আজ ০৪ মে কবি, কথাসাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী ও সম্পাদক মেঘ অদিতির শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
মে ফ্লাওয়ার
কী ভীষণ ঝরছ যে মে ফ্লাওয়ার
জন্মদিনে লেগেছে মৃত্যুশোক
কাকে ফেলে নেবে কাকে
আমাদের পথঘাট—নিয়ন্ত্রিত সব
নদীগুলো রেখে গেলে নগরকীর্তনে—
কীভাবে নিচ্ছ পড়ে, আমাকে?
একটি আত্মঘাতী ফুল তোমাকে
উদযাপনের এত এত শেড
এত তীব্র অন্ধকার
প্রিয় মুখ—
স্বীকার করি সুতীব্র চিৎকারের পাপ
স্বীকার করি দুরভিসন্ধির সন্ত্রাস
ঠিকরে গেছে আমার সেপিয়ার টোন
ঘুণপোকা কেটে নিলো এই জন্মান্ধের আয়ু
তোমাকে আলো দেব বলে
সকালের কাছে যত রাত কুড়োচ্ছি
আলোয় পুড়ে যাচ্ছে তোমার দীর্ঘশ্বাস
সারাদিন ঘুড়ি ওড়াচ্ছি কসমোপলিটান আলো-ছায়ায়
গুঞ্জন
এবার গুঞ্জন তোলো নওল বাতাস
মৃদুস্বরে হোক একবার টুং
ভেঙে ফেলা যাক পুরনো থার্মোমিটার।
সন্ধের ঘ্রাণ মেখে গুল্মলতার মুখবন্ধে
লিখে যাব জ্বরতপ্ত নিস্তব্ধতা
নিরুদ্দিষ্টের দিকে কুঁকড়ে থাকার দিনে
আপাতত নাভিপদ্মে এই বুদ হয়ে থাকা…
পাখি সিম্ফনি ও ক্যালাডোস্কোপ
আর কিছু না—
তোমার চোখেও আছে সম্পূর্ণ দুপুর
এপ্রিল নামের সন্ধ্যা
অথচ ঈশ্বর জানেন
আকাশ থেকে বিরহ নামলে
কোন অন্ধতায় আমি এখনো
খুঁজে বেড়াই চাবি
ফসল
পুষ্পবতী, তোমার বাগানে
সেজেছে আজ উপাসনা পুষ্পক
মাটি ফুঁড়ে উঠছে সবুজ বন্ধন
ধরো, এইখানে মুক্তিপ্রবণ হাওয়া
লেবুফুলের সুঘ্রাণ দিন আর
দক্ষিণ থেকে ভেসে আসা বয়ঃসন্ধির ব্যথা
তবু বৃন্ত থেকে বাতাবী বৃত্তে
কামরাঙা শরীরের ঢালে
আচ্ছন্ন হরিতকির পাতায়
কারা ফলাচ্ছে অত মৌসুমী ফসল?
নিশানা
যে ভাষা ভুলে গেলে পাহাড় ধ্বসে পড়ে
রক্তের দাগ মুছে গড়ে ওঠে হাড়ের মিনার
তারও বেশি ধূসরতা আজ
নির্লিপ্তির দিকে গেছে ঘুরে
মৃত্যু অধ্যুষিত এলাকায় এর বেশি
নিশানা থাকে না
চেকপোস্ট
চাঁদমারি বললে শৈশব থেকে চুরি হয়ে যায় দিন। আলো বললে অন্ধকার থেকে অন্ধতার দিকে উন্মনা হয় আপেল।
দেশভাগ, দ্বিজাতি তত্ত্ব, কাঁটাতার ভেবে যারা সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে গেল তাদের অনেকে বাড়ি ফেরেনি, যারা ফিরতে চেয়েছিল, তাদের আটকে দিয়েছে যুদ্ধংদেহী চেকপোস্ট।
থেকে থেকে
নাভির ভেতর খলখল
হেসে উঠছেন নগররক্ষক…
নয়নতারা অথবা একজন বুনুয়েল
নিজেকে বন্দী ভেবে উড়িয়ে দিলাম রেশম সাদা রুমাল। কোথাও কেউ ঠিক দেখলো! কোথাও প্রকাশ পেলো, পারস্পরিক মত বিনিময়ের ছবি। একটা কফিশপের আলো নিভে উঠে এল প্লেগ পীড়িত এক গ্রাম।
হা জীবন!! কাল ছিল তবে শেষ অপেরা! অথচ সাদা রুমাল, উড়ে এলে লেন্স থেকে চোখ সরিয়ে ভাবা যেতই— তিনি আসছেন।
মাথা উঁচু কর প্রশ্নচিহ্ন! প্রক্ষেপণ গতির বিপরীতে তীব্র উড়ে যাও; আর জিজ্ঞেস কর সন্ধ্যার আলো মেখে একলা শহর যখন দাঁড়িয়ে থাকে তখনও কি সম্পর্কের খুব কাছে জন্ম নেয় আরো কোনো সম্পর্কের মন্দমৃদু হাওয়া?
যেভাবে সাজ সাজ রব
যদিও—
শহরের এক চিলতে বারান্দায় এখন টবের মরসু্ম। জানলায় নতুন পর্দা। একটি মাত্র হলুদ গাঁদা হেসে উঠলেই ধ্বনির ওপার থেকে ভেসে উঠবে শীতের সকাল
তবু—
কুয়াশা দেওয়ালে শিস দিতে দিতে হারিয়ে যাচ্ছে বয়ঃসন্ধি। ঈষৎ বেগুনি আভায় স্বয়ং যিশু এখন চেলো বাজাচ্ছেন। বাতাসের পাংশুল ছায়ায় ঘুরছে বিসূচিকা বীজ।
সুতরাং—
সমস্ত কোলাহল ছাপিয়ে এবার সেজে উঠবে দুর্বিনীত শূন্যস্থান
ছায়ার চিবুকে সে
আকাশের কাছে ঝড় হয়ে ওঠার চেষ্টায় ট্র্যাজিক ভাস্কর্য ছুঁয়ে
কখনো মিশে যেতে চায় সে ক্যাকোফনিক শোভাযাত্রায়
কখনো ফিরতে চায় উৎস থেকে সময়ে..
সে মানে সে, ছায়ার চিবুকে কালো প্রজাপতি ডানা
ট্র্যাজিক ভাস্কর্য, ছায়ার চিবুক আর প্রজাপতি ডানা
আগে পরে আর কোথাও কিছু নেই..
তবু খোঁজো স্মৃতিবিন্দু
যা কিছু গভীর তার সবটুকু দিয়েছি তোমাকে
মাছরাঙা নাভিতল নিভৃতের হরিতকি বন
তবু খোঁজো স্মৃতিবিন্দু, সঙ্গোপনে দেরাজে যখন
হৃদয় আগলে রাখি অর্থহীন অপার বিষাদে
নিজেকে সরিয়ে ভাবি এই বেশ লুকোচুরি খেলা
ছেঁড়াখোঁড়া ধারাপাতে থেকে যাবো এমন ভ্রমণে
এতো সে’ই তুমি নও, যাকে আমি অনিরুদ্ধ জানি
চেতনার কোন স্তরে ভালবাসা নিজেকে চেনায়?
উত্তর অজ্ঞাত তাই লক্ষ্যভেদি সে শিকার আমি
তুমি যাকে প্রেম বলো তাকে আমি স্পর্শ বলে জানি…
আলো ভেঙে গেলে
অনৃত গল্পের ভেতর পাখি উড়ে এলে
সন্ধি প্রস্তাবে থাকে ঘাসফুল শুধু
বাইরে নেশাতুর ডাক
চিত্রকল্পে ফিরে গেছে ক্রিসমাস ঈভ
বিরুদ্ধ হাওয়ায় সেই ফুলছাপটিও আর নেই..
অথচ রাত্রি অধীর
অধিক সংকেতে ভাসে ঘুম
আত্মশোকের গায়ে মোহবার্তা আসে, ‘জেগেছে বুনো ঘোড়া ওই’
আর উৎসর্গপত্রে ঘাসফুল লিখে যায়
‘আলো ভেঙে যাবার পর সমর্পণের সেই গল্পটা…

কবি, গল্পকার। পেশা গ্রাফিক ডিজাইনিং। লেখালিখির শুরু ২০০৭ এ। সম্পাদক, ঐহিক বাংলাদেশ।