আজ ১ জানুয়ারি কবি,কথাসাহিত্যিক গৌতম বাড়ই-এর শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
মহাপ্রস্থানের পথে
বাবার মূর্তিটা ক্রমশঃ ধূসর হতে গিয়েও
মনে হয় এই তো সেদিন
মা আমার বুকের পাশেই দাঁড়িয়ে
বোগানভিলিয়ার গন্ধ-বিহীন অপরূপ
আশ্রিত আমি তখন
আমার গা-মাথা বেয়ে ছড়িয়ে পড়ছে
কাগজ কী ফুল হাল্কা গোলাপী
কী জ্যোতি!
একটা অরেঞ্জ স্কোয়াশের লম্বা বোতলে
জলে সবুজ মরচে শেকড়ে-বাকড়ে
তড়তড় করে দেয়াল বেয়ে উঠে পড়েছে
একটা চঞ্চল মানি-প্ল্যান্ট
মা সকালের আলো বাতাসে স্নিগ্ধ হত
আরও আলো মেখে বলত আমায়–
দেখ-দেখ কী সুন্দর! একদম অযত্নের মানি-প্ল্যান্ট
পানের মতন ভারী-ভারী ওর পাতা
আমরাও একদিন ধনরাশিতে ফুলে উঠব
কাঁড়ি-কাঁড়ি টাকা হবে লক্ষ্মীর কৃপা-বঞ্চিত ঘরে।
মায়ের স্বপ্নগুলো আমার গভীরে ছুঁয়ে যেত
আমি স্কোয়াশের বোতলে ঘষা-মাজা করতাম
কাঁচের ওপর ভোরের সূর্য ঝলকানি দিত
ঠিকরে পড়ত আলো
সেই আলো আমি আর মা মাখামাখি
করে নিয়েছিলাম
বাবা কোথা থেকে এসে বললেন–
মানি-প্ল্যান্টের মতন ভূ-ভারতে এমন খারাপ লতানো গাছ আর নেই
এতে গৃহস্থের অকল্যাণ হয়।
বাবা যখন ধূসর হয়ে ওঠে অসময়ে
আমাদের পুরোনো বাসা-বাড়ি স্মৃতি হয়ে ফেরে
মা দেয়ালের কোনে পড়ে থাকা কাঁচের বোতল
জলভরা চোখে দেখছিল
লতা-গুল্মের মৃত্যু হয়েছিল আগেই
আমি একদিন অনন্ত অন্ধকারে
নিক্ষেপ করেছিলাম শেষ অভিসম্পাত
বাবা-মায়ের ফটোর জোড়ের সামনে
কখনও বসি পুরাতনী ধ্যানে
তাই কী অন্ধকার থেকে আলোয় দেখি?
বাবা আর মা সেই অযত্নের পথ বেয়ে
হাত ধরাধরি করে চলেছে এখনও
মহাপ্রস্থানের পথে।
এক এবং এককের অন্ধকারে
শব্দের গভীরতা কিছু ছিল
নদীর নাব্যতার কাছে
কিছু গভীরতা আমারও থাক
চার্বাক সন্ধিতে, যেখানে জীবন এবং যৌন
মরমীয়া মলমে হেসে ওঠে পশ্চিমা বাতাস
কদম হয়ে ঝরে পড়ে কিছু হা-হুতাস!
মেঘগুলো পাখি হয়ে নেমে আসে
চড়ুই কবুতর কাক বক
সাগর হয়ে ওঠে সিন্ধু-সারস
আস্তাবল থেকে উল্কার মতন ছুটে চলে
কিছু মহাস্থবির অশোক-মোগলের ঘোড়া
রাতের গভীর অন্ধকারের শুকতারা
আমার শৈশব একাকী ঘোড়-সওয়ার
কিছু কথা রইল
কিছু অনুষ্টুপ সন্ধ্যায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থেকো আমার প্রাঙ্গণে। কিছু বুলবুলি সই চলে গেছে সুবর্ণ ডালে। কিছু কথা জড়ানো থাক রূপকথা চাঁদের মায়াবী আলোয়। কিছু জান্তব ভালোবাসা খুঁজব সকালের বাসি পুকুরে। কিছু-কিছু মেঘ থাক আঁধারের ছাইগাদা প্রাণে। কিছু কাব্য গদ্য হয়ে ফুটুক আর কিছু গদ্য কাব্যে। কিছু দুঃখ সঙ্গোপনে ডিঙ্গি হয়ে ভেসে যাক। কিছু বিচ্ছুরিত হোক অবতল থেকে। কিছু কৃষিকাজ বাকি রয়ে গেছে ফুলকুসুমা মৌজায়। কিছুদিন পর আমি যখন কালকেতু হব তুমি ফুল্লরা হয়ে এসো লালনধামে।
একটা সময় অবধি সায়েন্সের ছাত্র।দূরসঞ্চার বিভাগে কর্মজীবন শুরু টেলিগ্রাফিস্ট হিসেবে। জুনিয়র ইন্জিনিয়ার পদেও কিছু বছর। বর্তমানে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থায় (ভারত সরকারের) Accounts Officer হিসেবে কর্মরত।জীবন ও জীবিকার ভাঙ্গাগড়া অনেক দেখেছি।আমার ভেতরে তাই বয়ে চলে সাহিত্য নদীর ধারা অনবরত। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত অনেক লেখা।এই লেখার টানেই কবিতাকে নিয়ে চলে যাবো নগ্ন নির্জন দ্বীপে—এই আমার শখ।জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা শিলিগুড়ি শহরে, বর্তমান কর্মস্থল কলকাতা।