আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
কেবিন
ঢাকা মেডিকেল কলেজের করিডোরে পড়ে আছেন বিপ্লবী নেতা। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে টিভি সাংবাদিক ভিড় করে তাঁর ছবি তুলছে। অনেকেই জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে বলছেন, ‘এই ত্যাগী নেতার জন্য কেবিনের ব্যবস্থা কি করা যেত না?’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এই প্রশ্ন করলেন সাংবাদিকরা। এক সময়ের বামপন্থী নেতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবেগমিশ্রিত গলায় বললেন, ‘আমরা তাকে কেবিন অফার করেছিলাম। তিনি তা গ্রহণ করেননি!’
চতুর্দিকে বাহবা রব উঠল। ফেসবুক ভরে গেল ত্যাগী নেতার প্রশংসায়।
পত্রিকায় এ খবর দেখে বাড়ি থেকে ছুটে এল মেয়ে। পত্রিকা দেখিয়ে বলল, ‘তুমি নাকি কেবিনে যেতে চাওনি?’
বাবা ফ্যাল ফ্যাল করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর মারা গেলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। এখন কেউ তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবে না।
ভেন্টিলেশন
সাইরেনের শব্দে ভয়ার্ত হয়ে আছে নিউইয়র্কের কুইনস হাসপাতাল। একটু পর পর রোগী নিয়ে হাসপাতালে ঢুকছে অ্যাম্বুলেন্স। ডাক্তার নার্সদের ছোটাছুটি বাড়ছে।খবর পেয়ে হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন রোগির আত্মীয়েরা।
ছয়ূ ফুট দূরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক একজন স্বজনকে রোগির নাম বলে তাঁর বর্তমান অবস্থা জানিয়ে যাচ্ছিলেন আলেক্সান্ডার রামকিন।মোটামুটি দেড়শো রোগি সম্পর্কেই বলছিলেন, ‘রোগী আছে ভেন্টিলেশনে। অবস্থা কেমন, বলা যাচ্ছে না। প্রার্থনা করুন।’
এবং একটু পরপরই ঘোষণা করছিলেন, কার কার মৃত্যু হয়েছে।
দেড় ঘণ্টার মধ্যে ৪০টি লাশের ঘোষণা দিয়ে আলেক্সান্ডার রামকিন ঢুকলেন সিসিইউতে।
সেখানে বারোটি ভেন্টিলেটরে বারো জন রোগি।
ভেন্টিলেটরবিহীন আটানব্বুইজন রোগি লাশ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।
পদক
পদক পাওয়ার পর অভিনন্দনের ঠেলায় আকাশে উঠে গিয়েছিলেন মাহমুদ মোকাদ্দেস খোকন। চারপাশ থেকে তার তোষামোদকারীরা ভাঙ্গা রেকর্ডের মতো বলেই চলেছিল, ‘এতদিনে একটা সত্যিকার সাহিত্যবিচার হলো! এখন তো সব কিছু কেনাবেচা হয়! খোকন ভাইকে দিয়েই পুরস্কারের শুভ সূচনা হলো!’
এরপর যা হয়, একটার পর একটা সংবর্ধনা!
একদিন রাতে লেখক যখন নিজের বাড়িতে খেতে বসেছেন, তখন তার জুনিয়র সহকর্মী সাদিক হোসেন হাজির। ‘পরে খাবো’ বলে সাদিকের হাত ধরে ড্রইং রুমে চলে গেলেন তিনি।
‘বাড়িতে এসেছ কেন?’ সাদিককে ফিসফিসে ধমক দিলেন খোকন।
‘ অধ্যাপক স্যার ইমিডিয়েটলি বাকি টাকাটা চেয়েছেন। কমিটির আরও তিনজনকে কনভিন্স করতে হয়েছে! তিনি আমাকে আপনার কাছে পাঠালেন!’ বলল সাদিক।
রোমান্স
অর্পিতা কোন রেস্তোরাঁয় কাজলের সঙ্গে একান্তে যায়, ঘন্টার পর ঘন্টা হাঁটতে পারে পাশে।
একদিন হাঁটতে হাঁটতে অর্পিতার হাত ধরেছিল কাজল। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অর্পিতা বলেছিল, ‘আমি না বললে আমাকে স্পর্শ করবে না!’
এরপর থেকে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ আমিনুর রহমান কাজল অর্পিতাকে সমঝে চলে। কিন্তু তার স্বপ্ন মরে না।
হাসপাতালের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে মানুষ। ফুসফুস ভরে যাচ্ছে করোনাভাইরাসে।
একদিন এক কেবিনে অর্পিতাকে দেখতে পায় কাজল। ডিউটি ডাক্তার যাবার আগে বলেন, ‘আশা নেই। প্রায় শেষ।’
কাজল পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অর্পিতা চোখ খোলে। কাজলকে দেখে অতিকষ্টে হাসে। তারপর রোমান্টিক স্বরেই বলে, ‘আজ আমার ঠোট স্পর্শ করতে পারো।’
সম্মোহিতের মতো কাজল এগিয়ে যায় অর্পিতার দিকে।
সাংবাদিক, সাহিত্যিক, অনুবাদক