বুঝেছি

হারিয়ে ফেলেছি কবে আমি

নিজেরই দস্তখত!

 

 

 

 

ফ্রেইগ্রেন্স 

ভিজে যায় ফ্রেইগ্রেন্সে

 

তুলেছো চায়ের কাপে

কমলার তুমুল আঘ্রাণ!   

 

বাঁকল খসানো আঁধারে হারিয়ে গেছে

কোনো কোনো আলোর প্রিজম

 

বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি ঝরে খুব চোখের পাতায়;

 

রেশম পোকার মতো

গুটিসুটি রমণীর বুকে

 

নিদ্রাহীন স্বপ্নের ফসিল আর,

বিষণ্ণ আত্মারা তবু

 

ছিন্নভিন্ন আবিল হৃদয়ে

অপেক্ষায় আছে  

 

উদাসীন দু-একটা অভিমানী

পালক হারায় এদিক সেদিক

 

অথচ যেসব স্বপ্নগুলো

হারিয়ে গিয়েছে ভেবেছিলে,।,

 

তাই আজ চাপা পড়ে আছে

লিভিংরুমের কার্পেটের নিচে।

 

 

 

 

শপথ

কিছুটা মগ্নতা নিয়ে

অদৃশ্য দুপুর কাছে আসে

প্যাপিরাসে লিখে রাখে

কাঁঠালিচাঁপার মৌ মৌ গন্ধ, আর 

ছায়ায় ধ্যানস্থ হয় 

জারুলের বনে;

তুমুল চড়ুইভাতি তবু

নির্জনতায় নিঃশেষ

হতে থাকে

নিদারুণ শোকে, 

 

তখন কি তোমার ভেতর  

অন্ধকার জেগে ওঠে খুব?

 

আর এই বালির মৌসুমে

অরণ্যের গহীনে হারায় 

চিরচেনা বনপাখিগুলো, 

বিষাদের কী এক মায়ায়; 

সেইসব ভরদুপুরেই 

বিলুপ্ত সময় থেকে

কোনো এক নিখুঁত ঈশ্বর

কাছে আসে আর

অসত্য শপথ করে

তোমাকে একটি

সম্পূর্ণ অক্ষর উপহার

দিয়ে হেঁটে যায়

বহুদুরে ঈশান-নৈর্ঋতে

 

বলো, তখন কি ভীষণ শূন্যতা

এসে গ্রাস করে তোমাকেই? 

আর বোধহীন দৃষ্টি নিয়ে

আরশিনগর ফেলে চলে যাও

একেবারে পুরাণের কালে?  

 

 

 

মৃত্যুর মতো তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ

এইসব প্রখর দিনে

তৃষ্ণার্ত পথিকের দল

সূর্যের দিকে হেঁটে যায়…

 

শ্যাম্পেইনের ছিপিতে আটকে থাকা ফেনার মতো

তাদের মস্তিষ্কে খেলা করে শত শত কঙ্কাল;

 

এই বৃদ্ধ নগরী এক বিষাদিত কয়েদখানা

এখানে উৎসব থমকে গেছে লক্ষীপেঁচার চোখে

ভিখারিরা মুখথুবড়ে পড়ে থাকে শুঁড়িখানায়!

 

এই আলো, উন্মুক্ত উত্তাপ

উচ্চাশার মতো ক্লান্তিকর!

ভোরের চাদর যতটা সর্বগ্রাসী ঠিক ততটাই

 

অথচ আমি তো তোমাদের কাছে কিছুই চাইনি…

 

শুধু জানতে চেয়েছিলাম

প্রিয়তমা রমণীর মতো

কী করে তৈরী হয়

মৃত্যুর মোহময় তীক্ষ্ণ ঘ্রাণ!

 

 

এই ঘুমকাতুরে শুকিয়ে যাওয়া মাটির কাছে

এই অদৃশ্য বাগানের গাছেদের কাছে

আমি যখন আমার সব শব্দ জমা রাখি

কবিতারা তখন বিলাপ করে আমাকে ধরে কাঁদে

অথচ আমি কাঁদিনা,

শুধু আমার দুচোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত…

 

 

 

 

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত