প্রাচীন ও আধুনিক টুথপেস্ট
প্রাচীনকালের টুথপেস্ট হিসেবে ব্যবহার হতো ডিমের খোসা এবং লবণ—এবং আধুনিক টুথপেস্টেও প্রাচীনকালের চেয়ে পার্থক্য কিছু নেই। আপনারা কি আপনাদের দাঁত লবণ এবং গোলমরিচ দিয়ে পরিষ্কার করেছেন? করেছেন কি ছাঁই দিয়ে?
ছোটকালে সক্কালে মা যখন ঘুম হতে ডাকে দাঁত ঘষার জন্য চিৎকার করতো, তখন মনে হতো এই কাজটার প্রতি বিরক্ত লাগতো। বিরক্ত লাগার কারন হচ্ছে আশপাশের মানুষ টুথপেস্ট ও ব্রাস নিয়ে দাঁত ঘষতো, আর আমাদের ঘষতে হতো রাতের রান্না করা কাঠ-কয়লা দিয়ে, তাতে দাঁতের ফাঁকে কালো কালো কয়লার টুকরা ঢুকে যেত এবং মাঝে মাঝে বেশ অস্বস্ত্বিকর হতো। তাই নিমের ডাল ভেঙ্গে দাঁত ঘষতাম। কিন্তু নিমের ডাল তো সব সময় পাওয়া যেত না। অগত্যা ছাঁই!!! কিচ্ছু করার নেই, গরীবের ঘরে জন্ম হয়েছিল বলেই, অহ হ্যা, ওটা এখন কষ্টের নয়, শেখার অনেক কিছুই ছিল।
এখন টুথপেস্টের বিজ্ঞপ্তিতে দেখি টুথপেস্টে চারকোল যুক্ত করা অর্থাৎ সেই কাঠ-কয়লা। মনে হতে হচ্ছে ছোটবেলা চারকোল বা কাঠ-কয়লা দিয়ে দাঁত না ঘষলে, এখন এই বিজ্ঞপ্তিটার মূল্য বুঝতাম না। আপনাদের আমার মতো অভিজ্ঞতা থাকলে, টুথপেস্ট নিয়ে নিম্ন সামান্য ইতিহাসটা পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি হতাশ হবে না। এই বিষয়টা নেওয়া হয়েছে এখান থেকে। যদিও ইতিহাসটা ইরোপের। কিন্তু একই অর্থাৎ আলাদা তেমন কিছু নেই।
যদি আপনার ব্যবহৃত টুথপেস্টটি আসতো টিউব থেকে, এটা বেশ উদ্ভট বা অস্বস্তিকর শোনাতো। কিন্তু কয়েক শতাব্দী ধরে মানুষ তাদের মুখ পরিষ্কার করেছে এই কয়েকভাবে, এবং তাদের টুথপেস্ট আমাদের আধুনিক সুপারস্টোর থেকে কেনা টুথপেস্ট থেকে আলাদা কিছু ছিল নয়।
পুরাতন বা আগের টুথপেস্ট গুলোয় ব্যবহার হতো ঘষে তুলে ফেলতে সক্ষম এমন উপাদান যেমন লবণ, ছাঁই,–দাঁতের চটচটে তরল পদার্থটা ঘষে উঠাতেও এই টুথপেস্ট ব্যবহার হতো। আজকের টুথপেস্ট তৈরি হয় ঐ একই কাজ করতে। কিন্তু আধুনিক ঘষাঘষির উপাদান যেমন জলশুষ্ককারী সিলিকা—যেগুলো নতুন ব্যাগ বা জুতা কিনতে গেলে ছোট ব্যাগে থাকে, শুধু এখানে পানি নেই—এটা আরো নরম অন্তত ডিমের খোসা বা কাঁকড় যুক্ত বালির চেয়ে।
আজকের মতোই আগের টুথপেস্ট স্বাদযুক্ত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে ইজিপশিয়ান এক উপকরণ লবণ, গোলমরিচ, নিম, এবং শুকনো আইরিশ ফুল ছিল। ডেন্টিস্ট হেইঞ্জ নূম্যান ২০০৩ সালে নিজে ব্যবহারের পর টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘তার মুখ তরতাজা এবং পরিষ্কার অনুভূত হয়েছে,’। যদিও উনার মারি হতে রক্ত ঝড়ছিল, এবং আরো বলেন “এই উপকরণ পররবর্তীতে কিছু সাবান ব্যবহৃত টুথপেস্টে বেশ ভালকাজে দেখা গেছে”, এসব টুথপেস্ট অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তৈরি করা হয়েছিল।
ইংল্যান্ডে ১৪ এবং ১৫ শতকে, অনেক সাধারণ দাঁত পরিষ্কারকারী হিসেবে একটি ছিল মধু-মিশ্রিত, লবণ এবং রাইয়ের গুড়া অথবা রাই, বলেন মার্থা কার্লিন- একজন ইতিহাসের প্রফেসর (ইউনিভার্সিটি অব ইউসকান্সিন-মিলোইক)। সুগন্ধ এবং উপাদান গুলোকে একত্রে ধরে রাখার উদ্দেশ্যেই এই মধু ব্যবহার হতো।
সেই সময়ের আরেকটি মোটামুটি সাধারন উপকরণ ব্রুম গাছের কয়লাতে মিশ্রিত দগ্ধ ফিটকিরি। এর ফলে এটা হতো কালো, এবং ছাঁই এর মতো ‘টুথ পাউডার’ তা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা হতো। তবে লবণ-মধু-রাই মিশ্রিত দাঁত পরিষ্কারকারী উপদানের মতো হতো না। কার্লিন বলেন ‘আমার ধারণা ঐ উপাদানটি বেশ ভালই স্বাদযুক্ত ছিল”।
যদিও বেশীরভাগ মধ্যযুগের দাঁত পরিষ্কার করার উপায় পেস্ট বা পাউডারের জন্যই, কার্লিন আরেকটা বিষয় খুঁজে পেয়েছেন এবং বলেন ‘ মধ্য ইংল্যান্ডে দাঁতকে ঝকঝকা ও সাদা করতে এক ধরণের আঠালো গাছের শেকরের ছাল নেওয়া হতো এবং তা দিয়ে দাঁত ঘষা হতো”। উপকরণটিকে মেডিটেরিয়ান গাছ বলা হতো কারন এই অঞ্চলের মানুষেরা অনেক আগে হতেই তাদের মুখের তাজা নিঃস্বাস নিতে ব্যবহার করতো।
ব্যাপকভাবে প্রথম টুথপেস্ট তৈরি করা হয় ১৮৭৩ সালের কোলগেট ব্রান্ডের নামানুসারে। তখন এই পেস্ট জারের মধ্যে থাকতো। দুই দশক পর কোম্পানিটি কলাপসিবল টিউবে করে বিক্রি শুরু করেছিল। এর পর বাড়ির তৈরি দন্তত মাজনের পরিবর্তে এই টুথপেস্ট ঔষধের দোকানে পাওয়া যেত। এখন আপনি হয়তো অনেক সুগন্ধ যুক্ত আপনার পছন্দীয় টুথপেস্ট ব্যবহার করেন।
আধুনিক নতুন স্বাদের টুথপেস্ট যেমন চকোলেট অথবা দারুচিনি এগুলো রোমান যুগের টুথপেস্ট বা দন্ত মাজনের মধ্যে পার্থক্য নেই, হয়তো আগের এগুলো স্বাদহীন মনে হয়, কিন্তু কাজ একই। এমোনিয়ায় সাদাকরণ দাঁত দেখলে আপনার বেশভাল লাগতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন, এই এমোনিয়া উৎপাদন হয় আমাদের মুত্রের মাধ্যমেই। এর অর্থ রোমানরা যা ব্যবহার করতো সেগুলোই ভাল ছিল, কি বলেন আপনারা?