আজ ০১ সেপ্টেম্বর কবি অমিতাভ মৈত্রের শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
সতর্কীকরণ
যদি বাতাসকে জব্দ করে খড়কুটো জুটিয়ে দেওয়াল তৈরি করতে পারো
তোমার জায়গা তাহলে এখানেই।
আর নিষিদ্ধ পাখিদের লুকতে যদি কপাল অবধি টুপি নামিয়ে হাঁটো
এখানে থাকা কঠিন হবে তোমার।
বুনো কুকুরদের নিয়ে তোমার অনুভূতি তুমি একশোবার না বলতে পারো.
মনে রেখো একজন এ্যাম্বুলেন্স চালক কিন্তু
সবার আগে সবকিছু জেনে যায়।
নিয়তি
কফির নীচে যেকোনো জমে থাকা দুধকে
ব্যতিক্রমী আর মহান মনে হয়।
বারো বছর পর এই একই নীল জামা হয়তো চিনতে পারবে না আমাকে।
ভাল ওভারকোট ছাড়া এখানে কোনোভাবেই যে
শীত আসবে না তা পাগলও জানে।
নিজের নিয়তি পড়তে পড়তে হেসে উঠি
আগামী জন্মে আমার জুতোর মাপ বিয়াল্লিশ হতে যাচ্ছে।
বিচার-১
যেখানে সে সবথেকে কম প্রত্যাশিত সেখানেই বার বার সে
ভেড়ার বাচ্চা নিয়ে অপ্রস্তুতভাবে সামনে আসে
আর সন্তু ভিটাসের নাচের অসুখ গলায় নিয়ে
কঠিনতম শব্দটি বলার আগে
তার প্রথম ছদ্মবেশকেই বেছে নেয় আবার
বিচার-২
আঙ্গুল তুলে আমাদের বহিস্কার করা হয়েছিল
শরীরের মহৎ আর অনিঃশেষ স্মৃতি থেকে।
মাটির কাছেও নির্দেশ পৌঁছেছিল
যেন আমাদের উগরে দেয়, বমি করে দেয়।
প্রাথমিক ধাক্কায় হয়তো কেঁদে উঠেছিলাম আমরা।
কিন্তু তারপরই
হাঁসের পিঠ থেকে জল গড়িয়ে পড়ার মতো নিঃশব্দ আনন্দে
খচ্চরের তলপেটে গোড়ালির ধাক্কা দিয়ে
আমরা বেড়িয়ে পড়েছিলাম।
সন্ধ্যে ছটার পর
সারাদিন ঠাই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে সূর্য
ব্যয়ামের যন্ত্রপাতির দিকে তাকিয়ে
দেখছে, তাজা স্ট্রবেরিগুলো কীভাবে নিজেদের
পুরোপুরি ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছে
শৃগালের শেষ প্রহর
জলের ধার থেকে যখন উদ্ধার করি তাকে
তখনো সে একই রকম নিষিদ্ধ ও ডুবুরির পোশাকের মতো চমৎকার।
এক ফুটপাত দূরে কোনো কাচের মূর্তি
তখন ধীর গতিতে ভেঙে পড়া শুরু করেছে
হাসতে হাসতে বলছিল, লজ্জায় তার মাথা কাটা যাবে না। কোনোদিনই
কেননা দুশো মাইলের মধ্যে কোনো গিলোটিন নেই।
নির্ভরতা
রাত্রির বিরুদ্ধে আবার
জেগে ওঠে সাদা একটা প্যারামবুলেটার
আর সমান্তরাল দুটো
ছায়া
রাগে অপমানে নিচু গলায়
অভিশাপ দিতে দিতে
তোমার দুটো পা হয়ে যায়
অপরসায়ন আর আমি
দ্বাদশ শতাব্দীতেই সাহসী
হয়ে উঠেছিলাম আমি
আর কাঁধ ঝাঁকিয়ে
বলেছিলাম
অপরসায়ণের সাথে
আমার সম্পর্ক
একই গুহার দুটো
ভালুকের মতো
অজুহাত ছাড়াই যারা পাপ
করে নিজেদের নিয়ে
আর একটা হুইস্ট খেলার
টেবিল রোজ রাতে সেই
পাপ
মুখ কালো করে নিয়ে যায়
ছবি অথবা চিঠি
জন্মের মুহূর্তেই অনন্ত
কোনো ছবির এক কোণে
অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও তুমি
আর একজন অন্ধকে
পাথর ছুঁড়ে হত্যা করে
তুমি সম্পূর্ণ করো
সেই ছবি আর নিজেকে
যাতে মৃত্যুর আগে
অর্ধদেবতার মত কেউ
তেলের বাতি ঘেঁষে
একদিন
নিঃসাড় একটা
চিঠি দিয়ে যায় তোমাকে
পরমতা
সবার চেয়ে বড়ো কোনো ভয় যাকে চালায়
যার হাত পড়ে আছে এমন এক প্রান্তে যেখানে কারো পা পড়েনা
ডুবে মরে যাওয়া থেকে তাকে রক্ষা করে যে গাছ
আর সৌজন্য দেখিয়ে গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলতে দেয়
সেই পরম বিস্ময়কে উপহার দেবে বলেই সে
লাল এই সার্ট আর দু’মিটার সিরিঞ্জ নিয়ে যাচ্ছে সাথে
দিকভ্রান্তি
লোহার ব্রিজ পর্যন্ত তোমার নাম আমি জানতাম
কিন্তু ব্রিজ থেকে নেমে ভুলে যাই
উর্দি দেখে মনে হয় মশাল নেভানোর কাজ করো
কিন্তু মশাল কারা জ্বালায় তুমি জানোনা
রাস্তায় দু’পাশের ঘাস বড়ো আর ঘন হয়ে উঠছে
একটু পরেই তুমি হারিয়ে যাবে হয়তো
এতো ভালভাবে চিনি এই দরজা যে অনেকদূর পর্যন্ত আমি
বর্জন করতে পারি তোমাকে
রহস্য
কীভাবে এই বর্ষাতি তৈরি হয় জানলে তুমি অবাক হয়ে যাবে হেনরি
কালো একটা স্নাব-নোজ রিভলবার
চারদিন হন্যে হয়ে খুঁজে বেরিয়েছে তোমাকে
একশো সাঁইত্রিশ জন হেনরি, প্রত্যেকের বর্ষাতি তোমার মতো
এদের মধ্যে তোমাকেই হয়তো আজ নায়কের সম্মান দেওয়া হচ্ছে
যখন একজন হেনরির কোমরে গুলি লাগছে
আর বলরুমে গড়িয়ে পড়ছে আরেকজন
শোক
দশ কিলোমিটার পর্যন্ত আশা করার কিছু নেই
আমার কুকুর তবু আমার জন্য কাঁদছে
আলোয় ঝকঝক করছে সাদা হলঘর
কাচের জানলা ভর্ৎসনা করছে কাউকে
কে যেন শাস্তি পাচ্ছে শরীরভর্তি ঘায়ে
বোকার মতো মলম লাগানোর জন্য
দশ কিলোমিটার পর্যন্ত আশা করার কিছু নেই
আমার কুকুর শুধু আমার জন্য কাঁদছে
স্পষ্টতা
যে অজুহাত এই আগুনের মধ্যে খুঁজে বেড়ায় হেনরি তা আর নেই
তবু মাঝেমাঝেই শব্দ করে ধাক্কা দেয় দরজায়
যেন এভাবেই সে সান্ধ্য আইন ভাঙছে
তার অস্তিত্বের আধখানাই প্যারাফিন,
বাকি অর্ধেক কী সে জানেনা
শুধু পশম কাটার সময় তার শিহরণ মাঝেমাঝেই স্পষ্ট হয়ে যায়
আর খিদে স্পষ্ট হয়ে যায়
যখন সাদা ফ্রিজ সে চেপে ধরে পেটের ওপর
![অমিতাভ মৈত্র](https://irabotee.com/wp-content/litespeed/avatar/2798a86acf4eb276e33d345424a3667c.jpg?ver=1738682443)