| 1 সেপ্টেম্বর 2024
Categories
নারী

বিশ্ব নারী দিবস: আলোর পথে নারী  » পারমিতা চক্রবর্ত্তী

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

আজ আমি দুই অসাধারণ  নারীকে নিয়ে বলব ৷পঞ্চসতীর এক সতী সে৷তার নামও আমরা সবাই প্রায় জানি৷ অহল্যা। অহল্যা এমনই এক স্বাধীনচেতা নারী যার মূল্যায়ন অতীতেও হয়নি বর্তমানে ও না৷ অহল্যা অসাধারণ এক নারী। যার জীবন বয়ে গেছে চরাই, উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে৷ জীবনে বহুবার হতাশা এসেছে কিন্তু সেই হতাশায় মনোবল নষ্ট হয়নি৷রাজপ্রাসাদ থেকে আশ্রম, তারপর নির্বাসন সবটা মিলে অহল্যার জীবন৷ সে জানে না হেরে যেতে। শিক্ষা ছিল তাঁর জীবনে ব্রত। কোন কিছুর বিনিময়ে তাকে ছাড়তে চায়নি৷ সহস্র প্রতিবন্ধকতা এসেছে তার জীবনে কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসে নি। পিতা,মাতার নয়নের মনি ছিল অহল্যা। তার এক ভ্রাতা থাকার সত্ত্বেও নিজ মেধা, যোগ্যতায় সবার আকর্ষণ কেড়ে নিত। সৌন্দর্য্য যে  কারোর অহংকার হতে পারে না তার যথার্থ দৃষ্টান্ত অহল্যা৷তাঁর পিতা,মাতা, ভ্রাতা সবাই যখন তাঁর জন্য স্বয়ম্বরের ব্যবস্থা করেন সে কিন্তু সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি৷ পিতা ,মাতার অমতে বিবাহ করে ঋষি গৌতমকে৷ তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পায়৷আসলে বেশির ভাগ  নারীরা মেনেই নেন তারা দুর্বল,পরাধীনI অন্যের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে নিজের ইচ্ছার কথা ভুলে যায়৷ সংসারে নারী মাত্রই ভোগ্যবস্তু। তাদের নির্বাচন কিংবা প্রত্যাখ্যান কোনটাই মানতে পারে না সমাজ৷ এই সমাজ নারীদের সব কিছু মানতে শিখিয়েছে, হার মানতে শিখেয়েছে৷ কিন্তু একজন নারী যে কোন পুরুষকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে, স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিতে তার জলন্ত নিদর্শন অহল্যা৷ না পুরুষদের শাস্তি হয় না!শাস্তি পায় মূলত নারীরা৷ কেউ তা মাথা পেতে নেয় কেউ নেয় না৷অহল্যা যখন একা আশ্রমে দিন কাটায় ,নিজের সন্তানদের চোখের দেখাও দেখতে পায় না তখন সারা পৃথিবী মেনে নেয় গৌতম অহল্যাকে প্রত্যাখ্যান করেছে৷ আসলে এই প্রত্যাখ্যান শব্দটা আমাদের সমাজ তুলে রেখেছে নারীদের জন্য৷ কিন্তু না!  অহল্যা নিজে সব কিছু থেকে সরে আসে।সে অবহেলা করে মেকি পৃথিবীকে। দেবরাজ অহল্যাকে নষ্ট করেছে না অহল্যা নিজে সেই আগুনে পুড়েছে সেটা বিতর্কের বিষয়৷ কিন্তু গোটা পৃথিবী অহল্যাকে নির্বাসনে পাঠায়৷ দেবরাজ ইন্দ্র পরবর্তীতে ক্ষমা পান। কিন্তু ঋষি গৌতম কখনও কি বুঝেছিলেন অহল্যাকে ? অহল্যা যখন প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষীত হয়ে উঠছিলেন তখন কেন তাঁকে ঋষিকা রূপে স্বীকৃতি দেননি৷ অহল্যার পরিচয় এক রাজকুমারী এবং ঋষিপত্নী রূপে স্থির হয়৷যদিও পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যাবে অতীতেও অনেক নারীকে সংগ্রাম করতে হয়েছে স্ব অধিকারের জন্য৷কিন্তু অহল্যার জীবনদর্শন সম্পূর্ণ আলাদা।সে বুঝেছিল শিক্ষাই হল নারীর অগ্রগতির সহায়ক!তাকে আত্মস্থ করতে না পারলে মুক্তি নেই৷কিন্তু সেই শিক্ষা কি অহল্যার জীবনের সমস্ত দুঃখ,গ্লানি মুছে দিতে পারল! না পারে নি… সে অসাধারণ হয়েও তারও পরিণতি খুব সাধারণ ভাবে হয়েছে।

দ্বিতীয় যে নারীকে নিয়ে বলব মন্দোদরী৷ ভালোবাসার অপর নাম বলা যায়৷ গোটা জীবন ধরে একটা মানুষকে ভালোবেসে গেল, তাঁকে শোধরানোর চেষ্টা করে গেল৷ নিজের প্রথম সন্তানকে ধরে রাখতে পারল না। রাবণ একের পর এক নারীর জীবনে প্রবেশ করেছেI কোন দিন জানতেও চায়নি মন্দোদরী কি চায়! নিজের প্রথম সন্তানকে বাঁচাতে পারেনি। জন্মাবার পর যখন যখন সে দেখে তার কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে আনন্দে,ভালোবাসায় ভরে ওঠে৷ সাথে ভয়ও পায়৷ রাবণ যদি এই কন্যা সন্তানকে অস্বীকার করে৷ গোটা পৃথিবীতে অনেক কন্যা ভ্রূণ জন্মায় ,মরে যায় অবহেলায়, অনাদরে৷ কেউ তাদের খোঁজও রাখে না৷ কিন্তু মন্দোদরী সেই জায়গা থেকে নিজেকে অনেক দূর নিয়ে গিয়েছিল। রাবণের জীবনে এত নারী থাকা সত্ত্বেও রাবণকে শর্তহীন ভাবে ভালোবেসে গেছে৷এখানেই চরিত্রের সার্থকতা৷ ভালোবাসার জন্য কোন কারণ লাগে না৷ মন্দোদরী যখন ভালোবাসা কি  বুঝতে পারে তখন থেকেই তার জীবনে আসে রাবণ৷ রাবণের জীবনে বার বার উত্থান পতন আসে। আর ততবারই তিনি ছুটে যান মন্দোদরীর কাছে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মন্দোদরী ভালোবাসার সাথে আপোষ করেননি৷ দ্বিধা, দ্বন্দ্ব সব কাটিয়ে একজন পুরুষকে সৎ পথে আনার চেষ্টা করে গেছে৷

নারীর জীবনে যতই প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন তা তাঁকেই কাটিয়ে উঠতে হবে৷ ভালোবাসা, দুর্বলতা, সহণশীলতা নারীর ভূষণ হতে পারে না। নারী একটা ছায়া, নির্ভরতা। নারীকে যে দিন প্রকৃতি ভাবা হবে সে দিন সকল অত্যাচার, লাঞ্ছনা,নিপীড়ন ঘুছে যাবে৷

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত