আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
রায়দীঘির জমিদার নরেন্দ্র সুন্দরের বাড়িতে নহবত বসেছে। একমাত্র ছেলে সৌম্য সুন্দরের বিয়ে।চার মেয়ের পর এই ছেলে ,যেমন নাম তেমন ই ধপধপে রং খুঁত একটাই বাঁ পা একটু খাটো,পা টেনে চলে, তা যাহোক জমিদার গিন্নী বলেন সোনার আংটি আবার বাঁকা , ছেলের বুদ্ধি ও সেরকম পাকাপোক্ত নয় তাই গিন্নী মা একটি সুলক্ষণা বৌ এনে ছেলে কে সংসারী করতে চান। গুরুদেবের সঙ্গে আলোচনা করে কুষ্ঠি দেখে বৌ আনা হচ্ছে ,সোনাডিহা গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের অপরূপ সুন্দরী মেয়ে কিন্তু বোবা — অবশ্য গুরুদেব বলেছেন – সংসারে বোবা বৌ আনা ই সব দিক থেকে সুলক্ষণ । নতুন বৌ সুরঙ্গমা সত্যি তাই ,দাস দাসী থাকলেও ঘর সংসারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে ।টানা টানা দুই চোখে মনের কথা বোঝাবার অনেক চেষ্টা করে ঠিক ই কিন্তু জমিদার বাড়িতে মেয়ে বৌ দের চোখের ভাষার আবার কে কবে দাম দিয়েছে। দেখতে দেখতে বছর তিনেক কেটে গেল, সুরঙ্গমার কোন সন্তান হয়না – জমিদার বাড়িতে অশান্তি র কালো মেঘ। এত বিষয় সম্পত্তি উত্তরাধিকার না থাকলে কে ভোগ করবে! শহর থেকে নাম করা মহিলা ডাক্তার আনা হল । ডাক্তারনীর কথা শুনে জমিদার গিন্নী র মাথায় হাত – কি আশ্চয্যির কথা , ডাক্তারনী বলে কিনা বৌমার কোন দোষ নেই ছেলের ডাক্তারী পরীক্ষা দরকার। অন্দরমহল বারমহলে সবাই কত মস্করা করছে – পুরুষ মানুষের আবার দোষ তাই কখনো হয় নাকি? বার ব্রত ঝাড় ফুঁক ইট বাঁধা,তাবিজ কবজ সব হার মেনে গেল। অবশেষে গুরুদেব কে সংবাদ দেওয়া হল। গুরুদেব বয়স্ক হলেও অশক্ত নন, ডাক পেয়েই এলেন সন্তান কামনার মহাযজ্ঞ করতে। দুদিন ব্যাপী বিরাট যজ্ঞ,নামগান, দরিদ্র ভোজন হল, তৃতীয় দিনে তিনি গিন্নী মা কে বললেন বৌমার শুদ্ধিকরণ না হলে দোষ কাটবে না, সারারাত একা সুরঙ্গমা কে নিয়ে শুদ্ধিকরণ যজ্ঞ করবেন ,কেউ যেন বিরক্ত না করে । ভক্তিতে গদগদ হয়ে সকলেই মত দিল। রাত্রি বেলা শাশুড়ি মা সুরঙ্গমার হাত ধরে ঠাকুর ঘরে পৌঁছে দিলেন শুদ্ধিকরণের জন্য। বন্ধু বান্ধব নিয়ে সৌম্যসুন্দর তখন বারদালানে কবিগান শুনতে ব্যস্ত।
কয়েক মাস যেতেই জমিদার বাড়িতে আনন্দের খবর .. গুরুর আশীর্বাদ ফলবতী হল। ঠাকুর দালানে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা হল তারই সঙ্গে সুরঙ্গমার আদর যত্ন ও বেড়ে গেল ।
ধাই মাকে খবর দেওয়া হয়েছে। শাঁখ বেজে উঠলো। জমিদার মশাই নাতি হওয়ার আনন্দে মিষ্টি বিতরণের নির্দেশ দিলেন।
গিন্নী মা সৌম্যসুন্দর কে নিয়ে প্রসূতি কক্ষে এলেন,ধাই সৌম্য সুন্দরের কোলে শিশু কে দিয়ে বলল – দাও দাও ছেলের মুখ দেখানি দাও আর আমার পাওনা টাও। সৌম্য আনন্দে উদ্বেল হয়ে সুরঙ্গমার দিকে তাকালো।সুরঙ্গমার চোখের তারায় আনন্দ আর তৃপ্তির বদলে অপমান আর ঘৃণা ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। সৌম্যর চোখের হাজার ক্যারাটের আলো দপ্ করে নিভে গেল। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল সুরঙ্গমার দিকে ,তারপর অস্থির হয়ে কী যেন খুঁজতে লাগল শিশু টির চোখে মুখে….
গল্প টি পড়া শেষ করে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলল তৃণা , বাবা বললেন – কীরে বই নিয়ে বসে আছিস ,কোর্টে যাবি না?
– হ্যাঁ যাব।
বন্ধ্যাত্বের কারণে তিমির আর ওর আজ মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স হবে, তৃণা বেরিয়ে পড়ল বাড়ি থেকে…
কবি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক,সমালোচক ।দেশ পত্রিকা ও উদ্বোধন সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। কবিতা সংকলন, ছোট গল্প সংকলন, প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশ। পেয়েছেন নানা সম্মাননা।