| 6 অক্টোবর 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

কবিতাগুচ্ছ । মোহন দাস

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

দুঃখ 

বাবা প্রতিদিন রক্ত বিক্রি করে সন্ধ্যায়
ঘাম কিনে আনেন
এক ব্যাগ তাজা ঘাম ।

মা উনুনে জ্বাল দিয়ে ফোটায়
জীবন যন্ত্রণা

তারপর সবাই মিলে বসে
খেতে থাকি দুঃখ

আমাদের বাড়িতে রোজ দুঃখ রান্না হয় ।

 

 

 

বিচ্ছেদ 

আমাদের ভালবাসার মাঝখান দিয়ে নিরক্ষরেখা মতন
বিচ্ছেদ চলে গেছে
আমরা দু’জনেই সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি

কিন্তু উত্তর মেরু থেকে তুমি বরফের মতো গোলে যাচ্ছ

আর আমি দক্ষিণ মেরুতে বরফসমুদ্রের নীচে
তোমার প্রতীক্ষায়…

 

 

 

বাবার রুমাল
(উৎসর্গ বাবাকে)

বাবার চোখের জলকে কোনওদিন আমি
কান্না হতে দেখিনি

তবু প্রায়ই তাঁকে রুমালে মুড়ে
বুক পকেটে কিছু একটা লুকোতে দেখতাম ।

বাবা যখন শার্ট বদল করতেন
আমি চুপিচুপি সেই রুমালের ভাঁজ খুলে দেখতাম
বিশাল মাপের একটা নদী

যেখানে বাবার দুঃস্বপ্নগুলোও নৌকোর মতো
ঘাটের কিনারে বাঁধা

আর স্বপ্নগুলোও ।

 

 

ঈশ্বরের চিঠি 

কীভাবে মরে গিয়ে বেঁচে থাকতে হয়
আর কীভাবে বেঁচে থাকতে মরে যেতে হয়
তা আমি জানতে চেয়ে
একদিন ঈশ্বরকে চিঠি লিখেছিলাম

ঈশ্বর উত্তর লিখে দিয়েছিলেন কপালে

আমি পড়তে পারিনি
আমার মা-বাবাও পড়তে পারেননি সেই চিঠি

ওঁদের চোখ ছিল না আর
আমার পড়বার মতো কপাল ।

 

 

দূরত্ব 

প্রতিদিন যে নদীটাকে আমি দেখি
তাঁর কোনও ঢেউ নেই
তার বদলে আছে বিশাল মাপের দু’টো তীর

একটা তীর আমার বুকের উপর
আর একটা তোমার —

মাঝখানে আমাদের শুধু এই নদীর ব্যবধান ।

 

 

ঘর 

প্রতিদিন আমি আর আমার বাবা
তেপান্তরের মাঠে
স্বপ্নের দলগুলোকে ছেড়ে দিয়ে আসি
ওরা সবাই অবাক হয়ে একবার ফিরে তাকায়
বাবা নির্বাক…
তারপর হাঁটতে হাঁটতে জল সিঁড়ি বেয়ে নেমে পড়ি দুজনেই
নদীর ভিতর,
চোখের জল ঢাকতে ঠাকুরদা নদীর ভিতর
আমাদের ঘরটি ফেলে গেছেন !

 

 

সঞ্চিতা 

সঞ্চিতা, তোমার বুকে আজ নিম ফলের ঘ্রাণ
চৈত্রের আগুন
এক আকাশ বিষণ্ণতা,
তুমি সুদূর প্রান্তের পাতা ঝরা বৃক্ষ আজ
সঞ্চিতা, তুমি প্রকান্ড নিমগাছ ।

তবুও তোমাকে চাই
শত কোটিবার চাইতে হয়, রোগে, শোকে, অনিদ্রায়
আমৃত্যু তুমি আমার স্ত্রী, সন্তান

এবং একটি সর্বজনীন মেডিকেল শপ ।


আরো পড়ুন: একগুচ্ছ কবিতা । মোহন দাস


জমি 

যাঁরা ধানখেত চেয়েছিল
কিংবা ভিটে
অথবা পায়ের তলায় মাটি
তাঁরা সবাই আশমান-জমিন পেলো

অথচ কেউ সাড়ে তিন হাতের বেশি
নিলো না ।

 

 

অকপট 

চশমার কাচে লেগেছে তাঁর বুক, প্রেম

ভালবাসলাম ।

ভগ্ন নগরের নীচে পুঁতে দিলাম
আগামীর ভবিষ্যৎ

তারপর আবিষ্কার করলাম মাটির ঘ্রাণে কচি ঘাসের উপর
বেনামী বন্দর ।

যেখানে ভালবাসতে সম্পূর্ণ নগ্ন হতে হয় ।

 

 

নাম 

তোমাকে ভুলে যাবার কোনও ওষুধ
এই শহরে বিক্রি হয় কি না
জানি না আমি –

শুধু জানি, শহর ছেড়ে, চলে গেলে মানুষ
ভুলে যায় আদিম গৃহকোণ
ভুলে যায় রাস্তার বাঁক, পাথর ফলক ।

এই বিশ্বাসেই বেঁচে আছি আজ
ভুলে যাব আমিও একদিন
যদিও পাথরে হৃদয় ঘষে –

সাধ হয় – মুছি তোমার নাম !

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত