| 13 ডিসেম্বর 2024
Categories
গীতরঙ্গ

সাপ্তাহিক গীতরঙ্গ: গীতরাগ সংখ্যা’র সম্পাদকীয়

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

সুরের মাধ্যমে যে আমাদের হৃদয়কে আন্দোলিত করে সে সংগীত। সংগীত আসলে কী? এই নিয়ে নানান মত রয়েছে। রয়েছে নানান সংজ্ঞা। প্রচলিত সংজ্ঞাটি হলো গীত, বাদ্য, নৃত্য এই তিনে মিলে সংগীত। কিন্তু সংস্কৃত ভাষায় প্রণীত গ্রন্থাদি থেকে যে সংজ্ঞাটি পাওয়া যায়- “গীতং বাদ্যং তথা নৃত্যং ত্রয়ং সজ্ঞীতমুচ্যতে” ভাষার সামান্য একটু হেরফের করে এর অন্যবিধ রূপও আছে, যেমন “গীতং বাদ্যং তথা নৃত্যং ত্রিভি:সজ্ঞীত মুচ্যতে”। “গীতং বাদ্যং তথা নৃত্য“ সজ্ঞীতমুচতে” এবং গীতবাদিত্র নৃত্যানাং ত্রয়ং সজ্ঞীতমুরচ্যতে” এই রকম আরো সজ্ঞা রয়েছে। তবে অর্থ বিচারে সবগুলোই অভিন্ন। কিন্তু সংস্কৃতে পাওয়া এই সংজ্ঞাকে একটি অংশ ধ্রুব জ্ঞান করলেও মানতে চাননি আরেকটি অংশ। তাদের কেউ বলছেন, নৃত্য, গীত, বাদ্য এই তিন কলার একত্র সমন্বয়কে সংগীত বলে। আবার নারদ রচিত সপ্তম থেকে একাদশ শতকের সংগীতমকরন্দ গ্রন্থে যে ভিত্তি পাওয়া যায় তা প্রায় একই রকম। এই গ্রন্থে সংগীত শব্দটির ব্যাখ্যায় উদাহরণ হিসেবে গীত বাদ্য ও নৃত্যের উল্লেখ করে তাদেরকে সমগোত্রীয় বলা হয়েছে। পার্থক্য এটুকুই। আরেকটি পক্ষ বলছেন, নৃত্য কেন সংগীতের অংশ হবে? এটি কোন ভাবেই সংগীতের অংশ হতে পারে না। উদাহরণ টেনে বলছেন, তানসেনকে যদি সংগীতজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে তিনি গাইবার কালে কোথায় নাচতেন? এ কথাও ফেলে দেয়া যায় না। এদিকে পাশ্চাত্যের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে  The universal Dictionary তে মিউজিকের যে সংজ্ঞা দেয়া আছে -সেটাকেই তারা জানে এবং মানে। সেই সজ্ঞাটি হল- `Music is The Art of Combining sounds for reproduction by voice or by Instruments, so as to affect emotion’ এই সংজ্ঞা বিচারে গীত, বাদ্য অবশ্যই সংগীত কিন্তু নৃত্য নয়। তাহলে সংগীতের নিঁখুত সংজ্ঞা আসলে কী? পাশ্চাত্যের হাত ধরেই এসেছে সংগীতের সেই নিঁখুত সংজ্ঞা। “যন্ত্রে বা কন্ঠে পরিবেশনের জন্য ধ্বণি দ্বারা নির্মিত শিল্পকে সংগীত বলে।” এই অবধিই থাকুক। এই সংগীত নিয়ে তত্ত্বকথা, সংজ্ঞা, ব্যাখ্যায় আমরা আর না যাই। এই নিয়ে বড় বড় মনীষীদের বিস্তর আলোচনা সমালোচনা আছে। খোঁজ করলেই জানতে পারা যাবে।

মোটকথা হল সংগীত বা গীত আমাদের প্রাণের সুধা মেটায়। মানুষের জটিল যাপনে মনের খোরাক জোগায়। ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ মন-প্রাণ শান্ত করে নতুন আশার আলো জাগায়। আমরা বরং এই সুযোগে জানিয়ে দেই ইরাবতীর সাময়িকী গীতরঙ্গ’র এ সপ্তাহের আয়োজন “গীতরাগ”।

সঙ্গীতের বিশালতাকে এই ক্ষুদ্র প্রয়াসে ধরা খুব কঠিন তবু ও আমরা চেষ্টা করেছি স্পর্শ করার। সুধীর চক্রবর্ত্তীর বক্তব্য কে অনুলিখন করে রবীন্দ্র সঙ্গীতের স্বাত্বন্ত্র্য কে যেমন নতুন করে পেয়েছি তেমনি ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়, অদিতি ফাল্গুনীর লেখায় পেয়েছি অন্য রবীন্দ্র সঙ্গীতকে। অমিতাভ পাল বাংলা গান কে দেখেছেন অন্য চোখে সেখানে ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় আলো ফেলেছেন সাত দশকের বাংলা গানের উপর, তরুণ মুখোপাধ্যায় কলকাতার গান নিয়ে লিখেছেন। সঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক মৌসুমী ভৌমিক খনন করেছেন অনন্য এক বাউল ইতিহাস, কবি শ্রীজাত হারিয়ে যাওয়া ক্যাসেট যুগের স্মৃতিচারণ করছেন আবার মেতে উঠেছেন আলাপে শ্রীকান্ত আচার্যর সাথে। মণিকা চক্রবর্তীর পথ ধরে শিল্পী আদিত্য বসু স্মরণ করেছেন সঙ্গীত গুরু নীলোৎপল সাধ্যকে, হারিয়ে যাওয়া সারি গান নিয়ে লিখেছেন সঞ্জয় সরকার। দামোদর নদের নিজস্ব লোক সঙ্গীত ময়ূরপঙ্খী গান নিয়ে লিখেছেন পলাশ চন্দ্র পোড়েল, টুসু গান নিয়ে শৌনক দত্ত ও তপন কুমার সেন।

হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস থেকে রূপচাঁদের কথা ও বিলুপ্ত প্রায় একটি সঙ্গীত ধারার কথা লিখেছেন, সংগ্রামী লাহিড়ী ও সৌরভ দত্ত এবং তুষার বসু। বাংলার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ঘরানা নিয়ে লিখেছেন শমিষ্ঠা ও কুমকুম চক্রবর্তী, সয়লা ও মনসা ভাসানের গান নিয়ে লিখেছেন সৌরভ দত্ত, দ্যা বিটলস,বেটোফেন, আমার লেখা ভাটিয়ালি গান সহ আরো অনেক লেখা থাকছে এই সংখ্যায়। পাঠকের ভালো লাগলে আমাদের পরিশ্রম সার্থক। এই সংখ্যার সকল লেখক সহ ইরাবতী টিমকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

  

অলকানন্দা রায়

সম্পাদক, ইরাবতী

০৮ আগষ্ট,২০২১

 

 

 

 

 

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত