আজ ১০ ফেব্রুয়ারি কবি আলো বসুর শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার কবিকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
সহায়
সহায়, তুমি সূত্র ধরো
যখন তুমি এক চেনালে দুই চেনালে
সব চেনাবার মালিক তুমি
খেই হারালে খেই ধরালে
সহায় আমার, ছায়ার ঘরে রাখলে যখন
রোদ বোঝালে সময় করে
ঝড় বাদলে লুটিয়ে পড়ে পতন চিনি
শুশ্রুষাটি চিনবো বলে
একটু তুলে ঝাড়বে ধুলো
স্নান করিও
আঝোরধারে বর্ষাদিনে শ্রাবণজলে
স্নান করিও
কিংবা যদি যাই ভেসে যাই
বন্যা এলে একটু আমায় সাঁতার দিও
হাঁটুজলের দিনগুলোতে
একলা না হয় সামলে নেবো
তোমার তো এই উনকোটির এ সংসারে
কম জ্বালা নয়!
ডাকের তুমি খোঁজের তুমি
দুর্যোগেতে যোগগুরু আর
আলোর দিনে
তুমিই বলো খোঁজ রেখেছে কেই বা কার
চিরকালীন বসন্তদিন
যদিই পারো বইয়ে দিতে
পারতে তুমি পারতে তুমি
অনন্তকাল ঘুমিয়ে নিতে
যা হোক গে যাক
তোমার বাঁশি তোমার ফুঁয়ে
আমার কী আর বলার আছে
ঝড়বাদলের সে রৌরবে
শরণ, থেকো ছত্রকথায়
জোড়াতালির রিপুর গল্পে
মধুর তোমার শব্দ এঁকো
চরণপাতের শব্দ এঁকো
ভিখারিণীর ছেঁড়া কাঁথায়
থার্ড পার্সন
বৃষ্টি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা
এইবেলা বৃষ্টি বিষয়ক আলোচনা সেরে নেওয়া যাক
মারাত্মক দহনবেলায় সে যে আমাদের
করুণ মিনতির ডাকে সাড়া দিলো না
সেটা কী সে ভালো করলো?
তার তো সময় মতো আসা উচিৎ ছিলো!
আমাদের ফুটিফাটা জীবন লুকোনো মেঘের
আড়াল থেকে বসে বসে দেখলো আর মজা লুটলো!
তার মতো নিষ্ঠুর আর দেখিনি কোথাও
দহনের বুকে তার সুনিপুণ সাহসী ঝাপ —-
তারিফ করিনি আমরা?
দিই নি তার বুকের পাটার জয়ধ্বনি?
তবে কেন সে ভয় পেলো?
তাকে ছাড়াই তো কেমন দহন জয় করলাম
এবার যদি সে কিছু শেখে
আর কিছু বলার নেই তাই না?
কিছু বাদ গেলো কি না মনে করে দেখো এইবেলা
একবার এসে পড়লে তো তাকে নিয়ে উৎসব শুরু হয়ে যাবে
তখন বৃষ্টি গান বৃষ্টি পান বৃষ্টি রূপ বৃষ্টি অপরূপ বৃষ্টি অনুষঙ্গ…
ছাতা রেইন কোট তেলেভাজা নৌতকো ইয়ে মানে
যা যা প্রয়োজনীয় শব্দ বৃষ্টি রচনায়
তারপর যত দিন যাবে
আমরা আবার শরৎকে টেনে আনবো আলোচনায়
তুলোমেঘ প্রতিমা শিউলি এইসব আর কি…
একটা তৃতীয় পুরুষ হ্যাঁ লক্ষ্য করছি
একটা তৃতীয় পুরুষ আমাদের উত্তেজনায়
আগুন সরবরাহ করে যায় আজীবন…
এ কথা যেদিন থেকে জেনেছি
আমি কিন্তু আলোচনাকেন্দ্র ছেড়ে যাই না কোথাও
কী জানি বাবা যদি কোথাও যাই আমাকে নিয়েও হয়তো
যাক আর সময় নেই
বৃষ্টি বিষয়ক আর কি কি খুঁজে দেখা যাক
কেন্দ্রবিন্দু
বিস্তার চেয়েছো আদিগন্ত বিস্তার
নিস্তার চাওনি কোনদিন
পৃথিবীর পাতায় আকাশের নীলে লিখতে চাইলে
একমেবাদ্বিতীয়ম্ ‘আমি’
অহংকে চড়িয়েছো বিমানে, দুরন্তকে দিলে
গতির অধিক
নিজেরই পাখসাটে মুখর নিজস্ব আকাশ
কবে যেন অতিরিক্ত শব্দ পতন ভাঙলো ডানায়
উদাসীন আকাশ তো ভুলেই গেছে তোমার খেলাধুলার
ছবি তুলে রাখতে
ভাঙা মন্দির প্রাঙ্গনে কঠিন অশ্বত্থ শিকড়
ফাটল দাগ নিয়ে খুঁটে খাওয়া ধুলোখেলা দিন…
কেন্দ্র চেয়েছিলে একদিন
বিন্দুর হাত ধরে তার বিস্তারের গল্প
তেমন করে ভাবোনি কোনদিন তাই না?
উলটপুরাণ
ঠিক যখনই দহন বেলার চাতক চাওয়া আষাঢ় জলে
নিলে আমায় উল্টোরথে সব পুড়িয়ে ছাই উড়িয়ে
দাবানলের হাওয়ার তালে
ছাইয়ের সঙ্গে খড়কুটো যে কেনই আসে
লোভ জাগানো আগুনপাখির বিনির্মাণের স্বপ্ন উড়ান
জীবন আমার অগ্নিকালে জলের খিদে
নদীর ধারে বসত গড়ি
নদীরও কী পার ভাঙে আর এগিয়ে আসে কী উল্লাসে
সব ভেসে যায় সব ভেসে যায় সব যে ভাসে
জীবন আমার উলটপুরাণ খেলায় তুমি সীতার হরিণ সোনার লোভে
গণ্ডীভাঙা প্রবল ঝুঁকি
উল্টো জলের সাঁতার আমি
ঝড় বাদলে শরীর ছেঁচে উল্কি আঁকি
জীবন আমার হারের মুখে গরল সুধা
রসন ব্যসন তোমায় ছুঁয়ে
চক্ষু টানে এই বসুধা
একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা
ভালোবাসাবাসি তবে বিনিময়যোগ্য অপরাধের নাম!
নির্ঘুম সমস্ত রাত গরমিল হিসাব খোঁজে
মেঘ রঙ অভিমান সোনালী দিনের গায়ে
ভাঙা কাঁচ সন্দেহ
রক্তছাপ পায়ে পায়ে
বিশ্বাস ভাঙা শব্দে, অবিশ্বাসের শ্বাসে
শ্বাসরুদ্ধ কাহিনী
অপঘাতের মরণ মরেও মরে না
জীবনের ফুসফুসে ফিসফিস
মধ্যরাতে হঠাৎ জেগে ওঠে পুরোনো ক্ষত
টপটপ ক্ষরণে
জানো যে তুমিও আমি যা জেনেছি…
ভালবাসা হত্যা ও আত্মহত্যার যুগলবন্দী
কারা যেন বলেছিলো ভালোবাসার জন্ম হয় না মৃত্যু হয় না
তবে যে দেখলাম স্বভাবে জন্মায় ও অপঘাতে মরে যাবে বলে!
মৃত্যুঞ্জয়
নির্জন হইচই করে উঠলে আরও একটা আত্মহত্যা আসন্ন বুঝি
ঠিক যেন অবলা জীবজন্তুর চিত্তচাঞ্চল্যে সুনামি-ঈশারা
যেন পারাবত পাখনা’র অস্থির পাখসাটে ভুকম্পের পূর্বাভাস
যেভাবেই আসুক, মোক্ষ কোন গল্পের বিষয় নয়
আত্মহননের ভেতর দিয়ে আত্মলাভের পথ গিয়েছে বেঁকে
নিশ্চিহ্নের ঘরে চিহ্ন পড়ছে হাঁটি হাঁটি পা পা করে
কীভাবে ফেরাই তোমাকে!
‘শুভ মহরত’ লিখে তোরণদ্বার সাজাচ্ছো!
![ইরাবতী ডেস্ক](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2021/12/irabotee-cover-e1640636602578-150x150.jpg)