–ক্যাপ্টেন রজার্স- সব ঠিক আছে তো?
–না মহামান্য এলা, আরও দুটি করোনাভাইরাস আক্রমণ করেছে।
মহামান্য এলা কনট্রোল সেন্টারের নরম চেয়ারে গা ডুবিয়ে দেন । তিনি মানুষ নন, এলিয়েন। তাঁদের গ্রহ জুনো তে আক্রমণ করেছে এক নতুন ভাইরাস। তার নাম করোনাভাইরাস। এই করোনা যাকে পাচ্ছে তাকেই মেরে ফেলছে। গ্রহের প্রধান হিসেবে তার দায়িত্ব হাজারগুণ বেড়ে গেছে। চিন্তায় মাথা দপদপ করছে। একটা মাইগ্রেনের পিল খেলেন তিনি।
ভিডি মডিউলে কল দিলেন ল্যাবরেটরিতে। সেখানে এলিয়েন বিজ্ঞানীরা করোনার প্রতিষেধক বের করার চেষ্টা করছে। এখন তাদের প্রথম কাজ এই ভাইরাসে উৎপত্তি সম্পর্কে জানা।
–কি খবর বিজ্ঞানীরা? কিছু জানতে পেরেছ?
মাথা থেকে বের হয়ে আসা চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়ে আনন্দধ্বনির মত একটা শব্দ করে বিজ্ঞানী জোশি বলল, –সুসংবাদ আছে মহামান্য এলা! এই ভাইরাস এসেছে পৃথিবী থেকে!
–পৃথিবী? সেটা আবার কি?
–ছায়াপথে অবস্থিত। সৌরজগতে সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান। তৃতীয় গ্রহ। ঐ গ্রহের একটি দেশ চীনে সৃষ্টি হয়েছে ভাইরাসটি।
–তাই নাকি?
–হ্যাঁ ,আরও একটা চাঞ্চল্যকর খবর আছে। আমরা এর প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছি।
–বলো কি?
–আপনি যা শুনছেন তা সত্যি। সালফার ডাই অক্সাইড আর নাইট্রাস অক্সাইডের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে এটি।
–খুবই ভাল। আর শোন, এক গ্যালন প্রতিষেধক তৈরি করে মিশন কন্ট্রোলে পাঠিয়ে দাও।
–ঠিক আছে মহামান্য এলা।
মহামান্য এলা একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। করোনাকে নির্বংশ করতে হলে প্রথমে এর উৎপত্তিস্থল চীনে গিয়েই সবকটাকে মারতে হবে।
পৃথিবীতে তখন গভীর রাত।
আস্তে আস্তে উহান শহরে নেমে আসল একটি স্পেসশিপ। জেগে থাকলে মানুষেরা নিশ্চয়ই অবাক হয়ে দেখত। যেহেতু কেউ জেগে নেই,তার ওপর প্রাণঘাতী করোনার ভয়ে সবাই ঘরবন্দি, তাই নির্বিঘ্নে কাজ সারতে পারবে এলিয়েনরা।
কিন্তু- মানুষেরা কি ঘুমিয়ে থাকলে অদৃশ্য হয়ে যায়? এলিয়েনরা তন্নতন্ন করে খুঁজেও একটা মানুষ দেখল না। বাধ্য হয়ে তারা বের করল মানব ট্র্যাকার । বোতাম টিপতেই যন্ত্রটি তার কাজ শুরু করে দেয় । ফলাফল… অবিশ্বাস্য । পৃথিবীতে মাত্র ৫টি মানুষ আছে। কিন্তু না, তারা পৃথিবী নিয়ে গবেষণা করে এসেছে- সেখানে প্রায় সাত দশমিক পাঁচ বিলিয়ন মানুষ আছে- আর সে জায়গায় মাত্র পাঁচজন? তারা যন্ত্রটাকে বাড়িধুড়ি দিয়ে দেখল, যন্ত্রটা ঠিকই কাজ করছে। এখন উপায়? মহামান্য এলাকে বলতেই হবে।
–মহামান্য এলা, পৃথিবীতে আর মাত্র ৫ জন মানুষ আছে ।
–কি বলছ তোমরা উল্টোপাল্টা?
–সত্যিই বলছি। সম্ভবত করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের বাকি মানুষ মারা গেছে। বাংলাদেশেই অবশিষ্ট মানুষেরা একত্রে আছে। পৃথিবীর আরেকটা দেশ সেটি।
–আচ্ছা ওখানে যাও গে। প্রতিষেধক দাও । তবে পৃথিবীর মানুষের জন্যও আমি একটা উপকার করতে চাই আর তা হল বংশবৃদ্ধি। আমি স্পারম এগ ভর্তি একটা হ্যাচেট পাঠাচ্ছি। মহিলাদের শরীরে ঢুকিয়ে দিয়ো- দশ মিলিগ্রাম করে। ঠিক আছে?
–যা বলবেন, মহামান্য এলা।
বাইভারবালে চেপে বাংলাদেশে উড়ে এলো এলিয়েনরা। মানুষগুলোকে ঢাকার খাঁ খাঁ এক রাস্তায় খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়নি। তাদের অবস্থা দেখে করুণায় চোখে জল আসল এলিয়েনদের। ছেঁড়াখোঁড়া জামাকাপড়, ময়লা চুল- এই সব মিলিয়ে অবর্ণনীয়। পেছন থেকে একজন এলিয়েন কেশে গলা পরিষ্কার করল।
শব্দে একজন মহিলা পিছনে ফিরে তাকাল। তার মধ্যে নেই মানব স্বভাবসুলভ কৌতুহল। মনে হল যেন এমন এলিয়েন তারা রোজই দ্যাখে। নিরাসক্ত গলায় সে বলল, –কি চান ?
–আপনাদের পরিচয় কি জানতে পারি ?
–আমাদের আর পরিচয় কি? বাঁকা হাসি হেসে সে বলল‘ –আমরা করোনা আক্রান্ত রোগী। পৃথিবীর আর সবাই মৃত , কেবল আমরাই জীবিত। আমাদের ছোঁবেন না প্লিজ।
আরেকজন মহিলা বলল, –যাহোক , এই দুর্যোগের আগে আমরা যেভাবে পরিচয় দিতাম, সেভাবেই দিচ্ছি। আমি ক্লারা, আর ঐ যে আমার স্বামী ক্লেমেন্টাইন। আমরা পর্তুগিজ। যার সাথে কথা বলছিলেন তিনি রাবেয়া আর তার স্বামী রবিউল ও মেয়ে রোকসানা ওখানে বসে আছে। আমরা দুজনই আমাদের সন্তান হারিয়েছি। রাবেয়ার আর দুটি বাচ্চা ছিল। তারা আজ আর নেই। আমার সন্তানরাও।
একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে কথা শেষ করলো ক্লারা।
একটা এলিয়েন বলল, –আপনারা কি কিছু পান করতে চান?
এই প্রথম চকচকে চোখে তারা সমস্বরে বলল , –হ্যাঁ ! ঐ এলিয়েনটা অন্যদের ইশারা করলো জুনো গ্রহের পানীয় “রিসটা “পাঁচটি গ্লাসে ঢালতে। প্রতি গ্লাসে দেয়া হল একটু প্রতিষেধক । মহিলাদের গ্লাসে বংশবৃদ্ধির জন্যও স্পার্ম এগ । খেয়ে কিচ্ছু বোঝা যাবে না।
কিছুক্ষণ পর মানুষদের বিদায় দিয়ে এলিয়েনরা উড়াল দিল আকাশে। পাইলট বলল- এখন আমাদের দায়িত্ব শেষ। এখান থেকে করোনা- খতম!
–হ্যাঁ, পাঁচজন হয়ে সুবিধাই- তাড়াতাড়ি কাজ শেষ-
–সবচেয়ে বড় কথা, তারা কিন্তু খেয়ালই করেনি আমরা এলিয়েন!
–করেছে হয়তো – প্রকাশ করেনি-
পঁচিশ বছর পরের পৃথিবী।
পৃথিবীতে দূষণের ছিটেফোঁটা নেই। করনা থেকে আড়মোড়া ভেঙ্গে ধরার প্রতি মানুষ হয়েছে মমতাশীল। তবুও কীভাবে পৃথিবী জেগে উঠলো, সে ব্যাখ্যা যদি রাবেয়া, রবিউল, রোকসানা, ক্লারা বা ক্লেমেন্টাইন দেয় – তাহলে কেউ তা বিশ্বাস করবে না।
ষাটোর্ধ রাবেয়ার হাত ধরে তার নাতনি বলে, “ও নানি বল না, এলিয়েনরা তোমাদের কি খেতে দিল?
–জানি নে বাপু- দিল এক মিষ্টি শরবত – খেয়ে করোনাও গেলো, পটাপট বাচ্চাও হতে লাগল- তা বাপু আমি তার নাম জানি নে, যা তুই-
বিশ্বাসযোগ্য কোন ব্যাখ্যা না পেয়ে চার বছরের অবোধ শিশু ছুটে গেলো মাঠে।
![সুকন্যা প্রাচী](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2019/11/Shukanya_Photo-150x150.jpg)
বয়স-১৩
ঢাকার উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির বিদ্যার্থী। চার বছর বয়স থেকে লেখার হাতেখড়ি। বাংলাদেশ অমর একুশে
বইমেলা-২০১৮ সুকন্যার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘সাতরঙা ছবি’ প্রকাশিত হয়।