| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
শিশু-কিশোর কলধ্বনি

অনলাইন ক্লাস

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
 
দ্বিতীয় শ্রেণি,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজ,
রাজশাহী।

 

 

রাতের খাবারের পর স্কুলের ব্যাগ গোছাচ্ছে চন্দ্রা। এমন সময় মা বললেন, ‘’কাল থেকে স্কুল বন্ধ, যাক বাবা কয়টা দিন একটু আরাম করা যাবে!’’ স্কুল ছুটি কেন আম্মু? চন্দ্রার অবাক প্রশ্ন। উত্তরেমা বললেন, একটা ভয়ংকর ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করছে, তার জন্য কিছুদিন স্কুল বন্ধ। মন খারাপ করে চন্দ্রা ভাবলো, “ইস কাল থেকে আর বন্ধুদের সাথে মজা করা যাবে না!  স্কুল বন্ধ হলে মা যে  কেন এত খুশি হয়? আমার একটুও ভাল লাগে না।’’ তবে খুব সকালে উঠতে হবেনা ভেবে  বিছানায় গিয়ে ওর মনটা ভাল হয়ে গেলো।

পরদিন সকাল নয়টায় বেজে গেছে দেখে মা ডাকাডাকি শুরু করলেন। লক্ষ্মী মেয়ের মত চন্দ্রা উঠে পড়ল। কিন্তু মা অফিস যেতে না যেতেই শুরু হলো ইচ্ছেমত খেলা, কার্টুন দেখা।  বুঝতে পেরে একদিন মা খুব রেগে গেলেন, তারপর নরম করে বুঝিয়ে বললে, “এসময়  কত কিছু করা যাবে, বেশি কার্টুন না দেখে একটু পড়াশোনা, কত কত গল্পের বই পড়া, ছবি আঁকা  আর মজা করে কবিতা পড়া।’’

কিন্তু এসব করেও চন্দ্রার কিছুতেই সময় কাটে না। স্কুলের মাঠ, বন্ধুদের কথা ওর খুব মনে পড়ে। সকাল সন্ধ্যে একই প্রশ্ন মাকে-কবে স্কুল খুলবে, কবে বাহিরে যাওয়া যাবে? মা বলে, কোয়ারেন্টাইন- লকডাউন, কী  সব  নাকি  হচ্ছে। মা ও আর বাহিরে যায় না। অফিস বন্ধ। রাতে টিভি দেখতে বসলেই মা শুধু খবর দেখে আর চিন্তা করে।

চন্দ্রা ভাবে, ‘’আমরা কী এখন রুপকথার গল্পের মতো রাক্ষস রাজ্যে বসবাস করছি?বাসা থেকে বের হলেই খপ করে ধরে ফেলবে?’’ কয়েকদিন পর ’আঁকা আপ্পি’ এসে চমকে দিল সবাইকে। চন্দ্রা এবার বেশ খুশি। বড় ফুপ্পির মেয়ে আঁকা আপ্পিকে ওর খুব ভাল লাগে। আঁকা আপ্পি যা মজা করে, আম্মু সেসব পারেই না।

একদিন আঁকা আপ্পি বললো, চল ছাদে যাই, ঘুড়ি উড়াবো, ছাদে তো আর সোস্যাল ডিসটেন্সিংয়ের ব্যাপার নেই। শুনে চন্দ্রা লাফিয়ে উঠলো আর বললো সোস্যাল ডিসটেনন্সিং কী, আর কোয়ারেনটাইন-ই বা কী আপ্পি? ছাদে গিয়ে আপু বুঝালো, “কোয়ারেন্টাইন মানে জীবানু থেকে দূরে থাকা আর অসুস্থ মানুষ থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকা হলো সোস্যাল ডিসটেন্সিং।”

অনেক দিন পর খোলা আকাশ, চারিদিকে কত রং-বেরংয়ের ঘুড়ি দেখে খুব আনন্দ হলো চন্দ্রার। কোন ঘুড়ি প্রজাপতির মতো, কোনটা মাছের মতো। কিন্তু ওদের বানানো চারকোনা ঘুড়িটা কিছুতেই উড়াতে পারলো না। তবুও ওরা অনেক দিন পর একটা সুন্দর বিকেল কাটালো। সব বুঝতে পেরে চন্দ্রা আর বাহিরে যাবার জন্য বায়না করেনা। আপ্পির সাথে মজার মজার কাজ করে ওর ভালই সময় কেটে যায়।

সেদিন মা ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে, মনে হলো সায়নের মা মিলি আন্টির সাথে। সায়ন চন্দ্রার আগের স্কুলের বন্ধু। কতদিন সায়নের সাথে কথা হয় না! মা বুঝতে পেরে ফোনটা চন্দ্রাকে দিল। ওপাস থেকে সায়ন গল্প শুরু করলো, “জানো আমাদের ’হাফ ইয়ারলি’ পরীক্ষা শেষ, এখন সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা!” শুনে চন্দ্রার মুখটা চুপশে গেলো। মিনমিন করে ও বললো, “স্কুল যে বন্ধ,  তোমাদের পরীক্ষা কীভাবে হলো?” সায়ন বললো, অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছি, আমরা তো ক্লাসও করেছি কম্পিউটারে।

সায়নের স্কুলের কথা শুনে মন খারাপ করে ফোন রেখে দিল চন্দ্রা। মনে মনে ভাবতে লাগলো আমি কী তবে সায়নের মত নতুন ক্লাসে উঠতে পারবো না? হঠাৎ কান্না পেয়ে গেল চন্দ্রার। কাছে এসে মা জড়িয়ে ধরলে চন্দ্রার গাল ফোলানো প্রশ্ন: “তুমি কেন আমাকে আগের স্কুলে রাখলেনা, এই স্কুলটা পঁচা, ইত্যাদি ইত্যাদি।” কিন্তু একটা প্রশ্ন আম্মুকে ভাবিয়ে তুললো, কোন বাচ্চা পরীক্ষা দেবে; কোন বাচ্চা পরীক্ষা দেবে না; একই দেশে এ কেমন নিয়ম?

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত