| 2 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
গদ্য সাহিত্য

মার্কেজের চোখে নারী

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

একটা ককটেল পার্টিতে কোনও এক বিশ্বসুন্দরীর সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেজের পরিচয় হয়েছে।আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে coup de foudre বা প্রথম দেখায় প্রেম।পরেরদিন সাক্ষাতের বন্দোবস্তও হয়েছে।কিছু একটা ঘটার আসন্ন মুহূর্তে দেখা গেল গাবো খরগোশের মতো লেজ গুটিয়ে ছুটে পালাচ্ছেন।

পরে তাঁকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হল।একি তাঁর স্ত্রী মর্সেডিসের প্রতি প্রেম বা পরিবারের প্রতি বিশ্বস্ততা!

মার্কেজ প্রথমেই বললেন বৈবাহিক জীবনের সুখের সঙ্গে এই ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।বিশ্বের সেরা সুন্দরীই যে তাঁর কাম্য হবে তারও যেমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে আমার মনে হয়েছে তাঁর ব্যক্তিত্বের কোনও কোনও দিক ভবিষ্যতে আমাকে এমন মানসিক সমস্যায় ফেলবে যা তাঁর সৌন্দর্য দিয়ে মেটানো যাবে না।মার্কেজের মতে মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কের নিয়মগুলো যদি শুরু থেকেই স্থাপন করা যায় এবং তাঁদের প্রতি যদি অনুগত থাকা যায় তবে মহিলারা অবিশ্বাস্য রকমের অনুগত।সেই বিশ্বসুন্দরী এই সনাতন দাবার চাল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন।তিনি হরেক রঙের ঘুঁটি দিয়ে খেলতে চেয়েছেন।তাই আমার পালিয়ে যাওয়াটা ত্যাগের।বীরত্বের নয়।

অপেক্ষাকৃত কম যন্ত্রপাতির সাহায্যে মেয়েরা জীবনতরী সহজতর ভাবে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারে।টানাপোড়েনের ব্যাপারটা ছেলেদের থেকে মেয়েরা বোঝে বেশি।মার্কেস মনে করেন সারাজীবন ধরে হাত ধরে তাঁর অস্তিত্ব কোনও না কোনও মহিলা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চালিয়ে নিয়েছেন।মার্কেজ মানুষ হয়েছেন নানী-মা ও বহু সম্পর্কের নানীদের মধ্যে।তারপর ছিলেন বাড়ির পরিচারিকারা।স্কুলে শুধুমাত্র দয়াময়ী ও খুব সুশ্রী একজন মহিলার দেখা পাবেন বলে স্কুলে যেতে ভালোবাসলেন।মার্কেজ এমনটাও বোঝাতে চান যে পুরুষ থেকে মহিলাদের সঙ্গে তাঁর সময় বেশি ভালো কাটে।

অনেকে মনে করেন ‘শত বর্ষের একাকীত্বে’ পুরুষেরা গণ্ডগোলের আর মহিলারা শৃঙ্খলার স্থপতি।যেখানে মহিলারা ইস্পাতকঠিন হাতে সামাজিক ব্যবস্থা আঁকড়ে থাকে সেখানে পুরুষ অজস্র নির্বুদ্ধিতায় ইতিহাসকে বিপন্নতার দিকে ঠেলে দেয়।

যদি মহিলাদের ভূতাত্বিক শক্তি থাকতো তবে এত গৃহযুদ্ধ হ’ত না।গাবোর কাছে নানী গল্প করতেন,নানা যুদ্ধে যেতেন, কখন ফিরবেন বা আদৌ ফিরবেন কিনা কোনও নিশ্চয়তা নেই।অথচ নিরুদ্বেগ।ঘরের ব্যাপারটা যেন কোনও বিষয় নয়।পেছন থেকে শক্তি ও কল্পনার জোগান না দিলে পুরুষদের যোদ্ধা হওয়া সম্ভব ছিলনা।ম্যাচিসমো মাতৃতান্ত্রিক সমাজেরই সৃষ্টি।

দুই ধরনের মহিলা আছেন।বংশ বৃদ্ধির জন্য ধরিত্রীমাতা টাইপ যেমন নিঃঙ্গতার উরসুলা ইগুয়ারান।আরেকধরনের মহিলা আছেন অস্থির, নির্জীব বা স্রেফ ছেনাল।মার্কেজের মতে এইসব মহিলারা সামান্য ভালো সঙ্গ, একটু শুভ বোধ বা অল্প ভালোবাসা চায়।একটু কারণ মার্কেজ মনে করেন এদের একাকীত্ব অনারোগ্য।

প্রথম মহিলা দেখে উত্তেজিত হন ছয় বছর বয়সে।বাড়ির পরিচারিকা।পাশের বাড়ি থেকে গানের সুর ভেসে আসছিল।মহিলা খুব সরল মনে বালক মার্কেজকে তার সঙ্গে নাচতে বলে।সেই শরীরের সংস্পর্শে মার্কেজের দেহে বিদ্যুৎতরঙ্গ খেলে যায়।এবং এখনও তা কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

এখন ভিড়ের মধ্যেও কোনও কোনও মহিলা উত্তেজিত করে। তাকে সুন্দরী নয়, আকর্ষণীয় হতে হবে।এক রহস্যময় সংকেত পাঠাবে সেই মহিলা।এতটুকু।ব্যাপারটা এতটাই নিষ্পাপ যে স্ত্রীকেও বলা যায় বিষয়টা।

সারাজীবন ধরে অসংখ্য মহিলা চরিত্র সৃষ্টি করেছেন মার্কেজ।এত মরমি একজন লেখকের মহিলা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি জানতে ইচ্ছে করে বৈকি!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত