ভারতের লেগ-স্পিনার রবি বিষ্ণোই চার উইকেট নিয়ে একসময় বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে দিলেও, শেষপর্যন্ত জিততে পারল না ভারত।
টানটান উত্তেজনার ম্যাচে চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতল বাংলাদেশ। ১০২ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর অধিনায়ক আকবর আলি (অপরাজিত ৪৩) ও পারভেজ হোসেন ইমনের (৪৭) অনবদ্য লড়াইয়ে তিন উইকেটে ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। এই জুটিই ম্যাচের রং বদলে দেয়। ইমন আউট হয়ে গেলেও, আকবর শেষপর্যন্ত টিকে থেকে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন। তাঁর সঙ্গে শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকেন রাকিবুল হাসান (৯)। ভারতের লেগ-স্পিনার রবি বিষ্ণোই চার উইকেট নিয়ে একসময় বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে দিলেও, শেষপর্যন্ত জিততে পারল না ভারত। একগাদা অতিরিক্ত রান দেওয়ার ফল ভুগতে হল ভারতীয় দলকে।
অনুর্ধ্ব ১৯ যুব বিশ্বকাপের ফাইন্যালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। যে কোন স্তরের ক্রিকেটে কোন বিশ্বকাপ জেতা বাংলাদেশের জন্যে এটাই প্রথম। তা ছাড়া ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম ক্রিকেটের কোন বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ট্রফি জিতলো বাংলাদেশ। আজ রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারত প্রথমে ব্যাট করতে নেমে করেছিল ১৭৭ রান।
বাংলাদেশ ১৭৮ রানের টার্গেট নিয়ে মাঠে নামলেও জয় থেকে তারা যখন অল্প দূরে – তখনই বৃষ্টির জন্য খেলা বিঘ্নিত হয়। ফলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জন্য সংশোধিত টার্গেট দাঁড়ায় ১৭০ রান।তখন বাংলাদেশকে আর মাত্র ৭ জন করতে হয় জয়ের জন্য। খেলার ২৩ বল বাকী থাকতেই বাংলাদেশ এই লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

১৫-তম ওভারে তৃতীয় উইকেট নেন বিষ্ণোই। কোনও রান না করেই এলবিডব্লু হয়ে যান তাওহিদ হৃদয়। ৬২ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৭-তম ওভারে বিষ্ণোইয়ের চতুর্থ শিকার হন শাহাদাত হোসেন (১)। তিনি স্টাম্প হয়ে যান। ২১-তম ওভারে ৮৫ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৭ রান করে ফিরে যান শামিম হোসেন। সুশান্ত মিশ্রর বলে ক্যাচ নেন যশস্বী। বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেটের পতন হয় ২৩-তম ওভারে। সুশান্ত মিশ্রর বলে কার্তিক ত্যাগীর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অভিষেক দাস (৫)। এরপর ইমন ও আকবরের জুটি দলের হাল ধরে। সেখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়।

আজ শুরু থেকেই ভাল বোলিং করছিলেন বাংলাদেশের তিন পেসার শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান শাকিব ও অভিষেক। স্পিনাররাও ভাল বোলিং করছিলেন। সপ্তম ওভারে প্রথম বল করতে এসেই চতুর্থ বলে দিব্যাংশ সাক্সেনার (২) উইকেট নেন অভিষেক। এরপর যশস্বীর সঙ্গে ক্রিজে যোগ দেন তিলক বর্মা। তাঁরা ধীরে ধীরে দাপট দেখাতে শুরু করেন। এই জুটিতে যোগ হয় ৯৪ রান। তিলকও ভাল ব্যাটিং করছিলেন। তবে ২৯-তম ওভারের শেষ বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। এই ওভারেই ১০০ রান পেরিয়ে যায় ভারত। তিলক ৩৮ রান করেন। এরপর যশস্বীর সঙ্গে ক্রিজে যোগ দেন অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ (৭)। কিন্তু তিনি বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারেননি। রাকিবুল হাসানের বলে শাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। এরপর যশস্বী একা লড়াই চালান। কিন্তু তিলক ছাড়া আর কোনও ব্যাটসম্যান তাঁর মতো লড়াই করতে পারেননি। বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট নেন অভিষেক। তিনি আজ খেলার সুযোগ পেয়েই দুর্দান্ত বোলিং করেন। জোড়া উইকেট নেন শরিফুল ও শাকিব।
ভারতীয় দল- যশস্বী জয়সোয়াল, দিব্যাংশ সাক্সেনা, তিলক বর্মা, ধ্রুব জুরেল (উইকেটরক্ষক), প্রিয়ম গর্গ (অধিনায়ক), সিদ্ধেশ বীর, অথর্ব আঙ্কোলেকর, রবি বিষ্ণোই, সুশান্ত মিশ্র, কার্তিক ত্যাগী ও আকাশ সিংহ।
বাংলাদেশ দল- পারভেজ হোসেন ইমন, তানজিদ হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, তাওহিদ হৃদয়, শাহাদাত হোসেন, শামিম হোসেন, আকবর আলি (উইকেটরক্ষক ও অধিনায়ক), রাকিবুল হাসান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান শাকিব ও অভিষেক দাস।
