আজ ২১ ফেব্রুয়ারি কবি,গল্পকার মন্দিরা এষের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
অমানুষ
আমি এক নির্ভেজাল অমানুষ
যতোটা পারা যায়,
ততোটা হয়ে উঠি আরো ।
জুতার তলায় পিসে মারি ট্রেনের আর্তনাদ,
বুকের নীচে চাপা পরা নদী ক্রমশ হলুদ হয়ে যায়,
আর আমি উপ্রে ফেলি জল।
আমি সেই অমানুষ
যার জন্মদাত্রী এক শ্রান্ত চাতক
অথচ কেবল সমুদ্র চিনেছিল সে।
প্রিয়তর গল্পেরা পথ বলে গেলে
আমি খুন করি হাওয়া,
নিজেকে পুড়িয়ে মারি নীলচে আগুনে।
চন্দ্রমল্লিকা
এইসব আন্ধা-সন্ধ্যার ডামাডোলে-
হতে পারে একটি বরফের ছুরি আঁড়পাড় করে-
তুমি খুন হলে।
বরফ গলে যাওয়ার আগেই-
ঝরে যেতে দেখলাম বৃন্তচ্যুত সবকটি চোখ,
থেতলে পরলো নরম রোদ-শুকা গন্ধ ।
মনে পড়ে, চৈত্রবাসে হাওয়ার মাখামাখি-
এড়িয়ে যেতে খুব।
অথচ রাতের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে- জানলায় দাঁড়িয়ে বলতে-
প্রকৃত পাহাড় কখনও তুফান ভোলেনি।
ঘাসঘর-কাটানদী- ফালি ফালি ঢেউ
কোনদিনও জানবেনা-
তোমার পিতার নাম হুয়ান পাহাড়।
বারো পৃষ্ঠা ঢেউ
আজ-
সারাদিনই নদী,
আড়ায় পাড়ায় ঘুম ঘুম গান ।
তবু ধমনীতে কৃষ্ণচূড়া খলবলিয়ে ফোটে,
দূরের গাঁয়ের গন্ধ চিনে নিতে ।
কে যেন গাঁয়ের সুহৃদ আমার,
হলুদ খামে ভরে পাঠালো
নদী ভেজা ১২ পাতা বন।
বৃষ্টিস্নাত বারো পৃষ্ঠা ঢেউ।
পাতায় পাতায় কুয়াশার দাগ লেগে ছিল
ঘাসের ঘর ছিল
রোদ রোদ ওম ছিল
আর ছিল-
ঘননীল আগুনের ছায়া ।
বিলগন্ধী ডিঙ্গি ছিল
কাঁসা রঙা সন্ধ্যা ছিল
ছিল আসমানী
পালকের অহরহ খসে পরা ।
আজ-
সারাদিনই নদী,
ঘুরে-ফিরে ঘুম ঘুম গান…
চৈত্রের রাস্তা
এইরকম চৈত্রে একটি রাস্তা হারিয়ে গেলো;
কিছু লাল ছড়িয়ে-
দ্বিধাযুক্ত ফিসফাস; ঝাউসারি-বালিয়াড়ি জুরে।
কেউ বলছে- বড়ো শান্ত ছিলো, যেনো মেঠোপথ!
কেউ বলছে- উচ্ছন্নে গিয়েছিলো আগেই, এঁকেবেঁকে!
নদী বলছে- জলের কাঙাল ছিলো!
জারুল বলছে- বুক পেতে নিতে পারে ধুলোমাখা ফুল!
এইরকম এক চৈত্রে রাস্তাটি হারিয়ে গেলো;
যে পথের অন্যপাড়ে-
আমার ঘুমঘর-
স্নানঘাট-
কাটাঘুড়ি-
ঈশপের দেশ!
যেপথের এপার বিক্ষত সহস্র পদাঘাতে!
চিহ্ন রেখে হারিয়ে গেলো রাস্তা;
এরচেয়ে মরে যেতে পারতো!
তিনি
তিনি ঈশ্বরের মতো ব্যাপ্ত
বাতাসের মতো অনুভূত
শুরু ও শেষের মধ্যান্তর
সমুদ্র ফুঁড়ে প্রকাশিত তিনি,
অথচ বৃক্ষের মতো থির।
অনেক বৃষ্টি ও হাওয়ার দ্বন্দ্ব থেকে-
উঠে আসেন তিনি,
তৃণের লালিত্য মেখে।
একটি শহর গড়ছেন তিনি
পায়ে পা ফেলে।
থিকথিকে ভিড় থেকে ঘাম, একাকীত্ব, স্বপ্ন বুদবুদ-
তুলে এনে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন শহরের চৌরাস্তায়।
শহর ঝুঁকে যাচ্ছে ক্রমশ
একটা কুঁজো বুড়োর মতো।
ফের শহরের পিঠে পাহাড় ঠেকিয়ে দিলেন তিনি-
পরম মমতায়।
মানুষের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জলকণা
আলুথালু নদী
তীরের ক্লেদ
হিসেবের হাওয়া আর
তাদের সুতো ছেঁড়া ঝলমলে বেলুন
অবাক করেনি তাঁকে।
তিনি থমকে গেলেন-
একটি নগ্ন শিশুর ছলছলে আঙ্গুলের স্পর্শে,
যে আঙ্গুল তখনও ঘুমিয়ে।
রুহ্দার
ক্যানভাসে রঙ ঢেলে
এলোপাথাড়ি ব্রাশ মেরে
উন্মাদ চিত্রকর যতবার ভোর এঁকেছে,
এসেছে সন্ধ্যা
ক্লান্ত হতোদ্দম শহরকে কাঁধে নিয়ে।
ক্যানভাসে রঙ ঢেলে
এলোপাথাড়ি ব্রাশ মেরে
উন্মাদ চিত্রকর যতবার জীবন এঁকেছে,
হয়েছে যন্ত্র
সারি সারি বাসে ঝুলে চলছে ভাবলেশহীন।
ক্যানভাসে রঙ ঢেলে
এলোপাথাড়ি ব্রাশ মেরে
উন্মাদ চিত্রকর যতবার নবজাতকের কান্না এঁকেছে,
হয়েছে লাশের মিছিল
আঘাতে-অপঘাতে নির্ধারিত দৈববশে।
ক্যানভাসে রঙ ঢেলে
এলোপাথাড়ি ব্রাশ মেরে
উন্মাদ চিত্রকর যতবার অরণ্য এঁকেছে
জ্বলেছে দাবানল
পাহাড়ে পাহাড়ে সবুজে – নীলেতে।
এমন কি চিত্রকর ”রুহ্দার” তার নাম ভুলে গ্যাছে ।।
আজ, সারাদিনই নদী
আজ-
সারাদিনই নদী,
আড়ায় পাড়ায় ঘুম ঘুম গান ।
তবু ধমনীতে কৃষ্ণচূড়া খলবলিয়ে ফোটে,
দূরের গাঁয়ের গন্ধ চিনে নিতে ।
কে যেন গাঁয়ের সুহৃদ আমার,
হলুদ খামে ভরে পাঠালো
নদী ভেজা ১২ পাতা বন।
পাতায় পাতায় কুয়াশার দাগ লেগে ছিল
ঘাসের ঘর ছিল
রোদ রোদ ওম ছিল
আর ছিল-
ঘননীল আগুনের ছায়া ।
বিলগন্ধী ডিঙ্গি ছিল
কাঁসা রঙা সন্ধ্যা ছিল
ছিল আসমানী
পালকের অহরহ খসে পরা ।
আজ-
সারাদিনই নদী,
ঘুরে-ফিরে ঘুম ঘুম গান…
দীঘি
আকাশটুকু সরিয়ে ফেললে-
গহনপ্রবণ দীঘি এক নিরাকার ধাঁধা ।
বিকেলগুলো তলানিতে ঠান্ডাহিল্লোল ।
সাঁতারু খড়কূটো কিছুটা খোঁজ জানে গুপ্তমিনের
বাকীটুকু মিথেনপ্রবাস।
বাতাসের লহরী পরায় ভেজা কিংখাব-
পাতালে নেমে যাওয়া ঘাটের গায়ে ।