আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট



আজকে প্রসুতি মা এবং তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করব। প্রত্যেক মেয়ে তার মনে একটা সুপ্ত স্বপ্ন লালন করে সে একদিন মা হবে, তার সন্তানের যত্ন নিবে, সন্তানকে বড় করে তুলবে।একটা মেয়েকে মা হতে হলে জীবনের অনেক কিছু ত্যাগ করে ওই ১০ মাস ১০ দিন তার সন্তানকে গর্ভে লালন করতে হয়, ওই সময়টা হয়ে উঠে অনেকটা কঠিন থেকে কঠিনতর। একটা মেয়ের শরীরের নানা রকমের পরিবর্তন আসে, শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও যুক্ত হয়।আর সামান্য সমস্যাও বাচ্চার জন্য অনেক মারাত্মক। তাই গর্ভবতী মা কে সব সময় তার স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে হবে।

জানা যাক একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার সাথে সাথে দাঁত বা মুখের কি কি সমস্যা হতে পারে-
গর্ভকালীন সময়ে একটা মেয়ের হরমোনের তারতম্য ঘটে থাকে তখন শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্ট্রেরন হরমোনের তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। তখন দাঁত বা দাঁতের চারপাশের অংশে অনেক পরিবর্তন আসে যা মায়ের উপর প্রভাব ফেলার সাথে সাথে বাচ্চার উপরেও প্রভাব ফেলে।
দাঁত বা মুখগহ্বরের যত্ন না নিলে কি হতে পারে?
১. মাড়ির আয়তন গত বৃদ্ধি বা Gingival। Hyperplasia
২.মাড়ির প্রদাহ
-মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া
-মাড়ি ফুলে যাওয়া
-মাড়িতে ব্যাথা অনুভব করা
-মাড়িতে জ্বালাপোড়া করা
৩. মাড়িতে টিউমার জাতীয় ছোট ছোট গ্রোথ বা মাংসল জাতীয় ছোট বৃদ্ধি-পায়োজেনিক গ্র্যানুলোমা (Pyogenic granuloma)
৪.মেলেস্মা: এটা হলো একটা পিকমেন্ট বা বেগুনি রঙের একটা দাগ যা ওই সময় শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যএর জন্য হয়ে থাকে।
৫. লালাগ্রন্থির লালা রসের তারতম্য হওয়া।
৬. দাঁতের নড়াচড়া বা দাঁত ভাসছে এমন অনুভুতি (Tooth mobility)
৭. দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা।
৮. মাড়ি থেকে রক্ত পড়া (Gum Bleeding)
যদি উপরোক্ত সমস্যা গুলো থাকে তাহলে কি কি হতে পারে?
১. যদি একজন গর্ভবতী মা এই সময়ে দাঁতের সমস্যা বা দাঁতের মাড়ির সমস্যা বা জিহবার আলসারজনিত সমস্যার কারনে ঠিক ভাবে খেতে না পারে তাহলে সেই মায়ের অপুষ্টি জনিত নানা সমস্যা দেখা দিবে।
২. মায়ের পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে বাচ্চা অপুষ্টি তে ভুগবে এবং কম ওজনের বাচ্চা প্রসব করবে।
৩. মায়ের শরীরে পানি এসে ফুলে যেতে পারে সাথে খিচুনি হতে পারে।
৪. সেই মা অপুর্ণ বা অপুষ্ট বাচ্চার জন্ম দিতে পারে বা প্রিটার্ম বেবি বা ডেলিভারি তারিখের আগে বাচ্চা প্রসব করতে পারে বা মৃত বাচ্চা প্রসব করতে পারে।

তাহলে করণীয় কি?
কল করুন আপনার নিকটস্থ একজন ডেন্টাল সার্জনকে বা আপনি সরাসরি তার শরানাপন্ন হোন যদি আপনার এই সমস্যা গুলো থাকে।
১. পর্যাপ্ত মুখ ও দাঁতের যত্ন নিন।
২. প্রতিদিন অন্তত ২ বেলা দাঁত ব্রাশ করুন।
৩. মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করুন,দরকার হলে ৪. লবন গরম পানিতে কুলকুচি করুন।
৫. প্রয়োজন মত পানি পান করুন।
৬. সর্বোপরি পুষ্টিকর খাবার খান।

যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন?
১. শারীরিক কোনো পরিবর্তন দেখার সাথে সাথে ডাক্তারের শরানাপন্ন হতে হবে।
২. কোনো ভাবেই কোনো ওষুধ ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া খাওয়া যাবে না।
৩. কারো কথাতে কোনো এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না,এতে আপনার সন্তানের ক্ষতি হতে পারে।
৪. ধুমপান করা নিষিদ্ধ।
৫. তামাক সেবন করা যাবেনা।
৬. এলকোহল সেবন করা নিষিদ্ধ।
৭. বেশি প্রয়োজন না হলে দাঁত ফেলা বা কোনো ছোট খাট সার্জারি করা যাবে না।
৮)প্রয়োজন ছাড়া এক্স-রে করা যাবে না।
সর্বোপরি নিজের যত্ন নিন।আপনার রক্ত চাপ, ডায়াবেটিস চেক করুন।পুষ্টিকর খাবার,পরিমান মত পানি ও নিয়মিত ঘুমাবেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ডেন্টাল ইউনিট