| 6 অক্টোবর 2024
Categories
লোকসংস্কৃতি

গৃহস্থের ঘর থেকে হারিয়ে গেছে তালপাতার হাতপাখা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

বিলুপ্তির পথে হাতপাখা (Taalpatar Pakha)। বর্তমানে প্লাস্টিকের হাত পাখা প্রচলন হলেও তালের হাত পাখা বা খেজুর পাতা, কাপড়ের তৈরি পাখার মর্যাদা নিতে পারেনি। 

হাতপাখার বিবর্তনের ইতিহাস আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে। এমনকি গ্রিক রোমানদের যুগেও এই হাতপাখার প্রচলন ছিল। প্রথম দিকটায় পাখাগুলো ছিল একটা সম্পূর্ণ অংশ। ভাঁজ বা ফোল্ডিং পাখা এসেছে আরো অনেক পরে। ইউরোপীয় বণিকরা প্রথম এই ধরনের পাখা নিয়ে আসে চীন ও জাপান থেকে।

তখন এসব পাখা বেশ দুর্মূল্যই ছিল। এগুলোতে ব্যবহার করা হতো মণিমুক্তো ও হাতির দাঁত। সোনা-রুপোর পাত বসানো হাতপাখাগুলোয় নিপুণ হাতে শিল্পীরা আঁকতেন সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক চেতনা কিংবা ধর্মীয় নানা কাহিনী, ফুল লতাপাতাসহ সমসাময়িক নানান বিষয়াবলী। আঠারো শতকের গোড়া থেকে ইউরোপে হাতপাখা তৈরি শুরু হয়। তবুও চীন থেকে আসা পাখার আবেদন তখনও ছিল তুঙ্গে। লন্ডনের গ্রিনউইচের এই মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে যে পাখাগুলো স্থান পেয়েছে তার ঐতিহাসিক মূল্যও প্রচুর। হেলেন অফ ট্রয়, আইভরি পার্ল ফন্টেজ, ট্রাইফোল্ড প্রভৃতি ৩,৫০০ এর কাছাকাছি দুষ্প্রাপ্য সব হাতপাখা রয়েছে এই জাদুঘরের সংগ্রহশালায়, এমনটি জানান জাদুঘরের পরিচালক ও কিউরেটর হেলেন আলেকজান্ডার।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এই ইংরেজ আমলে এমন কি ইংরেজ আমলের পরেও জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে এ ধরনের পাখা টেনে বাতাস করার ব্যবস্থা ছিল। তখন এ কাজের জন্য সরকারি কর্মচারীও নিযুক্ত ছিল। আর আজকের দিনের মাননীয় বিচারকেরা কি আরামে আছেন, সর্বক্ষণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে, গাড়িতে, আদালতে থাকেন।
এখন এই ধরনের পাখা অনেক কম দেখা যায়। তবে গ্রাম বাংলায় হাত পাখার কদর এখনো কমে নি। কৃষক মাঠে কাজ করছে, আর ওনার স্ত্রী ওনার জন্য খাবার নিয়ে আসছে এবং সাথে একটি হাত পাখা। কৃষক খাচ্ছে আর গৃহবধু হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। এই ছবি যেন মনে দাগ কেটে যায়। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাখার মতো যে পাখা সেটি রঙিন সুতোর ‘নকশি পাখা’। অনেকটা নকশিকাঁথার মতো। তবে পাখার জমিন যেহেতু ছোট, সেহেতু সেখানে কারুকাজের সুযোগও কম। তবে সুতো দিয়েই পাখার গায়ে পাখি, ফুল, লতা-পাতা কিংবা ভালোবাসার মানুষের নাম অথবা ভালোবাসার চিহ্ন ফুটিয়ে তোলা হয়। পাখার বাতাসে প্রাণ যেমন জুড়ায়, তেমনি বাহারি সব পাখা দেখে চোখও জুড়ায়।কত রকমের পাখা থাকতো সেই সময় বাড়িতে, কাপড়ের পাখা, বাঁশের চাটাইয়ের রঙিন পাখা, তালপাতার পাখা, ভাজ পাখা, চায়না পাখা, ঘোরানো পাখা। প্রচণ্ড গরমে তাল পাতার পাখা জলে ভিজিয়ে সেই হাওয়ার মিষ্টতা আজকের এসি তে থাকা মানুষ বুঝবে না।

তালের হাত পাখার বাতাস প্রাণ জুড়িয়ে দেয়, বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট তো আছেই। তাই হাত পাখার প্রচলন কমে গেলেও শেষ হতে পারেনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত