যে কৌশলে করোনামুক্ত নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড করোনা মোকাবিলায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে বিশ্ববাসীর প্রশংসায় ভাসছে । প্রায় ৪৯ লাখ জনসংখ্যার এই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে প্রাদুর্ভাব শুরুর পর তিন মাসেরও বেশি সময়ে মাত্র ১ হাজার ১৫৪ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হন। আক্রান্তদের ২২ জন মারা গেছেন। বাকিরা সবাই সুস্থ। নিউজিল্যান্ডের সফলতার গল্প শুনুন তাহলে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন গত ৮ জুন ঘোষণা দেন, তার দেশে আর কোনো করোনায় সংক্রমিত রোগী নেই। সংক্রমিতদের সুস্থ করার পাশাপাশি টানা ১০১ দিন ভাইরাসটির বিস্তার যথেষ্ট পরিমাণে রোধ এবং সংক্রমণ বন্ধও করলো কিভাবে ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্রটি? জেনে নিন তাদের সাফল্যের মূল পাঁচ কারণ।
অনেক বেশি পরীক্ষা
নিউজিল্যান্ডে মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কখেনোই মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। তবুও এক সময় দেশটিতে দিনে আট হাজার করে মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এভাবে মোট দুই লাখ ৯৫ হাজার মানুষের করোনা টেস্ট করানো হয়েছে মাত্র ৫০ লাখ মানুষের দেশ নিউজিল্যান্ডে।
মানুষের হিসাব করলে নিউজিল্যান্ডের পরীক্ষার হার বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এছাড়া শুধু উপসর্গ দেখা দেওয়া কিংবা সন্দেহভাজন ব্যক্তি নয় আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে খুঁজে বের করে তাদের পরীক্ষা করা হয়। তারপর কোনো সংশয় দেখা দিলে তাদেরকে আইসোলেশন অথবা কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হতো।
দ্রুত লকডাউন
করোনা মোকাবিলায় নিউজিল্যান্ড সফল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার মূল কারণ দ্রুত লকডাউন। দেশটিতে যখন মাত্র ছয়জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল তখনই অর্থাৎ ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন ঘোষণা দেন, নিউজিল্যান্ড ভ্রমণে যারা আসবেন তাদেরকে বাধ্যতামূলক দুই সপ্তাহের সেল্ফ আইসোলেশনে থাকতে হবে।
তখনও এ রোগে দেশটিতে কেউ মারা যায়নি। এরপর ২৫ মার্চ আক্রান্ত যখন একশ তখন সীমান্ত বন্ধ করে লকডাউন ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘শুরু থেকেই কঠোর হতে হবে আমাদের৷’ তারপর লম্বা সময় ফার্মেসি, মুদির দোকান, হাসপাতাল আর গ্যাস স্টেশন ছাড়া সব বন্ধ রাখা হয়। করোনামুক্ত হওয়ার পরও সীমান্ত বন্ধ রেখেছে দেশটি।
জনগণকে সম্পৃক্ত করা
নিউজিল্যান্ডে লকডাউন কার্যকর হয়েছে সঠিক পরিকল্পনা এবং সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে। দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব মানুষের কাছে একটি খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে সবার কাছে এই মহামারি প্রতিরোধে সাহায্য চাওয়া হয়।
সরকারের তরফে দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পাঠানো ওই খুদে বার্তায় (এসএমএস) লেখা ছিল, ‘এই বার্তাটি নিউজিল্যান্ডের সবার জন্য। আমরা আপনার ওপর নির্ভরশীল। রাতে আপনি যেখানে আছেন, পরবর্তী ঘোষণার আগ পর্যন্ত সেখানেই থাকতে হবে আপনাকে।’
ভৌগলিক অবস্থানগত সুবিধা
তবে উল্লিখিত বিষয়গেুলো ছাড়াও মহামারি মোকাবিলয়া আরও একটি বড় সুবিধা পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ার কারণে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া সহজ হয়েছে দেশটির পক্ষে। ফলে বাইরে থেকে কেউ দেশটিতে ঢুকতে পারেনি। আর এরই মাধ্যমে নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি সহজেই এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
দূরদর্শী সরকার
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্কুল অব ফার্মাসির সিনিয়র শিক্ষক ওকসানা পাইসিক বলেন, ‘যে কোনো মহামারির বিরুদ্ধে সফল হতে হলে আপনাকে প্রথমে সন্দেহভাজনদেরকে খুঁজে বের করে টেস্ট করা (পরীক্ষা) এবং আইসোলেট করে রাখতে হবে। এগুলো হচ্ছে কোনো মহামারির বিস্তার রোধের ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু পদক্ষেপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া প্রত্যেক রোগীর (আক্রান্ত ব্যক্তির) বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, সংক্রমণ ধরা পড়লে প্রত্যেককে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর মতো নিয়মগুলো মানতে হবে। সব দেশের জন্য কোভিড-১৯ থেকে রক্ষার এটাই সেরা উপায়। আর এটা মেনেই নিউজিল্যান্ড সফল হয়েছে।’

বিশ্বের সর্বশেষ খবর, প্রতিবেদন, বিশ্লেষণ, সাক্ষাৎকার, ভিডিও, অডিও এবং ফিচারের জন্যে ইরাবতী নিউজ ডেস্ক। খেলাধুলা, বিনোদন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য সহ নানা বিষয়ে ফিচার ও বিশ্লেষণ।