সম্পূর্ণা
ভেতরে বাইরে আমি কোথাও এক অন্য দুর্গা
দাবিয়ে রাখি, বধ করি অসুর আর সুর।
মত্ত হই এক অনন্য উৎসবে, ইচ্ছেময়ী-উৎসব
লাল রুমালে চোখবাঁধা ঘোড়ার অন্ধ সোয়ারি আমি
যেমন ইচ্ছে ছোটাবার খেলা;মাঠ-প্রান্তর-হাওয়া
আধো-সম্মত, আধো-নিষিদ্ধ গন্ধে ভরপুর।
আমরা কেউ কাউকে দেখিনি, এখনো…
জেগে উঠছে সমতল, কেঁপে উঠলো অন্নপূর্ণা
না-লেখা কবিতা দীপ্ত হয় যৌথ তাপে
আগুনশ্বাসে গলে হিম আমাদের, বহুদিন পরে।
একটু ঝুকে তৃতীয় নয়নে এক ঝলক দেখে নিই তার
উদ্যানমুখ, সম্মোহিতের অন্তর্গত উদ্দামসুখ।
ভেতরে বাইরে আমি তখন অন্য দুর্গা, সম্পূর্ণা
আমি তখন ভালবাসছি,
ভালবেসে বধ করি সুর আর অসুর।
নির্বাসন
নির্মানুষ দুপুর রোদচশমায় ঢাকা,
নির্জনতা লোভী বন্ধ দরজার খাঁচায়
নির্বাসিত পাখিটার মনে পড়ে যায়
পাখি ওড়া সেই পথ।
ভুলিয়ে দিতে চেয়েছ, কখনো উড়েছি…
খেয়ালি ডানা কখনো ছিল আগুনময়।
ছুঁয়ে যেতে চেয়েছিল সে
আকাশের চেয়ে অনন্ত এক আকাশ,
তপ্ত করেছিল সূর্যের চেয়ে দৃঢ় এক সূর্যকে।
ভুলিয়ে দিতে চেয়েছ
প্রাগৈতিহাসিক সেই পাখিকেই
অনাদি আদি ওড়ার সুখ।
নিজেই শুধু মনে রাখোনি ,
ছেটে দিলে ডানা দীর্ঘ হয়।
মেঘের হোঁচটে যদিও বা রক্তপাত…
ছায়া পাখির ডানায় ওড়া পথে
তবু শ্বেত করবীই ফুটে রয়।
ঈর্ষা
মেয়েটি তো কেবলই একটি মেয়ে নয়
নারীটিও নারীর অধিক একজন নারী… সম্পূর্ণ মানুষ।
মেয়েটিকে দেখি পূবের আলোয়, গার্মেটস’এর পথে
কলিং বেল’এ হাত রাখা নারীটিকে দেখি সদর দরজায়
প্রাত্যহিকের আলস্য-মসৃণ চোখে।
ঘুম ছুটে যায়, সূর্য ঢেকে দেয় রাতভর পদ্মজ্যোৎস্নার প্রেম,
আমার উৎসুক দৃষ্টিতে সকাল আসে দীর্ঘশ্বাসের আলো নিয়ে।
ভৈরবী কানে ঢালতে থাকে হাহাকারী সুর,
পরাধীনতার সম্ভ্রান্ত ঘরে ওরা যেন একযোগে ঢিল ছোড়ে।
আগুনের আঁচে অভ্যস্ত আমি
থামিয়ে দিতে চাই নিজস্ব জীবন-যাপন ।
শিখতে চাই তাঁদের কাছে কিভাবে জ্বালায় আগুন।
নিজেকে বাড়াই সমুখে…
তাঁদের মুখের প্ল্যাকার্ডে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা ‘প্রবেশ নিষেধ’
নিঃশব্দ শ্লোগান শুনি…
‘…এ আমাদের চোখের কালি, তোমার কাজলের কান্না নয়…
এতো নয় রান্নাবাটি খেলার সংসার,
খেলতেই যদি চাও, এসো পাঁজরে খঞ্জর ঝুলিয়ে।‘
আমি ঈর্ষাকাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি সেই মানুষ দুটোর দিকে
যারা ঝড় বিধ্বস্ত জীবনেও নিজের ইচ্ছের অধীন।
পুরুষনামা
কন্যা তুমি চিনে নিয়ো পিতার আদর
তুমি চিনে নিয়ো পুরুষের আদর,
কন্যা তুমি এও জেনো, পিতার শরীরেও পুরুষ।
কন্যা তুমি চিনে নিয়ো ভাইয়ের স্নেহ
তুমি চিনে নিয়ো পুরুষের স্নেহ,
সঙ্গে এটুকু মনে রেখো, ভাই কোথাও গিয়ে পুরুষ।
কন্যা তুমি চিনে নিয়ো অর্ধাঙ্গীর উষ্ণতা
তুমি চিনে নিয়ো পুরুষের সোহাগী অত্যাচার,
তুমি তো জানোই, সে-ও দাবীতে প্রথমে পুরুষ।
কন্যা তুমি চিনে নিয়ো প্রেমিকের স্পর্শ
চিনতে শেখো তুমি পুরুষের স্পর্শ,
এটুকুও জেনে রেখো, প্রেমিক কখন হয় প্রেমিকপুরুষ।
কন্যা তুমি চিনে নিয়ো মানুষের মুখ,
এও তোমার জানা হোক
কোনো কোনো পুরুষ এখনও নিশ্চিত মানুষ।
ওড়না
ও মেয়ে, ওরা জানে, তোর মুক্তি লেখা এই আকাশে…
জেনেবুঝেই আসমানি রঙের ওড়নায় ঢেকে দিল
ওরা তোর আকাশী রঙের আকাশটাকে।
কেন রে মেয়ে, কেন তুই জড়িয়েনিলি ওড়না,
বুঝে কিংবা না বুঝে!
ওরা তো এগিয়ে দেবেই! দিলেই নিতে হবে?
কেন ছুড়ে ফেলিসনি? কেন ফেলিসনি ছিঁড়ে?
ওই যে তোর আকাশী রঙের আকাশ ঢেকেছে
আসমানি রঙা ওড়নায়; পাথরতুল্য ওড়না
আর কিছুতেই নামাতে পারলি না বুকের থেকে।
জানি জানি আমি তোর অনেকটাই জানি,
ওড়না দিয়ে ঢেকেছিলি শুধু বুকের স্ফীত মাংসপিণ্ড
ঢাকতে পারিসনি হিমালয় সমান বুকের ক্ষত।
ছায়া হয়ে দেখেছি কাল রাতে
নিজের শবদেহ ভাসিয়েছিলি নিজের ভেলায়
পাশফেরা অনিচ্ছুক কান্নাশরীর তোর
মুখে জমানো একদলা থুথু দেখেছি!জল দেখিনি চোখে।
মনরক্ষায় কি শেষরক্ষা হলো মেয়ে?
ওই যেজোরে কিংবা সোহাগে বাড়িয়ে দেয়া ওড়না…
ঢাকতে পেরেছে তোর শরীরের স্ফীত মাংসপিণ্ড,
ঢাকতে পারেনি বুকের হিমালয় সমান ক্ষত।
কেন সেদিন তুই ছিঁড়ে ফেললি না, ছুড়ে ফেললি না?
আজ ওরা উপগত শরীরে নয়, তোর সত্তা আর সিদ্ধান্তে।
কষ্ট হয় রে মেয়ে, তোর জন্যে খুব কষ্ট।
বুকের জমিন নয়, ওড়না ঢেকে দিলো জীবনভূমিকে
না আসলো আলো, না বইলো হাওয়া
ফাংগাস ধ’রে গেল মেয়েজীবনটাতে…
আসমানি ওড়নায় ঢেকে দিলো
তোর আকাশী রঙের আকাশটাকে।
কবি, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক
প্রথম তিনটি কবিতা বেশ ভালো লেগেছে।
সুন্দর