করোনা শুরুর দিকে শেষ হয়েছিলো তারপর দুইমাস কয়েকদিনের বিরতি, পাঠকদের অনুরোধে আবারো শুরু হল ইরাবতীর পাতায় করোনাকালে ইন্দু বিন্দু। আজ রইলো করোনাকালে ইন্দু বিন্দু পর্ব-৭।
জুন নামচা
আমার ঘরে থাকাই দায়….
আমফানের বিপর্যয় মোকাবিলায় ইন্দুবিন্দুর করোনাকাল উথালপাথাল। কোনোক্রমে সামাল দিচ্ছিল সংসারের জোয়াল কাঁধে নিয়ে। এবার জলে কুমীর–কামোট ডাঙায় বাঘ। সংসারের কাজ দুজনে মিলে সামলে নেওয়া যায় কিন্তু তাই বলে অন্দরমহলে একের পর এক দিন মজুরের আনাগোনা, একবার কেউ মাপজোক করতে, কেউ মাল রাখতে, কেউ হারনেস পরিধান করে আটতলার থেকে ঝুলতে থাকল। সেই মত ভাঙা দেওয়াল আবারো ভাঙা, তারপর ইঁটের গাঁথনি, পলাস্তরা পর্ব চলতেই লাগল। তার মধ্যে এবার এজন্মে না দেখা জ্যৈষ্ঠ্যের দাবদাহে অকাল মৌসুমী বর্ষা দিয়েছে অকৃপণ হস্তে । আর তার জেরে বানভাসি ইন্দুবিন্দুর ঘর দুয়ার আর দুজনে মিলে সেই বিপর্যয়ের মোকাবিলা। মনে পড়ে যায় প্রভুদেবার সেই অনবদ্য নাচ। মুকাবলা, মুকাবলা… ও লায়লা। তাদের ডিঙিয়ে সিঁড়ি উঠতেই হয় ফুলনদেবীর বেশে মাস্ক পরিহিতা ইন্দুবিন্দু কে। বাড়িতে পুরোদমে বি–স্কুলের অনলাইন মিটিং এবং ক্লাস চলছে। গ্যাস কমিয়ে দিয়ে ইন্দুবিন্দু সিঁড়ি তো নয় যেন পাহাড়ে চড়ে। রান্নাঘর থেকে তার প্রস্থানে শ্বশ্রুমাতা ঘরবন্দী দশা ঘুচিয়ে টুক করে বেরিয়ে পড়ে মিস্ত্রীদের কাজ দেখবার অছিলায়, সিঁড়ির মুখে এসে দাঁড়ান। ইন্দুবিন্দুকে নামতে দেখে আবারো তিনি সবেগে পলায়ন করেন সেখান থেকে। বাড়িতে মিস্ত্রী থাকাকালীন তিনজন থ্রি মাস্কেটিয়ার্স অর্থাত থ্রি–মাস্ক–এ–টিয়ার্স … এরূপ সাজপোষাকের বিধান দিয়েছেন করোনাদেবী স্বয়ং। অগত্যা মাস্ক পরতেই হয় নয়ত আক্রান্ত হতেই হয়। তা ইন্দুবিন্দুরা দুজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মাস্কের ব্যাপারে। মাঝেমধ্যে অন্য ঘরে ঢুকে পড়ে খুলে জিরেন নেয়। কিন্তু তার শ্বশ্রূমাতার মাস্কে টিয়ার্স এসে যায়। মিস্ত্রী রা কেউ কেউ নো–মাস্কার। তাদেরও কাউকে মাস্ক যোগাই আমি।
তিরাশি বছরের তিনি মাস্কে স্বাচ্ছন্দ্য নন মোটে। দম আটকে আসছে বা আমার কিস্যু হবেনা, আমি যমের অরুচি…এসব চোখাচোখা বক্তিমে ছুঁড়েও জিততে পারেন নি এ যাবত অতিক্রান্ত করোনাকালে। ওদিকে ইন্দুবিন্দু চীত্কার করে বলে, মাস্ক কোথায়? ঠিক যেমন ইস্কুলের মনিটর দিদি প্রেয়ার লাইনে চোখ বড় বড় করে বলত, স্কুল ব্যাজ কোথায়? শ্বশ্রূমাতা ডোন্ট কেয়ার। চুপচাপ নিজ ঘরে প্রবেশ করেন।ভাঙেন তবু মচকান না।
ওদিকে বরানগরে গর্ভধারিণী মা বড় নোট ভাঙিয়ে দোরে আম কিনছেন। খুচরো স্যানিটাইজ করতে ভুলে যাচ্ছেন। আর ইন্দুবিন্দুর পিতৃদেব মাস্ক পরছেন না।বলাই বাহুল্য তিনি কেবল বাগানে ফুল তুলতে কিম্বা ছাদের ওপর গাছে জল দেবার সময় নিজের লাল টুকটুকে গামছাখানি আস্টেপৃষ্টে বেঁধে নেন নাক, মুখ, গলা, মাথায়। কে বলতে পারে আকাশে বাতাসেও যদি করোনা থাকে? তিনি ৮৬ বছরের বৃদ্ধ। কানে কম শোনেন। টিভির খবরের ক্যাপশন দেখেশুনে যা বুঝেছেন তা হল কোমর–বিড়িটি থাকলে করোনায় ধরবে। তাঁকে ছেড়ে দেবে। শুনে মা বললেন, কোমর–বিড়িটি? সেটি কি বস্তু? তিনি বললেন, আমি বিড়ি খাইনা তো।কোমরে বিড়ি রাখিও না।জর্দা খাই সুপুরী সহযোগে।তিনি এও বললেন, তামাক সেবনে করোনার চান্স কম। অতএব চালাও পানসি। এদিকে ইন্দুবিন্দু যায়নি তিনমাস। তাহলে জর্দা এল কোথা থেকে এই লকডাউনের ভরা বাজারে? ইন্দুবিন্দুর মাতাঠাকুরাণী বললেন, কেন? সামনের অসমাপ্ত বাড়ির মিস্ত্রী তো ঘর যেতে পারেনি। তাকে দিয়েই আনাচ্ছি। ইন্দুবিন্দু এখন আপন হতে বাহির হয়ে পাগলপারা । তার মা সেই জর্দার প্যাকেট নিয়মিত স্যানিটাইজ করে তো? কে জানে? আবারো রাতের ঘুম চলে যায় ইন্দুুুুুুুুবিন্দুর।
![ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2019/11/IMG_20191109_234925-150x150.jpg)
উত্তর কলকাতায় জন্ম। রসায়নে মাস্টার্স রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে। বিবাহ সূত্রে বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। আদ্যোপান্ত হোমমেকার। এক দশকের বেশী তাঁর লেখক জীবন। বিজ্ঞানের ছাত্রী হয়েও সাহিত্য চর্চায় নিমগ্ন। প্রথম গল্প দেশ পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাস সানন্দা পুজোসংখ্যায়। এছাড়াও সব নামীদামী বাণিজ্যিক পত্রিকায় লিখে চলেছেন ভ্রমণকাহিনী, রম্যরচনা, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ এবং ফিচার। প্রিন্ট এবং ডিজিটাল উভয়েই লেখেন। এ যাবত প্রকাশিত উপন্যাস ৫ টি। প্রকাশিত গদ্যের বই ৭ টি। উল্লেখযোগ্য হল উপন্যাস কলাবতী কথা ( আনন্দ পাবলিশার্স) উপন্যাস ত্রিধারা ( ধানসিড়ি) কিশোর গল্প সংকলন চিন্তামণির থটশপ ( ধানসিড়ি) রম্যরচনা – স্বর্গীয় রমণীয় ( একুশ শতক) ভ্রমণকাহিনী – চরৈবেতি ( সৃষ্টিসুখ) ২০২০ তে প্রকাশিত দুটি নভেলা- কসমিক পুরাণ – (রবিপ্রকাশ) এবং কিংবদন্তীর হেঁশেল- (ধানসিড়ি)।অবসর যাপনের আরও একটি ঠেক হল গান এবং রান্নাবাটি ।