আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট![মাহমুদুল হক আরিফ](data:image/svg+xml;base64,PHN2ZyB4bWxucz0iaHR0cDovL3d3dy53My5vcmcvMjAwMC9zdmciIHdpZHRoPSIxMDAiIGhlaWdodD0iMTAwIiB2aWV3Qm94PSIwIDAgMTAwIDEwMCI+PHJlY3Qgd2lkdGg9IjEwMCUiIGhlaWdodD0iMTAwJSIgc3R5bGU9ImZpbGw6I2NmZDRkYjtmaWxsLW9wYWNpdHk6IDAuMTsiLz48L3N2Zz4=)
এক.
গরম লাউ মুখে পুড়লে যেমন মুখের আকৃতি হয় খবরটা শুনে তেমন একটা চেহারা হল সুতপার। এতক্ষণ তপার চোখ দুটো বিন্যস্ত ছিল খাঁ খাঁ পিচ ঢালা রাস্তার দিকে, ভাবছিল ফাল্গুন চৈত্রর ধূসর রাস্তা বৃষ্টির ফোটা পেলে নিমিষে কেমন কালো হয়ে ওঠে। অবিন্যস্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিমুল ফুলগুলো দেখতে দেখতে ফোনে হঠাৎ এমন একটা খবর আসলো; একদম তৈরি ছিল না সে। মনে কালো নাকি নীল বেদনার ঢেউ বয়ে গেল ঠাওর করতে পারলো না- তবে বুঝল, যে সামান্য জ্বর-কাশিতে কোন দিন গা করেনি। আজ এমন খবরে আতঙ্ক পেয়ে বসেছে। একবার দম নিয়ে বললো কিচ্ছু হবে না তোমার। আমি আসছি।
না আসতে হবে না। আজ আমার তৃতীয় দিন চলছে, ইটালির বেলনিয়া শহর ফেরত হবু পাত্র রতন জোয়াদ্দার ফোনেই প্রবল বাঁধা তৈরি করলো।
এই বৈশাখে ওদের বিয়ের দিন পাকা হয়ে আছে। ইটালির উত্তরের শহর বেলনিয়া। তখনো জোয়াদ্দার দেশে পৌঁছায়নি- এই তো গত সপ্তাহে, সুতপার সাথে এক দুপুর কথা হয়েছিল জোয়াদ্দারের। এন্টিকো কফি সপের প্রশস্ত বেলকনীর মিচমিচে কলো টেবিলে বসে। কফি কাপে চুমুক দিতে দিতে আর পিৎজার লোভনীয় পোরা অংশের গন্ধ নিতে নিতে বলেছিল আমি আসছি এই ফাল্গুনে। এবার না হোক আগামী ফাল্গুনে একসাথে কফি খাব তোমাকে নিয়ে। পিৎজার স্বাদের বর্ণানা দিয়েছিল যা ছিল ভীষণ তাজা এবং টাটকা আটোসাটো প্যাকেজের মতো। মিলান, রোমের গ্লাডিয়েটর, ভেনিসের শাখা নদী, আর্ট মিউজিক কত কী উঠে এসেছিল রতনের কথায়। এ শহরে তখনো কফিনের মিছিল শুরু হয়নি। জোর দিয়ে বলেছিল সুতপা তুমি জান না পুরনোর একটা মিশেল আছে শহর জুড়ে। তোমার চোখ জুড়িয়ে যাবে। নেক্সট উইকে যখন আসব অনেক গল্প হবে।
দুই.
আজ দশম দিন। জোয়াদ্দার প্রতিদিন নিয়ম করে একবার ফোন দিত সুতপাকে। ঠিক সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে। শরীর কেমন? জানতে চাইলে, রতন জানাতে চাইতো না ওর শরীরের অবনতির কথা। দেখা করতে চাইতো সুতপা। রতন জোয়াদ্দার বলতো আমি প্রতিদিন দুটো গাছ দেখি একটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি। একটা যদি আমি হই অপর গাছটা তুমি। আত্মগোপন থেকে জোয়াদ্দার সন্ধ্যা বেলা নিজেকে আড়ালে রেখে একবার করে কথা বলেছে সুতপার সাথে।
তিন.
এগারতম দিন। বিকেল হয়ে গেছে। ঝাঁজালো রোদ নেই। বিকেল বিদায় নিয়েছে। আজ কোন ফোন কল নেই। শহরের বাতাস থমকে আছে। রতন জোয়াদ্দারের ফোনের সুইচডট অফ। সুতপা বার কয়েক চেষ্টা করে। তার বুকে শুধু সানাইয়ের সুর বাজে।
![মাহমুদুল হক আরিফ](https://irabotee.com/wp-content/litespeed/avatar/f13cc285e33939019b088461d414c060.jpg?ver=1738538384)