| 11 অক্টোবর 2024
Categories
উৎসব সংখ্যা ১৪৩১

উৎসব সংখ্যা: ঝিলম ত্রিবেদী’র কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

অভিলাষ


মাটিতে শুয়ে আছে অভিলাষ
ঠাণ্ডা মাটিতে পানির উপর শুয়ে আছে

তাপসকাকা তাকিয়ে আছে, সারাদিন তাকিয়ে থাকে তাপসকাকা

তাপস যে

রিক্ততার পুরুষ-ঘাস

তাপস…

চোখে তার বিজীর্ণ বাঁশির আসর
রবি দাস, মানিক দাস, ননী ধাড়া, অনন্ত বারুই বসে থাকে
মুড়ি মাখে সরস্বতী ঠাকুর
পোস্ত দেয়, লংকা, পেঁয়াজ

বাইরের লাইন দিয়ে ট্রেন যায় গুবগুব করে

ট্রেনের শব্দ দিয়ে, চলে যাওয়া দিয়ে মুড়ি খায় কয়জন প্রাণ

সে আর আমি
আমি আর সে-ও বসে থাকি
তার চোখে জ্বলছে গুপীযন্ত্রের সাতনরি লহর—

“নবী গো

 মনের মানুষ যদি পাও
 বটগাছ, অভিভূত ঝুরি যদি পাও
 ছেড়ে যেও না ছেড়ে যেও না নবী, আকাঙ্ক্ষার অমিত বাসর…”

তার চোখ বুজে আসে ঘুমে
তার মনে নিদ্রা নেমে আসে

আমি তার চশমা খুলে রাখি
ঘাম মুছিয়ে দিই অন্ধকারের কাপড়ে
যে কাপড় সংসারের লালডুরি দুঃখ দিয়ে বোনা
কাগজফুলের মতো তুলতুলে জলের কাপড়

মুছিয়ে দিই কপাল তার, এঁকে দিই শান্ত নদীভোর

অনেক দুঃখ পেলে মানুষকে যেমন দেখতে হয়, তারে ঠিইক তেমন লাগে

নিঃশর্ত সমর্পণ কাঁপে আসরের শিখায়
ছয়টি প্রাণ, যন্ত্রণার ছয়রকম অবয়ব কাঁপে

কে কয় ঈশ্বর নিরবয়ব হয়!

মাঠে মাঠে পূর্ণ শশী ওঠে
ঘরে ঘরে শিল্পী জন্মায়
মেয়েটি তার সিক্ত স্নেহভারে
আমায় সব গুছিয়ে দেয় ব্যাগে

নিরূপ একা শ্মশানঘাট পেরোই
একটি মেয়ে ঘুঁটে তুলছে হাতে
ঝুড়ি ভরছে মায়ার অছিলায়
সংসারের দীর্ণতাই গোছায়

ছাগলশিশু কয়েকখানি শিশু
একলা শিশু টুকরো শিশু হাসে
করুণ এক খোঁড়া পায়ের দাদা
বোনের চুলে বাপেরবাড়ি মাখায়

আমরা যারা ভীষণ ভালো নই
যারা মলিন ‘ক্লান্ত প্রাণ এক’
শ্মশানকালী ন্যাংটো হয়ে ডাকে
দুধ দুইয়ে খাওয়াবে আমাদের

পুকুরে বৃষ্টি শুরু হল, সে আমার প্রতীক্ষায় লীন

ডুবকি কান্নায় ভরে ওঠে
ছয় তাপস বুঁদ হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে

বাউল
তুমি টোল খুলেছ রাতের

ঝিঁঝি ডাকছে, ডাকছে দরিয়া

আমি আসছি নবীপুরের পথযাত্রী গ্রামে
বসব লগ্ন হয়ে তোমার ও করতলরেখায়

অভিলাষ বড় অভিলাষ

এ জীবন কাটাব দুজনায়…








 
 
প্রেম-পর্যায়


সন্ধে নামলে আরতি বসবে মন্দিরে
রক্তবসন ঋষির মতন একা
তনুটির কাছে জড়ো হবে উৎফুল্ল
জনগণ, কিছু জনগণ রাত-পোড়া

টাঙানো শিকলি সাজানো আলোর দ্বন্দ্ব
মহিয়সী পেট, আলুর-চালের খিচুড়ি
আরও আছে আজ, বিবস্ত্র ধূপগন্ধ
গুগ্গুল-জ্বালা টিমটিমে হরিনাভি

কারা যে মানুষ, কারা নয়— তা তো বোঝাই যায় না আঁধারে
মিশে থাকে শুধু শরীরে শরীর, মিশে থাকে ছেঁড়া কাঁথাতে

ছোটখাটো চোখ, জিভের আগায় তেঁতুলটকের টংকার
এ্যাগনায় বসে বালখিল্যরা, বাবার পিঠের সওয়ারি

দূরে প্রান্তর, মাঠ বলি তারে
দূরে মাঠ আর প্রান্তর
কুয়াশার মতো বালক-বালিকা
শিশিরের মতো শৈশব

মেতেছে জুয়ায়, মজেছে আদর ওড়ানোর উদ্ভাসে
মরে আছে যারা, তাদের কি আর ঠাকুর মারতে পারে!

এসো এসো সব, শুরু কলরব, এসো এসো চা ও কেটলি
আহা সই সই, বলো চৈ চৈ, পাশেই স্বর্গ রেখেছি
বস না রে মন, নিকুঞ্জবন, বস না ফুলের আড্ডা
ঢং ঢং বাজে আকাশের পারা, মন্দির আর লজ্জা

পাশরি সকলি জীবনের গীতি, সকলি দিয়েছি ওঁর পায়ে
পবিত্রতর তরুণী-পাখির মনকেমনের নিরাময়

চলিছে পূজার আয়োজন আর জ্বলিছে পুজোর অঙ্গ
এখানে এসেই মিশে গেছে সব, অলীক জলের ছলছল

নদীময়ী দেশ, মফস্বলের, হৃদয়ে জমছে আজকে
রাত্রি গোপন, প্রেমের মরণ, ঈশ্বর তুমি— আর কে!

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত