বেহালা এখন নাকি ছেয়ে গেছে কংগ্রেসী মাস্তানে…
মারুন, কাটুন আর কুচিকুচি করুন আমাকে, আমি এভাবেই শুরু করব লেখা।
কবিতার ভার নিয়ে আমার সত্যি কোনো মাথাব্যথা নেই শৈলেশ্বরদা, ওগুলা ছাড়ান
দেন, মিডিলকেলাস আজো বাকি আছে চেনা? তারচে’ দেখুন ঐ গঙ্গায় চলন্তা পানি
ন্যাংটো করে দিয়ে যাচ্ছে মানসিক প্রমেহ, অম্ব। তাছাড়া, সেদিন শুনি কল্লোলিত
কৃত্তিবাস, ক্ষুধার্তের পর এখনো অনেক নাকি বিয়রেই নেসা করে থাকে। সুতরাং,
ঐসব আধুনিকথার কথা —- হেইডা বোধহয় আর চলিবেক নাই। এই কবিতাটি
মিলনসাগর থেকে কপি পেস্ট করে নেওয়া হয়েছে।
পারেন তো ক্ষ্যামা দিন। নাইবা বলুন কবি।যথেষ্টই ভালো আছি ধনঞ্জয় বৈরিগির
দিনগত কাজে। ‘দায়ে পড়ে যৌথকারবার’ তবু সমর্থন করি। এই পাপে আপামর
সাহিত্যিকদল প্রাণদন্ড দিলে পাব আন্তরিক শ্রেষ্ঠ রসিকতা। যতক্ষন তবু এই সি
পি এম পার্টি রয়ে যাবে, কলম ঘষ্ টানো আর যে কোনো কবিতা থেকে আমাকে
নিবৃত্ত করা নেহাতই অলীক। আমরা কাডার, এটা জানেন নিশ্চয়।
এতেই আমার সুখ, বাকি সব—করকমলেষু…
উনিশশো চল্লিশে চলো, দেখে আসি মেয়েরা কীভাবে চুল বাঁধে,
কীভাবে বিকেলবেলা ফুটবল মাঠ থেকে ছেলেরা মিলিয়ে যায় মিলনসাগরের
অথবা দুপুরে সেই ছেলেটিকে চিনে নিই, শিক্ষকের পিছু পিছু দৌড়ে গিয়ে
যে কিছুতেই ভুলতে পারেনি; ভুলতে পারেনি হায় চরকাপেড়ে শাড়ি পরা
মেয়েটির কথা। সে মেয়েটি আজ বুঝি ঠাকুমা হয়েছে?
কোথায় রয়েছে আনু, দুবরাজপুরে?
কলেজদিনের কথা মনে করে এখনো আর্দ্র হয়না কি?
লজ্জাবোধ করে থাকে শাড়ির ‘স্বদেশী’ পাড় ভেবে?
উনিশশো চল্লিশে চল, নিয়ে চল, আজকে তোমার বেণী দেখে কি বলবো
সহসা শহর মেঘে ঢেকে গেল, এত তীব্র অতীতচারিতা
বহুদিন কলমে আসেনি। সেসব মেয়ের মতো বেণী বাঁধতে
আমাকে শেখাও আজ কীভাবে চোখের ঐ প্রশাসন দিয়ে
আমাকে বানালে তুমি সমর সেনের ত্যারচা প্রেমিক,
আমাকে শেখাও আরো কীভাবে তোমার গলা অধিকার করে নেয়
বেথুনে পড়তে আসা ফরিদপুরের পাকা মেয়ে!
আমিও শেখাব কিছু, ছিয়াশির মধ্যপাদে এখনো শেখার যা-যা বাকি,
শেখাব এপিক ঢং, রোজ যাতে ভিন্ন চোখে আমাকেই দেখো,
শেখাব আগুন চুরি, গ্রিক মিথ, ভোলক্যানোলজি, মিলনসাগর দেখো
শুধু আগে একবার পুরোনো বাতাসে মুখ ধুয়ে নিই,
বুকে নিই বাঙালি মনন, আনু, মিলনসাগরের এই আণবিক
বর্ষার দিনে আজ ফিরে যাব উনিশেশো চল্লিশ
বিশেষ কারণে এত বছর পর আমি অযোধ্যা এলাম,
এলাম আমার মায়ের জন্মভূমি খুঁজতে।
না, আমার কী ধর্ম আমি জানিনা,
আমার মা মুন্নাবাঈ জন্মেছিল এখানেই এক ঝোপড়ায়,
কোন্ পুরুষের ঔরসে তার জন্ম তা ঠাহর করে
বলতে পারেনি আমার দাদীও, সেক্ষেত্রে জাতপাতের কথা তো ওঠেই না,
একে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলা যায় কিনা ভেবে দেখবেন,
যদিও পরিবার শব্দটার অর্থই আমার কাছে পরিষ্কার না।
বরং শুনুন, বালক বয়সে বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ে বসার আগে
ভালো মনে নেই আমার, তবু সেই জলহীন, আলোহীন,
পয়ঃপ্রণালীহীন ঘুপচি ঝোপড়া,
ভিখিরি, জোচ্চোর, দাগী, মাতাল… আর
কোন কোন মধ্যরাতে আচম্কা হুইসেল…
ঘরে ঢুকে পড়ত পেটমোটা উন্মত্ত থানেদার…
মুখে মদের গন্ধ… পান খাওয়া কুৎসিত হাসি…
মা আমাকে ঠেলে বার করে দিত- সেই রাত,
সেই অসংখ্য নক্ষত্রের রাত, সোনালী হ্যালোজেনের রাত আমি কাটিয়ে দিতাম রাস্তার পাশে
অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারতাম
ঠিক কতদিন পর থেকে মা আবার শুরু করবে বমি…
বাস, এইতো সব। অযোধ্যা ছেড়ে আসার পর আমি কী কী করি
তা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। মাননীয় বিচারক,
আমি শুধু শুনেছিলাম, যৌবন থাকতে থাকতেই ঝোপড়া থেকে দালান,
তা থেকে শীষমহল পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল আমার মা;
তারপর, জীবনের লাথ্ খেতে খেতে ঝোপড়ায়
চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠার জন্য মাফ করবেন,
কিন্ত এত বছর পর মায়ের জন্মভূমি খুঁজতে এসে
কেউ বলেছে- এখানে এসেছিলেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাড়া খাওয়া এক বাদশা।
আমি জানিনা পৌরণিক কোন চরিত্রের পক্ষে
জন্ম নেওয়া আদৌ সম্ভব কিনা, আমি জানিনা এতদিন আগে আসা
কোন সেনানীর পদচ্ছাপ এতটাই নিশ্চিত কিনা,
কিন্ত, আমি জানি আমার মা এখানে জন্মেছিল- এখানেই,
কেননা, আমিও যে জন্মেছি এখানে।
আমার এন্তেকালের ভয় নেই, আখেরাতের লোভ নেই,
মন্দার বা অমৃত আমাকে আকৃষ্ট করে না,
শুধু এই ঝোপড়ার জন্য- এই জন্মভূমির জন্য আমার রোযা-আমার উপবাস
অষ্টপ্রহর প্রার্থনা-পাঁচওয়াক্ত নামাজ,
রহম্ করুন, আমার মাতৃভূমি আমায় ফিরিয়ে দিন।
ফিরিয়ে দিন আমি মরিয়া হয়ে ওঠবার আগেই।
বেশ করেছি ভেঙেছি, মাইনফ্যুয়েরর আদভানি
বলেছেন- ওটা আগে মন্দিরই ছিল
আর যদি নাও থাকে তাব্বি বেশ করেছি
জ্ঞান দেবার তুমি কে হে মাল?
খোলা বাজারে চালের কিলো কত জান?
জান, ইট আঠারোশ’ টাকা হাজার
এমনকি শঙ্কর মাছও বাইশ টাকা কিলো
খুঁজতে হাঁটু খুলে যায় আমার বাপের।
লাইফের হার আন্ধি গলি আমি চিনে নিয়েছি
আমার এই কপাল থেকে তলপেট বরাবর
লম্বালম্বি রক্তের দাগ, তার উপর
বিএসএফ ক্যাম্প, তার উপর টহল
তোমারই জন্যেই তো এতো গুন্ডাগর্দি
শহর জুড়ে কারফিউ, বিস্ফোরণ, লুটতরাজ
বলছো- একই বৃন্তে দুটি কুসুম
কুসুম টুসুম আবার কী, এ্যাঁ
সেই অর্ধেন্দু মুস্তাফির টাইমে কুসুম নামে
তারপর থেকে কোনো কুসুম টুসুম নেই
বহুত ক্ষতি তুমি আমার করে দিয়েছ গুরু
আমারো এক সময় ছিল টলটলে চোখ,
নিজের ঘর, টু-ইন-ওয়ান, ইংরেজি স্কুল,
এলিট সিনেমা, লাল ইয়ামাহা, ইয়ামাহার
পিছনে ডলি, ডলির উড়তে থাকা চুল,
আর যখন বেসাহারা আমি ডুবে যাচ্ছি সেই স্বপ্নে
যখন কলাবাগান থেকে মা-বাপ ছেড়ে
ডলি পালিয়ে এসেছে আমাকে হ্যাঁ হ্যাঁ
একমাত্র আমাকেই বিয়ে করবে বলে।
তখন তুমি আলগোছে আমার চুলে দিয়েছ জট,
ছিঁড়ে দিয়েছ জামা, খুলে দিয়েছ শুকতলা
চার ঘন্টা ডলি দাঁড়িয়েছিল রেজিস্ট্রি
না, না না না না, ও মুসলমান বলে নয়,
নিজের ঘর, টু-ইন-ওয়ান, ইংরেজি স্কুল,
এলিট সিনেমা, আমার যে চাকরি নেই
ব্যবসার পুঁজি নেই, এক লিটার কেরোসিন
খুঁজতে হাঁটু খুলে যায় আমার বাপের
তখন কোথায় ছিলে শালা তুমি?
কোথায় ছিল তোমার সম্পিরিতের
হিন্দুর দেশ হলে মন্ত্রী হবো আমি
কিস্সু করতে পারনি তুমি কিস্সু না।
পাক্কা পাঁচ ঘন্টা ধরে ভেঙেছি
আর তুমি ইঁদুরের মতো গর্তে সেঁধিয়ে
নিজের জ্ঞান নিজের কাছেই রাখো
আমি জানি এইভাবে সব কিছু ভাঙতে
ভাঙতে একদিন আমি নিজেই ভেঙে
অতীত নেই, বর্তমান নেই, ভবিষ্যত নেই,
একটা কিছুতো আমায় করতে হবে নাকি?
মনে নেই- এই ভাঙনের নিরাশ্রয়ী
রুদ্ধশ্বাস পথে একদিন তুমি
তখন অন্ধের মতো আমি ছুটে গেছি।
সেই অধি বাস্তবতার সুড়ঙ্গ পথে
যেখানে মোড়ে মোড়ে ফুটন্ত জলের
ফোয়ারা, উড়তে থাকা বিশ্বাসের ছাই।
সেইখানে একের পর এক ছায়ামূর্তি
আমাকে শিখিয়েছে, প্রতিহিংসার দোঁহা
শিখিয়েছে- খিদের জ্বালায় মরিয়া যে মানুষ
ঢুকে পড়ছে জয়ন্তি বাজার থেকে বেনাপোলে।
তাদের টুটি এক্ষুণি ছিঁড়ে না দিলে
তোমারই একবেলার ভাতে পড়বে টান,
ক্ষুধার্তের বিচারের ক্ষমতা থাকে না
তাই ডান হাতে তার নলি টিপে ধরে
যেই বাম হাত তুলেছি শূন্যে
চিৎকার করে বলতে গেছি ‘হাই আদভানি’
তখন তুমি আমায় থামতে বলছো?
এখন আমার নখগুলো সব ধারালো
ধমনীর মধ্যে ছুটছে উষ্ণস্রোতা মদ
এই যে আমার বালিশ আর এই যে আমার কাঁথা,
এই যে পাশবালিশ আর ধুলোমলিন খাতা;
এই যে ব্ল্যাকবেরি আর শিয়রে গীতবিতান-
‘জয় করো ওই তামসীরে’ : সশস্ত্র বিজ্ঞান।
এই যে আমি শুলাম এই রাত্রিবেলায়, ওহে
ঠিক জানো কি উঠতে পারবো সকালবেলার মোহে?
এই যে আমার রবীন্দ্রনাথ, এই যে ‘বিসর্জন’-
এই যে আমার অপর্ণা আর সকল সর্জন!
এই যে আমি পৌত্তলিক না, একেশ্বরবাদী।
এই যে আমি নিরীশ্বর আর বহুস্বরবাদী।
এই যে আমার রবীন্দ্রনাথ, সবার মাথায় হাত রাখতে পারেন। পারেন কি? না, আমারই সংঘাত!
এই যে দেহ, তাতে আমায় খুঁজো না সন্ন্যাসী; হিমশীতল কিংবা মুখে পড়ছে কিনা মাছি-
কী এসে যায়, ওদের বলো এবারের অঘ্রাণ সোনালী হোক, যতদূর হয় রবি ঠাকুরের গান।
এই যে তিনি আলো-বাতাস কৃতঘ্নতা মেখে,
একলা আমার রবীন্দ্রনাথ, আসছো কবে থেকে …!
রাজার সঙ্গে আঁতাত করেন যিনি
আমাদের সেই গুহকের প্রতি ঘেন্না
রাজপুত্রকে খাওয়ান-পরান ভালো
টাকা-পয়সার প্রতিদান তিনি নেন না
ভালোই তো হয়, বদলে গদির গা
চুমকি বসানো কিংখাবে যায় ঢেকে
এবং পুরাণে সোনার আখরে নাম,
ছেলেমেয়ে যাতে এরকম হতে শেখে
শেখে অনেকেই, শেখেও না কেউ-কেউ
দূর থেকে ঠোকে ভালোমানষিকে পেন্নাম
রাজার পড়োশি হতে চান যিনি আজ
আমাদের সেই দালালের প্রতি ঘেন্না।
তুমি জান, রোহিতাশ্ব, বহুদিন কান্না আসেনা। তাহলে কি বড় হচ্ছি? সেই যে বছর তুমি এলে, শেষবার কান্না পেয়েছিল। কেউ এল অন্তত। দেশময় হুলুস্থুলু সে বছরে, মন্ত্রীরা চোর প্রমাণিত। সে সময়ে তুমি এলে, তোমার কেশর ঘন, তামাবর্ণ, তীব্রগন্ধী দেহ। তুমি জান, রোহিতাশ্ব, তারপর থেকে শুধু ছিন্ন দিন, ছন্ন রাত্রি। একমাত্র বন্ধু তুমি লাল ঘোড়া-প্রিয়সন্নিধান। কষ্ট খুব কামড়ায়, মাঝে মাঝে। তিক্ত রসে ভরে যায় জিভ। রোহিতাশ্ব, প্রিয় সখা, এই গান, নির্জনতা, আসন্ন শরতে এই দেশজোড়া খরা-বন্যা, এসবের মধ্যে দিয়ে কোথায় চলেছি? ক্যুয়ো ভাদিস, ঘোড়া বন্ধু? এত রক্ত, উপবাস, অস্ত্রের যবনিকা ভেদ করে যেখানে পৌঁছব, সেথায় কে কান্না ফিরে দেবে? বস্তুত, আজ ঐ মেয়েটিকে দেখে চোখময় বাষ্প ঘনাল। তবু বাষ্প, বহুদিন পর। রোহিতাশ্ব, সেই দেশে মেয়েটি কি কান্না ফিরে দেবে?
আমার নাম ‘জুরা ‘:যদি এর আগে না শোনো :
বাড়িতে ডেকো একবার আর ভুলবে -না কক্ষনো।
ঠাকুর -দাদা, ঠাকুমা সব বুকে -ই আছেন আর
আচ্ছু -বাবা, দাদু ভাইয়ের তছনছ সংসার।
মা তো আছেই, এক মুহূর্ত মা -কে ছেড়ে আমি
চোখের জলে পাড়া ভাসাই :মা এতোটা দামি!
বাবু? শুধু কম্পিউটার আর বই -ই পড়ে বসে,
মরতে বসা :আমিই তবু টেনে আনবো কষে।
আমার বাবু, আমারই মা : কে তাহলে বল
বুড়ো -গুলোকে মুখের কাছে এগিয়ে দেবে জল?
আমায় ছেড়ে যেন তুমি কোথাও যেও না…
এই যে এত আলস্য আর নিজেকে এত ঘৃণা
ঘোষিত নির্বিবেক থেকে অমানদক্ষিণা,
এ-সব থেকে নিষ্ক্রমণের তেমন কোনো ভূমি
থাকলে পরে সেই মাটিতে পৌঁছে দিও তুমি।
আঁচল দিয়ে আগলে রেখো, কোথাও যেও না।
বাতাস যদি নিজেকে দেয় বীজন
গন্ধ যদি নিজের ঘ্রাণে আকুল,
লেখা কি তবে নিজেকে লিখে যায়,
আমায় ছেড়ে যেন আমি কোথাও যাই না।
দিব্যি আছো, খাচ্ছো-দাচ্ছো
ঘরে তোর ভোটার আছে কয়জনা…
ভাড়াটের লর্ড শ্রীকৃষ্ণা।
ঘরে তোর ভোটার আছে কয়জনা?
ঘরে তোর ভোটার আছে কয়জনা…
সাঁই হাসিছেনঃ এই তো লীলা,
হাঁটছি, কিন্তু দিচ্ছি না।
ঘরে তোর ভোটার আছে কয়জনা…