নেশা
আমরা কি আদৌ কেউ কোথাও ঠিকঠাক মানাচ্ছি?অস্ফুট স্বরে চাঁদের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় কান। উল্লাস নাকি বিষাদ বুঝি না! ভাঙা কাচে রক্তছাপ আমার পায়ের…তবুও আমাকে হেঁটে যেতে হচ্ছে; হেঁটে যেতেও হবে মাইলের পর মাইল অথবা কোনও এককের ঊর্ধে!
তুমি না আমি, কে-কতটা সুরক্ষিত
এ প্রশ্ন বরং থাক।কল্পলোকে সবাই সুন্দর!সবাই সুগন্ধি মাখা নির্বিবাদ-লয়!
আমি আছি ঠিক এর বিপরীতে।
সবটাই দ্বন্দ্বে। সবটাই লয়হীন,মাত্রাহীন ভাবে। বাইরে ধূপের গন্ধ।
সংস্কৃত-মন্ত্রোচ্চারণ। মাতৃ বন্দনা।
নিরহংকারী অন্ধকার কেবলই জপে যাই ছায়ামানুষ হয়ে। আসলে ছায়ার নেশা থেকে এ জন্মে আমার আর মুক্তি নেই! শেষ অগ্নি গানে সামগান গাইতে-গাইতে বুঝেছি ছায়াটাই সব। ছায়াটাই আসল। শুধু এটুকুই থেকে যায়। বিশাল প্রাজ্ঞ বৃক্ষের ছায়া হয়ে অথবা আজন্মলালিত আলোর ছায়াশরীর হয়ে, যেখানে আনুভূমিক দূরত্বে ক্রমশ এগিয়ে-এগিয়ে যেতে থাকে ছায়া। একটা স্কেচড অনুশীলন। একে তোমরা মৃত্যু বোলো না।
যাওয়া আসলে যাওয়া নয়; থাকাও কি সবসময় থাকা? একে তোমরা জীবন বোলো না।
সবটুকু ছায়াময়-মায়াময় পটভূমি
এক অনির্বচনীয় সাদা-কালোর সাধনা। এক অন্তহীন সন্ধান।শরীর ছায়া হলেও,
ছায়া কখনোই শরীর নয়। অধরা উপলব্ধি অথবা অদৃশ্য আশ্রয়, অনেকটা তার মতো, অনেকটা অনেককিছুর মতো! একটা সত্যি অপেক্ষার উজান, অধিকারের প্রিয়তম ভাতগন্ধ!
এই যে একটু তোমার আওয়াজ শোনার অপেক্ষায় আমার জলজ পর্ব,
এও কি আদৌ কিছু?কিছুই নয়…
সব, হৃদয় কমল বন মাঝে,ছায়াময় -মায়াময় সাজে মধুর ধ্বনি বেজে ওঠা কালকণ্ঠ…
‘কেউ আসলো না কোনদিন…’
এলেও ক্ষণস্থায়ী সে-আসা। আসা তো নয়, যেন যাবার তুমুল আয়োজন! মায়াগলি জানে সব ছেঁচড়ে-হিঁচড়ে রক্তাক্ত জোছনার কথা। না-বুঝেই লোকে দেয় সাধুবাদ! নদীর জল ভাঙে ঝুলে থাকা ফুল সহ অসফল জরায়ুর মতো… জীবন পুড়ে খাক…সাধুবাদ দেয় পৃথিবী!
হত্যার সরগম গাইছে কে?যাকে ভেবেছিলাম সে? নাঃ, যে কল্পনাতেই ছিল না, স্বপ্ন অথবা দুঃস্বপ্নের ভেতর, সে? প্রশ্ন চিহ্নগুলো মুছে দিলে, পড়ে থাকে উত্তরের নির্মম লাশ…সেখান থেকে আবার শুরু হয় অনভ্যস্ত আত্মাদের অভ্যেসে ফেরার গোলাপি-গল্প। বসন্তসেনার মতো এসে দাঁড়ায় নারী, নদী ও নক্ষত্র…
নারী, নদী আর নক্ষত্র ঠিক কতটা কাছাকাছি,বুঝতে গিয়ে গিলে ফেলা আলো অবশেষে প্রসব করলো যমজ-কুসুম,একটা ভাঙাগান আর একদলা বর্জিত সুর…
জীবন পুড়ে খাক, সাধুবাদ দেয় পৃথিবী…
আরও একবার গর্ভধারণ করতে-করতে! সমগ্র জুড়ে এক তীব্র ছায়া-নেশা…
‘মুঝ বিরহন কা জিয়ারা জ্বালায়ে…’
হাজার রাতের কলঙ্ক এসে চোখের জল ফেলেছিল, নপুংসক রাত্রির বুকে…
একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ঈশ্বর ও দানব একবিন্দুতে মিলিত হয়, কিন্তু গ্রাস এবং গ্রহণ মুখোমুখি,ব্যাল্কনিতে…এখানেই ব্যভিচারী-ট্যুইস্ট। জ্যাজের মুখরতা। মা শীতলার সিঁদুর’ তীব্র লাল।
এসেও ফিরে যাওয়া এক দুরারোগ্য ব্যাধি। গলির ভিতর লাল-ফিতে জড়ানো দু-বেণী করা ত্যারছা-হাওয়া যেতে-যেতে বলছিল ভাঙা-বাদাম আর কণকাঞ্জলির একটা ঘন-গল্পের কথা। বলছিল, নদী নিঃস্ব হলে কীভাবে আকাশ হয়ে যায়…আরও কত-কী!প্যাডওয়ালা-ব্রায়ের সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘সময়’… ১৮ এবার অন্তত একটু পরিপুষ্ট হও… আর যা-যা বলছিল, তা শোনবার ও বলাবার জন্য কোনও ট্রিক জানা ছিল না, যারা শুনছিল তাদের কাছে। তাই এপর্যন্ত একটা কলঙ্ক একবিন্দু জল ফেলেছিল… তাতে ছায়াস্নান একটি ঈষৎ কোকো-কালারের চুমু এঁকে সেই যে একডুবে বিন্দুজলে মিলিয়ে গেল, আর ফেরেনি…একাশিটা ইরোটিক চাঁদকে বলা হয়েছিল এমন করে একবিন্দু জলে একডুবে অন্ধকার আঁকতে পারবে কিনা। সাড়ে চৌষট্টিটা চাঁদ একসাথে হাত তুলেছিল! বাকিরা বলেছিল তাদের ব্যক্তিত্ব আছে। আসলে জড়িয়ে যাওয়া প্যাঁচানো শাড়ির মতো কী অদ্ভুত তারা ক্রমশ নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছিল!
ক্লোন আর ফেক- শব্দ দুটোর আসল পার্থক্য কি খুব বেশি? দেওয়াল জুড়ে পিপলি-মোটিফ আর অবিশ্বাস্য সবুজ ঘোড়া। আমি স্বপ্নের মতো সাহসী হতে পারি!স্বপ্নের ভিতর থেকে বেপরোয়া মুখে করে আনতে পারি এক-একটা বুদ্ধিদীপ্ত-মশাল। ‘ফির তেরি কাহানি ইয়াদ আয়ি”… এক-পঙক্তি কবিতার মতো নিখোঁজ হচ্ছে বিবৃতি। গলির ভিতর গালিব।সংসার-সংসার গন্ধ, গলির ভিতর। গলির ভিতর সংক্রমণ। ডেলিভার্ড-মেসেজ রেখে যায় সুখ ও শখ। এবং গভীর অসুখ। একটা ক্ল্যাসিক গল্পের কাছে যতটা ঝুঁকে হাঁটু দুমড়ে-মুছড়ে ভেঙেচুরে বসা যায়, তেমন এক দুপুর তখন, গলি পেরিয়ে।কথাশিল্পী মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য-এর ‘পালক’ খুব মনে পড়ে! মনে পড়ে উড়ে-উড়ে যাওয়া পালক-জীবন ও নির্জন খামারবাড়ি। ফায়ারিং-স্কোয়াডের মুখোমুখি অপলক জেগে থাকা দুটি চোখ .. ঘুমের ভিতর গভীর ষড়যন্ত্র!পালস-রেট অফবিটে রেখে যায় অন্তহীন এক গান ও জ্যোৎস্না…জ্যোৎস্না ও গান…
তোমাকে খুব মনে পড়ে…
![মনোনীতা চক্রবর্তী](https://irabotee.com/wp-content/uploads/2019/06/FB_IMG_1560590690326-150x150.jpg)
কবি,গায়ক ও সম্পাদক