মৃত্যুর পর্দা…
মৃত্যু ! সেতো শুধু নিজেকে আড়াল করে ফেলা।
লৌকিক জীবন থেকে পরলোকে
আড়াল করে ফেলা পৃথিবী থেকে, আপন থেকে, স্বজন আর কাছের মানুষের থেকে।
আমিও আড়াল করেছি নিজেকে,
বেঁচে থেকেও মৃত হয়ে আছি, দেয়াল দিয়ে রেখেছি দুই জগতের মাঝখানে।
চলে এসেছি মৃত এক লাশের মত।
নিজের সব অধিকার, স্বপ্ন, ইচ্ছে আর সম্পর্ককে পেছনে ফেলে।
চলে এসেছিলাম নিশ্চুপে।
যত অভিযোগ, অপবাদ, আর কষ্ট নিজের সঙ্গে নিয়ে।
চলে এসেছিলাম বিদায় দিয়ে নিজের পরিচিত পথ, অলি-গলি,
শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের লাল নীল স্মৃতিকে।
আমি চলে এসেছিলাম মৃত মানুষ হয়ে।
কিন্তু এ মৃত্যু স্বাভাবিক না।
এটা হত্যাকান্ড। একদম ঠান্ডা মাথার খুন!
হত্যা করা হয়েছিল আমার বিশ্বাস কে!
রক্তাক্ত হয়েছিল আমার নিস্পাপ অন্তর।
ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল আমার হৃদয়।
রক্তাক্ত করেছিল আমার আপনজনেরা।
যাদের চিনে এসেছি এতকাল, হয়তো চিনিনি!
রক্তেই ভাসিয়েছিল রক্তের বন্যা।
যেদিন আমি চলে এসেছিলাম,
আমার অশ্রুগুলো মিশে গিয়েছিল রক্তের সাথে।
আর আজও সেই রক্ত ক্ষত বিক্ষত করছে …
আমার দেহ-মন আত্মাকে।
সেই দিন আমি চলে এসেছিলাম মৃত মানুষ হয়ে!
চলে এসেছিলাম আমার সব অধিকার আর সম্পর্কে পিছনে ফেলে
আমি চলে এসেছিলাম মৃত মানুষ হয়ে।
আহা! এই ভালবাসা…
আহা! আজ কি হল তোমার
কি কারন এই ভালোবাসার?
আহা!
তোমার এত ভালোবাসা, এত আবেগ, এত উদারতা আমার জন্যে!
আগে তো দেখিনি, জানিনি কখনো।
আহা!
আমি আশ্চর্য, হতভম্ব, নির্বাক।
আহা!
কী কারণ আজ তোমার এই মায়ার?
এত আহ্লাদ, এত সোহাগ, এত স্নেহ
কেন! বলতো কেন?
আহা!
আমি আশ্চর্য, হতভম্ব, নির্বাক।
তোমার ভালোবাসা দেখে।
আহা!
আজ কি হল তোমার?
কী কারন তোমার এই ভালোবাসার?
আহা!
কোন একদিন তোমার ভালোবাসার সুনীল অতীত।
আমায় ভাসিয়েছিল সুখের জোয়ারে ।
কিন্তু আজ!
আমি যে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিনা, তোমার ওই দুটি প্রতারক চোখ দুটিকে।
আহা!
বিশ্বাস করতে পারছিনা তোমার ভালোবাসার বাক্যগুলো।
আহা! আজ এ কি হল আমার,
আমি কেন নির্ভর করতে পারছিনা তোমার ভালোবাসায়।
আহা!
আজ কি হল আমার, কেন আমি ভরসা করতে পারছি না, তোমার এই স্নেহ মাখা লিপিগুলোকে।
কেন শুধু ঘৃণার জোয়ার ওঠে এই অন্তরে?
যে হৃদয়ে এক সময় ছিল তোমার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা ।
আহা!
কেন আজ বার বার প্রশ্ন জাগে কী ছিলাম, আমি তোমার?
আহা!
তুমি তো ছিলে আমার অন্তরের প্রান,
আমার চোখের জ্যোতি, আমার মুখের ভাষা,
আহা!
আজ কি হল আমার,
কেন আজ হারিয়ে গেল আমার প্রান?
কেন অন্ধকার হয়ে গেল আমার চোখ?
কেন আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার ভাষা?
আমি আশ্চর্য , হতভম্ব, নির্বাক
আহা! কি কারন তোমার এই ভালোবাসার
আহা!
কি কারন এত মায়ার, এত আহ্লাদ এত সোহাগ, এত স্নেহের।
কেন? বলতো কেন…?
আমি আর ফিরব না ঘরে
আমি আছি তোমাদের কল্পনায়
তোমাদের স্বপ্নে
তোমাদের কথায়, তোমাদের আলোচনায়,
তোমাদের অস্তিত্বে ,তোমাদের ঘৃণায় অথবা তোমাদের ভালবাসায়।
কিন্তু তোমরা আমায় খুঁজে পাবে না,
তোমাদের বাস্তবতায়, তোমাদের বর্তমানে, তোমাদের মুর্হুতে।
খুঁজে পাবে না তোমাদের মুখে হাসি ফোঁটাতে,
চোখের জলগুলোকে মুছে দিতে,
কেননা, আমি তো হারিয়ে গেছি,
হারিয়ে গেছি, চেনা পথের অচেনা গন্তব্যের মাঝে।
ঝড়ে গেছি তোমাদের জীবন থেকে, যেমন ঝড়ে পরে শুকনো পাতা।
ভেসে গেছি কুলহারা নদীর মতো।
উড়ে গেছি ঠিকানাহীন পায়রার মত।
আর আমায় ডেকো না,
আমায় আর খুঁজো না, কেঁদোনা আমার লাগি।
ফিরবো না তোমাদের কাছে, তোমাদের হয়ে।
ফিরবো না আমার সেই প্রাণের ভূমিতে,
খেলবো না আর সেই আঙ্গিনায়,
আমার কণ্ঠ আর কলরব করবে না তোমার বাড়ির চারপাশে।
আমার দুঃখ গুলো আর তোমাদের কাঁদাবে না, হাসাবে না আমার কোন সুখ!
তোমরা আমায় আর ডেকো না ,
আমি যে আর কোনদিন ফিরবো না।
যে দিন চলে এসেছিলাম, বলেছিলাম ফিরবো না আর ঘরে।
কই?
কেউ তো বলনি, যাস নে! তুই তো আমাদের!
যাসনে আমাদের পর করে দিয়ে।
আমি তো খুঁজেছিলাম আমাকে তোমাদের দুই চোখে।
কিন্তু পেয়েছি শুধু অভিযোগ, অপবাদ আর ঘৃণা ।
তাহলে আজ কেন আমায় ডাকো?
কেন আমায় খোঁজ ?
কেন বল ফিরে আয় ঘরে?
আমি যে আর পারবনা! এত সব অভিযোগ, অপবাদ আর ঘৃণার দায় নিয়ে ফিরে আসতে।
আমি যে আর পারব না ফিরে আসতে।
তাই, তোমরা আমায় আর ডেকো না,
আর খুঁজো না আমায়।
আমি তো হারিয়ে গেছি, হারিয়ে গেছি এক চেনা পথের অচেনা গন্তব্যের মাঝে…