| 6 অক্টোবর 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা । মোহন দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

 

 

কয়েকটা শতাব্দী

একটা বছর পার হয়ে গেল অথচ দেখো মনে হয় যেন

কয়েকটা মেঘাচ্ছন্ন নিঝুম রাত্রি জাগলাম,

তবুও সেদিন প্রত্যেক মুহূর্ত ছিল একএকটা শতাব্দী

যেন প্রভাতের প্রতীক্ষায় মুখ চেপে সহ্য করে যাচ্ছি

অযুত জন্ম-মৃত্যুর ব্যাথা।

 

তাই এখন আর উষ্ণ আলোক স্পর্শ পেতে

ভোর রাত জাগি না

ঘুমোই না রাতের শীতলতার সুখ ছুঁতেও।

 

শুধুই সংখ্যা গুলি প্রত্যেক চাওয়া না পাওয়ার মরিচা ধরা প্রলেপের

যদি কখনও একদিন অশ্রু-জলেও

জীবনের রং ফিকে হয়ে যায় –

নিজেকে বিলীন হতে দেখব ধীরে ধীরে

কেবল এটুকুই।

 

 

 

জানালায় চোখ গুঁজে

 

(১)

কখনও একদিন হয়তো বা মাঝরাতে

আমার স্বপ্নের মতো তুমি এসে যদি দুয়ারের কড়া নাড়ো –

তাই রোজ রাত জাগি; জানালায় চোখ গুঁজে।

 

আমার ঘুম গুলো গেছে উড়েশুভ্র বলাকার বেশে

রক্তিম দিগন্তের স্তব্ধ নদীর ওপারে।

 

যেখানে তুমি লুকিয়ে থাকোশাল মহুয়ার বনে

কচি ঘাসেদের উপর; সুগন্ধি বাতাসে।

 

(২)

বহু বছর কেটে গেছে আমার নিদ্রাহীন রাত্রি

শিয়রে জমানো গোপন চিঠির খামে,

তুমি আসোনি একটিবারও কখনই কোনদিন।

 

তবু আজও ভাবি,অস্তমিত সূর্য নদীর ভিতর ডুবে গেলে

কখনও একদিন হয়তো বা মাঝরাতে,

আমার স্বপ্নের মতো তুমি এসে – দাঁড়াবে দুয়ারে।

 

তাই আজও করুণ চোখে চেয়ে আছিখোলা জানালায় চোখ গুঁজে।

 

 

 

 

রুচিরা ঘুমওনি হয়তো

 

রুচিরা ঘুমওনি হয়তো বা

ঘুমের আড়ালে চোখ গুঁজে বসে আছো

ব্যালকনির পাশে,

রুচিরা তোমার আরষ্ঠ চোখের পাতায়

যে কঠিন স্বপ্নের ঘ্রাণ বেঁচে আছেতা আমি পেয়েছি;

নিঝুম রাত্রি মেখে বঙ্কিম বাতাসে।

 

হয়তো বিছানার শির-চুমে

জাপ্টে ধরে শুয়েছ; প্রেমিকের বুক পুরনো অভ্যাসে,

রুচিরা আমার নিদ্রাহীন রাত্রি যাপন,

কিছুতেই ঘুম না আসে।

 

 

 

 অ-দৃষ্ট প্রণয়

 

কবিতা আসে এক চিলতে জ্যোৎস্নার মতো

জাগিয়ে তোলে তন্দ্রাচ্ছন্ন রাত

শিশির ভেজা ঘাসে দেখি পদচিহ্ন তার,

কবিতা আসে প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো

আমার নিস্তব্ধ শহর ভরে যায় তার চুলের গন্ধে।

কবিতা আসে হাজার নক্ষত্র হয়ে

কবিতা আসে নীল পাখি হয়ে

আমি দেখেছি বহুবার; কবিতা আসে কবিতা যায়

 

অথচ হৃদয়ের বাইরে কোথাও খুঁজে পাইনি তাকে,

কবিতা আসে কবিতা যায় কতবার

আমি ছুঁয়েছি তার নূপুর;

ধরেছি অনেকবার তাকে

 

শুধু এইহৃদয়েইঅন্তর দিয়ে অন্তরে।

 

 

 

 অলীক স্বপ্ন তোমার

 

এই সেদিন ঘাস মাটি উঠোন বারান্দা সাজল তোমার পায়ের রঙে

এই সেদিন বৈশাখী মেঘ ঢেকে দিলো তোমাকে –

বৃষ্টির ছাটধুয়ে দিলো আলপনা।

 

এই সেদিন আধভেজা – খোলা চুলে গুনগুন শব্দে তোমার

সকাল গুলো হাসতে হাসতেই হারালো সন্ধ্যায়,

এইতো সেদিন তোমার ছায়ার প্রতিচ্ছবি-কে

জ্যোৎস্না ভেবে মাখলাম গায়ে।

 

এই সেদিন বিকেলের রোদে ফুলের মতো দুলছিলে মাধবীলতা গাছে

এইতোসেদিন নীল বাতাসে পেলাম তোমার সুগন্ধি পালক,

 

এইতো সেদিন পদ্মপুকুরে জলের ভিতর পদ্ম তুমি

এইতো সেদিনই মাঝ রাতের আকাশে বাজলো তোমার দুই নূপুর।

 

যদি আজ অলীক মুখে মৃদু হেসে বলো এসবই ঘুমঘোর,

অলীক স্বপ্ন আর কল্পনা আমার!

তবে বলো বনলতা সেন, বদলে যাবে কীভাবে

তোমায় ছুঁয়ে যাওয়া এ পৃথিবীর -আকাশ, বাতাস, জল আর মাটি?

 

 

 

 

এভাবেই তবে হোক

 

এভাবেই তবে হোক তোমার আমার

রাত্রিযাপন; নিদ্রাহীন সহবাস,

এভাবেই তবে হোক ভালবাসা-বাসি

দীর্ঘদিন দীর্ঘ বরষ মাস।

 

এভাবেই তবে হোক পাশে বসা-বসি

অলীক সুখ যদি আসে,

এভাবেই তবে হোক ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা

অপরিণত সবুজ ঘাসে ঘাসে।

 

এভাবেই তবে হোক সংসার আমাদের

এক উঠোন ফুটে উঠুক স্বপ্নের ফুল,

এভাবেই তবে হোক মনের কথা বলাবলি

হাত ধরাধরি; ছুঁয়ে দেওয়া তোমার চুল।

 

 

 

নিস্তব্ধ রাতের আলোকে

 

রাতের টেলিফোনে তুমি আসোনা আর

শীতল নগ্ন রাতে বসন্ত নামাতে,

টিকটিকঘড়ির শব্দ ঘাম ঝরায় না আজ থমকে গিয়ে

ছুটে চলে ক্লান্ত পায়ে পায়ে সকাল আনতে

তন্দ্রাচ্ছন্ন টেবিল ল্যাম্প একাকী কাঁপে।

 

চোখ বুজলেই চির আঁধার, মৃতের মতো

একটি মন – একটি শরীর – একটি প্রেম নিয়েখেলা করে পৌষ মাঘ।

বাষ্প হয়ে উড়ে যাওয়া যৌবন সাগরের জল

আজ বৃষ্টি হতে চাই আমার চোখে,

আমি রাতের আঁধারে মেঘ খুঁজি মন আকাশে…

                                                     হঠাৎ মনে পড়ে

আমার হৃদয়টা রয়ে গেছে তোমার বাড়ি।

 

এখন শূণ্য বুক নিয়ে বালিশের নিচে মুখ গুঁজে

স্বপ্ন দেখার চেষ্টায় মাতি…

কখনও ঘুমিয়ে পড়ি, কখনও জেগে উঠি

                                 কখনও আবার টেলিফোনে কান পাতি।

 

 

 

কবিতা মালা

 

তুমি চলে গিয়েছিলে তাই –

নিদ্রাহীন রাত গুলোতে ব্যাথার ভাষা খুঁজছিলাম

বিরহ বেদনার সাথে

          একান্ত একাগ্র চিত্তে।

কখন যে ভোর হয়ে যায়

দু’চোখে কালশিটে পরে যায় দেখি না কিছু

হায়! উপবাস কত দিন।

 

যেদিন মৃত প্রায় –

মুখের ভাষা হারিয়ে ধরা দিলো মনের ভাষা

দেখি এক একটা জীবন্ত অক্ষর

           ডায়েরির পাতা জুড়ে।

বেনি সুতোই গাঁথলাম তাঁদের একের পর এক

                 তোমার গলায় পরাবোবলে।

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত